somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্ম পরিচয় ১

১৯ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আত্ম পরিচয়

একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে দ্বিধা বিভক্তি যা সৃষ্ট হয়েছিল তা প্রধানত রাজনৈতিক কারণে। এই ভূখণ্ডের ইতিহাসের নানান পর্যায়ে এখানকার আদিম জনগোষ্ঠী ছাড়াও বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষ এসেছে বসতি স্থাপন করেছে। এ মাটির গভীরে শেকড় চারিয়ে দিয়েছে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আমাদের সংস্কৃতি আত্মস্থ করেছে নানাবিধ উপাদান। একসময় সেই সমস্ত উপাদান একাত্ম হয়ে মিশে গেছে আমাদের যাপিত জীবনে। এই উপাদানগুলোর মধ্যে যেমন আছে খাদ্যাভ্যাস, পোশাক পরিচ্ছদ, সঙ্গীত, স্থাপত্য, তেমনি ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য। এই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ সাধারণ মানুষের জীবনে তাদের দৈনন্দিন সহাবস্থানকে অনেক সময় বাধাগ্রস্ত করে। প্রাচীন ও মধ্যযুগে মানুষের ধ্যান ধারণায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বিরল নয়। কিন্তু লণীয় যে, ঐ অসহিষ্ণুতা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ওপর থেকে শাসক গোষ্ঠীর মতা বিস্তারের উদগ্র বাসনায়। প্রাচীনকালে হিন্দু জনগোষ্ঠী ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংঘাত শাসকের মতা লিপ্সার কারণে তৈরি করা হয়েছে। মধ্যযুগে খ্রীষ্টিয় ধমান্তরণ ও ধর্মযুদ্ধ সর্বত্র বিদিত। জেরুজালেমে রোমান শাসক ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন যীশুর প্রচারে। এবং তাকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হলো। এগুলো মতা লিপ্সারই প্রতিফলন মাত্র। তারও হাজার বছর পরে আরব দেশে নব্য ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যে অত্যন্ত হিংস্র ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। সেটাও তখনকার মতাসীন গোষ্ঠীগুলোর মতাকে রা করার জন্যেই।
ষোড়শ সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতক জুড়ে যখন ইউরোপীয় উপনিবেশগুলো স্থাপিত হচ্ছিল তখনও খৃষ্টান মিশনারীদের সমূহ তৎপরতা ল্য করা যায়। তৎকালীন চার্চ মতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় ও এমনকি তাদের মূখ্য ভূমিকায় উপনিবেশগুলোতে ধর্ম প্রচার করেছিল। ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মতায়নে ব্যবহার একেবারেই প্রাচীন ও মধ্যযুগীয়। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ আদান প্রদান ব্যবসা বাণিজ্য যত বাড়তে থাকে ততই বুঝতে পারা যায় যে মানুষের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন হলেও সব মানুষের শারীরিক, মনস্তাত্বিক ও দার্শনিক ভূমিকা একেবারেই এক। সব ধর্মেও মানুষই দু:খ পায়, বেদনার্ত হয়, আনন্দে উচ্ছ্বল হয়ে ওঠে বিষাদে বিষণœ হয়। এবং নরনারী পরষ্পরকে ভালোবাসে। মানুষের যোগাযোগের ও আদান প্রদানের উন্নত স্তরে তাই দেখা যায় বিভিন্ন ধর্মের নরনারীর মধ্যেও ভালোবাসার উদয় হয়। এবং তারা একত্রে বসবাস করতে পারে। তাহলে মানুষের যে মৌলিক অস্তিত্ব তাকি সম্পূর্ণভাবে ধর্ম ভিত্তিক? এই প্রশ্নটি মনে উদিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আধুনিককালে এসে তাই জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের বিচ্ছেদ ঘটেছে। উন্নত সমাজে তাই রাষ্ট্র ধর্ম নিরপে হয়েছে। একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের জনগোষ্ঠী স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে। যেখানে তা পারে না সেখানেই মানবতা লাঞ্ছিত হয়।
এই উপমহাদেশের সা¤প্রতিক ইতিহাসে যখন থেকে রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে তখন থেকেই মানবতা লাঞ্ছিত হয়ে চলেছে। এর বড় উদাহরণ ১৯৪৭ সালের ঘটনা। ধর্মান্ধতা দুই প্রধান জনগোষ্ঠীকে তখন এমনভাবে মোহগ্রস্ত করেছিল যে ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টের পরবর্তী সময়ে সমস্ত উপমহাদেশ জুড়েই রক্তগঙ্গা বয়ে গিয়েছিল এবং বহি:প্রকাশ ঘটেছিল মানুষের চরমতম নৃশংসতার ও নিকৃষ্টতম চরিত্রের। সাতচল্লিশের ঐ ঘটনার অব্যবহিত পরে, প্রকৃতপে সঙ্গে সঙ্গে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রধান পুরুষ মোহম্মদ আলী জিন্নাহ রাষ্ট্রটি যে সকলের সকল ধর্মাবলম্বীর সেকথা বললেও তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি। মানুষের পশু শক্তিকে নিগড় থেকে ছেড়ে দিলে তাকে আবার প্রশমিত করা সহজে সম্ভব হয় না। ভারতবর্ষের খণ্ডিত পাকিস্তান ও ভারত দুই রাষ্ট্রেই পরবর্তীকালের ধর্মান্ধতা ও তার কারণে রক্তপাত বার বার সংঘটিত হয়েছে। দূর্ভাগ্যবশত এই সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসের মূল যে প্রকৃতপে ধর্ম নয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য তা চলে গেছে দৃষ্টির আড়ালে। আমাদের বাংলাদেশে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস তার অতীত ও বর্তমান সামান্য পর্যবেণ করলে দেখা যাবে যে, ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান দারিদ্র্য বৈষম্য ও মতালোভীদের ধর্মকে ব্যবহারের অপচেষ্টার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
একসময় বাঙালী মুসলমানের যে আত্মপরিচয়ের সংকট ছিল তার মূল কারণও প্রধানত রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক। দীর্ঘকালীন মুসলিম শাসনের সময় শাসকদের সংস্কৃতির যে প্রভাব ভারতবর্ষের জনগোষ্ঠীর ওপরে পড়তে থাকে তা কিন্তু সর্বত্র একভাবে পড়েনি। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন ধ্যান ধারণা ও চিন্তা চেতনা কিন্তু ধর্মেও প্রভাবে তেমনভাবে পরিবর্তিত হয়নি। বর্ণাশ্রমের যে মারাত্মক নিগড় দীর্ঘকাল ধরে রচিত হয়েছিল সেই নিগড় থেকে এই উপমহাদেশের মানুষ এই আধুনিককালেও সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারেনি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×