
প্রথিতযশা সাহিত্যিক ও প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘জনপ্রিয়তা হচ্ছে নেমে যাওয়ার সিঁড়ি’। এ বাণীর মর্মকথা দিনদিন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। আগে যাদের বক্তব্য মানুষ গোগ্রাসে গিলত, যাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকত; এখন লোকে তাদের কথাবার্তা শুনে হাসে, দিনরাত গালমন্দ করে; এমনকি মৃত্যুও কামনা করে।
এ জন্যই কবি লিখেছিলেন-
“নদীর এপার ভাঙে ওপার গড়ে,
এই তো নদীর খেলা;
সকালবেলা ধনীরে তুই
ফকির সন্ধ্যাবেলা।”
আমার নিজের কখনও রাজনীতি করে উপরে উঠার ইচ্ছে হয়নি। আমি দেখেছি একসময় যারা সবার পছন্দের পাত্রপাত্রী ছিলেন, দিনেদিনে সবার অপছন্দের পাত্রে পরিণত হয়েছেন। অনেকের চেষ্টা ছিল টিকে থাকার, কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার কারণে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। এ দেশে একজনের ব্যর্থতাই আরেকজনের সাফল্য, সে নতুন করে কিছু না করলেও।
অনেক টাকা-পয়সা করেও অনেকে ঠিকমতো জীবনকে উপভোগ করতে পারেননি। সে টাকা-পয়সা ভোগ করেছে সন্তানেরা। একসময় দেখা গেছে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে রাস্তায় রাস্তায় থাকতে হয়েছে। কারও বা আশ্রয় হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। মিডিয়ায় অহরহই তো আসে সন্তানের হাতে মা-বাবার মৃত্যুর খবর। ভুক্তভোগীদের তখন কেমন লাগে? একবারও কি মনে হয় না ছেলেমেয়েদের সময় দেওয়া উচিত ছিল?
আমার কখনও কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার শখ জাগেনি।
আমার এক বন্ধু ম্যালা টাকা উপার্জন করে সৎপথেই। কিন্তু তার একজন ভালো সঙ্গী নেই। আমি বলি, ‘বউকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করো অবসরে। ভালোমন্দ খাও। কেনাকেটা করো।’ সে আমার কথায় খুশি হয় না। ছুটির দিনগুলো শুয়ে-বসে কাটায় আর আমি আফসোস করি ‘আহারে একদিন ছুটি পেতেই আমার কত কসরত করতে হয়’!
আমার ভাবনা এখানে অমূলকও হতে পারে; এ বিষয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো লিখে গেছেন-
“নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে;
কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।”
আপনি কোটি কোটি টাকা কামাই করলেন, সেখান থেকে আপনাকে ভাগ দিতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের। আমি ভাবি, কী লাভ এত অর্থ-সম্পদ করে? না পাওয়া যায় জীবনের নিরাপত্তা, না পাওয়া যায় মানসিক শান্তি।
জননিরাপত্তার এমনই দশা যে, ছেলের সাথে শত্রুতা করে নামাজরত অবস্থায় বৃদ্ধা মাকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আমি এ বিষয়টায় খুব ভয় পাই। তাই পারতপক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের তথ্য বা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আনি না। আর চেষ্টা করি নিজের মতো থাকার, জীবনকে উপভোগ করার। তবুও অনেক সময় থাকা যায় না। অসামাজিক তো আর হওয়া যায় না। সরলতার সুযোগে অনেকে মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়। তিমির হননের কবি জীবনানন্দ দাশের মতো বলতে হয়, ‘পৃথিবীতে টাকা রোজগার করতে গিয়ে মূর্খ ও বেকুবদের সাথে দিনরাত গা ঘেঁষাঘেঁষি করে মনের শান্তি ও সমতা নষ্ট হয়ে যায়’।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


