somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ইমন জুবায়ের ভাইয়া

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৮ এর অক্টোবর থেকে হঠাৎ একজনকে এই ব্লগে লিখতে দেখি। তার লেখাগুলো নতুন ব্লগারেরা সচরাচর যেমনটা লিখে থাকেন তেমনটা নয়। তার প্রথম লেখাটা ছিলো রবিঠাকুর সন্মন্ধীয়। তখন আমি আকন্ঠ রবিঠাকুরেই ডুবে থাকতাম কাজেই লেখাটা চোখে পড়লো ঠিকই কিন্তু কেন যেন কোনো মন্তব্য করা হলোনা। হয়তোবা এমন গুরুগম্ভীর লেখাটায় মন্তব্যের কোনো ভাষা খুঁজে পাইনি আমি সেদিন। তারপর একের পর এক তার জ্ঞানগর্ভ লেখাগুলি দেখে একটু ভয়ে ভয়েই থাকতাম। কাছ ঘেষতামনা খুব একটা তার। হ্যা আমি ইমন ভাইয়ার কথাই বলছি। আমাদের ইমন জুবায়ের ভাইয়া। তার প্রথম লেখাটি ছিলো রবীন্দ্রনাথ।
http://www.somewhereinblog.net/blog/benqt60/28849987

এরপর তার সাথে আমার কিছুটা সখ্যতা হলো তার রাগসঙ্গীত বিষয়ক পোস্টগুলোদেখে। ততদিনে আমি জেনে গেছি ভাইয়া ব্ল্যাকের জন্য গান লিখেছেন অনেক অনেক। যাইহোক সেসময় আমি ছায়ানটে রাগ সঙ্গীতের কোর্স করছিলাম। সেখানে একজন পিচ্চি ভাইয়া ইমন জুবায়ের দেখে আমি ধরেই নিলাম সেটাই এই ইমন ভাইয়া। আমি সেখানে তাকে কিছুই জিগাসা করিনি কিন্তু ব্লগে এসে তাকে সেকথা জিগাসা করতে উনি হেসেই খুন যদিও উনি খোলাসা করে দিলেন যে ছায়ানটের সেই ইমন তিনি নন তবুও তার সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানালেন না তার স্বভাবসিদ্ধ গাম্ভীরতায়।

২০০৯ এর ১৭ই অগাস্ট। হঠাৎ অবাক করে দিলেন ইমনভাইয়া আমাকে আমার জন্মদিনে।
http://www.somewhereinblog.net/blog/benqt60/28995048
এই পোস্টটিতে উনি সবার আগে শুভেচ্ছা জানালেন আমাকে আর নাফিস ইফতেখারকে। তার আগে ভাইয়াকে কবে কোথায় কখন আমি বলেছিলাম আমার জন্মদিনের কথা সেকথা আর মনে নেই আমার। শুধু মনে আছে এত অবাক হয়েছিলাম! এত ভালোলাগা, এমন শুভেচ্ছার আনন্দ আসলেই অভাবনীয় এক মুহুর্ত ছিলো আমার কাছে।

এর কিছুদিন পর বাচ্চাদের নিয়ে লেখা আমার এক পোস্টে ভাইয়ার কিছু কমেন্টে বুঝতে পারি বাচ্চাদের জন্য তার এক বুক ভালোবাসার কথা। সত্যি বলতে কি একমাত্র এই পোস্ট টিতেই আমি দেখেছিলাম ভাইয়ার স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্য্যের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। শিশুসুলভ চপলতায় উনি আমাকে দিয়েছিলেন উনার ভাগনীর বেশ কিছু ছবি। সেসব ছবি এডিট করে করে রাজকন্যা, কখনও বা ফেইরী এসবে সাজিয়ে দেবার খেলায় মেতেছিলেন তিনি। আমার কাছে ইমন ভাইয়ার সেই চেহারাটা আজীবন অক্ষয় হয়ে থাকবে। আমার সেই পোস্ট যেখানে ইমন ভাইয়ার আরেকটা দিকের দেখা পেয়েছিলাম আমি। Click This Link

এরপর আমি অন্য নিকে চলে আসলাম। বেশ কিছুদিন জানতে দেইনি কাউকেই সেই পুরানো আমিকে। ভাইয়ার সাথে একটা দূরত্ব তৈরী হলো।আমি তাকে ঠিকই চিনতাম কিন্তু উনি আমাকে আর তখন চিনতে পারতেন না। তবুও লুকোচুরির ছলে অনেক অনেকবার তার পোস্টে কমেন্ট করে আসতাম আমি। এমনি একদিন তার এক পোস্টে ভাইয়াকে জানালাম আমি ২১ ডিসেম্বর নিয়ে পৃথিবী ধ্বংসের কথা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ভাইয়া এমন একটা পোস্ট দিলেন আমাকে যে আমি আবারও অভিভুত হলাম! নিশ্চিন্ত হলাম আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার ব্যাপারে।
http://www.somewhereinblog.net/blog/benqt60/29453514#c9350279

বেশকিছুদিন যাবৎ ভাইয়া কিছুটা নীরব হয়ে গিয়েছিলেন যেন তবুও মাঝে মধ্যেই উঁকি দিতেন আমার সব হাবিজাবি পোস্টে। কবিতায় বা তার এতটুকু ভালো লাগার পোস্ট হলেও দিয়ে আসতেন কিছু প্লাস! ফেসবুকে আমি তাকে জ্বালিয়ে মারতাম। ভাইয়া হু হা করে চুপ হয়ে যেতেন। ইদানিং বেশ চুপচাপ থাকতেন। আজ হঠাৎ সকালবেলা ফেসবুক খুলে সুরন্জনা আপুর স্টাটাস দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম!! ব্লগে এসে নিশ্চিৎ হলাম রেজোয়ানার পোস্ট দেখে।সাথে সাথে ভাইয়ার ব্লগে গিয়ে চোখের জল আটকাতে পারলাম না। তার প্রিয় পোস্টের তালিকার সবার আগে চোখ আটকে গেলো।
প্রিয় পোস্ট
!!টোনাটুনি পিঠাঘর - বাংলাদেশের ১০১ পিঠাপুলির নাম ও গড়ন বা রচনা সমগ্র!! - শায়মা

কি আশ্চর্য্য!! তোমার মত একজনের প্রিয় পোস্টের তালিকায় আমার মত একজনের একটা পোস্ট দেখতে পাবো এত সৌভাগ্যবতী নিশ্চয়ই আমি নই ভাইয়া। এ শুধু স্নেহ আর ভালোবাসারই নিদর্শন! কার জীবনে ইমন ভাইয়ার কতখানি অবদান বা স্মৃতি আছে জানিনা তবে আমার জীবনে এই স্মৃতিটা বুঝি অবিস্মরণীয় দুঃখ হয়ে থাকবে। তুমি আমাকে কতখানি ঋণী করে দিয়ে গেলে তুমি তা কখনই জানবেনা। রান্নাবান্না বা খানাপিনা পোস্টে কত জনকেই মজা করে দাওয়াৎ দেই বা খাওয়াবার প্রতিশ্রুতি দেই কিন্তু তোমার কাছে দুষ্টুমী করে বলা দায়বদ্ধতাটুকু হয়তো এ জীবনে কখনও আমার ভোলা হবেনা।

ভাইয়া তুমি নেই তবে তুমি ছিলে এই ব্লগ বা সমগ্র ব্লগসমাজের গর্ব! এমন একটা মানুষও বুঝি খুঁজে পাওয়া যাবেনা যার এ ব্যাপারে দ্বিমত থাকতে পারে। তোমার অবদান শুধু ব্লগেই নয় সঙ্গীত জগতেও কম নয়। তোমার জ্ঞানের পরিধি কত বেশি বিস্তৃত ছিলো তা হয়তো আমার সারাজীবনে পরিমাপ করেও শেষ করা হবেনা। আমি ভেবে পাইনা ইতিহাস, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, মিথ, সঙ্গীত, শাস্ত্র কোন বিষয়েই না তুমি জানতে! তোমার মত আর একটি ইমন জুবায়ের হয়তো শত বর্ষেও জন্মাবেনা এইখানে।

তোমার মত নির্বিবাদী একনিষ্ঠ ও সকল সমালোচনার উর্ধে একজন মানুষকে আমি সত্যিই আর কখনও দেখিনি। চর্মচক্ষুতে দেখা হয়নি তোমাকে তবে মনের চোখে যতটুকু দেখেছি তাতে তুমি এক অসাধারণ মানুষ ছিলে। তোমার তুলনা শুধু তুমিই।

আর কখনও অবাক হবোনা ওমন কোনো শুভেচ্ছায়, ওমন কোনো আনন্দে যা এক জীবনে তুমি আমাকে একদিন ভাসিয়েছিলে। আর কখনও কিছু জানতে হলেই জিগাসা করতে পারবোনা তোমাকে। কেউ আর সান্তনা দিয়ে প্রমান করেও দেবেনা যে পৃথিবী ধ্বংস হবেনা। আমার কোনো ভয় নেই । সব ভয়কে জয় করে তিনি নিজেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আর কখনও কোনোদিন কোনো লেখা ভেসে উঠতে দেখবোনা তার এই ব্লগের পাতায়। যার লেখকের জায়গাটায় লেখা থাকবে ইমন জুবায়ের। তবুও তুমি বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে। যে কোনো আলোচনায় শ্রেষ্ঠ লেখকের নামে উঠে আসবে তোমার নাম!


অনেক অনেক ভালো থেকো ভাইয়ামনি!!!


যেখানেই থাকো!!!!!


একদিন তুমি লিখেছিলে আমার এই ব্লগে প্রথম জন্মদিনের শুভেচ্ছা পোস্ট আর আমি আজ লিখছি তোমার মৃত্যুদিনের শোকসন্তপ্ত স্মৃতির পোস্ট।এর চাইতে বেদনা আর কি হতে পারে? বলতে পারো ভাইয়া তোমার ওই ওপারের দেশ হতে?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৬
১০৮টি মন্তব্য ১০৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×