![]()
মনে পড়ে ঠিক সেই সময়টা যখন নিজের দেশের আকাশসীমা ছেড়ে যাচ্ছিলাম। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে বেয়ে পড়েছিল কয়েক ফোঁটা জল। সেদিন টের পেয়েছিলাম দেশের প্রতি টানটে কেন বেড়ে যায় দেশের সীমানা পেরোলেই। মনে হচ্ছিল প্রতিটি ঘাস আমাকে ডাকছে আর কেঁদে কেঁদে বলছে আমাদের ছেড়ে যেওনা।
তারপরও চলে এলাম হাজার মাইল দূরে। কিসের টানে? শুধু মাত্র উচ্চশিক্ষা? নাকি নিজের দেশ থেকে এক বুক কষ্ট নিয়ে? এসবের হিসেব আসলে করতে চাইনা। কারণ, যত কারণই এর পেছনে থাকুক না কেন, আমার দেশ কোন দোষ করেনি। দোষ করতে পারে দেশের মানুষ, তাই বলে আমি দেশকে দোষারোপ করিনা।
২৬শে মার্চ, ২০০৯। দেখতে দেখতে নিজের দেশের বাহিরে নিঃশ্বাস নিয়ে কাটিয়ে দিলাম অনেকগুলো দিন। কিন্তু সেই দিনটি আমি কাটিয়েছিলাম একাবারেই ভিন্নভাবে। সেদিন পরিচয় হলো, একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সাথে। সেদিন সে কেঁদেছিল, আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে। সেদিন সে কেঁদেছিল তার বাবার বাম হাতের কথা মনে করে। সেদিন সে কেঁদেছিল, এই মনে করে বাংলাদেশে আজও তার বাবর শত্রুরা আজও আমাদের দেশে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে এই কথা ভেবে।
এভাবে আর কতকাল কেঁদে যাবে আমাদের এই জাতির বীর সন্তান এবং তাদের উত্তরসুরীরা। যখন দেখেছিলাম আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িতে আমার দেশের মাটির বুকের উপর দিয়ে ঘুরে বেরায় তখন মনে হয়েছিল বাবার হৃদয় যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে আর তার সন্তান হয়ে আমি কিছই করতে পারছি না। যে বাবা দেশের টানে নিজের জীবন দিতে শত্রুর বন্ধুকের মুখে দাঁড়াতে দিধা বোধ করেননি, আর আমি সেই বাবার সন্তান হয়ে আজ দেখে যাই, নীরবে সয়ে যাই।
৭১এর শত্রুরা আজ গলা ফাটিয়ে বলার সাহস পায় তারা তখন কোন অপরাধ করেনি। তারা নাকি কোন ভুল করেনি। আর ৭১এর সেই সকল বীরদের উত্তরসূরী হয়ে আমরা তা সহ্যও করে যাচ্ছি। আজ তারা এতটাই সংঘবদ্ধ এবং এমন শক্তভাবে আমাদের এই স্বাধীন দেশে শেকড় গেরেছে যে আমরা আজ তাদের দিকে আঙ্গুল তুলতেও দশবার ভাবতে হয়। মনে পড়ে সেই গানের লাইনগুলো,
"মাগো, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে,
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি।
তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।"
বড়বেশী মিথ্যে মনে হয় এই লাইনগুলো আজ। মনে হয় এই কথাগুলো সত্যি ছিলো আমাদের বাবাদের জন্য। আমাদের জন্য নয়। আমরাতো সেই শত্রুদের প্রতিহত করতে কিছুই করিনি। বরং সয়ে গেছি সব কিছুই। আমাদের কি হাত নেই? জানিনা, বুঝিনা, আজ কোথায় গেল আমাদের সেই সব বীর সন্তানেরা। দেশটাতো পেয়েছি, কিন্তু এই দেশটি যে ৭১ এর পর বার বার ধর্ষিত হলো সেইসব দালালদের দারা। ধর্ষিত হলো আমাদের সেই গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস।
আমরা কি করি? শুধু চেয়ে চেয়ে যাই। আর নিজেদের বার বার সমর্পণ করি সেইসব দালালদের কাছে। আমাদের কিবা আর করার আছে?
আমরা আসলে বাংলাদেশ শব্দটাকেই শুধু ভালবাসি। দেশটাকে নিয়ে কেউ ভাবি না। আমরা ভালবাসি বিশেষ দিনগুলোতে জাতীয় পতাকা মাথায় লাগিয়ে ঘুরতে, আমরা ভালবাসি দেশাত্ববোধক গান শুনতে কিংবা গাইতে। আমরা ভালবাসি বাংলায় কথা বলতে। কিন্তু একটিবার যদি ভেবে দেখি এই সব ভালবাসাগুলোকে ধরে রাখতে হলে পৃথিবীর কাছে আমাদেরকে একদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। আর তার জন্য আমাদের এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে অনেকদুর। তার জন্য আমরা কি করছি? সরকারি অফিসে একটা ফাইল পাস করতে ঘুষ নিচ্ছি, ছাত্র রাজনীতের নামে কলঙ্কিত করছি আমাদের ছাত্রদের সেইসব ইতিহাসের দিনগুলো, প্রবাসী বাংলাদেশী কিশোরীকে ধর্ষণ করছি, মুক্তিযোদ্ধাকে মারছি লাথি।
হায়রে আমার দেশ, কোথায় যেয়ে ঠেকবে এইসব কীর্তি? কবে আমরা সারা বিশ্বের কাছে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবো, হ্যাঁ আমি বাংলাদেশী।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




