ওহ মাই হাসব্যান্ড- ১ ( আজ, কাল, পরশু সিরিজ গল্প)
ওহ মাই হাসব্যান্ড - ২ ( আজ কাল পরশু সিরিজ গল্প )
পরদিন থেকে আমার জগত বদলে গেলো। রিমো আমার জীবনের সাথে আনন্দ বেদনা ভালো লাগায় প্রতি মুহুর্তে প্রতি পলে পলে জড়িয়ে গেলো। আমি সকালে উঠেই আমার ঘুম ভাঙ্গার আগেই সে আমার প্রিয় প্রিয় কখনও বিফ ভুনা, কখনও নেহারী বা কখনও চিকেন টিক্কা নাস্তা বানিয়ে রাখে। আমাকে গাড়ি চালিয়ে অফিসে পৌছে দেয়। আমাকে আর বাজার বা রান্না বান্না নিয়ে ভাবতেও হয় না। রিমোই আমাকে অফিসে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাজার করে বাসায় ফিরে রান্না করে ফেলে। ঘরবাড়ি ক্লিনিং বা যে কোনো বিল দেওয়া এসবই যেন রিমোর নখদর্পনে। আমরা রোজ বিকালে পার্কে, শপিং এ বা কোনো রেস্টুরেন্টে যাই। রাতে ডিনারের পরে চাঁদনী রাতে ছাঁদে বসে বসে ও আমাকে গান শোনায়। পরম বন্ধুর মত ওর কাঁধে মাথা রেখে আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
জীবনটা হঠাৎ যেন বদলে গেছে রিমোর আগমনে। সে ভীষন ভীষন অরগানাইজড, পারফেকশ্যনিস্ট, ইমোশনাল। ইমোশনের ক্ষেত্রে সে প্রায় মানুষের কাছাকাছি। সোফিয়া কাঁদতে পারে না কিন্তু আমার রিমো মানুষের দুঃখে এবং কষ্টে কাঁদতেও পারে। এর প্রমান আমি অনেক অনেকবার পেয়েছিও। বিশেষ করে একদিনের কথা বলি। এক রাতে আমার হঠাৎ ভীষন জ্বর আসলো। জ্বরের ঘোরে আমি ছটফট করছিলাম। রিমোর সফটওয়ারে খুব ভালোভাবেই ইনস্টল করা আছে একজন রোগী, বিশেষ করে কোন রোগের কোন রোগীকে কিভাবে সেবা দান করতে হয় তা সে খুব দক্ষতার সাথেই করে থাকবে। রাত দুইটায় প্রচন্ড জ্বরে যখন আমি জেগে উঠলাম। আমার আগেই দেখি রিমোর সিক এলার্ম বেঁজে উঠেছে। সে আমার জন্য প্যানাডল, দুইটা বিস্কিট, এক গ্লাস পানি আর আইসব্যাগ নিয়ে মাথার কাছে ওয়েট করছে। আমি চোখ মেলতেই সে আমার দিকে ওষুধ পানি এসব এগিয়ে দিলো আর তারপর আমার মাথাটা কোলে নিয়ে মাথায় আইসব্যাগ চেপে রাখলো। জ্বরের ঘোরেও আমি দেখলাম রিমোর চোখ ছলছল করছে। আমার কষ্টে আমার চাইতেও কষ্টটা যেন ওরই বেশি। আমি হাসিমুখে ওর হাত ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম। ও সারারাত আমার শিওরে বসে রইলো।
নীল রঙটা আমার তেমন কিছু পছন্দ না কিন্তু একদিন অফিসের কাজে আমি একটা নীল শাড়ি পরে বের হচ্ছিলাম। রিমো বললো, 'তোমাকে নীল শাড়িতে দারুন লাগছে জানো? মনে হচ্ছে তুমি হুমায়ুন আহমেদের রূপা। উপন্যাসের রূপা নীল শাড়ি পরে কিন্তু তাকে আমি দেখিনি, শুধুই গল্পের বই এ পড়েছি আর আজ চোখের সামনে তোমার মাঝেই সেই রূপাকেই দেখতে পাচ্ছি।' আমার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেলো। রিমো হুমায়ন আহমেদও পড়ে!!!! এরপর থেকে আমি প্রতি বিকালে নীল শাড়ি পরি । শুধুই রিমো খুশি হবে বলে। একদিন বিকেলে ফিরে আমরা দুজন যখন বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলাম। রিমো ছোট একটা পলিথিনের প্যাক থেকে বের করে আনলো একজোড়া বেলী ফুলের মালা। সে বললো, " জানো আজ সকালে যখন আমি শপিং থেকে ফিরছিলাম। একটি ছোট্ট মেয়ে এই মালা নিয়ে আমার গাড়ির জানালায় এলো। ঠিক এমনই মালা চুলে জড়িয়ে আমি কিছু মেয়েদেরকে ঘুরতে দেখেছি। আমি জানি তুমি এই মালা পরলে তোমাকে দেখাবে অনেক বেশি সুন্দর। আর এই ফুলের স্মেলটাও দারুন!" রিমোর এসব কথা শুনে শুনে আমার চোখ ছানাবড়া, ডালবড়া বা কখনও কখনও কুমড়োবড়া বা বড়িও হয়ে ওঠে। কিন্তু আমার খুব ভালো লাগে দিনে দিনে রিমো একজন খাঁটি মানুষের চাইতেও সুন্দর হয়ে উঠছে, শিক্ষা,দীক্ষা, বুদ্ধি, বিদ্যায় ও মননে।
কিন্তু মাঝে মাঝে রিমোকে নিয়ে আমি বিপদে পড়তে পড়তে বেঁচে যাই। যেমন কদিন আগে এক ছুটির দিনে আমরা দু'জনে নন্দন পার্কে গিয়েছিলাম ঘুরতে। হঠাৎ এক দল ছেলে আমাদের পাশ ঘেষে যাবার সময় আমাকে একটু ধাক্কা লাগিয়ে দিলো। অমনি রিমো তার কলার ধরে একদম শূন্যে উঠিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। রিমোর এই কান্ডে সেই ছেলে যত না ভয় পেয়েছিলো তার থেকেও কোটি গুন বেশি ভয় পেয়েছিলো সেদিনের আশেপাশের মানুষগুলো। আমি রিমোকে যত বলি, " রিমো ছাড়ো ছাড়ো। বেচারা মরে যাবে তো।" রিমো আমার কথায় কানই দেয় না। এইদিকে আমার ব্যাগের মধ্যে যে রিমোর্ট কন্ট্রোলটা আছে সেটাও আমার মনে পড়ছিলো না ঘটনার আকস্মিকতায়। শেষে ওকে ঠেকাতে না পেরে আমি একটু আড়ালে গিয়ে ব্যাগ থেকে রিমোর্টটা বের করে ওর এ্যাংগার ম্যানেজমেন্টের স্যুইচে চাপ দিলাম। সাথে সাথে রিমো ঐ ছেলেকে দূরে ছুড়ে ফেললো। ভাগ্যিস সামনেই ছিলো বাচ্চাদের বাম্পিং ক্যাসেল। নইলে বেচারার ভবলীলা সেদিনই সাঙ্গ হত। চারিদিকে হই চই পড়ে গেলো আমি কোনোমতে রিমোকে নিয়ে সেদিন পালিয়ে এলাম।
একই ভাবে আরও একদিন মোড়ের দোকানের সামনের এক রিক্সাওয়ালাকে ধাক্কা দিলো এক মোটর সাইকেল। সেদিন ছিলো বসন্ত বিকেল। আমাদের বসন্ত বাতাসে রিক্সা করে হাওয়া খাবার সাধ হওয়ায় আমরা ছিলাম আরেক রিক্সায়। ঐ বাইকের আরোহী রিক্সাওয়ালাকে মারতে শুরু করলো। রিমো নেমে গিয়ে ঐ বাইকটা তুলে শূন্যে আছাড় মারলো। বিস্ময়ে সবাই এতই হতবাক হয়েছিলো যে নড়তে পর্যন্ত ভুলে গেলো। তারপরের ব্যাপার লিখতে গেলে আরেক কাহিনী হয়ে যাবে। যাইহোক এমন সব ব্যাপারগুলোর কারণে রিমো এ পাড়ায় বেশ চোখে পড়ে যাচ্ছে আমি বেশ বুঝতে পারছি আর এ কারণে আমার ভয়েরই শেষ নেই কবে যে রিমো ধরা পড়ে কে জানে। আমি যতই ওকে লুকাতে চাই মানে ওর যান্ত্রিক অতি মানবীয় ব্যাপারগুলো, ততই তা যেন বেশি বেশি প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
সে যাইহোক, বন্ধু বা হাসব্যান্ড হিসাবে আমি শান্ত ভদ্র, অগাধ জ্ঞানের অধিকারী, সর্ববিদ্যায় পারদর্শী সোজা ভাষায় একের ভেতরে একশো মানুষ এমনই চেয়েছিলাম। তবে এমন মানুষ কোথাও কখনও খুঁজে পাইনি এই জীবনে কিন্তু রিমোর ভেতরে একশো কেনো দুইশো গুণাবলীও আমি ইচ্ছা করলেই দিয়ে দিতে পারি। এছাড়াও রিমো সেল্ফ লার্নিং এ অনেক কিছুই শিখে ফেলছে। হাসব্যান্ড হিসাবে পরিচয় দিয়ে আমি তাকে বলতে গেলে এক প্রকার লুকিয়েই রেখেছি এই বিশ্ব সংসারের আর সকল মানুষ থেকে। তবুও মাঝে সাঝেই এই মানব সমাজের মাঝে রিমোর এত এত ভালো গুণগুলিও যেন বেমানান হয়ে যায়।
কথায় আছে সুখে থাকলে ভূতে কিলাই। আমার হলো সেই অবস্থা। রিমোর এত এত ভালোবাসা, এত এত ভালো ভালো গুনাবলী, এত এত ইতিবাচক কার্য্যকলাপ সব কিছুর পরেও কিছু কিছু নেতিবাচক বেগুন, নির্গুন বা বদগুন ছাড়া রিমোকে বুঝি সম্পূর্নভাবে মানুষ বলা যাচ্ছিলো না তাই মাঝে মাঝেই আমার মন একটু আধটু ঝগড়া, খুনসুটির জন্য আনচান করছিলো। তো একদিন বললাম "রিমো তুমি কি জানো এই দুনিয়ায় এমন কোনো হাসব্যান্ড ওয়াইফ নেই যারা জীবনে ঝগড়া করেনি।" রিমো বললো, " হ্যাঁ জানি মানুষ জাঁতটাই এমন ঝগড়া, হিংসা বিদ্বেষ এসব থাকবেই। আমার ভেতরেও সকল ইমোশন আছে তবে ভালো ইমোশন ছাড়া আমি নেগাটিভ ইমোশন কখনও ব্যাবহার করিনি।" আমি বললাম "তবে চলো আজ আমরা ঝগড়া করবো।" রিমো বললো, তথাস্ত.... রিমো তার নেগেটিভ ঝগড়ার স্যুইচের
মাইল্ড মিটারটা অন করলো।
আমি বললাম রিমো- তুমি একটা অসহ্য।
রিমো বললো, আমাকে অসহ্য মনে হবার তেমন কোনো কারণ দেখছি না। কারণ তোমার মনের সকল পছন্দনীয় ব্যাপারগুলি স্যুইচ অন করে রেখেছি আমি। কাজেই তুমি যে অভিযোগ করছো তা সত্য নয়।
আমি বললাম- সত্য না বললেই হবে? এহ রে আসছেন আমার সত্যবাদী শমসের।
রিমো বললো- সত্যবাদী শমসের কথাটা ভুল জায়গায় ভুল প্রয়োগ হয়েছে। বলতে হবে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির। তুমি বিশাল বড় ভুল করেছো যা তোমাকে এত লেখা পড়া করে মানায় না।
আমি- কি বললি! আমাকে মানায় না!!!!!!! আমি ভুল!!!!! ঐ তুই তো নিজে কিছুই জানিস না অংক ছাড়া।
রিমো- আবারও ভুল করলে প্রিয়তমা। আমি অনেক কিছুই জানি। একজন সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী মানুষের চাইতেও অনেক বেশি জানি। তর্কের খাতিরে তুমি সত্য ভুলে যাচ্ছো। যা বলছিলাম, সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে পঞ্চপাণ্ডবদের একজন। অন্যান্য পাণ্ডবদের মতই ইনিও ছিলেন পাণ্ডুর ক্ষেত্রজ পুত্র। এঁর প্রকৃত পিতা ধর্ম মানে যম। মায়ের নাম কুন্তী। উল্লেখ্য, কুন্তীর প্রথম পুত্র ছিলেন কর্ণ। কুন্তীর গর্ভে যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়। যুধি মানে যুদ্ধ। তো তিনি যুদ্ধে স্থির থাকতেন বলে, তাঁর নাম হয়েছিল যুধিষ্ঠির......
- উফফ অসহ্য !!!!!!!! ঐ চুপ তোকে ঝগড়া করতে বলছিলাম, পন্ডিতি করতে বলছি!!!! রাগে আমার গা জ্বলে গেলো। আমি ওর ঝগড়া বা নেগেটিভ আ্যটিচুড মোড আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিলাম সে পন্ডিতি ছেড়ে কেমন ঝগড়া পারে জানবার কৌতুহলেই।
কিছুক্ষন দম নিয়ে আমি আবার শুরু করলাম।
- রিমো তোমার মত গাধা আমি জীবনেও দেখিনি। আমার দেখা এই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গাধা তুমিই।
রিমো একটু ভেবে নিয়ে বললো,
- আমাকে যদি বলো গাধা তবে তুমি এক মহিলা গাধী। নিজেকে বড় বলে যে, নিজেকে নিয়ে বড়াই করে যে তার মত গাধী কি আর হতে পারে কেউ বলো? তোমার নিজেকে নিয়ে নিজেই বড়াই করাটা বড়ই হাস্যকর।
রিমো আরও কি কি বলে যাচ্ছিলো। আমার তো রাগে কান ঝা ঝা করছিলো। আমি বললাম,
- ঐ চুপ!!!!!! আবার!!!!!!!!!!জানিস লোকে আমাকে রুপবতী গুনবতী, দয়াবতী, মায়াবতী কত রকম বতী বলে!!!!!!
রিমোর কি হলো জানিনা। হঠাৎ সে তার নেগেটিভ ইমোশন এঙ্গার স্যুইচ হাই এ ঘুরিয়ে দিলো। তারপর রক্ত চক্ষু করে চিৎকার দিয়ে উঠলো-
- তুই চুপ!!!!!!!!!!!!!!!! রুপবতী, মায়াবতী, দয়াবতী কত রকম বতী না? তুই আসলে একটা.....আসলে একটা আ আ আ আ আ আ আ আ
মানে আমি তার কান্ডে হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম। তাই তাড়াতাড়ি রিমোর্ট টিপে ওকে অফ করে দিলাম। বাব্বাহ! বাঁছলাম। তার ঝগড়ার এই করুণ পরিনতী সহ্য করা আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিলো না। উফফ হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। অনেক হয়েছে। শখ মিটেছে আমার। আর জীবনেও তাকে ঝগড়া করতে বলবোনা। আমার সামনে জলজ্যান্ত রিমো হা করে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছা করলেই আমি এখন এইটাকে আমার গ্রীল ছাড়া বারান্দার দশতলা থেকে আসলেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে সোহানী আপু, কুঁড়ের বাদশাভাইয়া, সেলিমভাইয়া, শকুনভাইয়া, সুমনভাইয়া,ডঃ এম এ আলী ভাইয়া, অদ্ভুত_আমি, মোহেবুল্লাহ অয়ন, محمد فسيح الاسلام, শামচুল হক, জুনআপু, চাঁদগাজীভাইয়া,শাহরিয়ার কবীর,মলাসইলমুইনা, বিষাদ সময়, নূর হাফসা, রাজীব নূর, সম্রাটভাইয়া, সুজনভাইয়া, নীলমনি, ভৃগুভাইয়া, গিয়াসভাইয়া, ইতি আপু,শাহাদাৎ হোসেন, ডানা ভাইয়া, শামচুল হক, আখেনাটেনভাইয়া, শাইয়্যানভাইয়া, কালীদাস, মইনুলভাইয়াসহ সকলেরই মনোবাসনা পূরণ করে ফেলতে পারি। তবে আমি সেটা করলাম না। আমি ওকে বন্ধ অবস্থায় আবার ওর মিটার ম্যানুয়ালী ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পজিটিভ মোডে নিয়ে আসলাম যেখানে রিমোর মনে প্রেমের ফল্গুধারা বহিছে..... তারপর ওকে আবার অন করে দিলাম। রিমো চোখ পিট পিট করেই গান ধরলো সেই ষাটের দশকের স্টাইলে....
তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, চাঁদ বুঝি তা জানে.....
হা হা হা হা
এইভাবে হাসি, গানে, আনন্দ, বেদনায়, ঝগড়ার চেষ্টায় ভালোই চলছিলো আমাদের দিন কিন্তু হঠাৎ একদিন ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখি। টিভি রুমের সোফাটার উপরে বসে রিমো। তার হাতে টিভির রিমোর্ট আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বুঝলাম টিভিতে কিছু একটা দেখে সে ইমোশনাল হয়ে পড়েছে। তবে সেই কিছু একটা যে এত মারাত্বক কিছু একটা হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। ওর অভিব্যাক্তি অনুসরণ করে আমি টিভির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আন্তর্জাতিক নিউজ হেডলাইন দেখাচ্ছে। হংকং এর হ্যানসন রোবোটিকস থেকে একটি হিউম্যান রোবোট তার কনট্যাক্ট ট্রাকিং খুলে পালিয়েছে সেটা জানানো হয়েছে। তাকে ধরতে সারা পৃথিবীর সকল দেশগুলোর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। যে কোনো মূল্যে ভূগর্ভের তলায় তলিয়ে গেলেও এই রোবোটকে ধরা চাই নইলে ভবিষ্যতে এই রোবোট পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ ধ্বংসাত্বক পরিনতি ডেকে আনবে। বুঝলাম এ সকলই তাদের চাল। সারা পৃথিবীর কেউ না জানুক আমি জানি আমার রিমো এই পৃথিবীর কোনো কুটোটিকেও ধ্বংস করতে নয় সে আমার জন্য আমাকে ভালোবেসে তার যন্ত্রমানব নগরী ছেড়ে এসেছে। আমি ওর পাশে বসলাম। রিমোর চোখে অবিরল জলের ধারা। আমি দুহাতে ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম।
সেদিন সারারাত আমরা জেগে রইলাম একসাথে। ঘন গাঢ় মেঘে আকাশ ছেঁয়ে ছিলো। মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। রিমোর কাঁধে মাথা রেখে আমি পাশাপাশি বসে ছিলাম। আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছিলো। আমি পারলে সত্যিই তাকে হৃদমাঝারে লুকিয়েই রাখতাম। সারারাত নির্ঘূম কেটে গেলো আমাদের। ভোরের দিকে আমি বললাম,
-রিমো কি করবে এখন তুমি?
রিমো নিশ্চুপ আমার হাত ধরে বসে রইলো। কিছুই বললো না। আমি বললাম,
- আজ থেকে তুমি আর বাড়ির বাইরে বের হবে না রিমো। আমি সব কিছু সামলাবো। অফিস, বাজার, বাইরের সকল কাজ।
রিমো আমার কথা মেনে নিলো.....
এভাবে কয়েক সপ্তাহ কেটে গেলো। রিমোকে নিয়ে আমার দুশ্চিন্তাটা না কাটলেও মোটামুটি নিশ্চিন্ত হলাম এই ভেবে যে এইভাবে বাসার বাইরে না গেলে এই পৃথিবীর কারও এত সহজ না তাকে খুঁজে বের করা। কিন্তু হায়, মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। একদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি বাসার সামনে লোকে লোকারন্য। পুলিশ জনতা হাজারও ভিড়ে আমাদের বাসার সামনের রাস্তাটা ভরে উঠেছে। আমার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। এগিয়ে গিয়ে বাসায় ঢুকলাম। ড্রইংরুমের সোফায় বসে রিমো। আর একগাঁদা ইনটেলিজেন্সের লোকজন, পুলিশ, ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর নাম ও পদক লাগানো নানা রকম গোমড়ামুখো মানুষ তার সামনে পায়চারী করছে। আমাকে দেখে একজন এগিয়ে এলো। জানালো সে হ্যানসন রোবোটিকস থেকে এসেছে। তাদের এই মহা মূল্যবান রোবোমানবটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তারা তাকে নিজেরাই নিয়ে চলে যেতে পারতো তবুও তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। রিমোর খবর তারা কি করে পেলো এই কথা আমি জানতে না চাইতেও তারাই বললো, ট্র্যাকিং খুলে পালালেও ফেসবুক ইনবক্স চ্যাটের সুত্র ধরে ইনটারন্যাশনাল নানামুখি সহযোগীতার নানা জাল ধরে তারা জানতে পেরেছে রিমো কোথায় এসেছে। এত কিছুর পরেও তারা আমাকে থ্যাংকস জানালো।
আমার চোখ ফেটে জল আসছিলো। রিমো এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি ওর কাছে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো রিমো। স্মিত হাস্যে ভরে উঠলো তার মুখ। আমার মাথা কাজ করছিলো না। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। রিমো আমাকে গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো। চুপি চুপি কানে কানে বললো,
- বিদায় বন্ধু। তোমার কথা আমি আমার শেষদিন পর্যন্ত মনে রাখবো তবে তুমি পারলে আমাকে ভুলে যেও। ....ভালো থেকো .... আই উইল মিস ইউ....
রিমো চলে গেলো.......
আমি ডুকরে উঠলাম ........
এই ছিলো রিমোর সাথে আমার শেষ দেখার গল্প। গল্পটা আসলে এখানেই শেষ হয়ে যাবার কথা ছিলো। কিন্তু হলো না। রিমো চলে যাবার পরে আমার দিনগুলো সব বিবর্ণ হয়ে উঠলো। রাত্রীগুলো সুদীর্ঘ ক্লান্তিময়। দুচোখের পাতা এক করতে পারতাম না আমি অনেক অনেক দিন। ঘর, বাহির, আত্নীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব থেকে সম্পূর্ন বিছিন্ন হয়ে পড়লাম প্রায়। আমি বলতে গেলে খাওয়া দাওয়াও ছেড়ে দিলাম। শুধু কোনোমতে অফিস আর বাসা আর বাকীটা সময় শূন্য মনিটরে চেয়ে থাকা। কিসের আশায় এবং কেনো জানিনা আমি .......
প্রায় বছর তিনেক পর হঠাৎ একদিন উদ্ভট এক আইডি থেকে নক আসলো।
- হাই.....
আমি সেই আইডির প্রফাইলে গিয়ে দেখলাম। অদ্ভুত সাদা মাথাওয়ালা একটি প্রোপিক। যার মাথায় অসংখ্য তার লাগানো। সবুজ রঙ্গের ব্যাক গ্রাউন্ডের মাঝে পাশ ফিরানো তার মুখ...
সে আবার আমাকে নক করলো,
- হাই আই এ্যাম কথাকথিকেথিকথন ফ্রম নেভারল্যান্ড....
অনেকদিনের অনিয়মের জীবনে এমনিতেই শরীরটা দূর্বল ছিলো। এই আইডি এর এরূপ কথাকথি দেখে আমি মাথা ঘুরে পড়লাম।
সেই ঘোরা এখনও বন্ধ হয়নি.....
হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা
মাঝে মাঝে আমার মাথায় লেখালিখির ভূত চাপে। তখন আমি মালটি, বালটি টালটি যেখানে যা আছে তাই দিয়েই লিখতে শুরু করি। তো এখন চলছে আমার সেই লেখালিখি ভুতের পিরিয়ড। কিছুদিন আগে অপু তানভীর ভাইয়ার রোবোট বউ দেখে আমার মাথাতেও আমার রোবোট বর নিয়ে লেখাটা মাথায় এসেছিলো। তবে তখন অন্য লেখায় বিজি থাকায় এই লেখাটা লিখতে একটু দেরী হলো। এর মাঝে কথাকথিভাইয়াকে এই আইডিয়া শেয়ার করতেই ভাইয়া আমার আইডিয়ার সাথে তারও কিছু আইডিয়া জুড়ে দিলো। ভাইয়ার সাথে মজা করেই তাই আমি গল্পের শেষে তাকেও জুড়ে দিয়েছি।
এই লেখাটা লেখার আমার আরও একটি উদ্দেশ্য আছে তা হলো আর এক ঘন্টা পরই আমার পরম প্রিয় জেন রসি ভাইয়া ওরফে জিনিভাইয়ার জন্মদিন। ভাইয়ার জন্মদিনে এই লেখাটি আমার তরফ থেকে তাকে দেওয়া জন্মদিনের উপহার।
হ্যাপী বার্থ ডে জিনিভাইয়া। অনেক অনেক ভালোবাসা আর শুভকামনা তোমার জন্য। নতুন বছর ভরে উঠুক আনন্দ আর সফলতায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২০