রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ। সোমবার। বেলা দ্বিপ্রহর।মধ্যাহ্ন-সূর্যের দীপ্ত দহনে মরুপ্রকৃতি খা-খা করিতেছে। এমন সময় মদিনা হইতে দুই মাইল দূরবর্তী কোবা গিরি শীর্ষে দাঁড়াইয়া একজন ইহুদী দেখিতে পাইলঃ একটা ক্ষুদ্র কাফেলা মদিনা পানে অগ্রসর হইতেছে। ব্যাপার বুঝিতে তাহার বাকী রহিল না। তৎক্ষণাৎ সে উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলঃ "মদিনাবাসী মুসলমানগণ, প্রস্তুত হও, তোমাদের চিরবাঞ্ছিত মহানবী আসিতেছেন"।
হযরত মক্কা হইতে নিরুদ্দেশ হইয়াছেন, এ-সংবাদ মদিনাবাসীরা জানিতে পারিয়াছিলেন। তাঁহারা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, রসুলুল্লাহর শুভাগমন আসন্ন হইয়া আসিয়াছে। তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিবার জন্য মুসলমানেরা তাই প্রতিদিন প্রত্যুষে কোব-প্রান্তরে আসিয়া সমববেত হইতেন এবং সূর্য-কিরণ অসহনীয় প্রখর না হওয়া পর্যন্ত তথায় অপেক্ষা করিতেন, তারপর বাধ্য হইয়া ঘরে ফিরিয়া যাইতেন। সেদিন তাঁহারা এমনি ভাবেই হযরতের প্রতীক্ষায় বসিয়া থাকিয়া সবেমাত্র গৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়াছেন, এমন সময় ইহুদীর এই আহ্বান তাঁহাদের নিকট গিয়া পৌঁছিল।
সংবাদ প্রাপ্তিমাত্র নগরবাসী মুসলমানেরা দলে দলে ঘর হইতে বাহিয় হইয়অ আসিলেন। আবালবুদ্ধবনিতা সকলেরই মনে আজ পুলক ও অফুরন্ত কৌতূহল। দীর্ঘদিনের ধ্যানের ছবি আজ বাস্তব হইয়া দেখা দিবে, আল্লাহর রসুলকে আজ তাঁহারা নিজেদের মধ্যে পাইবেন, এ কি সহজ আনন্দ ! উল্লাস ও উদ্দীপনায় সকলের হৃদয়ই আজ একবারে ভরপুর। হযরত ধীরে ধীরে কোবা-পল্লীতে উপনীত হইলেন। দূর হইতে তাঁহাকে দেখিয়া মনে হইতেছিল বেহেশতের একখানি স্বপ্ন মূর্তি ধরীয়া ধরার ধূলায় নামিয়া আসিতেছে।
...............................................................................
...............................................................................
ধীরে ধীরে হযরত নগর প্রবেশ করিলেন। অমনি শতকণ্ঠে ধ্বনিত হইয়া উঠিলঃ
"শান্তির রাজা এস!
আল্লাহর রসুল এস!
বেহেশতের নিয়ামত এস!
আমরা তোমায় বরণ করি!"
গৃহের আঙিনায় পুরমহিলারা অপেক্ষা করিতেছিলেন। হযরতকে দেখিতে পাইয়া তাঁহারাও আজ আনন্দে এই কাসিদা গাহিয়া উঠিলেনঃ
[" তালা ‘আল বাদরু ‘আলায়না
মিন্ ছানিয়াতিল বিদা‘য়ী
ওয়াজাবাশ শুক্রু ‘আলায়না
মাদা’আ লিল্লাহি দা‘য়ী।....."]
"দেখ চেয়ে ওই চাঁদ উঠেছে
গগন কিনারায়
তার হাসির আভা ছড়িয়ে গেল
নিখিল দুনিয়ায়।"
বালক-বালিকারা দফ বাজাইয়া নাচিতে নাচিতে হযরতকে ঘেরিয়া ধরিল এবং সুললিত কণ্ঠে" ইয়া মুহম্মদ, ইয়া রসুলুল্লাহ!" বলিয়া গান গাহিতে লাগিল। হযরতের সবচেয়ে ভাল লাগিল এই বালক-বালিকাদের নির্দোষ নৃত্য-সঙ্গীত। উটের পিঠ হইতে নূরনবী নামিয়া আসিলেন; সকলের হাত ধরিয়া বলিতে লাগিলেনঃ "তোমরা আমাকে ভালবাস?" একসঙ্গে উত্তর আসিলঃ "আলবৎ! আলবৎ"
হযরত তখন সকলের চিবুক ধরিয়া আদর করিয়া হাসিমুখে বলিলেনঃ" আমিও তোমাদিগকে ভালবাসি!" খুশিবলে বাল-বালিকারা জোরে জোরে দফ বাজাইয়অ জয়ধ্বনি করিয়া উঠিল।
( কবি গোলাম মোস্তফার অমর রচনা 'বিশ্বনবী' হতে চয়িত)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




