somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজার জামা

১৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজার জামা

-আশরাফ বাপ্পি

অনেক দিন আগের কথা এক দেশে ছিল এক রাজা। রাজার তোষামোদ খুবই পছন্দ, আর পছন্দ নিত্য নতুন জামা। গণতন্ত্র জামা, পিতার স্বপ্ন জামা, শান্তি জামা, আর হরেক রকম জামা ছিল তার সংগ্রহে। রাজার সেই জামার আবদার পুরণ করতে নিত্য নতুন কারিগর আসেন, রাজাকে জামা উপহার দেন বিনিময়ে তারা পান উপাধি কেউ পান দেশপ্রেমিক উপাধি, কেউ বুদ্ধিজীবী, আর রাজার কোষাগার তো তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকেই। একবার দেশে আসল আরেক আজব জামার কারিগর। এরা রাজাকে এক আজব জামা বানিয়ে দেবে, এই জামার নাম চেতনা জামা। যেমন তেমন জামা নয় এই জামা শুধু তারাই দেখবে যাদের মাঝে চেতনা আছে, দেশপ্রেম আছে, আর যারা এই জামা দেখবে না বুঝে নিতে হবে এদের দেশপ্রেম নাই এরা রাজাকার, দেশদ্রোহী । কেউ যদি এই জামা না দেখে তাকে জবাই করতে হবে, কারন রাজার দেশে কোন দেশদ্রোহীর ঠাই নাই। রাজার এই আইডিয়া ভারী পছন্দ হল। এই কারিগর দের নাম দেয়া হল প্রজন্ম কারিগর। এরা রাজার জন্য আজব জামা তৈরি করতে শুরু করল। আর এদের জন্য রাজ কোষাগার ও উন্মুক্ত করে দেয়া হল। প্রজন্ম কারিগরেরা দিনরাত অদৃশ্য চেতনা জামা বুনতে থাকেন। রাজদরবার থেকে তাদের জন্য কোর্মা বিরিয়ানী পাঠানো হয়। শুধু কোর্মা বিরিয়ানী খেলেই তো হবেনা হাগতেও হবে । তাই রাজ দরবার থেকে তাদের জন্যে টাট্টি খানা ও পাটানো হয়। কর্ম ক্লান্ত কারিগর দের জন্যে নাচা গানার ব্যাবস্হা করা হয়, আরও থাকে হরেক রকম মনোরঞ্জনের ব্যাবস্থা। কারিগরেরা কোর্মা বিরিয়ানী খান, টাট্টিখানায় হাগেন আর সমস্বরে আওয়াজ তুলতে থাকেন “জয় চেতনার জয়” রাজার সব টিভি চ্যানেলকে সেখানে পাঠানো হল, তারা সেখানে সবই দেখেন কিন্তু সেই অদৃশ্য চেতনার জামা দেখেন না। কিন্তু দেখছিনা বললে তো হবেন, পিঠে দেশদ্রোহী কেতাব নিয়ে কে বাচতে চায়? কেইবা জবাই হতে চায়? তাই তারাও কারিগরদের গলায় গলা মিলিয়ে সুর তুলেন আর সেই আদৃশ্য জামার স্তুতি গান গেয়ে যান। সংবাদ পাঠিকারা আবেগ গন কন্ঠে সেই কারিগর দের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা জাতিকে জানান দেয়। রাজাকে জানিয়ে দেয় তার জামা তৈরির কাজ কত সুনিপুন ভাবে এগিয়ে চলছে, যে যত সুন্দর করে আদৃশ্য জামার সৌন্দর্য্য বানিয়ে বানিয়ে বলতে পারে সেই রাজার ততোধিক প্রিয় হয়। নতুন জামার আনন্দে আত্ম হারা রাজা পুরনো জামা গুলো মাঝে মাঝে গায়ে জড়িয়ে নেন। কখনো গনতন্ত্র জামা পড়ে রাজ্যের সব বিরোধী সর্দার দের হাজতে বন্ধী করেন, অমনি সবাই সমস্মরে গেয়ে উঠে “জয় গনতন্ত্রের জয়”, আবার কখনো রাজা শান্তির জামা পড়ে সব গাই গুই করা দুষ্ট লোক দের গুলি করে খতম করার নির্দেশ দেন, আমনি সকলে সমস্মরে গেয়ে উঠে “ জয় শান্তির জয়”, তা কিন্তু নয়, কিছু বেয়ারা লোক যে থাকে না, টা কিন্তু নয়। তারা বলে “কই জামা ? কিছুই তো দেখিনা, কারিগরেরা খালি বিরিয়ানী খায় আর হাগে, সবই রাজাকে ন্যংটা বানানোর ফন্দি” অমনি কারিগরেরা হৈ হৈ করে উঠে, বলে “ ঐ চুপ, তুই জামা দেখিস নি , তুই রাজাকার, তোর ফাঁসি চাই” সাথে সাথে কোরাস আবার শুরু হয় । এতদিন যারা জামা না দেখলেও চুপ করে ছিল তারা ভয়ে আর জড় সড় হয়ে যায়, তারাও সেই অদৃশ্য জামার জয়গান করতে থাকে। এভাবে রাজ্য জুড়ে কারিগরদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। দূর দুরান্ত থেকে মানুষ আসতে থাকেন, দেখেন কর্ম ব্যাস্ত কারিগর দের কাজ, তাদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই, খালি কাজ আর কাজ, মানুষ নাচ দেখে, গান দেখে , বিরিয়ানি দেখে, টাট্টি দেখে, বোতল দেখে, ফুতানা দেখে কিন্তু জামা দেখেনা। আর জামা না দেখে নিজের দেশপ্রেমের অভাব বুঝতে পেরে নিজেই লজ্জা পায়, নিজের লজ্জা নিজের মধ্যে রেখেই বলে ঊঠে বাহ! বাহ! কি সুন্দর জামা, জয় চেতনার জয়, জয় কারিগরের জয়। এভাবে দলে দলে রাজ্যের সকল পন্ডিত, বনিক, খেলোয়ার, শিল্পী, নর্তকী, ভাড় সকলেই কারিগরদের কাজ দেখতে আসে আর জামা না দেখে নিজেদের দেশদ্রোহী চোখকে গালমন্দ করলেও, কারিগর দের জয়গান করতে ভুল করেনা। এভাবে দিন যায়, মাস যায়। এক সময় বিরায়ানীর সরবরাহ কমতে থাকে আর টাট্টির ট্যাঙ্কি ও ভর্তি হয়ে আসে। এবার কারিগরেরা ঘোষণা দেয়। তাদের জামা তৈরি শেষ। মহাসমারোহে রাজার কাছে চেতনা জামা হস্তান্তর করা হয়। কারিগর দের দেয়া হয় রাজ কোষাগার থেকে অনেক অনেক এনাম আর জাতীয় বীর উপাধি। পর দিন রাজা তার নতুন চেতনার জামা পড়ে রাজ্যময় ঘুরে বেড়ানোর ঘোষনা দেন। রাজ্য জুড়ে সাজ সাজ রব। চাকরি জীবীরা চাকুরী ফেলে, কৃষক লাঙ্গল ফেলে, গায়ের বধুরা সেজেগুজে, বাচ্চা ছেলেরা কিচির মিচির করতে করতে রাস্তার পাশে হাজির হয়। আজ রাষ্ট্রীয় শোভাযাত্রা, রাজা নতুন জামা পড়ে রাজ্য প্রদক্ষিন করবেন। অবশেষে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষন। রাজা বেরিয়ে আসেন হাতির পিঠে চড়ে, কিন্তু একী রাজা তো ন্যাংটা? উজির মন্ত্রী সেনাপতিরা লজ্জায় জিভে কামড় দেন, না রাজা ন্যাংটা এই লজ্জায় না, তারা যে কেন জামাটা দেখছেন না এই লজ্জায়, দেশপ্রেমিক না হওয়ার লজ্জায়। মুরুব্বিরা আমতা আমতা করেন, গায়ের বধুরা আঁচলে মুখ ডাকেন, ছেলেরা কেউ মুচকি হাসেন, কেউ হাসি চেপে কাশেন, মায়েরা সন্তানদের মুখ চেপে ধরেন । এর মাঝে এক বাচ্চা ছেলে মায়ের হাত ছাড়িয়ে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে “ হায় হায় রাজা তো ন্যাংটা” , অমনি সমস্মরে কোরাস শুরু হয় “ ব তে বাচ্চা ছেলে, তুই রাজাকার , তুই রাজাকার”
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×