আজ শিক্ষার পিছনে মানুষ দিনরাত ছুটে চলেছে। এর গতির কোনো শেষ নেই। যে বাচ্চাটা এখন পর্যন্ত মা-বাবা কে ও ঠিক মত ডাকতে পারে না তাকেও খুব ভোরে ডেকে তোলা হচ্ছে। তাকে স্কুলের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে তার অভিভাবক। যে বাচ্চাটার এখন বল নিয়ে কাঁদায় মাখামাখি করা উচিত তার পিঠেও একগাদা বই ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ভার বহন করা তার সাধ্যে কুলায় না।
,
তাহলে এগুলোই কি শিক্ষা? যার ফলে আমাদের দেশের কোমল বাচ্চারা বিকৃত মেধায় পরিণত হচ্ছে? এইকি শিক্ষা যেখানে বাচ্চাকে 'ক' বলতে শেখার আগে কয়েকটি বই এর ভার নিতে হয়?
,
,
যদি প্লে তে পড়া একটা বাচ্চার দশটার উপরে বই বহন করতে হয় তাহলে কলেজে পড়া একটা ছেলে কেন প্যান্টের পিছনের পকেটে একটা ভাজকরা খাতা নিয়ে কলেজে যায়? এটা কি ধরনের শিক্ষা?
,
আজ আমাদের দেশের সরকারী প্রাইমারী স্কুল গুলো কেন ছাত্র-ছাত্রী শূন্য? আচ্ছা সেখানে কি লেখাপড়া হয় না? আজ আপনার বাচ্চা কিন্ডার গার্ডেন এ পড়তেছে। আপনি কোন স্কুলে পড়েছেন বলেন তো? আপনার আমলে কি ছিল কিন্ডার গার্ডেন? আপনি কি শিক্ষিত হননি? নাকি সেটা পূর্ণ শিক্ষা হয়নি?
,
,
আপনার বাচ্চা আজ প্লে নামক একটা ক্লাসে পড়তেছে। একটু ভালো করে আপনার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে দেইখেন তো আপনার ছেলে প্লে বানান করতে পারে কিনা? অনেকে তো শুনেছি এও বলেন প্রাইমারীর শিক্ষক রা মানসম্মত না। কেজি স্কুল মানসম্মত। বেস মানলাম, একটু গভীরে দেখা যাক ............ একজন প্রাইমারীর শিক্ষক কে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য অন্তত দুইটা পরীক্ষা পাস করে আসতে হয়, সেটা সবারই জানা। আর একটা কেজি স্কুলের শিক্ষকের? মানলাম কেজি স্কুলের শিক্ষকরা বেশী শিক্ষিত। কিন্তু জানেন কি? যে তারা প্রাইমারীর শিক্ষকদের কাছে কিছুই না। যারা ওই দুই পরীক্ষায় পাশ না করে, দেখা যায় তারাই গিয়ে একটা কিন্ডার গার্ডেন খুলে। বেশী বই পড়লেই হয়ত শিক্ষিত হওয়া যায় এটাই সবার ধারণা। আসলেই শিক্ষিত হওয়া যায়, কিন্তু স্বশিক্ষিত হওয়া যায় না।
,
,
আর অভিভাবক গণদের মাঝে একটি কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে তার সন্তান কে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে। একটি বাচ্চাকে তার স্কুলে যাবার প্রথম দিনই বোঝানো হয়, ভাল করে পড়াশোনা করে তাকে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এই একটি কথা তাকে এতবার শুনতে হয় যে তার প্রতিটা রক্তবিন্দুতে কথাটা বাজতে থাকে। এমনকি সে তার জীবনের লক্ষ রচনায় লেখে সে ডাক্তার হবে। আচ্ছা পৃথিবীর সব ছেলেমেয়ে যদি মানুষের চিকিৎসা আর প্রযুক্তির দিকে ঝোকে তাহলে মানুষগুলো কি খেয়ে বাঁচবে? আজব লাগে না কথাগুলো? কিন্তু সত্য কথা।
,
,
,
যাক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এর ও তো দরকার আছে। কিন্তু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নগুলো বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় মাধ্যমিক পর্যন্তই সীমিত থাকে। মাধ্যমিক এর পর এসব চিন্তা ফেলে বেশিরভাগ ছাত্র ভালো কলেজ খোঁজ করে পড়ার জন্য, যাতে সে ভালো চাকুরি পায়। কিন্তু দেখা যায় লেখাপড়ার শেষ পর্যায়ে কোনমতে একটা চাকুরি পেলেই হয়। এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ।হায়রে .....................
,
,
,
আসলে কথাগুলো একটা আক্ষেপ নিয়ে বললাম। আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠছিলাম। যেটা সাধারণত ওঠা হয় না। জানালাটা খুলে রাস্তায় তাকালাম দেখলাম চার-পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে। যেটার ভার বহন করতে কষ্ট হয়। কোমর কিছুটা ভাজ হয়ে গেছে। বুঝলাম ছেলেটা কেজি স্কুলে পড়ে। কারণ এর বয়সে প্রাইমারীতে একটা বই থাকে। যার ভার সে বহন করতে পারে।
,
আমি লেখাপড়ার বিপক্ষে না। তবে এরকমটা ঠিক কিনা বুঝি না ।