বাবা যেন পুরোপুরি ভুলেই যায় ওকে। মাঝে মধ্যে ওর যাও বা দু একবার নতুন মা ও বাবার সাথে দেখা হয়েছে, তাতে দূর্ব্যাবহার ছাড়া এতটুকু স্নেহও জোটেনি ওর কপালে। ৯/১০ বছর বয়সে ওর দাদী ওকে নিয়ে আসে আমাদের বাড়িতে। সেই থেকে ছোট্ট সুমী বড় হতে থাকে আমাদের সাথে। ভীষন চুপচাপ, শান্ত ভদ্র এমন একটা ভালো মেয়ে সত্যিই বুঝি খুঁজে পাওয়াই দুস্কর কঠিন এ জগতে।

বাসার সবার সাথে নীরবে মিলে মিশে চলে সে। কোনো দাবী দাওয়া নেই, সদা হাস্যমুখী, মৃদুভাষী। মাছ, পাখী, বাগানের ফুলগুলোর সাথে সাথে বাসার ডালমেশিয়ানটা তার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু। সবার দিকে ওর সমান নজর। মনুষ্যজাতির অতি প্রিয়জনদের কাছে আঘাত পেয়ে সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধান পেয়েছে বুঝি সে এই বোবা প্রাণীগুলোর মাঝেই। তাই তো তাদের সাথে ওর দারুণ সখ্যতা। ওকে দেখলে সত্যিই সেই রুপকথার গল্পের সিনডেরেলাকেই মনে পড়ে। ছোট্টবেলার বই এর পাতা থেকেই বুঝি উঠে এসেছে সেই সিনডেরেলা, ঠিক আমাদের বাসাতেই।
মা নেই। দাদীও মারা গেছেন। বাবা থেকেও নেই। কেউ নেই ওর এই পৃথিবীতে একদম নিজের আপনজন। তাই আমরা একদিন ঠিক করলাম এই সিনডেরেলাকে একটা রাজকুমার এনে দিতে হবে। দুখী এই সিনডেরেলা পাক ওর নিজের মত করে একটা সংসার। পাক একটা পরিবার। ওর রাজকুমারের ভালোবাসা ভুলিয়ে দিক ওকে আজীবনের কষ্ট ও দুঃখ।
অনেক খুঁজে পেতে এক রাজকুমার যোগাড় করা হলো। আমাদের বাসায় তখন বিয়ের ধুম!! আমি ও কয়েকজন হই হই করে বিয়ের শপিং এ বের হলাম।

কনের জন্য বিয়ের শাড়ী, গয়না, সাজুগুজু কিচ্ছু যেন বাদ না পড়ে সেদিকে আমাদের সজাগ নজর।

ওর মা বাবা থাকলে যা করতো তা না পারি আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টার ত্রুটি যেন না ঘটে।

কেনা হলো বরের পান্জাবী, শ্বাসুড়ীর শাড়ী, অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের পোষাক আষাক।

বিয়ের দিন সাজিয়ে দিলাম ওকে আমি বিউটিশিয়ান।


চুড়ি আবার তার ভীষন প্রিয়!!!

আমার পাল্লায় পড়ে সাজুগুজু করে সে মহা টায়ার্ড!!


বর আসলেন, গেট ধরা হলো। বরের দুষ্টু বন্ধু দুই টাকায় মুড়িয়ে দিলো এক হাজারটাকার একটা নোট। গেট ধরাদেরকে বোকা বানাতে।

বর রাজকুমার নিয়ে আসলেন সিনডেরেলার জন্য লাল টুকটুক বিয়ের শাড়ী, নাকের ফুল আর জরির মালা, তোয়ালে সাবান আরও কত কিছু!!

আবারও শাড়ী পালটে বরের আনা শাড়ি পরানো হলো।

যাইহোক এরপর.....
কাজী সাহেব সবার আগে ধরে বেঁধে বিয়ে পড়ি্যে দিলেন আমাদের সিনডেরেলা ও রাজকুমারকে।
এরপর খানাপিনা.......


পোলাও......

গরুর মাংস

চিকেন তন্দুরী

সালাদ

বোরহানী

বরের আনা মিষ্টি




খানাপিনার পর বর আর কনেকে একখানে বসানো হলো। আমাদের সিনডেরেলা এতদিনে পেলো তার একান্ত আপনজন।সবার কাছে ওদের জন্য চাই দোয়া। আমাদের ছোট্ট সিনডেরেলাকে এত বড় করেছি আমরা । তার বাকীটা জীবন যেন সে অনেক অনেক সুখে থাকে। ভালো থাকুক সিনডেরেলা তার নতুন জীবনে!

এ লেখাটি বিশেষ করে ছবিগুলি এই ব্লগে দেখা আমার চোখে সেরা পাঁচকন্যা( পন্চরত্ন) সূরন্জনা আপু, পারভীন আপু, শ্রাবন সন্ধ্যা আপু, ফেরারী পাখি আপু ও জুন আপুকে উপহার দিচ্ছি। সুরো আপু, পারু আপু শ্রাবণ আপু সেই ১৬ই জুলাই থেকেই সিনডেরেলার ছবিসহ পুরো বিয়ের গল্প শুনতে চেয়েছিলেন।
বিয়ের ঝামেলা মিটতে না মিটতেই আমরা হারালাম আমাদের দেশের অনেক বড়, অসাধারণ, দূর্লভ একজন মানুষকে। হঠাৎ এত আনন্দের পর এমন প্রগাঢ় বিষাদের মূহুর্ত লেখাটা লিখতে ও মনকে রাজী করাতে এতটা সময় নিয়ে নিলো।
নতুন জীবনে ভালো থাকুক সুমী আর অন্য এক ভূবনেও অন্য এক জীবনে ভালো থাকুক আমাদের সবার প্রিয় মানুষটি। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, হাসি আনন্দ বেদনা এই নিয়েই তো জীবন। আমাদের এই সব দিনরাত্রী!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১০