somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক দুপুরের গল্প ..............

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টুং টাং টুং টাং।

জলতরঙ্গের মিষ্টি মিঠেল সুরটা.......
ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে...............
আবছায়া আলো আঁধারীর পুরো রুমটা জুড়ে এক মায়াময় আবেশ শীতলতা। মোহাবিষ্ঠ তন্দ্রাছন্নতার মাঝে দুপুরের ভাতঘুমটা পলকা হয়ে আসতেই অপু বেশ চিনতে পারলো, বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ চারিধারে সুরের বন্যা বইয়ে চলা তার প্রিয় রিংটোন'টাকে। এক-রাজ্যির আলস্যি নিয়ে চোখ বুজেই বালিশের তলা থেকে হাতড়ে বের করে আনলো সেলফোনটা।

ওপাশ থেকে আধো আধো বোলে এক দেবশিশু কন্ঠস্বর।
: এ্যলো এ্যলো এ্যলো
: এ্যলো এ্যলো বলো বলো। দুষ্টুমী করে বলে অপুও।
: তুমি কে? পাপা? পাপা তুমি?
: না আমি আঙ্কেল
: লনি আঙ্কেল? লনি আঙ্কেল?
: উঁহু আমি সানি আঙ্কেল। আবারও দুষ্টুমী করে অপু।
: আমাদের বাতায় আতোনা কেনো? চক্কেত আনবে আত্তা?
: আচ্ছা আসবো আর চক্কেতও আনবো। তুমি এ্যাড্রেস বলো এখুনি আসবো।
: এদ্দেস? এদ্দেস কি?
: মানে তোমাদের বাসাটা কোথায়?
: আমাদের বাসাটা উপলে।
: হা হা হা উপলে কোথায়?
: তিন তলায়।

হো হো করে হাসতে থাকে অপু। আসলেই তো পিচ্চিটার বাসা তিন তলা।
এই যা এতক্ষণে পিচ্চিটার নামই তো জানা হলোনা। তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করে ওকে।
: কি নাম তোমার বেবী?
: আমি বেবী না। আমি বলো। অনেক বলো আমি । অনেক ভাত খাই দানো?
: ও তাইতো স্যরি স্যরি তুমি তো অনেক বড়ো। এই এত্ত বড় তাইনা?
: হুম অনেক বলো এই এত্ত পাপাল মত আমি আমি........লনি আঙ্কেল অনেক মোতা, আমি তার মত মোতা দানো?



আরামপ্রদ মধ্যাহ্ন নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায় যেটুকু বিরক্তি ও আলস্যি ছিলো সেসব ভুলে অপু মেতে ওঠে পিচ্চিটার সাথে আলাপচারিতায়। পিচ্চিটার কলকন্ঠে ভেসে যায় অপু।

:আচ্ছা এবার বলো তোমার নাম কি?
:আমার নাম?
:হুম তোমার নাম।

নামটা শুনবার আগেই পিচ্চিটার মায়ের গলা শোনা যায় । এই এই কি করো তুমি? কি করো আমার ফোন নিয়ে? উফফ আর পারিনা। আবার আমার ফোন ধরেছো?
হাত থেকে ফোন কেড়ে নেওয়ার আর মৃদু ধস্তাধস্তির শব্দটা বেশ শুনতে পায় অপু আর সাথে পিচ্চিটার তারস্বরে চিৎকার।

: আমি ততা বব্বো । আমি ততা বব্বো আঙ্কেলের থাতে।

পিচ্চিটার কান্নাকাটিতে পাত্তা না দিয়ে ফোনে ভেসে আসে তার মায়ের গলা। খুবি আন্তরিকভাবে স্যরি দিয়েই শুরু করে সে।

: আই এ্যাম ইক্সট্রিমলি স্যরি। বাচ্চাটা খুবই দুষ্টু হয়েছে । ফোন হাতের কাছে পেলেই একে ওকে উল্টা পাল্টা নাম্বারে ফোন করে বসে। এত দুষ্টু হয়েছে। একে নিয়ে.....

স্তম্ভিত অপু! ওর কানে কি ঢুকছে না ঢুকছে বুঝতেও পারেনা সে। হাজার বছরের ওপার থেকে ভেসে আসা সেই চিরচেনা কন্ঠের কথামালা সমুদ্রের ঢেউ এর মত আছড়ে এসে পড়ে ওর হৃদয়ের বালুকাবেলায়।

: নীলা! কেমন আছো?

ওপারে যেন বজ্রাঘাতে থমকে যায় নীলা। চমকে ওঠে! এতক্ষণে চোখ যায় মোবাইল স্ক্রীনে। অনেক সযতনে অপূর্বা নাম দিয়ে লুকিয়ে সেভ করে রাখা অপুর নাম্বারটাই টিপে-টুপে বের করে এনেছে আজ আবীর।
দরদর করে দু'চোখে বইতে থাকে শ্রাবণধারা। আবারও প্রশ্ন করে অপু।

: কেমন আছো নীলা?

নিরুত্তর নীলা। ওপার হতে শুধু ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।।

: আমার নাম্বার কোথায় পেলে?

: হিয়ার কাছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে নীলা।

এপারে একটা দীর্ঘশ্বাস। সেটুকু এড়িয়ে একটু হেসে ওঠে অপু।

: ফোন করোনিতো একটা দিনও।

: তুমি তোমার দিব্যি দিয়ে বলেছিলে আর কখনও যেন তোমার মুখোমুখি না হই। ফোনেও যেন কথা না বলার চেষ্টা করি।

উদগত অশ্রু সম্বরণ করে বলে চলে নীলা....

আমি তোমার কথা পুরোপুরি রাখতে পারিনি। অনেক কষ্টে তোমার বদলে ফেলা ফোন নম্বর'টুকুই শুধু যোগাড় করতে পেরেছিলাম। তোমার বাসার ঠিকানা বা অন্য কোনো কিছুরই হদিস আমি পাইনি। তারপরও তোমার দিব্যি ভুলিনি, তাই এ পাঁচটা বছরেও........

এমন সময় ডোরবেলের টুংটাং শব্দটা ফোনের ওপ্রান্ত থেকেও পেরিয়ে অপুর বুকে এসে বিঁধে যেন।

নীলা ছোট্ট করে বলে,
: এখন রাখছি। বাই........

আরো একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে অপু বলে,

ভালো থেকো ........


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:০৪
১১৮টি মন্তব্য ১১৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×