somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তকরবি ও মিথিলা নামের একটি মেয়ে ....

০২ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- মিথিলা.........এ্যাই মিথিলা...........
- মিথি ই ই ই ই ই .......... ঐ কি করিস??? কানে শুনতে পাসনা ?
দরজায় দেখা গেলো মিথিলাকে। মনে হয় বুয়ার সাথে কিচেনে কিছু একটা করছিলো।
- কি হয়েছে??? সাত সকালে এত চেঁচামেচি কেনো? জানোনা ফুপা ঘুমাচ্ছে? রাগ রাগ চোখে জানতে চাইলো মিথিলা।
-আমার ব্লু গেন্জিটা কোথায় রেখেছিস? কতবার বলেছি আমার আলমারীতে হাত দিবিনা। তবুও কানে যায়না না? দরকারের সময় একটা জিনিস খুঁজে পাওয়া যায়না। খবরদার যদি আর একদিন.....

জয়কে আলমারীর সামনে একরাশ লন্ডভন্ড করা কাপড়ের স্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এমনিতেই মেজাজ চরমে উঠেছে মিথিলার। মাত্র গতকালই সে গুছিয়েছে আলমারীটা। তার চেহারাটা অগ্নিমুর্তী ধারন করলো। জয়কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-একদম চুপ থাকো। দরকারের সময় পাওনা মানে? আমি গুছিয়ে গাছিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখি বলেই তো পাও, বুঝেছো?
দুমদাম করে এগিয়ে এসে একটানে নীচের ড্রয়ার থেকে ব্লু গেন্জীটা বের করে জয় এর হাতে দিতেই হো হো করে হেসে উঠলো জয়। জয় এর হাসি দেখে আরও বেশী গা জ্বলে গেলো ওর। বললো লজ্জা করেনা আবার হে হে করে হাসছো?
- আরে হাসছি কি সাধে। জানিস তোকে যা সুন্দর লাগছে না??
মিথিলা কিছু বুঝে উঠবার আগেই ওকে টেনে নিয়ে বিশাল বড় আলমারীর প্রমান সাইজ আয়নাটার সামনে দাঁড়া করিয়ে দিলো জয়।

ছুটির দিনের সকাল বেলা মোগলাই পরোটা ট্রাই করতে গিয়ে এমনিতেই ঘেমে নেয়ে উঠেছে মিথিলা তায় আবার অসাবধানতাবশতঃ মাথায় একগাদা ময়দা লেগে যাওয়ায় দেখাচ্ছে তাকে ভুতের মত এটা নিয়েই জয় এর ঠাট্টা।
আয়নায় তাকিয়েই মিথিলার মেজাজ সপ্তমে উঠলো আরও।
-জয়ভাইয়া দিনদিন তোমার বুদ্ধি যে কই লোপ পাচ্ছে! বড় হচ্ছো না ছোটো হচ্ছো দিনদিন? এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এমন হাসতে হবে?
জয়ের সেদিকে খেয়ালই নেই, সে হো হো করে হেসেই চলেছে।
- জানিস রাগলে তোকে কত সুন্দর দেখায়! ঠিক যেন লালপরী। টম্যাটো কন্যা!! আর যখন ভেউ ভেউ করে কাঁদিস তখন ঠিক নীলপরী। আর যখন .....
-থামো। একধাক্কায় ওকে সরিয়ে দিয়ে কিচেনে ফিরে যায় মিথিলা।
জয়ের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। মহোৎসাহে ব্লু গেন্জিটা মাথায় গলিয়ে নিয়ে হাঁক ছাড়ে .....
- তাড়াতাড়ি নাস্তা দে। কুইক........ আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে ......
শিস দিতে দিতে ডাইনিং টেবিলে এসে বসেই আবার চিৎকার জুড়ে দেয়
- আরে কি হলো?? নাস্তার নামগন্ধ নেই কেনো??? আরে কি করিস তুই???

মিথিলা এক হাতে গরম মোগলাই পরোটার থালা, আরেক হাতে ধনেপাতা আর টক তেঁতুলের চাটনী নিয়ে টেবিলে এলো।
- এত চিলচেঁচানী কেনো ? বিয়ে করে বউ এনে তারপর যত খুশী চেঁচিও। এখন তোমার হুকুমের চাকর এইখানে কেউ নেই বুঝেছো?
ওর দিকে তাকিয়ে পরম বিস্ময়ের ভান করে জয়।
- আরে বউ আনবো কি !!! বউ তো এখনই রেডী । তারপর গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-বউ তো আমার সামনেই বসে আছে। অয়ি মুগ্ধ নয়নবিহারী...হে হে হে হে ....
-চুপ করো। ফের বাঁদরামী? মিথিলার মুখে রাগের আভাস খেলে যায়। সাথে লাল হয়ে ওঠে দুইগাল।
- হে হে হে হে আবার টম্যাটো কন্যা হয়ে গেলিতো!!! শোন এতো দুনিয়াসুদ্ধ সবার জানা, তুই যে আমার বউ হবি। তোর এত হম্বিতম্ভী কে আর শুনবে এই বাড়ির লোকজন ছাড়া? বিশ্বাস না হয় মাকে জিগাসা করে দেখ।
রাগ দেখিয়ে উঠে যায় মিথিলা।


দিন দুই পর
মিথিলা কলেজ থেকে ফিরতেই, দরজা খুলেই কাজের মেয়েটা জানায় ফুপির শরীর খুবই খারাপ । মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন বাথরুমে।
-সর্বনাশ!! এখন কি করছেন? ডাক্তার আন্কেলকে ফোন করা হয়েছে? বলতে বলতে দৌড়ে ফুপীর ঘরে ঢুকলো মিথিলা।
-ফুপী কি হয়েছে? জয়ভাইয়া কোথায়? ফুপা কি করছেন? ডাক্তার আন্কেল....
-আরে থাম থাম কিছু হয়নিরে? এত অস্থির হওয়ার কিছু হয়নি।
এমনিতে মাথাটা একটু ঘুরে গিয়েছিলো।
- চুপ করতো ফুপী। এইভাবে ইগনোর করে করেই তুমি শরীরের বারোটা বাজিয়েছো। মিথিলার চোখে ক্রোধ আর উদ্বিঘ্নতার আভাস!
-আর জয়ভাইয়া কোথায়? কি করছে সে? বলতে বলতে ছুট লাগালো মিথিলা জয়কে ফোন দিতেই বোধ হয়।

নাসিমা আলী! জয়ের মা , মিথিলার ফুপী হেসে ফেললেন মিথিলার এই কান্ডকারখানা দেখে। এত পাগল মেয়েটা!!! গত ছয় বছরে এ বাড়ির একছত্র আধিপত্য নিয়ে ফেলেছে সে। অতটুকুন মেয়ে কিন্তু পুরোবাড়ির প্রতিটা খুঁটিনাটি বিষয় যেন ওর নখদর্পনে। রোড এক্সিডেন্টে
বাবা মায়ের মৃত্যুর পর দুঃখী মেয়েটার দায়িত্ব একমাত্র ফুপু হিসেবে তাকেই নিতে হয়েছিলো। তারপর থেকে কি এক মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে নিয়েছে মেয়েটা। তার বকা ঝকা, আদেশ উপদেশ , প্রতিটা ব্যাপারে সুক্ষ্ণ বিচার বুদ্ধি। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে আসলেই হয়তো আর সম্ভব ছিলোনা নাসিমা আলীর পক্ষে সবদিক সামলে নেওয়ার। এই পুচকি মেয়েটা সেসব দিক নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে এক রকম ভারমুক্ত করেছে তাকে।




পক্ষাঘাতগ্রস্ত রেজোয়ান সাহেবের সারাদিন বলতে গেলে বাসাতেই কাটে। বাসায় বসে বই পড়া, নিউজপেপার আর টিভি দেখা এসব নিয়ে বোর হয়ে যাওয়া ছাড়া কিছুই আর করার থাকেনা এই বয়সে। এই কারনেই আজ সবাই মিলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসেছে ওরা।
বেশ ছিমছাম একটা জায়গা বেছে নিয়ে লেকের ধারে চাঁদর বিছিয়ে বসেছেন । মিথিলা আর জয়কে দেখা যাচ্ছে কিছু দূরে লেকের পাড়ে। জয় তার স্বভাব মত মনে হয় মিথিলাকে খেপিয়েছে।
মিথিলার রেগে যাওয়া আচরণ আর চেহারা বেশ চেনা আছে নাসিমা আলীর। সেদিকে চেয়ে মনে মনে ভাবলেন,দুজনকে দেখাচ্ছে যেন দুটি ফুলের মত । স্নেহসিক্ত জননী হৃদয়ে এমন কতরকম ভাবনাই না জাগে!

- জয় পাস করে একটা চাকুরীতে ঢুকলেই ওদের বিয়েটা সেরে ফেলবো এবার। রেজোয়ানসাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন তিনি।
- আহা মিথিলার পড়াশুনা শেষ হতে তো এখনও বেশ দেরী। এরই মাঝে সংসারের জো্যাল ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাও পুচকি মেয়েটার। স্নেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকান তিনি অদূরে খুনসুটিরত মিথিলা জয় এর দিকে।
- এখনও কি সে এই জোয়াল নিজের ইচ্ছায় ঘাড়ে তুলে নেয়নি? সংসারের সবদিক তো ঐ সামলায় । এমনকি তোমার গুণধর পুত্রকেও শাসনে রাখে একমাত্র সেই।
হো হো করে হেসে ওঠেন রেজোয়ান সাহেব।
- সে তুমি ঠিকই বলেছো। মেয়েটাকে ছেড়ে থাকতে হবে, অন্য কোথাও বিয়ে দিতে হবে, এমনটা ভাবতেও পারিনা আর।

মোটামুটি মনে মনে এমনটাই ধরে রেখেছেন নাসিমা আলী। মা বাবা মরা এই মেয়েটাকে কিছুতেই কাছছাড়া করবেন না তিনি। ছেলের বউ বানিয়ে নিজের কাছেই রেখে দেবেন বাকীটা জীবন। মিথিলা জয় এমনকি আত্নীয় স্বজনদের কাছেও এমন ইচ্ছেটাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মিথিলার জন্য এখন থেকেই গহনা পত্র গোপনে গড়িয়ে রাখতে শুরু করেছেন। মিথিলারও যে এ বিষয়ে অমত নেই তা তিনি বিভিন্ন কৌশলে জেনে নিয়েছেন। আহা এত সুন্দর লক্ষী একটা মেয়ের কপালে এতটুকু বয়সে এতখানি দুঃখ ! এত অল্প বয়সে বাবা মা হারা ! অস্ফুটে একটা নিশ্বাস পড়ে তার অকাল প্রয়াত ভাই ভাবীর কথা ভেবে।


মাস তিনেক পর
রাত একটা বাইশ বাজে। বাড়ির সবাই ঘুমের রাজ্যে। অস্থিরভাবে ঘর আর বারান্দা করছে মিথিলা। হাতে সেল ফোন।একশোবার মনে হয় কল দিয়েছে জয়কে। জয় এর ফোন বন্ধ। ফোন ধরছে না। রাগ বাড়তে থাকে মিথিলার জয়ের এই রকম আক্কেল জ্ঞানহীন কর্মকান্ডের জন্য।
শেষ মেশ ক্লান্ত হয়ে বারান্দার ইজিচেয়ারতায় গা এলিয়ে দেয়। ঝকঝকে মেঘমুক্ত আকাশে এক রাশ ঝিকিমিকি তারা। এত সুন্দর একটা রাত। কিন্তু কিসের এক অকারন অস্থিরতায় হুহু কান্নায় বুক ভেঙ্গে আসে ওর।
ঠিক তখনই ডোরবেলের টুংটাং আওয়াজে দৌড়ে যায় দরজার কাছে।
দরজা খুলেই এই এতক্ষন ধরে একটা খবর পর্যন্ত না দিয়ে বাইরে থাকার জন্য জয়কে বকা দিতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় মিথিলা। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে ওর আলুথালু উদভ্রান্ত চেহারার দিকে।

- কি হয়েছে? এত রাত পর্যন্ত ছিলে কই জয়ভাইয়া। ফুপাফুপু জানতে পেলে কি রকম অস্থির হবে ভেবে দেখেছো একটাবার?
-আরে ভীষন রকম এক ঝামেলায় পড়েছিলাম রে! ক্লান্ত কন্ঠে জানায় জয়।
-আচ্ছা যাইহোক তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে এসো, আমি খাবার গরম করে আনছি।
-আর খাব না এত রাতে।
-কেনো? কে খাওয়ালো?
-বলছি। একটু ফ্রেশ হয়ে আসতে দে।
ফ্রিজে খাবার গুলো তুলে কিচেনের দরজাটা টেনে ঘুরে দাঁড়াতেই মিথিলা দেখে জয় টাওয়েল হাতে মুখ মুছতে মুছতে পিছে এসে দাঁড়িয়েছে।
-আর বলিস না আজ হঠাৎ আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো তাকে হসপিটাল নেওয়া, ব্লাড দেওয়া এসব করতে করতে কখন যে সময় ফুরোলো। শেষে হসপিটালে বেড ম্যানাজ করা। তার আত্মীয় স্বজনদেরকে খবর দেওয়া এসব করতে করতেই এত রাত।
-তাই বলে তুমি বাসায় একটা খবর দেবেনা? আমি তো চিন্তায় শেষ। ফুপা ফুপিকেও বলতে পারিনা। শেষে দুশ্চিন্তায় পড়বেন । আচ্ছা যাই হোক আমি ঘুমাতে গেলাম তুমিও শুয়ে পড়ো জয়ভাইয়া।
-তুই আমার জন্য , আব্বা আম্মার জন্য অনেক ভাবিস তাইনারে? আসলেই তোর মত লক্ষী একটা মেয়ে হয়না।
- চুপ করোতো এটা আবার কোনো কাজ হলো?? তোমরা কি আমার জন্য কম করো?
-আরে বলিস কি! করবোনা? বিস্ময় ফুটিয়ে তোলে জয় তার চেহারায়।
- তুই হইলি এই বাড়ির একমাত্র ভবিষ্যৎ পুত্রবঁধু।
-যাও। ঈদানিং বেশি দুস্টু হয়েছো তুমি জয়ভাইয়া। লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে মিথিলা।


মাসখানেক পর
ইদানিং জয় একটু একটু করে যেন অনেকখানি বদলে গেছে এমনি মনে হয় মিথিলার। এ বাড়ির প্রতিটা মানুষ, ইট,কাঠ, দেওয়ালের মর্মকথা ওর নখদর্পনে। কাজেই ওর চোখকে ফাঁকি দেওয়া এতটা সহজ নয় । জয় এর এই পরিবর্তনটা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে সে। জয় আজকাল বেশ অন্যমনস্ক থাকে। বাড়ি ফেরে রাত করে। জিগাসা করলে বলে সেই বন্ধুর কথা। যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো একদিন। যাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিলো সে । তার কাছে ছিলো, তাকে সময় দিচ্ছে । কথাচ্ছলে জেনেছে মিথিলা যে মেয়েটার বাবা মা গ্রামে থাকেন। শহরে বলতে গেলে কেউ নেই তার। তার অষুধ পথ্যির যোগাড় করাটাও কষ্টসাধ্য গরীব বাবা মায়ের পক্ষে।স্বভাবজাত দুষ্টুমী আর খুনসুটিতে মেতে থাকা জয় এর এমন ঔদাসিন্যতা,নিরলিপ্ততা ভাবিয়ে তোলে মিথিলাকে। অনেক অনেক বদলে গেছে জয় । একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে!


ইদানিং জয় এর পুরোটা আকাশ জুড়ে শুধুই রিমি। যেদিকে তাকায় রিমির মুখ। ওর ভাবনা চিন্তা প্রতিটি চেতনাতেই যেন মিশে গেছে রিমি কখন ওর নিজেরই অজান্তে। সেদিন হঠাৎ রিমি এর অসুস্থ হয়ে পড়বার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত শুধুমাত্র বন্ধুই ছিলো ওরা। কিন্তু নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে ওকে বাঁচিয়ে তুলবার পর হতেই কি রকম এক আশ্চর্য্য অনুভুতির সৃষ্টি হলো ওর মাঝে। রিমির শরীরে বইছে ওর লৌহকনিকা। ওর হৃদপিন্ডের প্রতিটি স্পন্দন স্পন্দিত হচ্ছে তারই বুকের রক্তে। এক আশ্চর্য্য রকম অনুভুতি! ভাবতেই শরীরে এক রকম শিহরন জাগে ওর। রিমিকে ছাড়া কিছুই আর ভাবতে পারছে না জয়। ধ্যান, জ্ঞান, চিন্তা, চেতনা প্রতিটি কনা জুড়ে এখন রিমি। আর রিমি মেয়েটাও যেন এক শান্ত শীতল নদী । ওর গভীর কালো চোখ দুটো জুড়ে সমুদ্রের গভীরতা। একেই বলে প্রেম তা এতদিনে জয় জেনেছে। রিমিকে ছাড়া একটা মূহুর্ত কিছুই ভাবা সম্ভব না আর জয় এর পক্ষে।
ব্যাপারটা সে একমাত্র শেয়ার করেছে মিথিলার সাথে। মাকে বলতে একটু দ্বিধা করছিলো দেখে মিথিলা বললো,
-তুমি একদম চিন্তা করোনা তো জয়ভাইয়া। আমি ফুপীকে ম্যানেজ করবো। তুমি তার চাইতে একদিন রিমি আপুকে নিয়ে আসো। ফুপীর সাথে পরিচয় করিয়ে দাও।
-থ্যাংক ইউ মাই স্যুইট লিটল সিস। থ্যাংকস এ্যা লট! তোকে আজকেই তোর প্রিয় বাটারস্কচ আইসক্রিম খাওয়াবো।
- হুম!! কাজ করে দিলে তখন স্যুইটু সিস না ??? নাইলে তো রাতদিন ঝগড়া করো।
- আমি কি তোর সাথে ঝগড়া করতে পারি? দুঃখ দুঃখ মুখ করে জয়।সেটা দেখে হেসে ওঠে মিথিলা। সাথে জয়ও হাসতে থাকে।

একমাত্র ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে পুরো বাড়িটা বর্ণীল বাতিতে সাজানো হয়েছে। হলরুমে বানানো স্টেজটা ঝলমল করছে ফুলেল সাজে। মিথিলার কর্মব্যাস্ততার শেষ নেই। এক হাতে সামলাচ্ছে চারদিক। সেদিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস গোপন করে ফেলেন নাসিমা আলী। কি চেয়েছিলেন আর কি হলো? যা হোক আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। রিমি জয় ওরা দুজন জীবনে সুখী হোক। এবার মিথিলার জন্য একজন সুযোগ্য পাত্র খুঁজে বের করতে হবে। আহা এই মেয়েটাকে ছেড়ে তিনি থাকবেন কিভাবে! ভাবতেই চোখ দুটো জলে ভরে আসে।
-কি ভাবছো ফুপী। এই ভাবে বসে থাকলে চলবে? দেখবে এসো কনে বাড়ির তত্ব সাজানো কেমন হয়েছে। জয়ভাইয়াকে বর সাজে কেমন লাগছে! এসো এসো শিগ্রী।
-তোর উপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে মা। তুই নিজে যা তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে আয়। তোর জন্য কেনা নতুন বেনারসীটা পরিসনি কেনো? সবদিক একাই সামলাচ্ছিস বলে এমন পাগলী হয়ে থাকবি? যা যা শিঘ্রী তৈরী হয়ে নে।
-উফ ফুপী। তুমি যা না ! ফুপীর পিড়াপিড়িতে রেডী হতে চললো মিথিলা।



কলিংবেলটা বেশ কয়েকবার চেপেও কেউ দরজা খুলছেনা দেখে বিরক্ত হয়ে উঠলো জয়। অভ্যাসবশত ছোটখাটো একটা লাথি কষিয়ে দিলো দরজায়। জয় এর এমন অধৈর্য্যপনা দেখে হেসে ফেললো তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নতুন বউ রিমি।
বিয়ের পরদিনই কক্সেসবাজার গিয়েছিলো ওরা হানিমুন কাটাতে। সপ্তাহ দুয়েক সেখানে কাঁটিয়ে আজ ফিরেছে ওরা।
বেশ কয়েকবার বেল আর লাথির পর ঘুম ভেঙে আলুথালু বেশে উঠে এসে দরজা খুলে দিলো ওদের বাড়ির পুরান বুয়া। ওদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে জিব কেটে বললো,
- আয়হায় ভাইজান ! ভাবী একটু চোখ লাইগা আসছিলো... কতখন দাঁরায় আছেন ... ছি ছি ...
- আর ছি ছি করা লাগবেনা খালা। মিথিলা কই? সেও কি ঘুমাচ্ছে? কানে শুনতে পায়না কেউ?
জয় এর চোটপাট চিল্লাচিল্লিতে উঠে আসেন নাসিমা আলী। এ কয়েকদিনে সাস্থ্য ভেঙ্গে অর্ধেক হয়ে গেছে।জয় দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে। রিমি এগিয়ে এসে পা ছুঁয়ে সালাম করে।
- মা তোমার কি অসুখ করেছে। কই ফোনে একবারও জানাওনিতো।
- না না অসুখ টসুখ কিছুনা । এমনিতেই শরীরটা ভালো নেই। তোমরা যাও জামা কাপড় ছাড়ো। খাবার দিতে বলি।
-তোমাকে ব্যাস্ত হতে হবেনা মা। মিথিলা কই? মিথি!!! ঐ মিথি।
সেদিকে তাকিয়ে নাসিমা আলী একটু গম্ভীর মুখে বলেন
- মিথি বাসায় নেই জয়। তোমরা ফ্রেস হয়ে টেবিলে এসে বসো আমি খাবার দিতে বলছি।
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হয় জয়। মায়ের এমন মুখ আগে কখনও দেখেছে কিনা মনে পড়েনা তার।

রাত প্রায় আড়াইটা! নিশুথী রাত! রিমি ঘুমাচ্ছে।সারাদিনের জার্নির ধকল শেষে অঘোরে ঘুমাচ্ছে রিমি। নাসিমা আলীর শোবার ঘরে তার বিছানার সামনের ইজিচেয়ারটায় মুখোমুখি নিশ্চুপ বসে রয়েছে দুই অপরাধীর মত মা আর ছেলে। জয়ের কোলের উপর পড়ে আছে খোলা চিঠিটা।

মিথিলার চিঠি।

জয়ভাইয়া
এই প্রথমবারের মত জেনে গেছি আমি কতখানি অকৃতজ্ঞ একজন মানুষ।শুধু অকৃতজ্ঞই নই, স্বার্থপরও বটে। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর অসীম মমতায় বুকে টেনে নিয়েছিলে তোমরা আমাকে। তোমার মা, আমার একমাত্র ফুপী আর আমার অতি ভালোমানুষ ফুপার কাছে যে স্নেহ মমতা আদর আর ভালোবাসা পেয়েছি ততখানি ভালোবাসা নিজের বাবা মায়ের কাছেও পেয়েছি কিনা তা অনেক ভেবেও মনে করতে পারিনা আমি।
তোমাদের ভালোবাসায় আমি কখন যে ভুলে গিয়েছিলাম নিজের অস্তিত্বকে তা আমি জানতেও পাইনি। এ বাড়ির একছত্র আধিপত্য নিয়ে ফুপা ফুপু, আত্মীয় স্বজনের ঠাট্টা মস্করায় আমি ধরেই নিয়েছিলাম এ বাড়ির উপর পূর্ণ অধিকার আমার। ভেবেছিলাম আমিই এ বাড়ির একমাত্র পুত্রবঁধুর স্থান অধিকারী।আমি কখনও বুঝিনি ঠাট্টাচ্ছলে আমাকে বার বার বউ বলাটা তোমার নিছক ঠাট্টাই ছিলো। তোমার সেই ঠাট্টা বা ফানটুকুই আমার কাছে ছিলো ধ্রুবসত্য।
কিন্তু ভুলটা যেদিন ভেঙ্গে গেলো। আমার স্বার্থপর মন বিদ্রোহ করে বসলো। আমার স্বপ্ন সিংহাসনে অধিষ্ঠিতা অন্য কারো ছবি দেখবার সাধ্য আমার নেই। তাই আমি চলে যাচ্ছি।
আমাদের গ্রামের এনজিও স্কুলে চাকরী নিয়ে চলে যাচ্ছি আমি। দুঃখ একটাই পড়ালেখাটা শেষ করা হলোনা আর। আমার স্বার্থপরতা,অকৃতজ্ঞতার শাস্তি হয়তো এটাই।
যাইহোক ভালো থেকো তোমরা। রিমিভাবীকে কখনও কষ্ট দিওনা। ঠাট্টা করেও না। ঠাট্টা করার খুব বাজে একটা অভ্যাস আছে তোমার। ফুপা ফুপীর দিকে খেয়াল রেখো। নিজের যত্ন নিও। আমার শুভকামনা বাতাস হয়ে ছুঁয়ে রইবে তোমাদেরকে আজীবন।
মিথিলা ( একজন অকৃতজ্ঞ মানুষের নাম)


বেশ খানিকটা সময় পর চিঠিটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় জয়। ধীরে ধীরে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় । কুচিকুচি করে ছিড়ে শূন্যে ভাসিয়ে দেয় মিথিলার শেষ চিহ্ন। অস্ফুটে বলে,
-আসলেই ঠাট্টা করার অভ্যাসটা আমাকে এবার ছাড়তেই হবেরে মিথি।
রুমে ফিরে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। মধ্যরাতের একঝলক হিমহিম ঠান্ডা হঠাৎ হাওয়া ছুঁয়ে যায় ওকে।

বুকের ভেতর চিনচিনে চাপধরা একটা ব্যাথা। সে বেদনার নাম মিথিলা। মধ্যরাতের বাতাসটুকু অস্ফুটে বুঝি বলে যায় ,
শুভকামনা !!!

মিথিলাহীন শূন্যবাড়িটায় বাতাস হয়ে ছুঁয়ে যায় মিথিলার শুভকামনা নাকি তার দীর্ঘশ্বাস!

আমার প্রানের পরে চলে গেলো কে?
বসন্তের বাতাসটুকুর মত
সে যে চলে গেলো বলে গেলো না..
সে যে কোথায় গেলো ফিরে এলোনা ......

সে চলে গেলো বলে গেলো না!!!


লেখাটা একজনপ্রিয়বন্ধু এর জন্মদিনের উপহার স্বরূপ দেওয়া হলো।

শুভ জন্মদিন বন্ধু!









সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১২:৫৬
১৮৯টি মন্তব্য ১৯০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×