somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মাঝে বিখ্যাতদের সকল গুণাবলী থাকা সত্বেও.....:D:-*:((:P (২)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Click This Link

আমার উপরের দেওয়া লিন্কটিতে আগেই বলেছিলাম আমার পাবলো পিকাসো হবার সমূহ সম্ভাবনার কথা। শুধুমাত্র আমার বেরসিক মায়ের কারণেই আজ আমার পাবলো পিকাসো হয়ে ওঠা হলোনা।/:) আজ বলবো আমার আরেক সম্ভাবনার অকাল মৃত্যুর কথা।/:)

যাদুকরী হওয়াও হইলোনা আমার:(

আমি তখন ক্লাস থ্রীতে। আমাদের স্কুলে হঠাৎ একদিন যাদুসম্রাট জুয়েল আইচের আগমন ঘটলো। চিরকৌতূহলী স্বভাবের কারণে সর্বাগ্রে, সকলের সামনের আসনের একটি আসনে গিয়ে কখন পৌঁছে গেলাম নিজেও জানিনা।

তো বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও মূহুর্মূহু করতালীর মাঝে শুরু হলো যাদুসম্রাটের যাদু প্রদর্শনী। বিষম রকম অবাক হয়ে আমি দেখছি ধপধপে সাদা রুমাল থেকে একটা ছোট্ট কবুতরের ডিম বের করে আনা আবার সেই সাদা ধপধপে ডিমটাই রুমালে মুড়িয়ে ঝাঁড়া দিতেই পাখনা মেলে উড়ে গেলো সাদা কবুতর। রুমালটাও গেলো মিলিয়ে। যেন সাদা রুমালটাই ঐ শ্বেতশুভ্র কবুতরের পাখা, যা পাখনা মেলে দিলো নিলাকাশে! এত মুগ্ধতা! এত মুগ্ধতা!:|

এরপরে যথারীতি শুরু হলো একটা বন্ধ বক্সের এক দরজা দিয়ে আরেক দরজার ছোট্ট পিংপং বলের অপূর্ব বিস্ময়কর যাওয়া আসা, ফুলের রঙ বদলানো খেলা, রিং এর মাঝে একটা মেয়েকে শূন্যে ঘুম পাড়িয়ে রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি ও ইত্যাদি।

বলাবাহূল্য যে প্রতিটি যাদুর খেলাই আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলো বিস্ময় থেকে বিস্ময়তর মহারাজ্যে। কিন্তু সবচেয়ে অবাক হলাম একটা মেয়েকে তিন টুকরো করে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কেটে ফেলার দৃশ্যটা দেখে। ভয়ে কেঁদে উঠেছিলাম, সে বেশ মনে আছে। বীর সাহসী এই আমার সকল সাহস তখন কই যে উড়ে গিয়েছিলো সে খোদা তায়ালাই ভালো বলতে পারবেন।

যাইহোক, বাড়ি ফিরে পরদিন থেকেই শুরু হলো আমার যাদুচর্চা। তবে সে যাদুচর্চা বা প্র্যাকটিস যাই বলেন না কেনো তা আমাকে করতে হলো লুকিয়ে। কারণ সকালে খাবার টেবিলে যেই না আমার মনের নব বাসনার কথা বাবা মা ভাইবোনদের সামনে প্রকাশ করেছি মাত্র অমনি সবাই কি ভীষণ হাসাহাসি শুরু করে দিলো আর মা চোখ পাঁকিয়ে বললেন "খবরদার একবার যদি দেখি নতুন পাগলামি শুরু করছিস তাইলে ..... ..... ..... "কিন্তু কথায় আছে মরণে ডরেনা বীর আর এই আমি বীর কি নিছক ঐ হাসাহাসি আর চোখ রাঙ্গানীতে ডরবো?:P

কাজেই আবার সেই মোক্ষম সুযোগটি পেতে দুপুর বেলার জন্য অপেক্ষা করতেই হলো। মা ঘুমাতেই কবুতরের ডিমের অভাবে ফ্রিজ থেকে মুরগীর ডিম আর আমার স্কুলের টিফিন খাবার ন্যাপকিন এই দুই নিয়ে শুরু হলো আমার যাদুচর্চা। উপযুক্ত স্থান হিসাবে বেছে নিলাম ড্রইং রুমের সোফার নির্জন কোনটি।:D
যাদুকর অবশ্য শূন্যে থেকেই বা রুমাল থেকেই ডিমটিও বের করেছিলো কিন্তু আমি তো সকাল থেকে কিছুতেই রুমালকে ডিম পাড়াতে পারিনি তাই ব্যার্থ মনোরথ হয়ে সেকেন্ড ট্রাই ডিম থেকেই মুরগী বের করতে চাইলাম। :)

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সাকসেসফুল ডিম চুরির পর ড্রইংরুমের নিরাপদ কোণটিতে বসে, সুন্দর করে ডিমটি আমার টুইটি আঁকা হলুদ রুমালটি দিয়ে মুড়িয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়া শুরু করলাম। এতটুকুও ভুল করিনি। যাদুকর ঠিক যেভাবে রুমাল আর ডিমটি ধরেছিলো, ঠিক যেভাবে মন্ত্র পড়েছিলো সেসব আমি মুখস্থ করে নিয়েছিলাম অপলক দৃষ্টিতে। সে যাইহোক মন্ত্র পড়া টড়া শেষ করে যেইনা রুমালে মুড়িয়ে ঝাঁড়া দিয়ে শূন্যে ছুড়ে মারলাম বেরসিক ডিম থেকে তো কোনো মুরগী না, মুরগীর বাচ্চা না এমনকি একটা পালক পর্যন্ত বের হলোনা বরং ডিম হাত থেকে উড়ে গিয়ে মায়ের হালকা ক্রিম কালার সোফার কিনারায় লেগে.........কি হলো সবাই তো বুঝতেই পারছেন কিন্তু আমার তাতে বিন্দুমাত্র ভয় বা কষ্ট হলোনা আমি অবাক হয়ে দেখলাম ডিম হতে হলুদ কুসুমটা ছড়িয়ে ক্রিম কালার আর হলুদের মিশেলে সোফার জমিনে তৈরী করেছে এক চিত্র বিচিত্র চিত্রিকা।:)

যাইহোক হাতে বেশী সময় ছিলোনা। ততদিনে আমি জেনে গেছি একবার না পারিলে দেখো শতবার। আর বিকাল গড়ালেই মা ও বাড়ির অন্যান্য লোকজন ঘুম থেকে উঠে যাবার নিশ্চিৎ সম্ভাবনা। কাজেই আর কাল বিলম্ব না করে আবার ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে আসলাম। এবার আর বারে বারে চুরির মত বিপদজনক কাজ করবার ভুল করিনি। ফ্রিজে যতগুলো ডিম ছিলো ফ্রকের কোঁচড়ে করে সবকটিই নিয়ে চলে আসলাম সেই কোনটিতে। দুইবার / তিনবার/ চারবার বা পাঁচবার না পারিলে দেখো শত নয় হাজার/ লাখ কোটিবার এর চেষ্টায় মন দেবার প্রয়াসে।:D

আর তারপর নিশ্চিন্ত মনে রুমালে ডিম ঢেকে তন্ত্রর মন্ত্রর পড়ে ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারা , ডিম ঢাকা আর ছুঁড়ে মারা, ঢাকা আর ছুঁড়ে মারা। ড্রইং রুমের সোফা টেবিল, বই এর আলমারী সব আমার সেই বিচিত্র চিত্র বৈচিত্রে ভরে উঠলো। আর আমি সেই নির্জন দুপুরের সোনালী লগ্নে অবাক হয়ে দেখলাম যাদুর বদলে আমার হাতে ফুটে ওঠা অপরূপ সব শিল্পকর্ম! হাতের সবকটি ডিম শেষ হবার পরে উপায়ান্তর না দেখে আপাতত সেদিনের মত ডিম হতে মুরগির বাচ্চা ফুটানোর যাদু প্র্যাকটিস বন্ধ রাখলাম।

কিন্তু হাতে তখনও কিছুক্ষণ সময় অবশিষ্ট থাকায় সময়ের অপচয় না করে দ্বিতীয় যাদুচর্চায় মন দেবো কিনা ভাবছিলাম কিন্তু ছোট হলেও বেশ জানতাম আমার দ্বিতীয় যাদুচর্চায় ডিম থেকে মুরগি ফুটানোর যাদুচর্চার চাইতে বাধা বিপত্তিই আসবে বেশী। আমি মনে হয় শূন্যে রিঙ এর মাঝে মানুষ ঘুম পাড়ানোর বা ঘ্যাঁচ ঘোঁচ করে মানুষ কাটাকাটির যাদুটাই প্র্যাকটিস করতে চেয়েছিলাম। ঠিক কোনটা চেয়েছিলাম সে আমার এখন আর মনে নেই তবে তার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ বেশ মনে আছে।

আমার ছোট ফুপি কানে ফোন লাগিয়ে তিনার হবু জামাই এর সাথে সারা দুপুর নির্জনে গল্প করার পর হ্যান্ডসেটটা নিয়ে আরো বেশী প্রগাঢ় নির্জনতার আশায় আমারই মত ড্রইং রুমের কোণটাই বোধ করি বেছে নিতে ঐদিকেই আসছিলেন আর ড্রইং রুমে ঢুকে চারিদিকে আমার চিত্র বিচিত্র শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়ে বাক রোধ হয়ে গেলেন । পরম বিস্ময়ে অবাক নেত্রে চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখে কিছু পরে শরীর ও গলার সকল শক্তি প্রয়োগ করে এক চিল চেঁচানী দিলেন । আর সাথে সাথেই চারিদিক থেকে ধুপধাপ, হুড়মুড়, দুড়দাড় ......

আমার দেখা ছোটবেলার যাদুসম্রাটের মত যাদুসম্রাজ্ঞী হবার সকল ইচ্ছা অকালেই ঝরে গেলো ..../:)

চলবে......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ৮:১৪
১৩৭টি মন্তব্য ১৩৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×