মালনীছড়া চা বাগানের ১৪ নং ব্লকে অবস্থিত এই প্রাচীন আর বিস্ময়কর পাথুরে সুরঙ্গ কিংবা সুরক্ষিত দুর্গ অথবা প্রাচীন মন্দির। বেশ গা ছমছমে নিরবতা, আর শেউলা ভর্তি খুব স্যাতস্যাতে পরিবেশের জায়গা। চারপাশে অসংখ্য সাপের গর্ত, শুকনা সময়েই এরকম থাকলে বৃষ্টির সিজনে কেমন অবস্থা থাকে সহজেই অনুমেয়। যা আজো বলতে গেলে লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে গেছে। সিলেটের বেশির ভাগ লোকজনই এই স্থানের খবর জানেন না। মূল সুরঙ্গটি বালি ভর্তি হয়ে প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। থেমে থেমে পাথর চুইয়ে আসা পানির টিপ টিপ শব্দ আর বাদুরের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ নিশ্চিত ভাবে কোন হরর ছবির কথা মনে করিয়ে দেবে। এটাকে কেন্দ্র করে নানা লোককাহিনী (myth) স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত আছে।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রচারিত যে Myth, তা হলো এতদঞ্চলের একসময়কার অত্যাচারী শাসক গৌর গোবিন্দ কে নিয়ে। তাদের মতে হযরত শাহজালাল (রঃ) যখন সিলেট বিজয় করেন এবং গৌর গোবিন্দকে পরিজিত করেন, তখন নাকি সে প্রচুর ধন সম্পত্তি নিয়ে এখানে এসে বসবাস শুরু করে নতুবা এই দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। সে হিসেবে সুরঙ্গটির বয়স প্রায় সাতশত বছর বা তারও বেশি।
আবার কারো মতে এখানে হয়তোবা প্রাসাদ বা দুর্গ টাইপ কিছু ছিলো যা কালের বিবর্তনে ঢাকা পড়ে গেছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে কেবল সুরঙ্গ থাকলে তার এরকম বড় প্রবেশদ্বার থাকতো না। এবং কয়েকটি পথও থাকার কথা নয়। আবার কেউ মনে করেন, যেহেতু পুরো সিলেট এককালে হিন্দু প্রভাবিত এলাকা ছিলো সেহেতু মন্দির থাকা অস্বাভাবিক নয়। অনেকের বিশ্বাস এই জায়গায় গুপ্তধন(!) রয়েছে।
সে যাইহোক এখনো পর্যন্ত সুরঙ্গের অন্য মাথা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে। আমাদের সাথের স্থানীয় গাইড কে এব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে জানালো যারাই এর মধ্যে প্রবেশ করেছেন তাদের কেউই নাকি জীবিত বের হয়ে আসেন নি। আর যদিও বা বের হয়েছেন তারা কিছুদিনের মধ্যে অপ্রকৃতস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। উপস্থিত আরেকজন জানালেন ভারত থেকে বেশ অনেকবছর আগে তিনজন তান্ত্রিক এখানে প্রবেশ করেছিলেন তাদের মধ্য থেকে মাত্র একজন ফিরে এসেছেন আর খুব অল্পদিন বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনিও অস্বাভাবিক ছিলেন। এছাড়াও সিলেটের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নাকি খননের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি অস্বাভাবিক সপ্ন দেখে সংস্কারকাজ মাঝপথে বন্ধ করে দেন।
তবে আমার ব্যাক্তিগত মত হলো বদ্ধ জায়গা আর স্যাতস্যতে পরিবেশে অক্সিজেনের অভাব আর বিষাক্ত গ্যাসের কারনেই হয়তোবা তাঁরা মারা গেছেন। যথাযথ প্রশিক্ষন, সঠিক গাইডেন্স, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সর্বোপরি সরকারের সহায়তা থাকলে সমস্যা হবার কথা নয়। এটা আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
আগ্রহী কেউ যেতে চাইলে বাইকে যাওয়াটাই সমীচীন হবে, কারন বাইকে একেবারে স্পটে যাওয়া যায় আর সময় ও অনেক কম লাগে। সেক্ষেত্রে অবশ্য মালনীছড়া বাগান Authority থেকে অনুমতি নেয়া বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া CNG Auto করেও যাওয়া যায়। সিলেট বিভাগীয় ষ্টেডিয়াম প্রধান গেটের রাস্তার ঠিক বিপরীতে বাজার থেকে তেলিহাটি বাজার পর্যন্ত CNG যায়, জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। সেখান থেকে হন্টন রাস্তা (তেলিহাটি বাজার থেকে স্থানীয় একজনকে গাইড নিয়ে নিলে সুবিধা হবে, খুব সামান্য পারিশ্রমিকে তাঁরা খুশি)। বাগানের প্রধান রাস্তা ধরে ৪০/৪৫ মিনিট হাটলে হাড়ুং-হুড়ুং পৌছানো যায়। তাতে অবশ্য এস্টেটের অনুমতি নেয়া লাগে না।
এই দুইটা প্রধান সুরন্গের ভিতরের ছবি...
এটা সুরন্গ মুখের বাহিরের ছবি...
এটা আরেকটা সুরন্গমুখের ছবি...
পুরো জায়গার ছবি (আসলে ছবি গুলো খুব ভালো আসেনি, কারন মোবাইল দিয়ে তুলা )...
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১০