প্রথম পর্ব
ছুটির দিন বারান্দায় বসে পেপার পড়ছি । হঠাত করে খেয়াল করলাম বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি । রিদিতাটা কি করছে কে জানে । হয়তো রান্না করছে । রান্না করতে আবার সে খুব ভালবাসে । প্রায়ই নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করে আর আমাকে টেস্ট করতে বলে । টেস্ট করার সময় ও আমার দিকে এমনভাবে আগ্রহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যে সে দৃষ্টি দেখলে আর বলতে পারি না যে খাবারটা এত জঘন্য হয়েছে যে গলা দিয়ে নামছে না । যাই হোক বৃষ্টির ফোঁটা আমাকেও স্পর্শ করলো ।
এমনই এক বৃষ্টির দিনে আমি রিদিতাকে ক্যাম্পাসে প্রথম দেখি ।
সেদিন ছিল বৈশাখের প্রথম দিন । পুরো ক্যাম্পাস নতুন বছরকে স্বাগত জানানোয় ব্যস্ত । রাস্তায় রাস্তায় আল্পনা । সবাইকে শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে সুন্দর লাগছিল । কিন্তু হঠাত করে বেয়াড়া বৃষ্টি কোথা থেকে যেন উদয় হল ।একটু আগেও যেখানে রোদে-গরমে সবাই অতিষ্ঠ থাকলেও হঠাত করে বৃষ্টির আবির্ভাব মোটেও স্বস্তির ছিল না । সবাই রাস্তার পাশের টঙের দোকানগুলোতে আশ্রয় নিল । আমিও তাই করলাম । টঙ্গওয়ালা মামার কাছ থেকে গরম চায়ের পেয়ালা নিয়ে যখন রাস্তার দিকে তাকালাম তখন কিছুটা অবাক হলাম ।
দেখি একটা মেয়ে মনের আনন্দে নাচতে নাচতে বৃষ্টিতে ভিজছে । বৃষ্টির পানিতে তার সাদা-লাল শাড়ি ভিজে একাকার , চোখের কাজল পানিতে ধুয়ে মুখ বেয়ে পরছে । হাসি দেখে মনে হল যেন সেই হাসিতে মুক্তো ঝরে । আমি চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়েই তাকে দেখতে থাকলাম । বুকের ভিতর কেমন চিনচিনে ব্যাথা শুরু হল । মনে হল , এই মেয়ে যদি আমার জীবনসঙ্গী হত !! হঠাত দিপ্ত এসে আমাকে ঝাঁকি দিয়ে বলল ,
- কিরে চা তো ঠান্ডা হয়ে গেল ।
আমি চোখ না সরিয়েই দিপ্তকে প্রশ্ন করলাম
- ঐ মেয়েটা কে রে ?
- কেন ? প্রেমে পরেছিস ? বড় আপু হতে পারে কিন্তু !
- আরে নাহ! এমনিই ।
বৃষ্টিতেই সবার বৈশাখের আনন্দ ধুয়ে গেল । বাসায় ফিরেও মেয়েটার চিন্তা মাথা থেকে দূর করতে পারলাম না । পুরো সেমিস্টার জুড়ে সবগুলো ক্যাম্পাসে আমি তাকে খুজলাম কিন্তু একটিবারের জন্যও তার দেখা পাওয়া গেল না । এসব করতে গিয়ে সেমিস্টার রেজাল্টও খারাপ হল ।
পরের সেমিস্টারে COA ক্লাসে ঢুক্তেই দেখতেই দেখি তিনি সামনে বসে বসে পাশের বান্ধবীর সাথে কথা বলছেন । চশমা পরা , খুবই সাধারণ পোশাক-আশাক । Name Call এর সময় শুনলাম তার নাম রিদিতা রাহমান । পরের দুইটা ক্লাসেও গিয়ে দেখি তিনি সেই দুই ক্লাসেও বর্তমান । আমার খুশি আর ঠেকায় কে ? সেমিস্টারের ৪ টা কোর্সের ৩ টাতেই তিনি আমার সাথে !! আল্লাহ মনে হয় আমার উপর অবশেষে মুখ তুলে তাকিয়েছেন !! বন্ধুদের মাধ্যমে জানলাম তিনি আমাদের ই ব্যাচের । ফার্স্ট সেমিস্টারে অন্য সেকশনে ছিল । ক্লাস শুরু হল পুরোদমে । তিনি পরাশুনায় খুব মনোযোগী , ক্লাসে স্যার-ম্যাডামদের লেকচার খুব মনোযোগ দিয়ে শুনত । আর আমার মনোযোগ থাকতো তার দিকে । পুরোটা ক্লাসে আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম । চশমার আড়ালে তার সৌন্দর্য মোটেও ঢাকা পড়ে নি । সবসময় ক্লাসে ঢুকে তার একটু পিছে যেয়ে বসতাম । সে কি বুঝতো কি না জানতাম না । একদিন ক্লাস শেষে বের হচ্ছি , এমন সময় রিদিতার বান্ধবী অনি আমাকে দাঁড়া করাল , তার আমাকে কি জানো বলার আছে ।
- তুমি প্রত্যেকটা ক্লাসে রিদিতার দিকে তাকিয়ে থাকো কেন ?
- কৈ না তো ! আমি তো মনযোগ দিয়ে লেকচার শুনি । রিদিতাটা কে ?
- এইইই ! একদম মিথ্যা বলবানা । আমি দেখছি যে তুমি তাকায় থাকো । রিদিতা বলছে যেন তুমি তাকে ডিস্টার্ব যাতে না করো ।
- আমি মোটেও তাকিয়ে থাকি না , আর যদি তাকিয়েও থাকি তাতে ডিস্টার্ব করা কিভাবে হয় ?
- তা আমি জানি না । তুমি আর ওর দিকে তাকাবা না
অনির কথায় থেমে যাওয়ার পাত্র নাই । আমি তো শুধু তার দিকে চেয়ে থাকি । তাকে ডিস্টার্ব করার কোন ইচ্ছা তো আমার নেই । আর যদি সে ডিস্টার্ব ই ফিল করে সে নিজে এসে আমাকে বলুক । বান্ধবীকে দিয়ে বলাতে হবে কেন ?
এরপর থেকে সে ক্লাসে লেট করে আসা শুরু করল যাতে আমি তার কাছাকাছি বসতে না পারি ! আমিও নাছোড়বান্দা । আমিও তার থেকেও লেট করে আসতে লাগলাম , যথারীতি তার পিছনে বসতাম আর তার দিকে চেয়ে থাকতাম । একদিন সে নিজেই এল কথা বলতে
- তোমার সমস্যা কি ? আমার দিকে এভাবে তাকায় থাকো কেন ক্লাসে ?
- কৈ আমার তো কোন সমস্যা নেই !
- তোমার জন্য আমি ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছি না । কুইজগুলাও খারাপ হচ্ছে । এরকম চললে তো আমার সেমিস্টার ড্রপ দিতে হবে !
- আচ্ছা কাল থেকে আপনার আর কোন প্রব্লেম হবে না । আই অ্যাম সরি !
এরপর থেকে আমি ক্লাসে যাওয়া কমিয়ে দিলাম । ক্লাস করা ই বাদ দিয়ে দিলাম । সেমিস্টার ফাইনাল চলে আসলো । এক্সাম তো দিতেই হবে । গেলাম এক্সাম দিতে ! প্রত্যকটা কোর্সেই তার আর আমার নাম কাছাকাছি , এজন্য সিট ও কাছেই পরছে । নিজেকে অনেক কস্টে দমিয়ে রেখে এক্সাম গুলো দিলাম । সে যেন কোনভাবেই ডিস্টার্ব ফিল না করে তার চেস্টা করলাম । প্রতিটা এক্সাম শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বাসায় চলে যেতাম যাতে তার সাথে চোখাচোখি না হয় । শেষ এক্সাম দিয়ে বের হইসি যেদিন , দেখি বাইরে প্রচন্ড বৃস্টি । আমার কাছে ছাতাও নেই আবার বাসায়ও ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি । তাই কোনকিছু না ভেবেই রাস্তায় নেমে পরলাম । হঠাত করে পাশ থেকে কে জানো ডাকলো ! আমার রিদিতা !
- এই ছেলে ছাতার নিচে আসো !
- আমাকে বলছো ?
- এখানে কি আর কোন গাধা আছে যে তাকে বলবো ?
আমি চুপ করে তার ছাতার নিচে গেলাম । তারপর হাটতে শুরু করলাম
- ছাতাটা ধরো ! ম্যানার শিখো নাই ?
আমি চুপ-চাপ ছাতাটা ধরলাম !
- ছাতাটা বাম হাত দিয়ে ধরে ডান হাত দিয়ে আমার হাত ধরো !
- মানে কি ?
- এতো মানে মানে করো কেন ? যা বলছি তা করো !
- আচ্ছা ! ( হাতটা ধরলাম )
- ক্লাস তো করো নাই একটাও ! এক্সাম কেমন দিসো ? রেজাল্ট খারাপ হলে কে ভুগবে ? পরের সেমিস্টার থেকে ঠিকমতো ক্লাস করবা !
- আচ্ছা ।
- আর ছাতা ছাড়া বৃস্টিতে বের হইছো কেন ? ভিজে জ্বর আসলে আমার সাথে ডেটিং এ যাবে কে শুনি !
এরকম বকা-ঝকা চলতে থাকলো ! আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকতেসিলো না তখন ! আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম , কিরকম অনর্গল কথা বলেই চলছে সে বিরতি ছাড়া !! এরপর থেকেই আমাদের পথচলা শুরু । আমাকে পড়িয়ে পড়িয়ে ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে ফেলেছে ! তিনি না থাকলে যে আমার কি হতো !! বিয়ের আগেই আমার মা-বাবাকে পটিয়ে ফেলেছিল ! তারপর মহা ধুমধামে বিয়ে হল । এখন চলছে টোনা-টুনির সংসার ।
এসব চিন্তার মাঝে কোনসময় যে তিনি আমার পাশে এসে বসেছেন টের ই পাই নি ! হঠাত পিঠে হাত পরাতে টের পেলাম ,
- কি চিন্তা করতেস ?
- তোমাকে প্রথম দেখার স্মৃতি
- বৃস্টিতে ভিজবা ! অনেকদিন ভিজি না !
- চলো ! তারপর ভুনা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াবা !
- আচ্ছা জনাব ! চলেন চলেন !
(লেখাটি আবেগ আর কল্পনা নিয়ে লেখা । বাস্তব জীবনের সাথে মিল থাকতে পারে । ভবিষ্যৎ কেমন হবে কেও বলতে পারে না , কল্পনা করতে পারে মাত্র ।আর আমার বাংলা ভাষায় অনেক ভুল ত্রুটি আছে , আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । )