somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাতৃভাষা আন্দোলনের সেই সব সূর্যসন্তানেরা......

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী

আমি কি ভুলিতে পারি ...............



ভাষার দাবিতে ১৪৪ ধারা আগল ভেঙে রাজপথে নেমেছে ছাত্র জনতা। দৃপ্ত স্লোগানে তাদের সাথে যোগ দিলেন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র রফিক উদ্দিন আহামেদ।ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রঙ্গনে শহিদ হলেন তিনি, একুশের প্রথম শহীদ এই বীর অমর হয়ে থাকবেন ভাষার ইতিহাসে।



১৯৫২, একুশের রক্তের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকার নওয়াবপুর রোড। ৮ বছরের শিশু অহিউল্লাহ তখন তৃতিয় শ্রেণীর ছাত্র। তিনিও শরিক হয়েছিলেন মায়ের ভাষায় দাবিতে, পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহিদ হন তিনি।



নুরুল আমিনের ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নেমেছে ছাত্র জনতা। দৃপ্ত স্লোগানে বরকতও ছিলেন মিছিলের সাগরে। সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র বরকত। পথে নেমেছিলেন ভাষার দাবিতে, শহীদ হলেন তিনি।



আব্দুল জব্বার। বিদ্রোহের হাওয়া তাঁকেও নিয়ে গেল মিছিলে। তিনিও স্লোগান দিলেন "রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই"...
গুলি চললো মিছিলে। হাটু আর কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হলেন আব্দুল জব্বার।



২২ শে ফেব্রুয়ারী একুশের উত্তাপে উত্তাল সারাদেশ। উতপ্ত ঢাকার নওয়াবপুর রোড। বায়ান্নার ২২ শে ফেব্রুয়ারী পুলিশের গুলিতে শহিদ হলেন হাইকোর্টের হিসাবরক্ষন শাখার কেরানী শফিউর রহমান।



১৭ই এপ্রিল, শহীদ হলেন সালাম। অষ্টম শ্রেণীর পরে তিনি আর পড়াশুনো করতে পারেননি, চাকরি করতেন শিল্প দপ্তেরের রসায়ন বিভাগের ফাইল কিপার হিসেবে। উপেক্ষা করতে পারেননি ২১ এর রক্তের ডাক, তাই নেমেছিলেন রাজপথে, মিছিলে। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ৪৫ দিনে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধের পরে হার মেনে যান এই বীর।



৫২'র ২১শে ফেব্রুয়ারী, সমগ্র ঢাকা জেলায় ১৪৪ ধারা, মিটিং মিছিল নিষিদ্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কজন তরুণ দিলেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা, বেরিয়ে এলো মিছিল, রচিত হলো মাতৃভাষার অমর কাব্যগাঁথা। ৪৮ থেকে ৫২, ভাষার লড়াইয়ে সবসময়ে সবার আগে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক আব্দুল মতিন।



৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৫২, খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষনার প্রতিবাদে সারাদেশে পালিত হলো হরতাল, ছাত্রসভা। নেতৃত্ব দিলেন ছাত্রনেতা গাজীউল হক। স্কুল কলেজ ঘুরে ছাত্রদের উদ্বিপ্ত করেণ তিনি, ২০ তারিখ রাতে সব হলের ছাত্রদের সংগঠিত করলেন। সভাপতিত্ব করেন একুশের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার মিটিং এ।



১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ডাকা হরতাল কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হন তিনি।১৯৫২ এর জানুয়ারিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক গোলাম মাহবুব ২১ ফেব্রুয়ারী ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্ত জানান, শুরু হয় একুশের প্রেক্ষাপট।



২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ ঢাকায় সব রকম মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সেদিন দলে দলে রাজপথে নামতে শুরু করেছে বাংলার দামাল ছাত্র সমাজ। ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার শুরু করলো পুশিল, গ্রেপ্তার হলেন হাবীবুর রহমান শেলী। একুশের গ্রেপ্তার হওয়া প্রথম ছাত্র তিনি।



ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ উতপ্ত ঢাকার রাজপথে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও একুশের দুপুরে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গলেন, নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী শাফিয়া খাতুন। জাতির মিছিলে শরিক হল অন্নপূর্ণারাও। রচিত হলো একুশের রাজপথ।



১৯৫২ ভাযা সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত একুশের বাংলাদেশ। পার্লামেন্ট বয়কট করে প্রতিবাদ জানালেন আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। নরুল আমিনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ছুটে গেলেন রাজপথে।



২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ গুলি চললো ছাত্র-জনতার উপর।প্রতিবাদে গণপরিষদের অধিবেশন বয়কট করলেন ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে '৪৮ এর ২৩ ফেব্রুয়ারী গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে তিনিই প্রথম দাবি জানান বাষ্ট্র ভাষার বাংলার।



১৯৫২, সারা বাংলায় চলছে একুশের রক্তের প্রতিবাদ; স্লোগানে, গানে, কবিতায়। আব্দুল গাফফার চৌধুরী লিখলেন এক অমর কবিতা " আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী "এই কবিতাতেই প্রথম বাংলাকে উল্লেখ করা হলো একটি দেশ হিসেবে, লেখা হলো অমর একটি নাম "বাংলাদেশ"।



বুলেটের প্রতিবাদে উত্তাল বাংলায় শানিত কন্ঠে গেয়ে উঠেছিলেন গণসংগিত শিল্পী আব্দুল লতিফ, গেয়েছিলেন "ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়"!
তিনিই একুশের প্রথম গান "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী" এর প্রথম
সুরকার।



একুশের প্রথম গান "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী", ভাষা আন্দোলনের ৫৯ বছর পরও যে গানটা শুনলে বুকের ভেতর হু হু করে ওঠে প্রতিটি বাঙ্গালীর, সেই অমর গানটি প্রথমবারের গেয়েছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভাষা সৈনিক আলতাফ মাহমুদ।



এমন অনেক আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের ফসল আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। হে ঈশ্বর আমাদের ক্ষমতা দাও আমাদের পূর্বসূরীদের বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই সম্পদকে আমরা যেন সসন্মানে রক্ষা করতে পারি।




পোস্টের সকল ছবি এবং কিছু লেখা আয়েশা মেমোরিয়াল স্পেশালাইজড হসপিটালের তৈরি করা একুশের ব্যানার থেকে নেয়া!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৪৪
১০৫টি মন্তব্য ১০৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×