শুরুর কথা।
কথায় বলে, মানুয়ষর চেহারাই বলে দেয় তার চরিত্রের ৭০ ভাগ। ফলে, কোনো মানুষের মুখ যদি হয় তার চরিত্রের দর্পণ,তাহলে কেনো দেশের রাজধানী শহর হলো সেই দেশের জাতীয় চরিত্রের দর্পণ। রাজধানীর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার চিত্র প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশের মতো একটি সমভাবাপন্ন ও সুসামঞ্জস্যময় দেশের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি প্রযোজ্য। ক্ষুদ্র আঞ্চলিক সমস্যা ও প্রতিবেশ বৈচিত্র্যের কথা বাদ দিলে দেশের সকল নারী-পুরুষের চিন্তা-ভাবনা ও অভিব্যক্তি রাজধানীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়।সভ্যতার বিকাশ ঘটে রাজধানী নগরীকে কেন্দ্র করে। আর্থসামাজিক উন্নয়নের আলোকে প্রকৃতপক্ষে যে কোনো দেশের রাজধানী শহর সে দেশের শো-কেস হিসেবে বিবেচিত হয়।
এক সময় ঢাকা প্রসিদ্ধ ছিল ঢাকাই মসলিনের জন্য। মসলিনের কোমল ও মন ভোলানো নক্সার মতোই ছিল ঢাকার পরিবেশ ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়।দিন বদলের সাথে সাথে ঢাকার সেই ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় চরিত্রটি উধাও হয়েছে। উপযুক্ত সময়োচিত পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপের অভাবে ঢাকা নগরীর বৃদ্ধি ও বিকাশ সৌরভ ছড়ানো ও আশা সঞ্চারের পরিবর্তে উদ্বেগ ও আশঙ্কার জন্ম দিয়ে চলেছে। জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের নির্মল আকাশের সেই ঢাকা নগরী আজ হারিয়ে গেছে কালো ধোঁয়া ও ধুলোবালির আড়ালে।
দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, ঐতিহাসিক নগরী হিসেবে আকর্ষণীয় ঢাকা মহানগরীতে জীবনযাত্রা এখন দুর্বিষহ। কোথাও টেকসই উন্নয়নের লেশমাত্র নেই। চাহিদার তুলনায় বর্ধিষ্ণু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা অপর্যাপ্ত। নগরীতে ক্রমাগত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আর জনসংখ্যার এই বাড়তি চাপে আমরা ক্রমাগত অনাকাক্ষিত অন্যান্য চাপের মুখে পড়ছি। সেই চাপে ও কিছুটা জড়বাদিতার প্রতি অদম্য আকর্ষণ, ব্যবস্থাপনাগত অদক্ষতা ও দূরদৃষ্টিহীনতায় আমরা নগরীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছি না। নগরীতে নাগরিক ভৌত ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধার ক্রমাবনতি ঘটছে। নগরীর জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সমস্যা অনেকাংশে বিপর্যয়কর রূপ নিয়েছে। নগরীর সার্বিক পরিবেশ এখন বস্তির মতো পূতিগন্ধময় হয়ে উঠেছে।
সভ্যতার ক্রান্তিলগ্নে তাই আমার আজকের আয়োজন, কেমন ঢাকা চাই।
(চলবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



