
এলাকার এক ভাতিজা বিদেশ থেকে বাড়ি এসে খুব টাকা-পয়সা খরচ করা শুরু করল। তার বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাও বেড়ে গেল। এ সময়ে কলেজ পড়ুয়া এক মেয়ের পেছনে ঘোরা শুরু করল সে। বিষয়টা ভাতিজার পরিবার ভালোভাবে নিল না। এরমধ্যে হঠাৎ করে তার বাপ টাকা-পয়সা সব নিয়ে নিল। ভাতিজার টাকার অভাব দেখা দিল। এমন অবস্থা দাঁড়াল চুল কাটার, এমনকি তার নাকের কী একটা সমস্যা; সেটা ভালো করার জন্য ডাক্তার দেখাতে টাকা দরকার সেটাও তার বাপ দেয় না। ভাতিজা দুঃখ করে বলে, কাকা, আমি একসময় রাজার জীবন পার করেছি। আর এখন ফকির।
ভাতিজার বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাও কমে গেল। এখন বলতে গেলে সে ঘরবন্ধী। খুব একটা বাইরে বের হয় না। আমি তাকে বললাম, “সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়”। সে কিছু বলে না।
যাহোক, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে এক শিক্ষক কেক না পেয়ে পাউরুটি কেটে জন্মদিন পালন করেছিলেন। এ ঘটনায় পুলিশ ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তুচ্ছ কারণে কতজনের চাকরি গেল, কতজন জেল খাটল এগুলো এখনও বিস্মৃত হয়নি! অতি উৎসাহীদের মুজিবপ্রীতি দেখে আমি বুঝেছিলাম, আওয়ামী লীগের পতন হলে এরা সবার আগে পালাবে অথবা পল্টি নেবে।
আসলে চাটুকারদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে থাকলে বাস্তবতা বোঝা যায় না। শেখ হাসিনা চাটুকার দ্বারা সবসময় বেষ্টিত ছিলেন। তিনি বাইরের খবর পেতেন বলে মনে হয় না। তার আশপাশে কি এমন কেউ ছিলেন না যিনি বাস্তবতা জানেন? অবশ্যই ছিলেন। কিন্তু তিনি হয়তো তাদের কথায় গুরুত্বই দেননি।
পয়সা খাইয়ে সাংবাদিক পুষেছিলেন শেখ হাসিনা। ৫ আগস্টের আগে যারা ‘জি আপা, জি আপা’ করত। আহ্লাদিত কণ্ঠে আপা ডাক শুনে শেখ হাসিনা হয়তো ভেবেছিলেন তারা নিজের মায়ের পেটের ভাই। ৫ আগস্টের পর দায়ে পড়ে হোক, খুশিতে হোক আর নতুন লাভের গুড় খেতে গিয়েই হোক তারা ‘খুনি হাসিনা’, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা’ বলতে শুরু করল। এখন অন্যজনের তোষামুদি শুরু করছে মিডিয়া। যাদের খবর প্রচারিত হতো না, তাদের খবর সবার আগে প্রচার পাচ্ছে। আগে বিটিভিতে বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন দেখাত। এখন সব চ্যানেলেই একই দশা। আগের সবাইকে বাদ দিয়ে নতুন নতুন লোক নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন, তারাও শেখ হাসিনার দেখানো পথেই চলছেন। তবে মুখ খুলে কিছু বলা যাচ্ছে না। বললেও তাদের মনমতো হতে হবে। এটা অনুমিতই ছিল। গণেশ যে এভাবে উল্টে যাবে; ঘুণাক্ষরেও কি শেখ হাসিনার মনে হয়নি?
আসলে গত ১৫ বছরে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তার সাহস এমন বেড়ে গিয়েছিল যে, মনে করেছিলেন তাকে কেউ নামাতে পারবে না। আমেরিকাকেও গোণায় ধরেননি।
এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কিছু মানুষকে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলে বিপদে পড়ছেন, কারও কারও চাকরি চলে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা তার সুসময়ে তাদের মূল্যায়ন করেননি। আবার যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন, একই কাজ করবেন তিনি। ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবেন না। বস্তুত কোনো দলই করে না। এ জন্য পরে ভোগে।
যে যেমন করে সে তেমনই ফলভোগ করে। আজকে যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক মানছে না, একাত্তরকে অস্বীকার করছে, অন্যের ওপর জুলুম করছে; একটা সময় হয়তো আসবে তারাও একই পরিণতির মুখোমুখি হবে। ভুলে গেলে চলবে না দিন সবসময় একরকম যায় না। শেখ হাসিনা যেমন গোয়ার্তমির ফল ভোগ করছেন, একই রকম ফল এখনকার স্বৈরাচারীরাও ভোগ করবে। প্রকৃতি কাউকেই ছাড়ে না।
ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




