ককেশীয় ৯৮ জন পুরুষ এবং নারীর ভেতর হিসাব করলে প্রায় ৭৮ জন পুরুষ এবং নারীর ভেতরে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এই হিসাবের মধ্যে নারীর শতকরা হার পুরুষের চেয়ে বেশি হয়। আবার হিসপানিক গোত্রের মধ্যে শতকরা ৬৯ জন নারী এবং শতকরা ২৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের ভেতর এই সমস্যার অস্তিত্ব লক্ষণীয় হয়। সাধারণভাবে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রমে বেশি আক্রান্ত হয় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা। এই হিসাব সব দেশেই প্রায় একই রকম।
দীর্ঘস্থায়ী বিষাদ অবস্থাকে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম বলে। এটি কোনো একক কারণে সৃষ্ট হয় না। তবে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রমের কারণ এখন পর্যন্ত অজানা। গবেষকরা মনে করেন, হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৬-এর আক্রমণে এর সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও যে সমস্যা ঘটে তা নির্দিষ্টভাবে এই ভাইরাসকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। স্নায়ু ব্যবস্থার চলাচলে কোনো বিঘ্ন হলে এ জাতীয় সমস্যা হতে পারে। আবার ভাইরাল অসুস্থতার জন্যও অনেক ক্ষেত্রে ক্রমাগত বিষাদ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এই রোগে ভুগে থাকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী-পুরুষ। আমেরিকাতে এই রোগের প্রকোপ কিছুটা কম। তবে আমেরিকার বাইরের দেশগুলোর চিত্র অবশ্য কিছুটা পৃথক। বলতে গেলে ইউরোপীয় অঞ্চলে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রমের তীব্রতা বেশি এবং তৃতীয় বিশ্বের এশিয়ান এবং সাবসাহারান অঞ্চলে এর মাত্রা কিছুটা কম। তবে বিষাদভিত্তিক অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব অবশ্য এতদঞ্চলে বেশি। যেমন উভয় শ্রেণীর ডিপ্রেশন ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম প্রভাব উন্নত দেশগুলোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বেশি। তবে প্রায় সব দেশেই এ জাতীয় মানসিক সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরুষ এবং নারীকে।
শারীরিক নানা পরীক্ষার দ্বারা ডাক্তাররা নিশ্চিত হন যে, রোগীর ডাক্তারি সমন্বয় কতটুকু দরকার। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ডাক্তার যে শারীরিক বিষয়গুলো লক্ষ করে থাকেন তা হলো-
টিউমার
মাল্টিপোল স্কেলেরোসিস
ইমিউনসংক্রান্ত সমস্যা
শরীরের কোনো ইনফেকশন
এন্ডোক্রাইনের সমস্যা
ড্রাগ নির্ভরশীলতা
মনোদৈহিক কোনো সমস্যা
হার্টের রোগ
কিডনি ও লিভারের রোগ ইত্যাদি
এই চিহ্নগুলোকে নির্দিষ্ট করা ছাড়াও ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ডাক্তারি যে পরীক্ষাগুলো করতে পারেন তা হলো-
রক্তের শ্বেতকণিকার পরীক্ষা
সিডিটি সেল পরীক্ষা
লিম্ফোসাইটিস পরীক্ষা
মস্তিষ্কের এমআরআই ইত্যাদি
ছোঁয়াচে রোগ বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম নয়। কারণ পূর্ণ ব্যাখ্যাকৃত কোনো ক্লুস্টার এই রোগের ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মানসিক রোগ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছোঁয়াচে নয়। অর্থাৎ এই রোগগুলো অন্য কাউকে সংক্রমণ করতে পারে না। কেননা মানসিক রোগের কোনো মহামারী অবস্থা বা প্রাদুর্ভাব দেখা যায় না। ইনফেকশন কোনো কোনো রোগ বাদে ছোঁয়াচে রোগের সংখ্যা পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। তবে এই অসুখ দীর্ঘদিন একজনকে আক্রান্ত করলে তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও বিষাদ অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে তার ধরন ছোঁয়াচে বা সংক্রামক সমস্যার মতো হতো না কখনোই।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম যে কাউকেই অবসন্ন বিষাদ ও ক্লান্ত করে দিতে পারে। এ রোগের রকমারি উপসর্গ দেখা যায় যেমন-
অন্ততপক্ষে ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে বিষাদ চলতে থাকে
ক্রমাগত মন খারাপ
মৃদু মাত্রার জ্বর
গলা ঘা
শরীরে মাংসপেশির ব্যথা
ঘাড়ে ব্যথা
মাথাব্যথা
হাড়ের জোড়ার ব্যথা
ফটোফোবিয়া
ত্বকের লালচে অবস্থা
বিরক্তি, উদ্বেগ
ডিপ্রেশন
কোনো কিছু সহজেই ভুলে যাওয়া
বিরক্তির উদ্রেক
মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্ব
কোনো নির্দিষ্ট একক কারণ বিষাদ সমস্যার জন্য দায়ী হয় না বরং নানাবিধ কারণ বা ফ্যাক্টর সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। কোনো কোনো গবেষক মনে করে থাকেন ভাইরাল ইনফেকশন অনেক ক্ষেত্রে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম অবস্থার সৃষ্টি করে থাকে। এ ধারণাও অবশ্য খুব পুরানো নয় বরং নতুন। ভাইরাস ইনফেকশন ছাড়াও-
আঘাতজনিত অবস্থা
মানসিক চাপ এবং
টক্সিন ক্রমাগত বিষাদ সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। ইনফেকশনজনিত বিষাদ অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন প্রকার ইনফেকশন এই অবস্থার জন্য দায়ী যেমন-
হিউম্যান হার্পিস ভাইরাস
এন্টারো ভাইরাস
এপসটেন বায় ভাইরাস সংক্রমণ
রুবেলা
ক্যান্ডিডা এলবিকান্স
বোর্ন ভাইরাস
হিউম্যানরেটরো ভাইরাস
মায়াকো প্লাজমা ভাইরাস
আবার ইমিউনোলজিক্যাল নানা কারণে মানসিক বিষাদগ্রস্ততার সৃষ্টি হতে পারে। ইমিউনোলজির ডিসফাংশন যেমন- সাইটোকিনসের ভারসাম্যহীনতা ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রমের জন্য দাযী। ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম সৃষ্টির পেছনে ইমিউনোলজিক্যাল নানা ফ্যাক্টর প্রধানত দায়ী থাকে। আবার হাইপোথ্যালামিক পিটুইটারি এন্ড্রেনাল কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্থার ওপর চাপ প্রয়োগ করলে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম সৃষ্টি হয়। হরমোনের বহুমাত্রিক কার্যহীন ক্ষরণ এবং কর্টিসলের নিঃসরণ বেশি মাত্রায় হলেও মানুষের ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম হতে পারে। ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে হরমোনের অস্বাভাবিকতা ফ্যাটিগ অবস্থা সৃষ্টির জন্য চিহ্নিত কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো পাশ্চাত্য গবেষকের মতে, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রমের জন্য হরমোনের মাত্রাতিরিক্ত চাপও দায়ী হতে পারে বলে জানানো হয়। এছাড়াও অটোনমিক চাপ এবং রক্তচাপ বিষাদ সৃষ্টি করতে পারে।
হাইপোটেশন এবং
হাইপার টেনশন সব অবস্থাতেই ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম দায়ী থাকে। নানা প্রকার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক সময় ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম ঘটাতে পারে।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রমের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সাথে ডাক্তারের যোগাযোগ কিংবা সমন্বয় ভালো হওয়া উচিত। রোগীর উচিত ডাক্তারকে তার-
পারিবারিক এবং
ব্যক্তিগত মনোদৈহিক
এবং শারীরিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দেয়া। এতে করে রোগ নির্ণয় করা ডাক্তারের পক্ষে সহজ হয়। অপরপক্ষে ডাক্তারের উচিত হবে রোগীর কাছ থেকে রোগ নির্ণয়ের সহায়ক সকল উপাত্ত এবং ধারাগুলোকে জেনে নেয়া। এই পারস্পরিক সমন্বয় বিষাদ সমস্যার জন্য কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারটি বাতলে দিতে পারে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের বিষাদ সমস্যা এমনিতেই বয়সের সাথে সাথে ভালো হয়ে যায়। এ রকম অবস্থার কারণ হচ্ছে মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসা। এ রকম রোগীর সংখ্যা শতকরা ৫% হতে পারে। আবার জীবনব্যাপী বিষাদ উপসর্গে ভুগে থাকে এ রকম রোগীর সংখ্যাও প্রায় সমানুপাতিক। কিন্তু ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রম সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যে কোনো দেশেই সবচেয়ে বেশি.।
অধ্যাপক ডা. এ কে এম নাজিমুদ্দৌলা চৌধুরী
এমবিবিএস ডিপিএম এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিসাইক

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





