অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের কথা মনে আছে। বিদেশে যেখানে যান, সেখানেই তিনি তার ‘থ্রি জিরো থিওরি’ বা তিন শূন্য তত্ত্ব—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণের কথা উল্লেখ করেন। বাইরের লোকদের কাছে তিনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ। শান্তি প্রতিষ্ঠায় নোবেল পেয়েছেন।
আমরাও সেভাবে জানতাম তাঁকে। তিনি ক্রমে তাঁর চেহারা প্রকাশিত হতে থাকল। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে নিঃস্বদের থেকে মুনাফা লুট করে নেওয়া শুরু করলেন। নিয়ম বহির্ভুতভাবে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ আঁকড়ে থাকলেন। দেশের টাকা পাচার করে আমেরিকার নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের ফান্ডে জমা দিলেন। শ্রমিকদের টাকা খেয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা খেলেন, শাস্তি পেলেন আদালতের মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যতবার ক্ষমতায় এসেছেন ততবার তিনি গ্রামীণ ব্যাংককে সহায়তা করেছেন। কিন্তু বেঈমান চরিত্রের মুহাম্মদ ইউনূস সেটা অস্বীকার করেছেন বারবার। গ্রামীণের এমডির পদ থেকে অপসারণ দিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে ইউনূসের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি অবসরের বয়সসীমা পার হওয়ার পর আর গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়তে চাইলেন না ইউনূস। কিন্তু সরকারি নিয়ম প্রতিপালন সরকারের দায়িত্ব, এবং সে হিসাবে সরকার বাধ্য করল তাঁকে। আর এটাই ব্যক্তিগত প্রতিশোধের হিসেবে নিলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করতে কলকাঠি নাড়লেন মুহাম্মদ ইউনূস। সফলও হলেন। একটা লোক আজীবন দেশের বিরোধিতা করে গেল এবং শেষে সে হয়ে গেল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান; এটা কেবলই সম্ভব বাংলাদেশে।
যে লোক আজীবন বাংলাদেশের বিরোধিতা করেই গেছে, তাঁর দ্বারা কীভাবে দেশের মঙ্গল হয়? সেটার প্রভাব আমরা দেখছি গত পৌনে দশ মাসে।
ক্ষমতা দখল করে প্রথমেই নিজের সব মামলা ও সব শাস্তি খারিজ করিয়ে নিলেন। নিজের ৬৬৬ কোটি টাকা কর মওকুফ করিয়ে নিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর মওকুফ করিয়ে নিয়ে নিলেন। এরপর গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়, মোবাইল ফাইনানসিয়াল সার্ভিসেসের লাইসেন্স, বিদেশে লোক পাঠানোর লাইসেন্স করিয়ে নিলেন, ইউনূস সেন্টারের লোকদের সরকারি চাকরি দিলেন।
কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের সরকারে নিয়ে আসলেন তিনি বিদেশিদের। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়ে আসলেন যে খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দিলেন উনি নারী নিপীড়ক এবং বিদেশের নাগরিক।
মুহাম্মদ ইউনূসের আমল হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়। তাঁর সরকার দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক মাত্রা দিয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে হচ্ছেন চরম দুর্নীতিবাজ, ফলে এর প্রভাব পড়েছে সরকারের প্রতি সেক্টরে।
তাঁর সরকারের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে তাদের পিএ, পিএস, তাদের পরিবারের সদস্যরা, কিংস পার্টির সদস্যদের প্রত্যেকেই জুলাইয়ের নামে লুটপাটের মোচ্ছবে। একেক জনের দুর্নীতির যে তথ্যগুলো বের হচ্ছে সেটা ভয়াবহ।
৫৪ বছরের বাংলাদেশে যত দুর্নীতি হয়েছে, সেটা কি এই দশ মাসে ছাড়িয়ে গেল কিনা, এটা নিয়ে বিতর্কও চলতে পারে।
খেয়াল করলে দেখবেন, মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম বলে থাকেন, তাদের সবকিছুর 'ম্যান্ডেট' রয়েছে। তাঁর বক্তব্যকে আমলে নিন। দেখবেন বয়ান তাঁর অসত্য নয়। এই সরকার আসলেই জুলাইয়ের নামে এই লুটপাটের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত।
বড় হুজুর মুহাম্মদ ইউনূস কথায় কথায় বিদেশে গিয়ে যে থ্রি-জিরো তত্ত্বের কথা বলেন, দেশে তাঁর দুর্নীতির থ্রি-সিক্স দিয়ে আসলে শুরু। বড় হুজুরের এই থ্রি-সিক্স অর্থাৎ প্রারম্ভিক ৬৬৬ কোটি টাকার দুর্নীতি দিয়ে যে মহাদুর্নীতিবাজ সরকারের যাত্রা শুরু, সেটা অনুসরণ করে চলেছেন ছোটহুজুররা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



