শীতকালটা বেশ ঝামেলার। বিশেষ করে সকালবেলা। এই নাগরিক যুগে সবারই কেন যেন সকালে ওঠার একটা তাড়া থাকে। অফিসে, ক্লাসে, মাঠে ঘাটে- ধান্ধার তো আর শেষ নেই। এ এক অনন্ত দৌড়। একশ মিটার তো দূরের কথা ম্যারাথনেও এর কোন শেষ নেই। আর সবাই যেন ছুটে চলেছে উসাইন বোল্টের চেয়েও দ্রুত গতিতে।
আমার কেন যানি এ দৌড়ে সামিল হতে ইচ্ছে করেনা। প্রায়ই ট্র্যাক হারিয়ে ফেলি। ঘাসের উপর বসে একটু জিরোই। তারপর সবার দৌড় দেখে আবার ট্র্যাকে ফিরে আসি। এভাবেই চলে যায় দিন।
শীতকালের দু এক মাস নাকি অনেকের পুরনো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। বিকারগ্রস্ততা বেড়ে যায়। আমারও শীতকালের নরম অথচ উষ্ণ আদর থেকে কোনভাবেই বের হয়ে আসতে ইচ্ছে করেনা। মনে হয় চাকরি করে কি হবে? চাকরিটা ছেড়ে দিলে কি হয়? পৃথিবীর কোন বিখ্যাত মানুষটি চাকরি করে বড় হয়েছে?
এরকম নানাবিধ দার্শনিক প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে ফল হয় একটাই - অফিসে অস্বাভাবিক দেরি করে ফেলি। আমি কাজ করি বৃটিশ বেনিয়াদের সাথে। দশ মিনিট দেরি করলে কি বলতে হয় তা তারা জানে, কিন্তু কেউ যদি এক ঘন্টা দেরি করে এসে বেশ হাসিখুশী মুখে ডেস্কে বসে তাহলে কি বলতে হয় তা তারা এখনো খুঁজে বের করতে পারেনি। কিন্তু বুদ্ধিমান বাঙ্গালি কিন্তু অনেক আগেই এর সমাধান জানতো বলেই অধিক শোকে পাথর নামের প্রবাদটা আমাদের ভাষায় বেশ চালু আছে।
অফিসের ফ্রি কফিতে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজটা পড়ছিলাম। তা মুজাহিদ সাহেবের অমৃত বাণী-` স্বাধীনতা আমরা এনেছি, আমরাই তা রক্ষা করবো` আমার প্রাণের গভীরে প্রবেশ করলো। আমি আলোড়িত হলাম, পুলকিত হলাম- নিশ্চিন্ত মনে আবারো পরাধীন হলাম।
এবার আমি দৌড় দেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।
গুলশান, সকাল ১১.৩০ মিনিট

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




