somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন ঢাকা চাই? (একটি ধারাবাহিক পোস্ট)

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুর কথা পর্ব-০১: যানজটমুক্ত


নগর জীবন ও নগরের অর্থনীতি নির্ভর করে জনসাধারণ, পণ্য, মালামালের সুশৃংখল ও সুষ্ঠু চলাচল এবং বিভিন্ন সেবা ব্যবস্থার সুষ্ঠু ও দক্ষ পরিচালনার ওপর। দীর্ঘদিন অবহেলার কারণে ঢাকা শহরের এই সাধারণ সমস্যাগুলোও এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব দ্রুত একটা কিছু করা না হলে ভবিষ্যতে এগুলোর সমাধান করা অসম্ভব হয়ে উঠবে।
বর্তমান ঢাকার যানচলাচল ব্যবস্থা একান্ত বিশৃংখল ও নৈরাজ্যকর। নগরীর লাখ লাখ লোক ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দূষিত পরিবেশে কাটায়। রাস্তায় যে সব যান চলাচল করে তার শতকরা ৫০টিরও বেশি ধীরগতির। ধীরগতির যানবাহন ঢাকা নগরীর রাস্তার ৬৫ ভাগেরও বেশি জুড়ে চলাচল করে। এ সব যানের মধ্যে ঠেলাগাড়িও রয়েছে।
এ সমস্যা উত্তরণের জন্য দরকার-
- প্রয়োজনমতো ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার ও বাই-পাস (বিকল্প পাশ কাটানো সড়ক) নির্মাণ;
- যুগোপযোগী বাসের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি করা;
- ধীরগতির যানবাহন কমানো;
•- প্রয়োজনমতো রাস্তাগুলি আরও চওড়া করা;
•- সংযোগ ব্যবস্থা হিসেবে আরও নতুন রাস্তা তৈরি ও চলাচলের জন্য সর্বদা খোলা রাখা;
•- বর্তমান রাস্তাগুলিকে সর্বদা যান চলাচলের জন্য খোলা রাখা;
•- আরও নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ করা;
•- নগরীর চতুর্দিক দিয়ে বৃত্তাকার রাস্তা বা রিং রোড নির্মাণ;
•- নগরের প্রধান সড়ক থেকে রিং রোড পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট ব্যবধানে সংযোগ সড়ক নির্মাণ;
•- সংযোগ সড়ক ও এলাকাবিশেষে রাস্তাগুলোকে একমুখী বা ওয়ানওয়ে করা;
•- বাইপাস সড়কের (প্রয়োজনীয় জায়গায়) নির্মাণ;
•- অবিলম্বে খিলক্ষেত-পূর্বাঞ্চল রাস্তার কাজ সমাপ্ত;
•- সকল যানবাহনের উপযুক্ততা (ফিটনেস) যাচাইয়ের মাধ্যমে যানবাহন আইন-কানুন বলবৎ করা;
•- ডুপ্লিকেট ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার বন্ধ করা;
•- ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার আগে সকল মোটরযান চালকের যাচাই-পরীক্ষা করা;
•- বাসস্ট্যান্ডগুলিকে স্থায়ী আকার দেওয়া;
•- ট্যাক্সি ও স্কুটার স্ট্যান্ডগুলিকে সুষ্ঠু ও নিয়মিত রূপ দেওয়া;
•- ট্রাক টার্মিনাল ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা;
•- নগরীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলিতে বহুতল কার পার্কিং নির্মাণ ;
•- আরও ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করা;
•- শহর ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করে তাদের সংগঠিত করা ও পেশাদারি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা জোরদার করা।
•- ট্রাফিক আইন ও বিধিবিধান সংশোধন করা।
•- ট্রাফিক আদালত স্থাপন করে জরিমানা আদায়ের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত করার ব্যবস্থা করা;এবং
-• ট্রাফিক বিধি লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যব্যবস্থা আরও কঠোর করা।

সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় অবশ্যই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)কে পুনর্গঠিত করে নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। তারা নিম্নলিখিত সব বিধিবিধান নিয়ন্ত্রণ করবে-
•- যানের বয়স;
•- যানের ধরণ বা টাইপ;
•- ফিটনেট সার্টিফিকেট;
•- ধোঁয়া নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ;
•- ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান;
•- চালক প্রশিক্ষণ/পুনঃপ্রশিক্ষণ;
•- রাস্তা ব্যবহারের নিয়মকানুন;
•- যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ করা; ও
•- শহরের মধ্যে যাত্রী নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলি।

এই নতুন ইউনিট সিটি কর্পোরেশন ও বিআরটিএ কর্তৃক যৌথভাবে প্রশাসিত হতে হবে।
ঢাকা মহানগরীর রেলস্টেশনের বর্তমান অবস্থানকে যাত্রীদের জন্য উপযুক্ত বলা যায়। কিন্তু নগরীর মধ্য দিয়ে রেলের মালগাড়ির চলাচল কেউ পছন্দ করে না। নগরীর মধ্য দিয়ে রেলপথটুকুর অংশে রয়েছে ৩৯টি লেভেলক্রসিং ও গেট। এগুলি নিত্য যানজট সৃষ্টি করছে। রেলের মালগাড়িগুলি সাধারণত দীর্ঘ ও অত্যন্ত ধীরগতির। ফলে প্রতিদিন নগরীর ব্যস্ততম রাস্তাগুলো দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ থাকে এবং এ অবস্থা চলতে থাকে সারাদিন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে সমন্বয় ও সহযোগিতাক্রমে এ সমস্যার নিরসনে নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার― -
-• নগরীর মধ্য দিয়ে বর্তমান রেললাইনের সরাসরি ওপর দিয়ে ওভারহেড রেলট্র্যাক তৈরির জন্য রেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এই কাজটি বাস্তবায়িত হবার মধ্যবর্তী সময়ে ব্যস্ততম লেভেল ক্রসিংগুলিতে ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
•- ওভারহেড রেলট্র্যাক তৈরি হলে বর্তমান রেলট্র্যাকটিকে একটি এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরিত করা হবে। এ ভাবে বর্তমানে যে ৩৯টি রেলগেট বা লেভেলক্রসিং যানজট সৃষ্টি করছে সেগুলি পরিহার করা সম্ভব হবে।
•- তেজগাঁও ও বনানী রেলস্টেশনের কোনো প্রয়োজন আদৌ আছে কি না তার জন্য সমীক্ষার উদ্যোগ নেয়া দরকার। প্রয়োজন না থাকলে এ থেকে যে জমি বেরিয়ে আসবে সেই জমিগুলোকে পার্ক ও খেলার মাঠে রূপান্তরিত করা যায়। ক্যান্টনমেন্ট ও বিমানবন্দর স্টেশনকে আরও সুপরিসর ও সম্প্রসারণ করা দরকার।
•- বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে সমন্বয় করে টঙ্গী থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত নগরবাসীর চলাচলের জন্য রেল চালু সম্ভব হলে তা করা দরকার।
•- রাস্তা প্রশস্ত করা, পার্ক ও খেলার মাঠ স্থাপনের জন্য রেল ট্র্যাকের পাশের সকল দোকানপাট, বস্তি ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফেলা দরকার।
•- নগরকে পাশ কাটিয়ে কমলাপুর ও টঙ্গীকে সংযুক্ত করার জন্য নতুন রেলপথ নির্মাণ করা।

এছাড়াও যা করা যায় -
•- বুড়িগঙ্গা নদীর যে সব অংশ অবৈধ দখলে রয়েছে সেগুলির পুনরুদ্ধার করা;
•- আরও বেদখল হওয়ার হাত থেকে বুড়িগঙ্গা নদীকে রক্ষা করা;
•- কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থাদির মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দুষণের উৎসগুলি বন্ধ করে দেওয়া;
•- বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীসহ খাল, বিল ও জলাশয়গুলোর দুষণের বর্তমান মাত্রাকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা;
•- নদী তীরের যে সব এলাকা পুনরুদ্ধার করা হবে সেগুলোকে পার্ক ও চিত্তবিনোদনমূলক স্থান হিসাবে সংরক্ষিত রাখার জন্য আইন প্রণয়ন করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
•- ধোলাইখাল ও অন্যান্য ছোট-খাটো খালকে যতোটুকু সম্ভব পুনরুদ্ধার ও পুনঃখনন করা দরকার।
•- এ সব খালের উভয় পাড়ে বেড়ানোর জন্য পথ, পার্ক ও অন্যান্য চিত্তবিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা যায়।
•- ঢাকা নগরীর সকল লেকের পুনর্বাসন করা হবে। এ সব লেকের উভয় পাড়ে পার্ক, বেড়ানোর জায়গা, বাগান ও চিত্তবিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা যায়।

(চলবে)
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×