চলে গেলো ঈদ কিন্তু রয়ে গেল আমার ঈদ সংখ্য। সামুতে পদার্পনের পর হতেই আমার কোনো ঈদের আনন্দই আমি এখানে না শেয়ার করে মনে হয় থাকিনি আর তাই আমার মার্কা মারা ঈদানন্দের ঈদ সংখ্যাটি না দেখে অনেকেই চিন্তিত, বিষন্নিত বা ভাবান্নিতও। যদিও খুব রিসেন্ট ঘটে যাওয়া আমার জীবনের এক ঝামেলা ঘটনায় আমার আশে পাশে থাকা মানুষগুলো সকলে ধরে বেঁধে আমাকে একটা জিনিসই বুঝিয়েছে যে আমার আনন্দই আসলে আমার সবচেয়ে বড় শত্রু। কাজেই আনন্দ শেয়ার বা শো অফ (নিন্দুকেরদের ভাষায়)- বন করো। খুব খুব ভালো আছো বলাটাও (নিন্দুকেদের ভাষায় ঢং, জায়গা খুঁজে পায়না)- বন করো। একটাই আদেশ উপদেশ বা নির্দেশ দিয়েছে সকলে- লাগাম টানো। এই দুনিয়া কারো ভালো থাকাটা সহ্যই করতে পারে না। সবাই সবার দুঃখটাকেই দেখতে চায়। অন্যে দুঃখে আছে কষ্টে আছে জানলেই শান্তি হয় তাদের জীবনে। কাজেই নো সুঃখ অনলি দুঃখ! কিন্তু আমার লেজ (মানে আনন্দের লেজ) কি সোজা হবে!! অন্যের আনন্দে আমার কি ? আমি তো ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে। যাইহোক অনেক হলো ঝামেলা পামেলা। সকল ঝামেলার ভেতরেও আমাকে ঈদের আনন্দ রাখতেই হবে। সামুর জন্য ঈদ সংখ্যা বানাতেই হবে আর তাই লেগে গেলাম টেবিল সজ্জায়।
আমার এবারের ঈদের বিশেষ আকর্ষন( নিজের কাছে নিজেরই ) ছিলো হালকা হালকা কুল কুল রঙ্গিন রঙ্গিন ফিরনীর বাটি সাথে ম্যাচিং ম্যাচিং মোমের আলো। এই দেখে আবার কেউ বলো না যে জন দিবসে মনের হরষে। আমি সাজসজ্জার জন্য সবই করতে পারি হুহ! তবে লোডশেডিং এর দিনে মোমশেডিং রেডি রাখাটাও বুদ্ধিমানের কাজ তাইনা?
যাইহোক ঈদ উল আযহা-২০২২। আমরা যে জেনারেশন ঈদ মানেই বাড়ির তৈরী মায়ের হাতের সেমাই, ফিরনী আর জর্দার নস্টালজিয়ায় ভুগি সেই আনন্দ সেই স্মৃতি হয়ত আমাদের এই জি জেনারেশন বুঝবে না কখনও। ঈদের দিনেও তারা সেমাই ফিরনীর বদলে মুভেনপিকের আইসক্রিম বা গ্লেজডের ডোনাটই খুব নরমাল কিছু ভেবেই খেয়ে নেবে। তারা জানবেও না কখনও সেই গরুর ঘনদুধের সেমাই আর মৌ মৌ গন্ধে ভরা ফিরনী কিংবা কমলা সুন্দর জর্দার সেই স্পেশাল দিনটির স্পেশালিটি। তারা কখনই জানবে না সেই নতুন জামার ঘ্রান কিংবা মাড় দিয়ে ইস্ত্রী করে তুলে রাখা বিছানার বালিশ কভার চাঁদরের মায়া। তাদের সেসবের দিকে মনও নেই। ঈদ মানেই তুলে রাখা থালা বাটি বাসন কোসন। পাইরেক্সের সেট বা গোলাপ ফুল তোলানো ডিনার সেট কিংবা সোনা রুপার ঝকঝকে পেতল কাসার জমিদারী স্টাইল থালাবাটির মেলা। একই সেট বড়জোর দুই বা তিন কিন্তু তাতেই ফিরে ফিরে আসা আনন্দময় মহানন্দের ঈদ। এখন ঈদ মানে নিজের হাতে সাজিয়ে তোলা রং বেরং এর যা ইচ্ছে তাই করতে পারা। মানে ছোট্টবেলার ঈদ পেরিয়ে এসে এই আমার যা ইচ্ছে তাই করতে পারার ঈদগুলোতে আমি শাড়ি চুড়ির সাথে ঘরবাড়ি টেবিল চেয়ারদের জন্যও নতুন বেডশিট, পর্দা থালাবাটি কিনতে পারি।
একটা গল্প বলি- তখন আমি ক্লাস থ্রী বা ফোরে পড়ি। সানন্দার পাতায় দেখেছিলাম ওদের পূজোসংখ্যায় হালকা সবুজ কমলা হলুদ আর নীল নীল ফিরনির বাটি। সারাজীবন মাকে দেখেছি ঘন করে দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে এক মুঠো ভেঁজানো আতপ চাল বা পোলাও চাল আর চিনি বা গুড় দিয়ে ফিরনী রাঁধতে। অথচ সেদিন ঐ সানন্দার পাতায় দেখলাম ওমন সব হালকা লাল নীল গোলাপী সবুজ আভার মায়াময় সব ফিরনীর বাটি।
সারাজীবনই রংধনু সাত রং মন আমার। মুগ্ধ হলাম। আর দৌড়ে গেলাম ওমন সবুজ হলুদ ফিরনী চাই। মা দেখেই আৎকে উঠলেন। ছি ছি এই সব রং দিয়ে কেউ রাঁধে? জানিস এইসব দরজার রং জানালার রং। খেলেই সোজা অক্কা পাবি। কি করে না করে এই সব পাগলগুলা! লাল নীল কখনও ফিরনী হয়? ফিরনী হবে ক্রিম কালার। একদন যেন হালকা একটা হলদে আভা। কি আর করা বোকা বনে চুপ করে গেলাম। কিন্তু মনের মাঝের সেই সুপ্ত ইচ্ছা কোথায় যে ঘাপটি মেরে ছিলো। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো আবার। সাথে সাথেই দরজা জানালার কালার না এক্কেবারেই সব চাইতে ভালো ফুড কালার নিয়েই বসে গেলাম ছোট বেলার সেই মনের ইচ্ছা পূরণে। সত্যি বলতে ঈদ আমার এক ঝলকেই রঙ্গিন হয়ে গেলো সেই ছোট্ট বেলার মত।
লাল নীল ফিরনীর সাথে লাল নীল মোমবাাতি
লাল নীল ফিরনী আর মোমবাতির সাথে সাথে আমার নতুন সাধের টি সেট
লাল নীল ফিরনীর সাথে এবারে একটু কমলা হলুদ ফলমূল
ঈদের দিনের সকালে নানান রকম রুটি। ইউনিমার্টের থেকে গিফ্ট দিয়েছে কিন্তু তাই সাজিয়ে দিলাম।
এই কেক পেস্ট্রীগুলো এ যুগের মানুষের জন্য যারা আমার লাল নীল ফিরনী খায় না
আমার স্পেশাল জরদা উইথ ম্যাংগো বার
নবাবী সুলতানী সেমাই
পুরো টেবিলের ছবি এদিক সেদিক।
বিধাতার কাছে আবারও কৃতজ্ঞতা এই আমাকে মনের মত যা খুশি তাই করতে পারার আনন্দময় জীবন দানের জন্য।
ওহ লোড শেডিং নিয়ে সবাই নস্টালজিয়ায় ভুগছে। আমিও কত কথা কত স্মৃতিকথায় ভাসছি। তাই লোডশেডিং এর দিনে আমার মোমশেডিং ঈদসজ্জার ক্রিয়েটিভ আইডিয়া পেয়ে গেলাম। ইলেক্ট্রিসিটি গেলেও নো চিন্তা। মোমশেডিং এর আলোর ভাসা ঈদের সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতের স্মৃতি ধরে রাখুক এবার ব্লগের পাতা।
আর মিররমনির জন্য ঈদের সাজুগুজুর একটাই ছবি দিলাম। অনেক ঝামেলায় ছিলাম তাই আরও বেশি কিছু ঝামেলা করতে পারিনি।
যারা যারা আমাকে মিস করেছো- সোনাবীজভাইয়া, মিররমনি, শুভভাইয়ু, জাহিদ অনিক ভাইয়া, ঢুকিচেপা আপুভাইয়া, সাড়ে চুয়াত্তরভাইয়া, খায়রুল আহসান ভাইয়া, ঢাবিয়ান ভাইয়া, কামাল৮০ ভাইয়া ও ভাবী এবং রেজাউল৯০ ভাইয়াসহ সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা আর ঈদের পরেও ঈদের রেশ রেশ শুভেচ্ছা।
ঈদের আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়ুক, ছড়িয়ে থাকুক সবখানে সবখানে সবখানে......
সবাইকে ভালোবাসা...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:০৪