বেহেশ্তের কুমারী বা হুর আর মর্তের পতিতা। একটা অপার্থিব আর আরেকটা পার্থিব।
একটাকে পেতে হলে টাকা খরচ করেলেই চলে, আরেকটাকে পেতে হলে সারাজীবনভর আল্লাহতায়ালার জীবনবিধান অনুযায়ী চলে বেহেশ্তে গেলে তবেই পাওয়া যায়।
একটা মাটির তৈরি আরেকটা অপার্থিব নুর(আলো) বা অন্য কিছু দিয়ে।
এতসব মৌলিক পার্থক্য। এবার আসুন আমাদের বস্তু জীবনের আটপৌরে রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন, মূল্যবোধ দিয়ে এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য, অন্তমিল, ইহলৌকিক বা পারলৌকিক বৈষম্যনীতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
শুরুতেই একজন বেহেশ্তি হুর এবং একজন মর্তের পতিতা জীবন লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করা যাকঃ- একটা হুরের জন্ম বা তৈরীর প্রধান এবং একমাত্র উদ্দেশ্য বেহেশ্তে প্রবেশকারী মোমিন মুসলমান পুরুষদের দৈহিক আনন্দ দান, নিরন্তর যৌনক্ষুদা তৃপ্ত করা। এবং অবশ্যই বিধিমোতাবেক বিয়ে হওয়ার পরে। পাশাপাশি সেই আনন্দদের পূর্ণতা বাবদ কিছু ফাইফরমাশ খাটা। পবিত্র কোরআনে আমরা তাই দেখতে পাই। এই হুরদের আর কোন ব্যাবহার্য্যতা থাকলে এই অধমের তা জানা নেই। কেউ জেনে থাকলে অবশ্যই জানাবেন।
মোদ্দা কথাটা হচ্ছে শুধুমাত্র যৌনতার জন্যই এইসব হুরদের বানানো হয়।
আর মর্তের পতিতারা?
কেউ পতিতা হয়ে জন্মায় না। সমাজ, পরিবেশ, অর্থ চাহিদা, বা কোন দুর্ঘটনা তাকে পতিতা বানায়। সেটাও হয় জীবনের একটা পর্যায়ে গেলে। অসভ্য ভাষায় বলা যায়, যৌবনে পৌছালে। তার আগে হয়তো আর সবার মত সেও নিষ্পাপ বালিকাটি রয়ে যায়। আর সবার মত স্বপন দেখে একটা সুস্থ্য সুন্দর জীবনের। যদিও পতিতার মেয়ে বয়সে এসে সাধারণত পতিতা হয়। সেটা পরিবেশের দোষে, সমাজের গ্রহনযোগ্যতার দুরাবস্থায়। পতিতার মেয়ে হয়েও আমি দেখেছি এনজিওতে টেবল চেয়ারে চাকরী করে মোটামুটি সুন্দর একটা জীবন কাটাচ্ছে একজন নারী। আমি শুনেছি অনেক অনেক পতিতা, একটা পর্যায়ে পতিতাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে স্বামী সংসার বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সুস্থ্য জীবন কাটাচ্ছে।
মোদ্দা কথা মর্তের পতিতারা, পতিতা বা শুধুমাত্র যৌনতার জন্য জন্মায় না।
আলোচনার এ প্রেক্ষিতে, নিজের একটা স্বীদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রাখছি স্ববিনয়ে। মূল্যবোধ নৈতিকতার বিচারে, আমি বেহেশ্তের যৌনদাসী বা হুরদের থেকে মর্তের পতিতাদের বেশি শ্রদ্ধা করি স্রেফ এ কারণে যে এই মর্তের পতিতারা শুধুমাত্র দেহভোগে উৎস্বর্গ নয় বলে।
আল্লাহ এবং নবীরাসুল দ্বারা যতই তাদের গুন কীর্তন, রুপ সৌন্দর্য্যের বর্ননা শুনিনা কেন, এই সব হুরদের আমার কাছে কারখানায় নির্মিত সেক্স টয় সেক্স ডল ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।
এবার আসি একটু খেলো এবং হাস্যকর একটা তুলনা নিয়ে। (খেলো এবং হাস্যকর এই যুক্তিতে যে, ব্লগের নাস্তিক ভাইয়েরা এই যুক্তি শুনলে পেট ফেটে হাসবে)।
বেহেশ্তের হুর গুলো তাদের স্থান এবং উদ্দেশ্যগত দিক থেকে সাম্প্রদায়িক। শুধুমাত্র বেহেশ্তে যাওয়া মুসলমানরাই তাদের উপভোগ করতে পারে। অন্যদিকে একজন মর্তের পতিতা; জাত, কাল, বর্ণ, পাত্র, শ্রেনী, বিত্ত বিভেদের মধ্যে দিয়ে যায় না। সবাই তার কাছে খদ্দের।
এই দিক থেকেও আমি মর্তের পতিতাদের সাবাস দেব যে এই সাম্প্রদায়ীক মর্তলোকে তারা এরকম অসাম্প্রদায়ীক সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
অনেক নিরর্থ বকবকানী হল। এটা দিয়েই শেষ করছি।
মর্তের পতিতাদের এক ধরনের মিডল-ম্যান বা দালাল থাকে, যারা খদ্দেরকে পতিতাদের কাছে নিয়ে যাওয়া বা পতিতার প্রচারনার কাজটা সহজ করে দেয়। খদ্দেরের চাহিদা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পতিতাদের খবরা-খবর, মান, মূল্য ইত্যাদি ঠিক করে দেয়। এর বিনিময়ে দালালটি একটা অংশ ভাগ পায়।
অবশ্য বেহেশ্তের যৌনদাসীদের জন্য মিডলম্যান কে বা কারা, সে ব্যাপারে আমি কিছুই বলবোনা। সমঝদার পাঠকের বিবেচনায়ই তা ছেড়ে দিয়ে আলোচনার এখানেই ইতি টানছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১১ রাত ৯:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




