
আমাদের গ্রামের পূর্বপাড়ার ভাতিজা সম্বন্ধীয় এক ছেলে একবার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা চাইল। তার বাবার সাথে যেহেতু আমার ভালো সম্পর্ক, তার প্রতি সম্মান রেখে ও ভাতিজার প্রতি সহমর্মী হয়ে তাকে কিছু টাকা দিলাম। কিছুদিন পর খবর পেলাম, সে নাকি কোথায় নাকি বেড়াতে গেছে! তার মিথ্যাচারে মনটা খুব খারাপ হলো। বেড়াতে যাওয়ার জন্য টাকা লাগলে, সেটা বললেই হতো। মিথ্যে বলার কী দরকার ছিল?
তার প্রতি যে ভালো ধারণা ছিল, সেটা মুহূর্তেই উবে গেল। তবে আমি বিরক্তিভাবটা মনের মধ্যেই চেপে রাখলাম। দিন তো সবসময় একরকম যায় না।
কয়েকদিন পর সে আবার টাকা চাইল। কারণ হিসেবে জানাল সে ডাক্তার দেখাবে। এবার সত্যিই তাকে অসুস্থ মনে হলো। কিন্তু সাহায্য করার ইচ্ছে হলো না। আগের মিথ্যাচারের জবাবও চাইলাম না।
কাকা সম্বন্ধীয় এলাকার এক লোক মায়ের কাছে এলো তার পিতৃবিয়োগের পরের অনুষ্ঠান করার জন্য সাহায্য চাইতে। আমি মাকে বললাম, দিয়ে দিতে। মা কিছু টাকা ও কিছু চাল দিয়ে দিলেন। কিছুদিন পর শুনলাম এই লোক নেশা করে। ওই সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে সে নেশাভাঙ করেছে। এলাকার আরও অনেকের কাছ থেকেও মিথ্যে বলে সাহায্য নিয়েছে। এ ঘটনায় আমিও বিব্রত, মাও বিব্রত।
জীবনে চলতে-ফিরতে এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি বহুবার। দেখেছি লোকে সত্যির চেয়ে মিথ্যেই বেশি বলে। এ জন্য দেখা যায়, যারা সত্যিকার অর্থেই বিপদগ্রস্ত, তারা মানুষের সহানুভূতি পায় না। মিথ্যুকেরা সেই বিশ্বাসটুকু ভেঙে দেয়। নিজের চিকিৎসার কথা বলে, মা-বাবার চিকিৎসার কথা বলে, এমনকি মৃত্যু নিয়েও কেউ ব্যবসা করে? এদের একবারও কি মনে হয় না ধরা পড়লে কী জবাব দেবে? তারচেয়েও বড় বিষয় হলো, একবার মিথ্যা বলে উপকার পেলেও পরে কি তা পাবে? মিথ্যাবাদী রাখালের গল্পটা তো কারও অজানা থাকার কথা না। এর পরিণতি কি ভুলে যায়?
আরেকট বিষয় দেখা যায় কেউ একজন সত্যিই বিপদে পড়ল। আমি তাকে সাহায্যও করলাম। কিন্তু সে সেটা ভুলে যাবে। এমন ঘটনা প্রায় সবার সাথেই কমবেশি ঘটে। ভার্সিটির এক সহপাঠীর কথা বলতে পারি। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও তার সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। তাকে নিজের ল্যাপটপ বিক্রির টাকাও দিয়েছি। শুধু তাই না, নিজের জন্য বরাদ্দ মাসিক খাওয়ার টাকা থেকেও টাকা দিয়েছি অথচ তাকে প্রয়োজনে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। ফোন দিলে বলেছে, তোমার ভাবি সাথে আছে তো। পরে কথা বলব। সে আর কল দেয়নি। ওর স্ত্রী ২৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে আর সে ২০০ টাকার দরকার পড়লেও আমাকে ফোন দেয়, বউকে বলতে পারে না। বউও বোঝে না তার দুরবস্থা। পরে বুঝতে পেরেছি আমাকে বোকা পেয়ে সুবিধা নিয়েছে শুধু।
অন্যদের সাথে তার তুলনা চলে না অবশ্য। তাই অনেককিছু মেনেও নিয়েছিলাম, পরে আর পারিনি। একবার বাবার জন্য একটা ইনসুলিন দরকার পড়েছিল। তাকে বলেছিলাম দুর্গাবাড়ি রোডে দিয়ে খোঁজ নিতে। সে জানিয়েছিল, খোঁজ নিয়েছে কিন্তু পায়নি। অথচ পরে আমি গিয়ে ঠিকই পেয়েছি। তার মানে বোঝাই যায় সে যায়নি। এই ঘটনার পরও তার সাথে ছয় বছর যোগাযোগ রেখেছিলাম।
আবার এমন কিছু আছে যারা বিপদে উপকার নেয়। পরে আড়ালে-আবডালে বদনাম করে। যাদের কাছে বদনাম করেছে তাদেরকে নিজে রেঁধে নিয়ে গিয়ে খাইয়েছে অথচ সবচেয়ে বড় ক্ষতি তারাই করেছে। তাও হুঁশ হয়নি।
আমারও হুঁশ হয়নি সহজে। ধাক্কা খেতে থেকে মোটামুটি বুঝতে শিখেছি। এখন এসব মানুষ থেকে একশো হাত দূরে থাকার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি নতুন করে যেন আবারও ফাঁদে না পড়ি।
যারা সামান্য হলেও বিপদে পাশে থেকেছে, অথবা মোটামুটি অকৃতজ্ঞ না- এমন সব মানুষের সাথে সম্পর্ক অটুট রাখার চেষ্টা করি সবসময়। ঠগ তো দরকার নেই আমার। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


