somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাড়ুং-হুড়ুং সুরঙ্গ (কিংবা লুকানো কোন দুর্গ )

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মালনীছড়া চা বাগানের ১৪ নং ব্লকে অবস্থিত এই প্রাচীন আর বিস্ময়কর পাথুরে সুরঙ্গ কিংবা সুরক্ষিত দুর্গ অথবা প্রাচীন মন্দির। বেশ গা ছমছমে নিরবতা, আর শেউলা ভর্তি খুব স্যাতস্যাতে পরিবেশের জায়গা। চারপাশে অসংখ্য সাপের গর্ত, শুকনা সময়েই এরকম থাকলে বৃষ্টির সিজনে কেমন অবস্থা থাকে সহজেই অনুমেয়। যা আজো বলতে গেলে লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে গেছে। সিলেটের বেশির ভাগ লোকজনই এই স্থানের খবর জানেন না। মূল সুরঙ্গটি বালি ভর্তি হয়ে প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। থেমে থেমে পাথর চুইয়ে আসা পানির টিপ টিপ শব্দ আর বাদুরের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ নিশ্চিত ভাবে কোন হরর ছবির কথা মনে করিয়ে দেবে। এটাকে কেন্দ্র করে নানা লোককাহিনী (myth) স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত আছে।

এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রচারিত যে Myth, তা হলো এতদঞ্চলের একসময়কার অত্যাচারী শাসক গৌর গোবিন্দ কে নিয়ে। তাদের মতে হযরত শাহজালাল (রঃ) যখন সিলেট বিজয় করেন এবং গৌর গোবিন্দকে পরিজিত করেন, তখন নাকি সে প্রচুর ধন সম্পত্তি নিয়ে এখানে এসে বসবাস শুরু করে নতুবা এই দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। সে হিসেবে সুরঙ্গটির বয়স প্রায় সাতশত বছর বা তারও বেশি।

আবার কারো মতে এখানে হয়তোবা প্রাসাদ বা দুর্গ টাইপ কিছু ছিলো যা কালের বিবর্তনে ঢাকা পড়ে গেছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে কেবল সুরঙ্গ থাকলে তার এরকম বড় প্রবেশদ্বার থাকতো না। এবং কয়েকটি পথও থাকার কথা নয়। আবার কেউ মনে করেন, যেহেতু পুরো সিলেট এককালে হিন্দু প্রভাবিত এলাকা ছিলো সেহেতু মন্দির থাকা অস্বাভাবিক নয়। অনেকের বিশ্বাস এই জায়গায় গুপ্তধন(!) রয়েছে।

সে যাইহোক এখনো পর্যন্ত সুরঙ্গের অন্য মাথা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে। আমাদের সাথের স্থানীয় গাইড কে এব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে জানালো যারাই এর মধ্যে প্রবেশ করেছেন তাদের কেউই নাকি জীবিত বের হয়ে আসেন নি। আর যদিও বা বের হয়েছেন তারা কিছুদিনের মধ্যে অপ্রকৃতস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। উপস্থিত আরেকজন জানালেন ভারত থেকে বেশ অনেকবছর আগে তিনজন তান্ত্রিক এখানে প্রবেশ করেছিলেন তাদের মধ্য থেকে মাত্র একজন ফিরে এসেছেন আর খুব অল্পদিন বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনিও অস্বাভাবিক ছিলেন। এছাড়াও সিলেটের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নাকি খননের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি অস্বাভাবিক সপ্ন দেখে সংস্কারকাজ মাঝপথে বন্ধ করে দেন।

তবে আমার ব্যাক্তিগত মত হলো বদ্ধ জায়গা আর স্যাতস্যতে পরিবেশে অক্সিজেনের অভাব আর বিষাক্ত গ্যাসের কারনেই হয়তোবা তাঁরা মারা গেছেন। যথাযথ প্রশিক্ষন, সঠিক গাইডেন্স, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সর্বোপরি সরকারের সহায়তা থাকলে সমস্যা হবার কথা নয়। এটা আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

আগ্রহী কেউ যেতে চাইলে বাইকে যাওয়াটাই সমীচীন হবে, কারন বাইকে একেবারে স্পটে যাওয়া যায় আর সময় ও অনেক কম লাগে। সেক্ষেত্রে অবশ্য মালনীছড়া বাগান Authority থেকে অনুমতি নেয়া বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া CNG Auto করেও যাওয়া যায়। সিলেট বিভাগীয় ষ্টেডিয়াম প্রধান গেটের রাস্তার ঠিক বিপরীতে বাজার থেকে তেলিহাটি বাজার পর্যন্ত CNG যায়, জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। সেখান থেকে হন্টন রাস্তা (তেলিহাটি বাজার থেকে স্থানীয় একজনকে গাইড নিয়ে নিলে সুবিধা হবে, খুব সামান্য পারিশ্রমিকে তাঁরা খুশি)। বাগানের প্রধান রাস্তা ধরে ৪০/৪৫ মিনিট হাটলে হাড়ুং-হুড়ুং পৌছানো যায়। তাতে অবশ্য এস্টেটের অনুমতি নেয়া লাগে না।

এই দুইটা প্রধান সুরন্গের ভিতরের ছবি...



এটা সুরন্গ মুখের বাহিরের ছবি...



এটা আরেকটা সুরন্গমুখের ছবি...



পুরো জায়গার ছবি (আসলে ছবি গুলো খুব ভালো আসেনি, কারন মোবাইল দিয়ে তুলা )...

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×