somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম স্পর্শ

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এটি কোন গল্প নয়। সত্যি ঘটনা। লেখক এর অনুমতি নিয়ে এবং কিছু পরিবর্তন করে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম :)


ঊফফ ! অনেক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি । কিভাবে দাড়াব তাও বুঝছি না ! একবার দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়ালাম । আবার সোজা হয়ে দাড়ালাম । আবার ভাবলাম বসেই পরব কিনা ! নাহ! অস্বস্তি লাগছে খুব । হঠাৎ ক্রিং ক্রিং করতে করতে একটা রিক্সা সামনে এসে থামল। । যাক বাবা অপেক্ষা তাহলে শেষ হল । হুম তিনি এসে পরেছেন । কিছুটা লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাড়ালো । ভীষণ লাজুক দেখাচ্ছে । এদিকে আমার অবস্থা তো খারাপ ! লজ্জা লজ্জা লাগছে খুব । কিন্তু তার মুখের লজ্জার ছাপ দেখে আমার লজ্জা মশাই মনে হলো কিছুটা সস্থি পেল !
আমি- কেমন আছো?
- ভালো ।
এটাই ছিল আমাদের প্রথম কথা! সত্যি কথা কি আমি এরকম লাজুক মুখ এই প্রথমই দেখলাম । যাই হোক, লাজুক মুখওয়ালি কে নিয়ে তার নিয়ে আসা রিকশাতেই উঠলাম । অনেক্ষন কোনো কথা নেই । ভাবছি কি বলা যায় । ধুর! মাথায় কিছুই আসছে না । অন্য সময় হলে হরহর করে কথা বলে যেতে পারতাম । শালা ! যখন দরকার তখনি কথা বলতে পারছি না ! যাই হোক, আর কালবিলম্ব না করে সোজা তার হাত টা আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলাম । আহ! জীবনে এই প্রথম কোনো নারীর হাতের স্পর্শ !!!

* * * * * * * * *

ফেইসবুক কে আমি বরাবর ঘৃণাই করে এসেছি । কেন যেন এই জিনিসটাকে আমার পুরাই fake মনে হতো । আর তারওপর internet এর প্রতি বাবার নিরাসক্তি থাকায় অনেক ছোটোবেলা থেকে বাসায় নিজের কম্পিউটার পেলেও তাতে internet এর ছোঁয়া কখনো পাই নি । সে যাই হোক, তখন আমার SSC পরীক্ষা শেষ হয়েছে । প্রথম কয়েকদিন খুব হইহুল্লড় করে কাটালাম । কদিন পর সব একঘেয়েমি লাগতে লাগল । বাসায় borring সময় কাটাচ্ছি । কি করা যায়, কি করবো, এই চিন্তা করেই দিন যাচ্ছে আমার । একদিন সাইবার এ গিয়েছি antivirus এর update file ডাউনলোড করতে । সাথে আমার এক ফ্রেন্ড ও আছে । কাজ শেষ হওয়ার পর ও আমাকে বলল ও একটু এখন ওর fb account এ ঢুকবে । আমি পাশের সিট এ বসলাম । তো আর কি ! বসে বসে দেখতে লাগলাম । ও ওর এক ফ্রেন্ড এর সাথে চ্যাট করল । ওর অই ফ্রেন্ড টা bd থেকে আমেরিকা চলে গেছিল । তাই র কি খোঁজখবর নেয়া । আমি ফেসবুক কে তেমন একটা খারাপ বলতে পারলাম না । বরং জিনিসটা কাজেরই আছে । পরদিন ফ্রেন্ডটাকে আমার একটা ফেসবুক account খুলে দিতে বললাম । তো শুরু হল আমার ফেসবুক যাত্রা । মোবাইল দিয়ে চালানো শুরু করলাম । ধীরে ধীরে মজাই লাগতে শুরু করলো । কত্তো ফ্রেন্ড, কত্তো comments, কত্তো fun !
যেহেতু আমি নতুন তাই আমার একটাই কাজ ছিল সেটা হল ফ্রেন্ড বানানো । একদিন রাত এ ফেসবুক এ বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে ফ্রেন্ড সার্চ করছি । হঠাৎ একটা নাম চোখে পড়লো । কিন্তু নামের চেয়ে তার profile pic টাই আমাকে আকৃষ্ট করলো বেশি । ছবিটা ছিল একটা বেবি এর । যাইহোক, তার profile এ ঢুকলাম (প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্তেও তার নাম টা প্রকাশ করতে পারছি না) । Profile টা তে ঢুঁকেই প্রথমে একটা স্ট্যাটাস চোখে পড়লো। স্ট্যাটাস টা সিল এরকম, "Hey friends, aj ami shara rat jagbo. tomra k k aj sara rat jagbe" আমি msg পাঠালাম , "Hey rat jaga pakhi, amio jagbo aj shara rat". কিছুক্ষন পরে দেখলাম রিপ্লাই আসলো। তাকে রাত জাগা পাখি বলাতে রাগ দেখালো। ধিরে ধিরে আরো কথা হল। ওইদিন শুধু msg এই কথা হল। অতঃপর পরিচয়, বন্ধুত্ব হওয়া। Facebook ধিরে ধিরে আমার নেশায় পরিণত হল। আসলে ঠিক facebook না, তার ম্যাসেজ পাওয়াটা আমার কাছে নেশার মত হয়ে গেল। সারাটা দিন আমি অপেক্ষা করতাম তার একটা ম্যাসেজ পাওয়ার জন্য। একবার আমার ভীষণ জ্বর হল। পুরা ৫ টা দিন আমি facebook এ যেতে পারিনি। ৫ দিন পরে যখন facebook এ ঢুকলাম, তখন তার মাসেজে দেখলাম উদ্বিগ্নের ছাপ! আমার প্রতি তার এই উদ্বিগ্নটা আমার মনকে যেন আরও অশান্ত করে ফেললো। আমি উপলব্ধি করতে লাগলাম যে আমি মেয়েটা কে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু নিজেকে আমি সংযমিত করলাম। এসব জায়গায় ছেলেরা যে ভয়টা করে আমার মনেও সেই ভয় উকি দিল। সেটা হল উপেক্ষিত হবার ভয়। যাইহোক, নিয়মিত আমাদের কথা হতে লাগল। কিন্তু আমি দিনে দিনে যেন আরও অস্থির হয়ে যাচ্ছি। তো হঠাত করে একদিন দুপুরে তাকে ম্যাসেজ পাঠালাম, 'I love u'. পরে ম্যাসেজ এর reply তে দেখলাম সে ভীষণ রাগ করেছে। আমি তাকে বললাম যে ম্যাসেজ টা আমি পাঠাইনি। আমার মোবাইল টা নিয়ে আমার এক ফাজিল বন্ধু কাজটা করেছে। (এ কথা সে অদ্দবদি জানে না। সে যখন এই লেখাটা পরবে তখন আমার যে কি পরিনতি হবে! হে আল্লাহ, রহম করো আমায়।) দেখলাম সে কিছুটা শান্ত হয়েছে। যাক বাবা, এই ভুল আর করব না। আমি অন্য পথ খুঁজতে লাগলাম। দিন গড়িয়ে যাচ্ছে। আমার কিছু ভালো লাগছে না। তাকে সরাসরি বলেই দিবো কিনা ভাবছি। আসলে তারও যে একই অবস্থা হতে পারে টা আমার মাথায় আসেনি একবারো। কি গাধা আমি! তো ধিরে ধিরে আমরা অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো সাড়াই পাচ্ছি না। ধুরছাই! লাস্ট চেষ্টা টা করে দেখি। হলে হবে, না হলে নাই। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি ম্যাসেজ পাঠালাম, "I'm leaving facebook..." দেখলাম সে ভীষণ অবাক! আমিও অবাক। আমাকে সে কোনো মতেই জেতে দিবে না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যে চলে যাব না তার কারণ বল। সে বলল কারণ ফেসবুক এ আমি তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমি বললাম, "It's not a proper ans." সে ঘুরায়ে পেচায়ে একই কথা বলতে লাগল। আমার তো মেজাজ পুরাই গরম! জিজ্ঞাস করেই ফেললাম, "I think u love me. is it yes or no?" আমি reply পেলাম "yes"। তারপর আর কি? আমি নতুন এক পৃথিবীর ঠিকানা পেলাম। আশ্চর্য একটা বিষয় হল আমাদের reletion তথাকথিত 'i love u' দিয়ে শুরু হয়েনি। তার চেহারা দেখেও আমি তার প্রেমে পরিনি। (তার profile এ তার কোনো ছবি ছিল না। সে আমাকে 'হ্যাঁ' বলার প্রায় ৭ দিন পর profile এ প্রথমবারের মতো তার ছবি দেয়।) এমনকি তার সাথে আমার ফোনে প্রথম কথা হয় relation হওয়ার ১০ দিন পর! আমরা আমাদেরকে বুঝতে পেরেছিলাম। আমাদের ভালবাসা টা একে অপরকে খুজে নিয়েছিলো। যে ভালবাসা টা কোনো দৈহিক আকর্ষণ অথবা সৈন্দরযের ধার ধারেনি।
প্রায় ১ বছর হতে চলছে। এখন পর্যন্ত তার সাথে দেখা হয় নাই! আর তো পারা যায় না। অবশেষে ৮ই এপ্রিল ২০১১ আমাদের দেখা হওয়ার দিন ঠিক হয়। ৭ই এপ্রিল ঢাকা থেকে রওনা দেই খুলনার উদ্দেশে। আমার জীবনের সবথেকে স্বরনীয় একটা মুহূর্ত, স্বরনীয় দুইটা দিন।

* * * * * * * * *

বাস ছেড়ে দিয়েছে। গত দুইদিন একফোঁটাও ঘুম হয়নি। বাসার বাইরে হোটেলে এই প্রথমই থাকলাম। বাসের সিটে গা টা এলিয়ে দিলাম ঘুমানোর উদ্দেশে। নাহ! ঘুম আসছে না। গতকালের সারাটা দিন চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমার কিছুতেই চলে যেতে ইচ্ছা করছে না। বারবার মনে হচ্ছে কি যেন ফেলে এসেছি। যখন চলে আসছিলাম তখন ওর চোখের কোনায় কয়েক ফোঁটা অশ্রু দেখতে পেয়েছিলাম। সেটাই মনে পরছে খুব বেশি করে। আমি এতক্ষনে বুঝতে পারলাম আমি কি ফেলে এসেছি। আমার মনটা আমার সাথে নেই। মনটা তার কাছে ফেলে এসেছি। না, ফেলে আসা বলব না। আমি এটা তাকে দিয়ে এসেছি। সারাজীবনের জন্য দিয়ে এসেছি . . . . . . . .
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১১
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×