somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিলো সাড়ে সাত কোটি!

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবা, চাচা, মামারা কেউই সরাসরি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেন নি, সেই হিসেবে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা নন। এবং আমিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নই। তবে রাজাকারের ঔরসজাতও না। এটা হয়তো আমার দুর্ভাগ্য, কোন পক্ষেই নেই আমি। অথচ আমি শুনেছি আমার বাবার কাছে, চাচাদের কাছে যুদ্ধের সময়কার কথা। একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে থাকার গল্পগুলো, কখনো বা নৌকাতেই রাত্রিযাপনের গল্প। কিভাবে সিন্দুকভরতি টাকা মাটির নীচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো, গর্ত (ব্যাঙ্কার) তৈরী করে বিমানের শব্দ শুনে একযোগে সবার ভিতরে প্রবেশ করার সময়ের কথা। নিশ্চয়ই সেই সময় গুলো আনন্দের ছিলো না। প্রতিনিয়ত ছিলো ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি। দিনের পর দিন আত্মীয়ের বাড়িতে থাকা খাওয়া সহ সবকিছু। কত রাত যে শুধু ডাল ভাত খেয়ে পোহানো হয়েছে তা কেবল আল্লাহই বলতে পারবেন। রাত গভীর হলে পুরুষরা ঘরে এসে ঘুমাতো আর সারাদিন বনে জঙ্গলে থাকা লাগতো। সেইসব দিনগুলো মোটেই রোমাঞ্চকর ছিলোনা বরং চরম অনিশ্চয়তায় কাটতো এক একটা দিন। আমার বাবাকে সিলেট বর্তমান বিমানবন্দরের কাছে অনেকের সাথে চোখ বেঁধে সার বেঁধে রেখেছিলো পাকিস্থানী আর্মি। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে বেঁচে ফিরেছিলেন সে যাত্রা।

প্রথাগত চিন্তায় মুক্তিযুদ্ধা বলতে বুঝি, যারা সরাসরি যুদ্ধের মাঠে পাকিস্থানী হানাদারের বিপক্ষে অস্ত্র নিয়ে লড়াই করেছিলেন। এবং যুদ্ধ শেষে একটা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছিলেন। অন্ততঃ বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমার কাছে কেবল তাদেরই মনে হয় মুক্তিযোদ্ধা। (এখানেও কথা আছে! শুধু সার্টিফিকেট থাকলেই হবে না বরং, কার শাসনামলে, মানে কোন সরকারের সময় ঐ সার্টিফিকেট ইস্যু হয়েছে সেটাও বিবেচ্চ বিষয়।)
যেহেতু আমার বাবার কোন সরকারের আমলেরই মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেই, সেই কারনে আমি সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে মুক্ত! আমার বয়স ত্রিশ বছর একদিন মানেই সরকারি চাকরির বয়স শেষ। আমার জন্য কোন কোটাও নেই। আর কেবল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান (৫/৬ জন সন্তানও যদি কোন মুক্তিযোদ্ধার থাকে তাহলেও সবাই এই সুযোগগুলো পাবে) হবার কারনে মেধা কম থাকলেও সমস্যা নেই। তাদের জন্য রয়েছে ত্রিশ পারসেন্ট কোটা আর বত্রিশ বছর পর্যন্ত চাকুরিতে প্রবেশের সময়সীমা। এটা কি সাম্যতা হলো? মুক্তিযুদ্ধ কেনো হয়েছিলো? তা কি অসাম্যতা, অন্যায্যতা, অবিচার, শোষন আর মিথ্যার বিরুদ্ধে ছিলোনা? তবে এখন কেনো সেই একই অন্যায়? একজন যথেষ্ট মেধাবী হবার পরেও সে চান্স পাচ্ছে না। আর কেউ শুধুমাত্র কারো সন্তান হবার কারনেই পেয়ে যাচ্ছে অবারিত সুযোগ। আর তাও যদি বুঝতাম সেই সার্টিফিকেটগুলো সবকয়টি নির্ভেজাল আর সঠিক। তাও না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে বছরের পর বছর চাকরী করে গেছে আর যুদ্ধ না করেও তাঁর সন্তানেরাও পাচ্ছে সকল সুবিধা। কয়টা প্রমান লাগবে? একশত প্রমান হাজির করতে পারবো শুধু পেপার কাটিং দিয়েই।
যাদের লাশ বনে-জঙ্গলে, হাটে-বাজারে, নদীর ধারে পড়ে ছিলো আর চিল-শকুনের খাবার হয়েছিলো, যাদের পরিবার কখনোই জানেনি প্রিয়জন তাদের কই হারিয়েছে। ত্রিশ কিংবা তিন লাখ অথবা সংখ্যার হিসেবে যতই হোক, তাঁরা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা যাদের বাড়িতে খেয়েছিলেন, রাত কাটিয়েছিলেন, অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলেন, তথ্য আদান প্রদান করতেন, তাঁরা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না? কেবল একটি সার্টিফিকেট থাকলেই বুঝি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়! আহারে যদি আমার বাবা চাচারা জানতেন, এরকম সময়ও আসবে তবে আর যাই হোক একটা সার্টিফিকেট অন্তত হাতে নিয়েই বাড়িতে ফিরতেন। কারন এরকম প্রভাব প্রতিপত্তি সেই সময় তাদের ছিলো।
আমি মনে করি, একান্ত ভাবেই নিজের অভিমত হলো, সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা দেশের আর আর জাতির শ্রেষ্ট সন্তান। তাঁরা যখন যুদ্ধে গিয়েছিলেন জীবন নিয়ে ফিরবেননা এরকম মনোভাব নিয়েই যুদ্ধে গেছেন। সরকার থেকে কখনো কিছু পাবেন এই চিন্তায় কখনো তাঁরা যুদ্ধ করেন নি। তারপরও যেহেতু আমরা যুদ্ধে জয় পেয়েছি। সেজন্য যুদ্ধ ফেরত আহত, নিহত কিংবা সুস্থ যারাই ছিলেন তাদের কে উপযুক্ত সম্মান দেয়ার বিরোধী কোন স্বাভাবিক মানুষ থাকতে পারে না।কেবল তাদের জন্য সর্বচ্চো যা করা যেতে পারে, যা বরাদ্ধ দেয়া যেতে পারে তাই তাঁদের দেয়া হোক আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁদের সন্তানরা আর যারা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেন নি তাঁদের সন্তানরা সমান। একই রক্তে মাংসে একই দেশের সমান নাগরিক। শুধুমাত্র বাবার মুক্তিযোদ্ধের কারনে তাঁদের সন্তানরা অতিরিক্ত সুবিধা আদায় গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। যদি করা হয় তবে সেটা হবে মারাত্মক পর্যায়ের Discrimination। আর মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই অন্যায় অবিচার যেনো আবার ফিরে না আসে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×