somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিও বলতে চাই, হ্যাঁ আমি বাংলাদেশী

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনে পড়ে ঠিক সেই সময়টা যখন নিজের দেশের আকাশসীমা ছেড়ে যাচ্ছিলাম। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে বেয়ে পড়েছিল কয়েক ফোঁটা জল। সেদিন টের পেয়েছিলাম দেশের প্রতি টানটে কেন বেড়ে যায় দেশের সীমানা পেরোলেই। মনে হচ্ছিল প্রতিটি ঘাস আমাকে ডাকছে আর কেঁদে কেঁদে বলছে আমাদের ছেড়ে যেওনা।

তারপরও চলে এলাম হাজার মাইল দূরে। কিসের টানে? শুধু মাত্র উচ্চশিক্ষা? নাকি নিজের দেশ থেকে এক বুক কষ্ট নিয়ে? এসবের হিসেব আসলে করতে চাইনা। কারণ, যত কারণই এর পেছনে থাকুক না কেন, আমার দেশ কোন দোষ করেনি। দোষ করতে পারে দেশের মানুষ, তাই বলে আমি দেশকে দোষারোপ করিনা।

২৬শে মার্চ, ২০০৯। দেখতে দেখতে নিজের দেশের বাহিরে নিঃশ্বাস নিয়ে কাটিয়ে দিলাম অনেকগুলো দিন। কিন্তু সেই দিনটি আমি কাটিয়েছিলাম একাবারেই ভিন্নভাবে। সেদিন পরিচয় হলো, একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সাথে। সেদিন সে কেঁদেছিল, আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে। সেদিন সে কেঁদেছিল তার বাবার বাম হাতের কথা মনে করে। সেদিন সে কেঁদেছিল, এই মনে করে বাংলাদেশে আজও তার বাবর শত্রুরা আজও আমাদের দেশে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে এই কথা ভেবে।

এভাবে আর কতকাল কেঁদে যাবে আমাদের এই জাতির বীর সন্তান এবং তাদের উত্তরসুরীরা। যখন দেখেছিলাম আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িতে আমার দেশের মাটির বুকের উপর দিয়ে ঘুরে বেরায় তখন মনে হয়েছিল বাবার হৃদয় যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে আর তার সন্তান হয়ে আমি কিছই করতে পারছি না। যে বাবা দেশের টানে নিজের জীবন দিতে শত্রুর বন্ধুকের মুখে দাঁড়াতে দিধা বোধ করেননি, আর আমি সেই বাবার সন্তান হয়ে আজ দেখে যাই, নীরবে সয়ে যাই।

৭১এর শত্রুরা আজ গলা ফাটিয়ে বলার সাহস পায় তারা তখন কোন অপরাধ করেনি। তারা নাকি কোন ভুল করেনি। আর ৭১এর সেই সকল বীরদের উত্তরসূরী হয়ে আমরা তা সহ্যও করে যাচ্ছি। আজ তারা এতটাই সংঘবদ্ধ এবং এমন শক্তভাবে আমাদের এই স্বাধীন দেশে শেকড় গেরেছে যে আমরা আজ তাদের দিকে আঙ্গুল তুলতেও দশবার ভাবতে হয়। মনে পড়ে সেই গানের লাইনগুলো,

"মাগো, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে,
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি।
তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।"

বড়বেশী মিথ্যে মনে হয় এই লাইনগুলো আজ। মনে হয় এই কথাগুলো সত্যি ছিলো আমাদের বাবাদের জন্য। আমাদের জন্য নয়। আমরাতো সেই শত্রুদের প্রতিহত করতে কিছুই করিনি। বরং সয়ে গেছি সব কিছুই। আমাদের কি হাত নেই? জানিনা, বুঝিনা, আজ কোথায় গেল আমাদের সেই সব বীর সন্তানেরা। দেশটাতো পেয়েছি, কিন্তু এই দেশটি যে ৭১ এর পর বার বার ধর্ষিত হলো সেইসব দালালদের দারা। ধর্ষিত হলো আমাদের সেই গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস।

আমরা কি করি? শুধু চেয়ে চেয়ে যাই। আর নিজেদের বার বার সমর্পণ করি সেইসব দালালদের কাছে। আমাদের কিবা আর করার আছে?

আমরা আসলে বাংলাদেশ শব্দটাকেই শুধু ভালবাসি। দেশটাকে নিয়ে কেউ ভাবি না। আমরা ভালবাসি বিশেষ দিনগুলোতে জাতীয় পতাকা মাথায় লাগিয়ে ঘুরতে, আমরা ভালবাসি দেশাত্ববোধক গান শুনতে কিংবা গাইতে। আমরা ভালবাসি বাংলায় কথা বলতে। কিন্তু একটিবার যদি ভেবে দেখি এই সব ভালবাসাগুলোকে ধরে রাখতে হলে পৃথিবীর কাছে আমাদেরকে একদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। আর তার জন্য আমাদের এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে অনেকদুর। তার জন্য আমরা কি করছি? সরকারি অফিসে একটা ফাইল পাস করতে ঘুষ নিচ্ছি, ছাত্র রাজনীতের নামে কলঙ্কিত করছি আমাদের ছাত্রদের সেইসব ইতিহাসের দিনগুলো, প্রবাসী বাংলাদেশী কিশোরীকে ধর্ষণ করছি, মুক্তিযোদ্ধাকে মারছি লাথি।

হায়রে আমার দেশ, কোথায় যেয়ে ঠেকবে এইসব কীর্তি? কবে আমরা সারা বিশ্বের কাছে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবো, হ্যাঁ আমি বাংলাদেশী।

৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×