somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মপরিচয় ২

১৯ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন সময়ে উচ্চতর শ্রেণীতে বিশেষ করে যে হৃত বংশগৌরবের কথা ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হয় তার পেছনেও প্রকৃতপে ঐ মনোভাবই কাজ করে। যদি কল্পনা করা যায়, এমন একটি সমাজ যেখানে অত্যন্ত উন্নত জীবনযাপন করা যাচ্ছে। সমস্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাচ্ছে। এবং প্রতিটি মানুষের কর্ম অর্থনৈতিকভাবে যথার্থ মূল্যায়িত হচ্ছে সে সমাজে এই সমস্ত গর্বের কথা মানুষ আর বলবে না। মানুষের যে নিজস্ব আত্মশক্তি তার যখন পূর্ণ বিকাশ ঘটবে এবং আমরা মেনে নেবো যে সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই, তখন ব্যক্তি স্বকীয়তা ও তার মানবিক উৎকর্ষই তার মূল্যায়নের মানদণ্ডে পরিণত হয়। মানুষের বিবর্তন যদি একটি ইতিবাচক পথে এগোয় তাহলে এমন একটা সময় বিশ্বব্যাপী কল্পনা করা যেতে পারে যখন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে হিংসা দ্বেষ ও সন্ত্রাস থাকবে না। উনবিংশ শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ এমন একটি সামাজিক অবস্থার কথা চিন্তা করলেও যে পথে তা অর্জন করার প্রচেষ্টা হয়েছিল সে পথ হয়তো এতই বন্ধুর যে তেমন একটি অবস্থায় উপনীত হওয়ার আগেই তার তথাকথিত অগ্রযাত্রা বিঘিœত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ হয়তো ঠিকই বলেছিলেন, মানুষ যে কি চায় তা নিজেই জানে না। এক ঘটি জল চায় না আধখানা বেল চায় জিজ্ঞেস করলে বলতে পারে না। তাই অনেক সময় মনে হয় , তারই ভাষায় যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই/ যাহা পাই তাহা চাই না। চাওয়া ও পাওয়ার এই ব্যবধান হয়তো মানুষের সবসময় থাকবে। আর যদি তা নাই থাকে তাহলে জীবন স্থবির হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। এই দোটানার মধ্যেই হয়তো আমাদের জীবনের দোলাচল। কিন্তু আপাতত দূর ভবিষ্যতে নয় অদূর ভবিষ্যতে যথার্থভাবে আমাদের জীবন পরিচালনার কথা ভাবা দরকার। আপাতত অন্য সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে সবাই মিলে একটা শুভবুদ্ধির অনুসরণে যথার্থ অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপযোগী রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটানোর পদপে নিতে পারলে সেটা সার্বিক মঙ্গলের সূচনা করতে পারত। কিন্তু তা হবে কি? হলে কিভাবে হবে?
বর্তমানে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক উদ্বর্তনের যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি সেখানে আত্ম পরিচয়ের কোন সংকট থাকবার কথা নয়। সাতচল্লিশ, বায়ান্ন ও একাত্তরের ধারাবাহিকতায় আজকে অন্তত এটা সুষ্পষ্ট যে আমরা আমাদের আত্মপরিচয় ও জাতিগতভাবে আত্মসম্মানবোধ এ দুটোর সমন্বয় ঘটাতে পারেনি। আজকে এই মুহূর্তে বিংশশতাব্দীর মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত একবিংশ শতাব্দীর সূচনায় জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থায় আমাদের এই ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠী নিশ্চিতভাবেই একটি বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত। আমাদের শিল্প সাহিত্য সঙ্গীতসহ সামগ্রিক সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের বৈশিষ্ট্যে এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করা এখন অসম্ভব। রাজনৈতিকভাবে কোন স্বাভাবিক বুদ্ধির মানুষ আজকে যেমন অখণ্ড ভারতের কথা কল্পনা করতে পারবেন না তেমনি অখণ্ড পাকিস্তানের কথাও কল্পনা করতে পারবেন না। কেননা বাংলাদেশের জন্ম কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ঘটেনি। তা আমাদের সাংস্কৃতিক উজ্জ্বীবনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনাচরণের বৈশিষ্ট্যে লালিত হয়ে আত্মসংরণ এবং আত্ম মর্যাদাবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে একটি রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে অর্জিত। সম্পূর্ণ উন্মাদ ছাড়া আর কারো পে এই অর্জনকে আজকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। আজকে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আমরা বাঙালি এবং বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের অধিবাসী। সেই অর্থে জাতীয়তায় বাংলাদেশী। বাংলাদেশী তাই শাব্দিক পরিচয়। কিন্তু বাঙালি আত্মিক পরিচয়। পশ্চিম বঙ্গের বাঙালি জাতিগত পরিচয়ে ভারতীয় ও আত্মিক পরিচয়ে বাঙালি । কাজেই এই দুই বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাদৃশ্য যেমন বৈশাদৃশ্যও তেমনি প্রকট। তাই জাতিগতভাবে আমাদের আত্মপরিচয়কে সংরণ করবার, উন্নীত করবার চৈতন্যে উদ্বোধিত হতে পারলে আমাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবার কোন কারণ আছে কি?
রাষ্ট্র শক্তিকে কুগিত করার ল্েয যে সমস্ত রাজনীতির প্রধান বাহন ধর্ম সেখানে কেবলমাত্র মানুষকে তার মনুষ্যত্বের পরিচয়ে নয় বরং তার ধর্ম পরিচয়ে চিহ্নিত করা হয়। অথচ মানুষের অন্তর্গত স্বত্তার যে মৌলিক পরিচয় তা তার অনুসৃত ধর্মের দ্বারা সৃষ্ট হয় না। মানুষ হাসে, কাঁদে, উৎফুল্ল হয়, বিষাদগ্রস্ত হয় এবং ভালোবাসে। শুভবুদ্ধি ও ভালোবাসা মানুষকে স্বস্তির দিকে টানে, শান্তির দিকে টানে। অন্যদিকে বিদ্বেষ ও জিঘাংসা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিকে, শ্রেণী থেকে শ্রেণীকে, এক জনগোষ্ঠী থেকে আরেক জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করে, বিশ্লিষ্ট করে এবং প্রকৃতপে মানব সভ্যতাকে আক্রান্ত করে। পরম করুণাময় ধর্ম অবতীর্ণ করেছিলেন মানুষেরই জন্যে। এদেশেরই দুই শ্রেষ্ঠ সন্তানের একজন বলেছিলেন, সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই। আরেকজন বলেছিলেন, মানুষ এনেছে গ্রন্থ/ গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন। আমদের বাউলের গান, ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালীর আকুতি, মেঠো বাঁশির উদাস করা সুর এ সমস্তই আমাদের নাগরিক চেতনায় বর্তমান কালের ধ্যান ধারণার বহি:প্রকাশসহ যে মূলধারার সংস্কৃতিকে বহন করে চলেছে তা উচ্চ কণ্ঠে বলছে- সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই। আমাদের সাংস্কৃতিক ও আর্থসামাজিক তাবৎ কর্মকাণ্ড যেদিন সত্যিকার অর্থে এই মূলধারার বিশাল স্রোতে সবেগে প্রবাহিত হবে মানুষের জন্যে মানুষের কল্যাণে কেবল সেদিনই বলতে পারব ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি/ কী অপরূপ রূপে দেখা দিলে জননী’।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×