বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। থেকে থেকে মেঘের গর্জন। ঠিক দীপের মনের ভিতরকার অবস্থা যেমন ।
দীপের ঘরটা দোতলার ঠিক উত্তর পাশে ।ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়াতে দীপ একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে তার ক্ষীণ আলোতে একটা বই পড়তে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই মনোযোগ গাঢ় করতে পারছে না। অক্ষরগুলো এলোমেলো হয়ে আসছে ক্রমশ। বাইরের মাতাল প্রকৃতি আর মনের ভিতরকার আলোড়ন, সবকিছু মিলিয়ে মন চলে গেল ঠিক পাঁচ বছর আগের এই দিনটাতে। সেদিনও আকাশটা আজকের মতো এমন হু হু করে কেঁদেছিলো।
কলেজ থেকে বের হয়েই দীপ চিন্তায় পড়ে গেল। বৃষ্টি থামবার কোনো নাম নেই। আকাশ এমন কাণ্ডটা করবে জানলে বাসা থেকে ছাতা নিয়ে আসতে ভুল করতো না। কিন্তু এখন এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকারও কোনো মানে হয় না। এমনিতেই আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে। হঠাৎ কী ভেবে সে পথের দিকে পা বাড়ালো।
‘এই যে, আপনি ভিজে যাচ্ছেন তো ।’
দীপ ঘুরে দাঁড়ালো । দেখলো, ছিপছিপে গড়নের একটা মেয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে । মেয়েটাকে চিনতে দেরি হলো না ওর । ওদের পাশের বাড়িতে থাকে । অনেক দিন দেখা হয়েছে, কিন্তু কখনো কথা হয়নি ।
'বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে হাঁটবো আর ভিজে যাব না, তা কী করে হয় ?' হাসলো দীপ । 'ছাতাটা সঙ্গে আনতে মনে ছিল না ।'
'তাতে কি? আমার ছাতা আছে না ? আসুন শেয়ার করি ।'
'না না , ঠিক আছে । আমি এমনি চলে যেতে পারবো ।'
মেয়েটা পা পা করে এগিয়ে এলো । 'আপনি অযথা সংকোচ করছেন । আসুন।'
দীপ এবার না করতে পারলো না। কাদা-জল এড়িয়ে ধীরে ধীরে একই বর্ষাতির নিচে চলতে থাকলো দুজন। অনেকক্ষণ কারো মুখে কোনো কথা নেই ।
বাসায় পৌঁছতে আর দেরি নেই । হঠাৎ মেয়েটা মুখ খুললো । 'আপনি খুব কম কথা বলেন, তাইনা ?'
'না , আপনার ধারণা ভুল । আসলে আজই প্রথম পরিচয় তো , তাই। কিছুদিন যাক, দেখবেন আমার কথার তাড়নায় আপনাকে কানে তুলো দিয়ে থাকতে হবে ।'
'তাই বুঝি ! আচ্ছা সে তখন দেখা যাবে ।'
'এই দেখুন না, এতক্ষণ আপনার সাথে এলাম , অথচ আপনার নামটাই জানা হলো না । কি নাম আপনার ?'
'আমার নাম সন্ধ্যা ।'
'বাহ! দারুন নাম তো।'
'হ্যাঁ । আপনার নামটাও সুন্দর ।'
'আপনি আমার নাম জানেন নাকি ?' দীপের কণ্ঠে বিশ্বয়।
'হ্যাঁ, জানি। গত সপ্তাহে যখন আপনারা প্রথম এখানে এসেছিলেন, সেদিন ই আপনার নাম শুনেছিলাম। বাবু এসে বলে গিয়েছিলো। বাইরে যা কিছু ঘটে ও সবকিছু এসে আমাকে বলে যায়। আমার ছোট্ট সংবাদপত্র।' সন্ধ্যা হেসে ফেললো।
'বাবু কে?'
'আমার ছোট ভাই । ক্লাস এইটে পড়ে। '
'ও আচ্ছা।'
'কথায় কথায় বাসায় চলে এলাম। এখন চলি। অনেক থ্যাঙ্কস আপনাকে ।'
'থ্যাঙ্কস কেন ?'
'সব কিছুর জন্য। এই যে আপনি আমার সাথে এলেন ...'
সন্ধ্যা হাসলো । তারপর অস্ফুট স্বরে 'বাই' বলে নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ালো ।
(চলবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



