শুভ্র সুন্দর ককাটু
২০২৩ এ অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবারে বাসা নেবার পরের দিনগুলোতে এক মহানন্দের কারণ ঘটেছিলো আমার জীবনে তা হলো, বিশাল বিশাল সব সাদা ঝকঝকে বুদ্ধিদীপ্ত চোখের পাখিদের সাথে মিটিং সিটিং ও ইটিং এ। প্রথমদিনেই দরজা খুলতেই আমাকে দেখেই উড়ে আসলো একটা বিশাল বড় সাদা পাখি। এদের নাম নাকি ককাটু। সোজা ভাষায় কাকাতুয়া আর কি। ছোটবেলায় গান গেয়েছিলাম লাল ঝুটি কাকাতুয়া আর এ যে দেখছি হলুদ ঝুটি সাদা কাকাতুয়া! তো আমার এই অস্ট্রেলিয়ান কাকাতুয়া দেখে তো মহানন্দ। এমন কাকাতুয়া ইহজীবনে দেখিনি আমি।
দুই বন্ধু
আমি প্রথমে ভাবছিলাম অত বড় ঠোঁটে ঠোকর দেয় কিনা কে জানে? দেখলাম প্রতিবেশীদের কেউ কেউ তাদেরকে খাবার দিচ্ছে। আমিও ভয়ে ভয়ে একটু পাউরুটির টুকরো ছিড়ে দিলাম। সে তো মহা ভদ্রলোকের মত হাতে নিয়ে খেতে লাগলো। আমি তো অবাক! পাখি কিনা হাতে নিয়ে খাচ্ছে! যাইহোক এরপর উড়ে এলো আরও আরও ওদের ভাই বোন মা বাবারা। পুরো রেলিং ভরে গেলো। আমি তো মহানন্দে একদিকে খাবার দেই আর সবগুলা সেই দিকে যায় আবার দৌড়ে আরেকদিকে দেই আবার সব গুলা সেই দিকে হেঁটে হেঁটে যায়। পুরাই বার্ড পাপেট শো বা বার্ড ডান্স। আফসোস সেটা কেউ ভিডিও করে দেয়নি। তবে এই মহা সুন্দর অস্ট্রেলিয়ান ককাটু নিয়ে জানতে গেলে অবাক হতে হবে তাদের বুদ্ধিমত্তা ও কার্য্যকলাপে। তাদের ব্রেন ভালোই কাজ করে, মানুষের মতই অনেক কিছু বুঝতে পারে তারা।
পুরো পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন
সেবারে প্রথমবার বলেই হয়ত ইন্টারেস্টিং চ্যাপ্টারটাই ছিলো আশেপাশের প্রতিবেশীদের বাড়িঘর ও তাদের কাজ কারবার পর্যবেক্ষন। আমার বাসার সামনের প্রতিবেশী ফ্যামিলীটাই সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ছিলো। লম্বা লম্বা কার্লী চুলের বিশালদেহি লোকটা বড়ই হাসিখুশি ও হাত নেড়ে ওয়েলকাম জানিয়েছিলো আমাদেরকে। তার বউ আর বড়সড় বাচ্চা মেয়েটাও বারান্দায় দাঁড়িয়ে উকি ঝুঁকি দিচ্ছিলো। তাদের বাড়ি সুসজ্জিত পর্দা আর গুরু গম্ভীর বিড়ালটা রেলিং এর উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিলো। সেদিন সানডে ছিলো তাই বোধ হয় আশেপাশে মানুষের একটু হলেও মুখ দেখা গিয়েছিলো তারপর মানডে মানে ওয়ার্কিং ডে হতেই দেখলাম ভোর সকাল থেকেই সকলই শুনশান। যে যার কাজে চলে গিয়েছিলো। বাসায় ছিলাম আমি আর আরও কিছু হাউজ ওয়াইফ বোধ হয় বা সেদিন তাদের ছুটি ছিলো।
আরেকটা মজার কাজ ছিলো আমার কাজের ফাকে ফাকে উদাস নয়নে দূরের রোড দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ি ভ্যান মোটরসাইকেল দেখা ছাড়াও চোখে পড়ছিলো প্রামবুলেটরে করে হেঁটে যাওয়া মা, জিম করে হেঁটে যাওয়া ছেলে, বৃ্দ্ধা রমনীর ঠুক ঠুক চলে যাওয়া। পাশের বাসার সামনের ওয়ালের ভেতরে এক টুকরো আঙ্গিনায় কাপড় মেলে দেবার রড লাগানো ছিলো। সেখানে দেখলাম শাড়ি পরা আরেক মধ্যবয়স্ক নারী। তামিলনাড়ু বা এমন কোনো সাউথ ইন্ডিয়ান হবে বোধ হয়, বাগানের সেই রডগুলোতে শাড়ী কাপড় কাঁথা মেলে দিচ্ছিলো সে। হঠাৎ যেন এক টুকরো ইন্ডিয়া বাংলাদেশ উঠে এলো চোখের পাতায়।
এই মহিলার সাথে পরে রোজ বিকেলে আমার পার্কে দেখা হয়েছিলো মানে বাসার কাছেই পার্কে যে পার্ক বেয়ে যেতে হত আমাকে শপিং সেন্টারে। মহিলাটা শুধু হিন্দী বলতে পারে আমি হিন্দি বুঝি কিন্তু বলতে পারি না সে হিন্দি বলে কিন্তু ইংলিশ বলতেও পারে না বুঝতেও পারে না। কাজেই হাসি দিয়েই আমাদের কনট্যাক্ট চলছিলো। এই মহিলাটাকে আমার মনে হয় কোনোদিনও ভোলা হবে না।
বাসার পাশেই এক টুকরো পার্ক বনাম বাচ্চাদের খেলার জায়গা। সেখানে ছিলো এক দড়ির দোলনা। অনেকেই সেই দোলনায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ে, শুয়েই থাকে, ঘুমিয়েও যায়। আমি তো সেটা কখনই করবো না। কিন্তু কিছুক্ষন বসে থাকতে দোষ কি? কিন্তু ওদের মত আমারও ঐ দড়ির দোলনায় শুয়ে শুয়ে বই পড়তে ইচ্ছে হলো। পারলাম না তাতে কি এক বিকেলে সেই দোলনায় শুয়ে বসেই কাটালাম। আর শুয়ে শুয়ে নিজেই ছবি তুললাম! কাউকে চান্সই দিলাম না।
অস্ট্রেলিয়া এসে বিচে যাবোনা তাই কি হয়? চললাম বন্ডাই বিচ। বাসে করে যাবার সময় এক মেয়ে তার ছোট্ট পাপী নিয়ে উঠলো বাসে। তাও আবার আমার সিটে আমার পাশেই। সেই পাপীর গলায় বাঁধা চেক কাপড়ের বেল্টে ঝুনঝুনি। আমার বাসায় আজীবন কুকুর বেড়াল মাছ পাখী থেকেছে তবে এই বৈদেশী পাপী আবার কখন কু করে বসে সেই চিন্তায় তটস্থ হয়ে বসে রইলাম।
বন্ডাই বীচে পৌছে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। লোকজন সব সানবাথ করছে। নির্দ্বিধায় অবলীলায়। যাইহোক সেই সব ছবি দিতে পারলাম না। আমাদের বীচের সাথে এই বীচের সবচেয়ে বড় অমিল আর সবচেয়ে ভালো দিকটা ছিলো সাগরপাড়েই গোসল করা বা হাত মুখ ধুয়ে ফেলার ব্যবস্থা। গোসলের জন্য শাওয়ার আর হাত পা ধোবার জন্যও ট্যাপ আছে।
কিন্তু আজীবন আমাকে সবখানে গিয়ে নতুন জিনিসের সাথে ঝামেলা পাকাতেই হবে। কাজেই সেই ট্যাপে পা ধুতে গিয়ে আমি ট্যাপ খুলতেই পারিনা। একটা ছোট্ট বাচ্চা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার কান্ড দেখছিলো। আমি তাকে বললাম এ্যাই এটা কি করে খুলে? সাথে সাথে তার বাবা ভোজবাজীর মত উদয় হয়ে বললো এভাবে খুলে। আমি থ্যাংক ইউ দিয়ে ঐ বাচ্চার দিকে তাকালাম। সে তখনও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ভাবছিলো বোধ হয় এই বুড়ি ধাড়ী মেয়ে ট্যাপ খুলতে জানেনা কেনো? আমি তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলাম। সে বললো আর ইউ নিউ হেয়ার? আমি বললাম দেখো নিউ টিউ না আমি এটা খুলতে জানিনা। সে হাসলো। তাচ্ছিল্যের হাসি। ভাবলো বোধ হয় এত বড় হইছিস জানিস না কেনো?
এত এত সুন্দর সুন্দর অজানা নাজানা ফুলগুলি দেখে আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি সেগুলো সত্যিকারের নাকি মিথ্যেকারের ফুল? বাংলাদেশে হলে কিনে কিনে ঘরবাড়ি ভরে ফেলতাম। কিন্তু সেখানে কেউ আমাকে কিনতেই দিলোনা। তাই ফুলেদের সাথে ছবি তুলেই ক্ষ্যান্ত হতে হলো।
ফুলেদের মাঝে এই ছবিগুলি তুলে এনেছিলাম কবি আপুনি ছবির জন্য। সত্যি কিন্তু তাকেই আমার মনে পড়েছিলো।
এরপর গিয়েছিলাম এক পরিচিত মানুষের বাসায় দাওয়াৎ খেতে। তার বাসা বেশ দূরে। ট্রেনে করে যেতে প্রায় ঘন্টাখানেকের বেশি সময় লাগে। ট্রেনে উঠলো এক লাল চুলো মাটি ম্যান। সে তার রোলার স্কুটার আর এক বিশাল ব্যাগ প্যাক আর মাটি কাটা জিনিস নিয়ে উঠে পড়লো ! তারপর কিছুক্ষন চারিদিকে হা করে তাকিয়ে থাকে তারপর তার ফোনে কি যেন দেখে আর হো হো করে হেসে ওঠে, একা একাই কথা বলে আবার বিয়ারও খায়! আমি তো বাবাগো মাগো অবশ্য মনে মনে। সামনে সামনে আমি বিশাল সাহসী! পরে পুরা কেবিন চেঞ্জ করে পগার পার। অস্ট্রেলিয়ার ট্রেন খুবই ভদ্র সভ্য ও আরামদায়ক বটে। লোকজনেরাও বিশাল ভালোমানুষ ভদ্রলোক তবে বাচ্চাগুলো !!! বিশেষ করে ট্রেনে ওঠা বাচ্চাগুলোকে দেখে আমি ভাবছিলাম কবে ওরা ভদ্রলোক হবে!!! চিল্লাচিল্লি দৌড়াদৌড়ি গড়াগড়ি হুড়োহুড়ি এমনকি ঝুলাঝুলিও করতে থাকে অনেকেই। এমনকি আমি আরও এক কান্ডে বিস্মিত ও স্তম্ভিত! ট্রেন থামার সময়টুকুতে সব দরজা খুলে যায় এক বাচ্চা এক কেবিন থেকে বের হয়ে দৌড়ে কয়েক কেবিন পরে উঠছে দরজা দিয়ে। খেয়ে কি তাদের কাজ কম পড়লো? না মরার ইচ্ছা অনেক বেশি হলো সেই প্রশ্ন জানতে আশেপাশে মা বাবাদেরকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।
মানুষের বাড়ির দাওয়াতের খানা পিনা
আর সবশেষে দিয়ে যাই চাইনিজদের কি যেন উৎসবের ডেকোরেশন চলছিলো। আর আমি দৌড়ে গিয়ে সেখানেই ছবি তুলাতুলি। কারণ আমার জামাটার সাথে সেই উৎসবের মিল আছে না??
চাইনিজদের উৎসব!!
তাহাদের লাল লাল সাজ আর লাল লাল আমি!
অস্ট্রেলিয়ার গল্পের সিরিজ লিখতে গিয়ে এই লেখাটা প্রকাশ করা হয়নি এতদিনেও। এটা ড্রাফটেই পড়ে ছিলো। তবে আজ কিছু মিছু একটা লিখে দেই ভেবেই প্রকাশ করতে যাচ্ছি এই লেখা। ইদানিংকালে নিজের সময়ের সাথে সাথে সব ব্লগার আপু ভাইয়ুদেরই সময় মনে হয় খুব কমে গেছে। দেখাই যাচ্ছে না আর আজকাল তেমন কাউকে। মিররমনিও মনে হয় অনেক অনেক বিজি নতুবা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। সাড়ে ভাইয়াও কম কম আসছে। ভূয়া মফিজ ভাইয়া জী এস ভাইয়ারাও আর আসেনা তেমন। করুনাধারা আপু মনিরা আপুরাও নেই নেই অবস্থায় আসে। জুন আপু তো মনে হয় বিদেশে গেলে আর আমাদেরকে ভাবেই না। আমি ব্লগের নানা সময়কাল দেখেছি। ব্লগার কমে যাওয়া স্মরনকালের সময়টাতে আমার মনে হয়েছিলো রাজাকার বিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী কিছু সময় আর এবারের ৫ই আগস্টের পরবর্তী সময়টাকেই। এখন তো ব্লগে তেমন কেউ লগ করে না বললেই চলে তবে ৫ ই আগস্টের আগে থেকেই যে গুরু গম্ভীর অবস্থা বিরাজ করছিলো তা পরবর্তীতে বেশ ঘোলা জল সাথে সাথে একেবারেই যেন তেতো হয়ে গিয়েছে। সারাক্ষন কচকচানি আর কার ভালো লাগে?
যাইহোক আজকাল আমার কারনে অকারনে হাসি পায়। যদিও খুব ছোট থেকেই আমি হাসিখুশি একজন বাচ্চা ছিলাম যে কিনা কলেজ লাইফে উপাধি পেয়েছিলাম হাসুবিবি। এরপর প্রায় এক যুগের পরে খেয়াল করে দেখেছিলাম আমি ততটা হাসি না যতটা আগে হাসতাম। আমরা চাচাতো মামাত ভাই বোনেরা কত কিছু উদ্ভট সব গল্প করে হেসে গড়িয়ে পড়তাম আমাদের ছেলেবেলায়। যত হাসির সব সিনেমা আর গল্পের বইগুলি আমাদের ছিলো অনেক প্রিয়। সেই আমি একটা সময় খেয়াল করেছিলাম আমার হাসি যেন আগের তুলনায় কমে গেছে। যাইহোক হাসি কমুক আর যাই হোক হাসতে আমি ভালোবাসি বটে। তাই বলে ইদানীং সব কি সব হচ্ছে আমার জীবনে যে মৃত বাড়িতেও গিয়ে আমার হাসি পাচ্ছে। বাচ্চাদের জন্য নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখতে গিয়েও হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে যাচ্ছে। আজ সকালে তো আমার আমেরিকান কাজিনের সাথে ফোনে গল্প করতে গিয়ে হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে মরতে বসেছিলাম।
যাইহোক নিজে মরার আগে অন্যের মরাবাড়ির হাসির ঘটনাটাই বলি আগে এই শনিবার এক মরাবাড়িতে গেছি। চারিদিকে দুঃখের ছায়া। আমারও মন খারাপ ছিলো। হঠাৎ এক বুড়িমানুষ উনি মরাবাড়িতে কে যেন বিরিয়ানী দিয়েছেন সেটা সবাই খাচ্ছিলো তাই উনিও গিয়ে বসলেন টেবিলে। তার ছেলের বউ বললেন, আম্মা আপনে না এট্টু আগেই খাইলেন? সে বললো, হ্যাঁ আমি তোমার পাশে বসছি তুমি খাও। বুড়ি অশিতীপর বৃদ্ধা হলেও মর্ডাণ আছেন আজও। বউকে বললেন, আমি খেয়েছি বটে তবে তুমি তো আর খাওনি। আহারে কত দরদ বউটার জন্য! কিন্তু বউমাকে খাওয়াতে গিয়ে উনি নিজেই প্লেট বাড়িয়ে দিলেন। বৌমা কিপটার মত তার প্লেটে এক টেবিল চামচের একটুখানি পোলাও আর একটা রোস্টের তিনভাগের একভাগ তুলে দিতে না দিতেই উনি নিজেই জালি কাবাব নিয়ে ফেললেন ততক্ষনে। এক লোকমা মুখে দিয়েই তিনি হা হা করে উঠলেন। তার ঝাল লেগেছে। খেতে পারছে না। বৌমা তো তার দিকে কটোমটো করে তাকিয়ে আছেন। আমার তখনই পেট ফেটে হাসি আসছিলো। কিন্তু মৃতবাড়ি। চারিদিকে দুঃখের ছায়া। হাসবার কোনো উপায় নেই। তাই চুপ আছি বহু কষ্টে।
হঠাৎ শ্বাশুড়িআম্মা বললেন, মিষ্টি আছে মিষ্টি? বৌমা বললেন, চুপ করেন আম্মা এইখানে মিষ্টি নেই। শ্বাশুড়িআম্মা বোধ হয় বিরিয়ানী জালি কাবাব এসব খেয়ে ভুলেই গেছিলেন এটা বিয়ে বাড়ি না মরা বাড়ি। ঐ যে বলে না মানুষের মাঝে মাঝে রাগে শোকে দুঃখে ভীমরী ছুটে যায়। উনারও মনে হয় হয়েছিলো ঐ দশা ঝাল খেয়ে। আসলে উনার জীভে আলসার আছে। উনি এমনিতেই ঝাল কিছু খেতে পারেনা না এটা বুঝা গেলো কিছু পরে।
মিষ্টি আছে মিষ্টি আছে করাতে বৌমায়ের রাগ হয়ে গেলো বুঝি। বললেন, ঝাল লেগেছে তো পানি খান। এমনিতেই আপনের জিহ্বায় ঘা আছে। ঝাল খাইতে পারেন না। খাইলেন কেন? একটু আগে না লাঞ্চ করে আসলেন? বৌমায়ের বকা খেয়ে শ্বাশুড়ি আম্মা আমতা আমতা করে বলেন, আমি এই সব ভাত মাংস ধরিনি, হাতও দেইনি। তুমি খাবে? মানে তার এটো খেতে বলছেন। বৌমা তো তাকেও ঐ মৃত বাড়িতে চোখ দিয়েই বুঝি মেরে ফেলেন। তবুও শ্বাশুড়িআম্মার কিছু এলো গেলো না। সে বলে ঐ যে মিষ্টি দেখা যাচ্ছে। বৌমা বললেন কই যে শুনি? শ্বাশুড়ি বলেন ঐ যে সন্দেশ। । তার ছেলের বউটা বলছে আম্মাজান এইখানে মিষ্টি নেই। আপনি পানি খান। বৌমা যতই বলেন বুড়ি ততই আঙ্গুল দিয়ে টেবিলের মধ্যখানে দেখান।
আমি অনেক কষ্টে হাসি সামলাতে না সামলাতেই সে বলে ওঠে, ঐ যে বৌমা ঐখানে সন্দেশ দেখা যাচ্ছে। আমি চারিদিকে কোনো সন্দেশ দেখছিলাম না । শেষ বুঝলাম সে যেহেতু ভালো চোখে দেখে না তাই টেবিলের উপরে রাখা চারকোনা সাদা ধপধপে কিচেন টিস্যুকেই সাদা ধপধপে তার প্রিয় কাঁচা সন্দেশ ভেবেছেন! হা হা হা হা হা হা হা হা । বৌমা বলেন, ঐটা সন্দেশ না আম্মা। টিস্যু টিস্যুপেপার। আপনি পানি খান। ঐ মরা বাড়িতে এইসব দেখে কেমনে যে হাসি সামলালাম আল্লাহই জানে। চিন্তায় আছি নিজে মরে গেলেও হাসতে হাসতে হাসিভূত হয়ে জেগে উঠবো কিনা সেই কথা ভেবে।
একবার রাজীব নূর ভাইয়া ব্যান খেয়ে অনেক কান্না কাটি করে পোস্ট দিয়েছিলো ভাইয়া নাকি ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখেছে ভাইয়াকে মডুভাইয়ু আনব্যান করে দিয়েছেন। সেটা নিয়ে একটু হাসাহাসি করায় আমাদের ঠাকুর মাহমুদ ভাইয়া যে কিনা বোন বোন করে আমাকে কত ভালো ভালো খানাপিনার পোস্ট উৎসর্গ করতো সেই কিনা আমাকেই জন্মের মত ব্লক করে দিলো। রাজীব ভাইয়ার সেই কষ্টের দিনে আমি কেনো হাসলাম অমানবিকের মত সেই অপরাধে। হা হা সেই দুঃখের কথা লিখতে গিয়েও আমার আবারও হাসি পাচ্ছে। কি যে বিপদ হলো আমাকে নিয়ে। মাঝে মাঝে আমি আমার চেয়েও বড় বড় মানুষগুলোর কান্ড কীর্তি দেখে এই বুড়িকালেও হেসে ফেলি কেনো জানিনা। আসলেও জানিনা কিন্তউ
সেদিন লিখছিলাম বাচ্চাদের জন্য নাটকের স্ক্রিপ্ট। নাটকটা রুশ দেশের উপকথা ছোট্ট গোলরুটি। লিখতে লিখতে যখন কাকে গোলরুটি বানাবো আর কাকে বাঁদর আর কাকে হাতী কিংবা ভালুক এটা ভাবতে গিয়েই আমি হাসতে হাসতে হাসতে হাসতে এমনই করুণ দশায় পড়লাম যে বাড়ির লোকে কহে আমায় তাবিজ করেছে, পাড়া পড়শী কহে জ্বীনে ভূতে ধরেছে!!! আমার আলফা ভাইয়া নিশ্চয় গুরুগম্ভীর ভাবতে বসবে এই লেখা পড়লে আর মনে মনে বা নিজের মনেই পোস্টে লিখবে..... একজন শিক্ষক কেমন শয়তানের লাঠি হলে বাচ্চাদের স্ক্রিপ্ট লিখতে গিয়ে হাসে চিন্তা কইরা দেইখছেন!! হ্যাঁ!!!!!!!!!!!!!!!
আজ এইটুকুই থাক। কি আর করা ? কোথাও কেউ নেই। যাও আছে যারা তারা ব্যানে ব্যানে...... কাজেই আলফা লেখা লিখতেই থাকি....... আর আমার আলফাভাইয়া সে সব পড়ে পড়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে গালাগাল করতেই থাকুক। তবে মনে মনে ......
কোথাও আমাদের হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনে ........