somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সার্ক : পরিবর্তিত বাস্তবতা, সফলতার পথে বাধা ও সম্ভাবনা

১৫ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৮-২৯ এপ্রিল ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে অনুষ্ঠিত হল ষোড়শ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। সার্কের এ রজতজয়ন্তীতে আটটি দেশের সরকার প্রধান ও নয় পর্যবেক্ষক দেশ বা জোটের প্রতিনিধিরা একত্রিত হন হিমালয়ের এ ছোট্ট দেশটিতে। আগের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনগুলোর মতই এখানে নানা ইস্যু নিয়ে সরকার প্রধানরা আলোচনা করেছেন, ঐক্যমতও পোষণ করেছেন। স্বাক্ষরিত হয়েছে চুক্তি, এসেছে থিম্পু ঘোষণা। তবে বরাবরের মতই অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেন, এসব ঐক্যমত, চুক্তি বা ঘোষণা কি শুধু কাগজে কলমেই থাকবে নাকি বাস্তবে রূপ নিবে। এমনকি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়া সরকার প্রধানদের কন্ঠেও বারবার উচ্চারিত হয়েছে যে দক্ষিণ এশীয় এই জোট এখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
আঞ্চলিক এ জোটের অসফলতার পেছনে অনেকেই দায়ী করেন ভারতের অনীহাকে। বিশেষ করে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে পারমানবিক প্রতিযোগিতা ও বারবার যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি এ অর্থনৈতিক জোটের বেড়ে উঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তার সাথে সাথে সার্কের সদস্য দেশগুলোর আভ্যন্তরীন সংঘাত, সহিংসতা ও পারস্পরিক অনাস্থাও একটি সফল জোট হিসেবে সার্ককে আত্মপ্রকাশ করতে বাধা দিয়েছে। তবে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারতসহ সব সদস্য দেশই সার্ককে আরো বেশি কার্যকরী করে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা যায়। বিশেষ করে সাম্প্রতিক এই ষোড়শ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সরকার প্রধানরা নানা ইস্যুতে তাদের সদিচ্ছা দেখিয়েছেন। সাক্ষরিত হয়েছে পরিবেশ সহযোগিতা বিষয়ক সার্ক কনভেনশন ও সাফটা সেবা বাণিজ্য চুক্তি। পরিবেশসংক্রান্ত চুক্তির আওতায় পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সদস্যদেশগুলো একযোগে কাজ করবে। আর সেবা বাণিজ্য চুক্তির আওতায় স্বাস্থ্য, সেবা খাত, যোগাযোগ, কম্পিউটিং, তথ্যপ্রবাহ এবং বিমান যোগাযোগ ও বিভিন্ন সেবা খাতে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি থাকছে।
এছাড়া সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া ফোরাম গঠন, সার্ক গণতন্ত্র সনদ, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে ঐক্যমত ও এসডিএফ গঠনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশিষ্ট নাগরিক ও অনাবাসীদের নিয়ে গঠিত হবে দক্ষিণ এশীয় ফোরাম যার কাজ হবে সার্ককে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নির্দেশনা দেয়া। এ অঞ্চলের উন্নয়নে সার্কের বর্তমান সংস্থাগুলোকেও অধিকতর কার্যকর করতে দিকনির্দেশনা দেবে এ ফোরাম। বাংলাদেশের প্রস্তাবনা অনুযায়ি দক্ষিণ এশিয়ায় গণতান্ত্রিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ‘সার্ক গণতন্ত্র সনদ’ গ্রহণের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
সার্কের ইতিহাসে এবারই প্রথম আলাদাভাবে একটি বিবৃতি নেয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নেয়া এ বিবৃতিতে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্রপূর্ণ জীববৈচিত্র সুরক্ষা ও পুন:নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ অঞ্চলকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম কার্বন নি:সরণকারী অঞ্চল হিসেবে পরিণত করার আশাও করেছেন নেতারা। তবে তারা গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে আইনি বাধ্যবাধকতা সংবলিত কোন প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আলোচিত হয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। এর আগে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে সমুদ্রের নিচে মন্ত্রিসভার প্রতীকী বৈঠক করে তিনি আলোচিত হয়েছিলেন। আর এবার লিখিত বক্তৃতার কপি বিলি করে পরিবেশ নষ্ট করতে চাননা বলে সবার নজর কাড়েন তিনি। এছাড়া সার্কের অগ্রগতি না হওয়ার পেছনে সার্কের দুই পরাশক্তিকে দায়ী করেন নাশিদ। ভারত ও পাকিস্তানের সহিংসতা ও যুদ্ধ বন্ধ করে নতুন দক্ষিণ এশিয়া গড়ার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখযোগ্য ছিল সার্ক উন্নয়ন তহবিলের যাত্রা। এ শীর্ষ সম্মেলনে ৩০০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়ন তহবিলের যাত্রা শুরু হলো। এছাড়া এ বছরেই শুরু হচ্ছে দক্ষিণ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
মোটের উপর এই ছিল ষোড়শ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো। এসব সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর হবে তা ভবিষ্যতই বলে দিতে পারে। তবে ২০১১ সালে মালদ্বীপের সতেরতম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে আসার আগে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে সার্ককে একটি সফল অর্থনৈতিক জোট হিসেবে গড়ে তুলতে এসব অঙ্গিকার বাস্তবায়নে এ অঞ্চলের নেতাদের এখন থেকেই সচেষ্ট হওয়া উচিত।
সার্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটা অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর তুলনায় একটু ভিন্ন রকম। ১৯৮৫ সালে সার্ক গঠনের পেছনে বাংলাদেশই প্রধান উদ্যোগ গ্রহন করে আর এজন্য সার্ককে এ দেশেরই ‘ব্রেইন চাইল্ড’ (Brain Child) হিসেবে উল্লেখ করা যায়। তবে বাংলাদেশের উদ্যোগে গঠিত হলেও সার্কের মূল দুই শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয় ভারত ও পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার মূল দুই অর্থনৈতিক শক্তি হবার পাশাপাশি আদর্শগত বিরোধ ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হিসেবে এ দুটি দেশই সার্কের সফলতা ও বিফলতা- দুয়ের পেছনেই অনেকাংশে দায়ি। অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে ভারত ও পাকিস্তান প্রভাবশালী, তবে উপযুক্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ আঞ্চলিক জোটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন।
১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু হলেও দক্ষিন এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক জোট তৈরি করার একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয় মূলত নব্বুই এর দশকের শুরু থেকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংস্কার একটি সফল বাণিজ্যক জোট গঠনে বড় ধরণের সম্ভাবনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে এ সংস্কারের ফলে ভারতের বিশাল বাজার অন্যান্য প্রতিবেশি দেশগুলোর জন্য মুক্ত হয়, অপরদিকে ভারতও তার শক্তিশালি অর্থনীতি নিয়ে অন্য দেশগুলোর উপর প্রভাব খাটাতে সক্ষম হয়। এছাড়া, এ সময়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমানও নব্বুই এর দশক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি পায়।
পুরো বিশ্বের জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগেরও বেশি বা ১.৫ বিলিয়ন মানুষের বাস করে দক্ষিণ এশিয়ায়। কিন্তু পৃথিবীর মোট জিডিপির মাত্র ২.৩ ভাগ দক্ষিণ এশিয়ার। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা – সার্কভুক্ত এই আটটি দেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকমের, তবে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ দুটি হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। বিশেষ করে ভারতই সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতির অধিকারী। পুরো অঞ্চলের মোট জিডিপির ৭৭.৮ ভাগ, বাণিজ্যের ৪০.৩ ভাগ ও বৈদিশিক বিনিয়োগের ৭৫.৮ ভাগই ভারতের দখলে। এছাড়া সব কটি দেশের সাথেই ভারতের সীমান্ত রয়েছে। সে হিসেবে ভারতকে এ অঞ্চলের কেন্দ্রও বলা যেতে পারে। সার্ক অঞ্চলের উপর ভারতের এমন প্রভাব একটি কার্যকরী জোট তৈরির পথে একই সাথে ভালো ও খারাপ দুটি দিকই রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বিশাল আয়তন ও কেন্দ্রে অবস্থান এ অঞ্চলের জোট তৈরিতে একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ২০০৬ সালে এ অঞ্চলের মোট জিডিপির পাচ ভাগের চার ভাগই ছিল ভারতের, যেখানে ভুটান ও মালদ্বীপ এর জিডিপি ছিলো একশ ভাগের এক ভাগেরও কম। এমন প্রভাবের কারণে প্রতিবেশি দেশগুলো তাদের বাজার খুলে দিলে ভারতের শক্তিশালি বাণিজ্যের হাতে পর্যুদস্ত হবে, এমন ভাবনা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। এছাড়া ভারতের বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাপে ছোট দেশগুলোর প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা বন্ধ হয়ে যাবে এমন আশঙ্কাও করেন অনেকেই।
অন্যদিকে ভারতেরও এই আঞ্চলিক জোটকে সফল করার ব্যাপারে এক ধরণের অনীহা দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে ভারত অন্যান্য দেশগুলো থেকে সহযোগিতা না পাবার যুক্তি দেখায়। তবে বাংলাদেশ, মালদ্বীপের মত দেশগুলো যখন সার্ককে কার্যকর করার জন্য মুখিয়ে আছে, তখন এ ধরণের যুক্তি গ্রহনযোগ্য নয়। সার্কের মত আঞ্চলিক জোটের মাধ্যমে অন্যান্য ছোট দেশগুলো ভারতের বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে ভারতকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে মেনে নেবে না বা স্বীকৃতি দিতে চাবেনা, এমন ভীতিও ভারতের মধ্যে কাজ করেছে। অনেক সময়ই লক্ষ্য করা যায় যে, ভারতের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তে ভারতীয় উপমহাদেশ শব্দগুচ্ছই বেশি ব্যবহার করা হয়।
তবে আশার কথা হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের মনোভাবের অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। আঞ্চলিক জোট হিসেবে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে একসাথে কাজ করলে বড় ধরণের বানিজ্যিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব বলে ভারত মনে করছে। তবে সার্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভারতের এ ভূমিকা আরো জোরদার ও ইতিবাচক হওয়া উচিত।
নানা কারণেই সার্কের দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্যের পরিমান মোটেও আশাব্যাঞ্জক নয়। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী। অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য বা সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান একটি বড় সমস্যা। অনেকেই বলে থাকেন সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অবৈধ বাণিজ্য অনেক সময় বৈধ বাণিজ্যের চাইতে বেশি পরিমানে হয় দাঁড়ায়। সার্কের সদস্য দেশগুলোর উপর ভারতের বিশাল বাণিজ্যের আধিপত্য আরেকটি বড় কারণ। উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা নাফটার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে বড় ধরণের আধিপত্য বিস্তার করে আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেখানে যেভাবে অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সার্কের ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা মোটেই সেরকম সহায়ক নয়। তাই নাফটা একটি সফল বাণিজ্যিক জোট হিসেবে কার্যকরীভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে কিন্ত সার্ক এখনো তাদের নিজেদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যেই বাণিজ্য আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ভারতের শক্তিশালি বাণিজ্যিক কোম্পানীগুলোর প্রতি ভীতি, অনাস্থা ও অবিশ্বাস একটি সফল বাণিজ্যিক জোট হিসেবে সার্কের গড়ে না উঠতে পারার একটি বড় কারণ। বাজার মুক্ত করে দিলে টাটা, বিড়লা, আম্বানী গ্রুপের বহুমুখী ও বিশাল বিনিয়োগের চাপে অন্যান্য ছোট দেশের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা অনেকটাই মুশকিল হবে বলে অনেকেরই ধারণা। যেমন পাকিস্তান বা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বড় অর্থ উপার্জনকারী খাত। কিন্তু ভারতের অবাধ প্রবেশ এ দুটি দেশের লাভজনক খাতকে লোকসানি খাতেও পরিনত করতে পারে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এ সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সফলতাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। তবে শ্রীলঙ্কার সাথে ভারতের সম্পর্ক ও রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে অন্যান্য দেশ যেমন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক চিন্তা করলে একই ফলাফল পাওয়া যায়না। তাই বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যে একই ধরণের ফলাফল আসবে তা বলা যায়না।
বন্দর ও যোগাযোগ অবকাঠামোর দুর্বলতাকে বাণিজ্যিক জোট তৈরির পেছনে আরেকটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। শুল্ক ব্যবস্থার দুর্বলতা, উপযুক্ত ট্র্যানজিটের অভাব, নন ট্যারিফ ব্যারিয়ারের কারণে ব্যবসায়ীদের বড় ধরণের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। শুধু যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত অভাবই নয়, অতিরিক্ত নিয়মের বেড়াজালেও আটকে রয়েছে এ অঞ্চলের বাণিজ্য। বিশ্ব ব্যাংকের এক জরিপে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যদি পূর্ব এশিয়ার তুলনায় অর্ধেকও অবকাঠামোগত উন্নতি হয়, তবে আন্ত: আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়বে শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি।

বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াই সবচেয়ে বেশি ‘প্রোটেক্টেড রিজিওন’ বা বাণিজ্যিক সুরক্ষিত অঞ্চল। এ এলাকায় বাজার সবচেয়ে কম মুক্ত ভারতের। ভারতের গড় শুল্ক হার ৩০.১ ভাগ। মুক্ত বাণিজ্য এলাকা বা সাফটা যত বেশি কার্যকর হবে, এই উচ্চ শুল্কের হার তত কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়। এছাড়া, নিজ দেশের বাজারকে প্রভাবমুক্ত রাখতে এ দেশগুলোতে বেশ কিছু নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার রয়েছে। কার্যকর বাণিজ্যিক জোট গঠন করতে শুল্ক হার কমানো এবং এসব নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার দূর করা জরুরি। এছাড়া রুলস অব অরিজিনও শিথিল করা প্রয়োজন।
এতদিন আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তিতে সেবাখাতকে গুরুত্ব দেয়া হতনা। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির জিডিপিতে অর্ধেকেরও বেশি অবদান সেবা খাতের। বাণিজ্যিকভাবে সেবাখাতের রপ্তানীকারক হিসেবে দক্ষিণ এশিয়া একটা বড় অবদান রাখলেও এতদিন সার্কে কেন এতদিন এটি গুরুত্বের সাথে দেখা হয়নি তা আসলেই ভেবে দেখার মত বিষয়। তবে আশার কথা হচ্ছে থিম্পু ঘোষণায় এটিকে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে এবং এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তিতে আসতে পেরেছে সার্কের শীর্ষ নেতারা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সেবা খাতের উদারিকরণের ব্যাপারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দর কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে, তাই নিজেদের মধ্যে নেয়া এ উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হয়ে থাকতে পারে।
তবে গত কয়েক বছরে সার্কের মধ্যে নতুন করে এক ধরণের প্রাণ চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর পেছনে সামিট গুলোতে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানরা যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা প্রকাশ করছেন সেটা এর পেছনে একটা কারণ হতে পারে। বিশেষ করে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা বা সাফটা গঠন একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এর ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য উদারিকরণ ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি তৈরির একটি নতুন সম্ভবনা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া প্রতিটি সম্মেলনেই জলবায়ু, জ্বালানী, নিরাপত্তা, পানি, সন্ত্রাসবাদ ও পর্যটন নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও চিনের অর্ন্তভুক্তি ভবিষ্যতে এ জোটটির আরো শক্তিশালি হবারই ইঙ্গিত দেয়।
সার্কের বাণিজ্যকে আরো গতিশীল করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর শুল্ক ব্যবস্থার প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনাকে আরো বেশি সহজ ও সময়োপযোগি করা উচিত। এছাড়া সমুদ্র ও স্থল বন্দরে প্রযুক্তি সুবিধা আরো বাড়ানো উচিত। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোটের বাণিজ্যকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে সাফটাকে আরো কার্যকর ও উন্নত করতে হবে। এ লক্ষ্যে পণ্য বাণিজ্য(ট্রেড ইন গুডস), সেবা বাণিজ্য(ট্রেড ইন সার্ভিস)ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে আরো বেশি উদারিকরণ করা উচিত। থিম্পু সার্ক সম্মেলনে এ বিষয়ে যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে তার প্রকৃত ও আশু বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া সাফটাকে আরো কার্যকর করতে মুক্ত বাণিজ্য শুরু ও নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার অপসারণের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া উচিত। ধীরে ধীরে স্পর্শকাতর তালিকা(সেনসেটিভ লিস্ট)কমানো এবং তার একটি সময়সীমা নির্ধারণ করাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ইস্যু হচ্ছে জ্বালানী খাত। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অতি সম্প্রতি বিদ্যুত উৎপাদন, ট্র্যান্সমিশন, প্রযুক্তিগত সহায়তার যে চুক্তি হয়েছে তার সফল বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও এ ধরণের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের বিদ্যুত ঘাটতি পূরণে নেপালের সাথে চুক্তি করাও জরুরি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক জ্বালানী চুক্তি করে দেশগুলোর নিজস্ব জ্বালানী সম্পদ অন্য দেশের জ্বালানী চাহিদা পূরণে কাজ করতে পারে। সেক্ষেত্রে নেপালের জলবিদ্যুত ভারত হয়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করার জন্য বা ভারত থেকে জ্বালানী আমদানির ক্ষেত্রে এ ধরণের চুক্তি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া সার্কের দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানী ক্ষেত্রে ক্রস-বর্ডার বিনিয়োগও প্রয়োজনীয়।
সার্কভুক্ত দেশগুলো জ্বালানী আমদানির উপর নির্ভরশীল এবং বেশির ভাগ জ্বালানীই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। আফগানিস্তান সদস্য দেশ হিসেবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিশেষ করে মধ্য এশিয়া থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোতে জ্বালানী সরবরাহ হতে পারে। একই সাথে পশ্চিম এশিয়ার সাথে যোগাযোগেও আফগানিস্তান একটি সেতু হিসেবে থাকতে পারে। এ ধরণের অভিন্ন জ্বালানী সরবরাহ ব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও একটি আত্মবিশ্বাস তৈরির পদক্ষেপ বা ‘কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার’ হিসেবেও কাজ করতে পারে।
সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, সুরক্ষা দেয়া ও বাণিজ্যিক বিবাদের বিচার পাবার মত আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাও জরুরি। সার্কের একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইনও তৈরি করা প্রয়োজন যেখানে সদস্য দেশগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে আঞ্চলিক বাণিজ্যের লাভ ও সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে, কিভাবে একটি আঞ্চলিক রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলা যায় এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির নানা বিবাদ কিভাবে সমাধান করা যায় তার দিকনির্দশনা থাকবে।
সার্ককে গতিশীল করতে এসব পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। ইতোমধ্যে অনেক ইস্যুতেই সরকার প্রধানরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। সার্কের উন্নতির পেছনে এতদিন প্রধান অন্তরায় থাকা ভারতের মনোভাবেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ভারতের নীতি নির্ধারকদের কাছে এটা এখন পরিস্কার যে, ছোট ছোট দেশগুলো মিলে ভারতের বিরুদ্ধ দাঁড়ানোর বা আঞ্চলিক ভারসাম্য তৈরি করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সার্ককে ব্যবহার করা হচ্ছেনা বা ভবিষ্যতেও হবার কোন সম্ভবনা নেই।
গত দুই দশকের অভিজ্ঞতায় এটা পরিষ্কার যে ভারত বাদে অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যের সম্পর্কটা এমন নয় যে তারা একত্রে জোট ভারতের বিরুদ্ধে জোট বাঁধবে। এছাড়া ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে তারা ভারতের সাথে কোন না কোন ভাবে সম্পর্কযুক্ত। দ্বিতীয়ত, চিন ছাড়া অন্যান্য বিশ্ব শক্তিগুলো দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শক্তি হিসেবে ভারতকে অনেকটাই মেনে নিয়েছে, বিশেষ করে ১৯৯১ সালের পর ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে। ভারতের গুরুত্ব বিবেচনা করেই পারমানবিক সহায়তা চুক্তি করতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের প্রতিবেশীদের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি করে ভারতকে দমিয়ে রাখার কোন ধরণের নীতিও বিশ্ব পরাশক্তিকে গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছেনা। তাই একটি সফল সার্ক থেকে ভারতের হারানোর বা ভীত হবার মত কোন ধরণের ইস্যুও চোখে পড়েনা।
দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের একটা উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারত ও চিনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া, দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কটি দেশের সাথে চিনের বাণিজ্যের পরিমান ভারতের চাইতে বেশি। বিশেষ করে পাকিস্তানের সাথে চিনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এ দুটি দেশের মধ্যে ২০০৬ এ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং জ্বালানী, কৃষি, প্রযুক্তিগত সহায়তা, যৌথ বিনিয়োগ ইত্যাদি খাতে বহুমুখি অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়। চিনের সাথে পাকিস্তানের এ চুক্তি শেষপর্যন্ত সার্কের জন্য ভালো ফলই বয়ে আনে কারণ ভারত তার নিজের স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সার্কের মাধ্যমে প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে একটি আঞ্চলিক বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক তৈরিতে সচেষ্ট হয়।
গত কয়েক বছরে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের সুবাতাস লক্ষ্য করা যায়। ২৬ নভেম্বর ২০০৮ এ মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা এ সুসম্পর্ককে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করলেও তা আগের মত যুদ্ধংদেহি পর্যায়ে যায়নি। আঞ্চলিক বাণিজ্য উন্নয়ন বা সাফটার কার্যক্রমকে গতিশীল করতে এ দুটি দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক থাকাটা খুবই জরুরি। এ ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম যেন সার্ককে তার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে না পারে সেদিকে নজর দেয়া উচিত। এমনকি সার্কের মত একটি অর্থনৈতিক জোট সফল হলে তা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এক ধরণের আস্থার বন্ধন তৈরি করতে পারে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে নির্মূল করতে এ ধরণের আস্থা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সার্কের সফলতাই সন্ত্রাসীদের প্রতি উপযুক্ত জবাব হতে পারে।
শুধু ভারতই নয়, পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও সার্কের সাথে সাথে নিজেদের অর্থনৈতিক লাভ অর্জন করতে পারে। বিশেষ করে আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে বড় ধরণের অর্থনৈতিক লাভের ভাগিদার হতে পারে। এছাড়া সার্কের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো পুঁজি ও শ্রমের উপযুক্ত ব্যবহার এবং পণ্য ও সেবার অবাধ যাতায়াতের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। এছাড়া আঞ্চলিক জোট তৈরি হলে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমান উল্লেখযোগ্য পরিমানে বাড়বে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দর কষাকষিতে একটি অভিন্ন অবস্থান নেয়ার জন্য সার্ক ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, নানা বিপর্যয়, পানি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এক্যবদ্ধ প্রভাব রাখতেও এ ধরণের জোট দরকারি। এ ধরণের সমস্যা কোন দেশের পক্ষে আলাদাভাবে সমাধান করা খুবই মুশকিল এবং শুধু সহযোগিতামূলকভাবেই তা মোকাবেলা করা সম্ভব।
অর্থনীতি ও পরিবেশগত লাভের চাইতে বেশির ভাগ সময়ই এ ধরণের আঞ্চলিক জোট গঠনের পেছনে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত কারণ বেশি কাজ করে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সফল অর্থনৈতিক জোট আসিয়ান গঠনের পেছনে কমিউনিস্ট চিন ভীতি একটা বড় কারণ ছিল। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন গড়ে উঠার পেছনে সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর উপর প্রভাবকে উল্লেখ করা যায়। সার্কের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক সদিচ্ছা একটি বড় ব্যাপার। এই রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপরই নির্ভর করবে সার্ক কতটুকু সফল হবে। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাস দমনে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আস্থা তৈরি ও যৌথভাবে অভিন্ন অবস্থান নেয়া একটি বড় ইস্যু হতে পারে।
বহুকাল ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। ব্রিটিশদের শাসনের আগেও অনেক শাসকের কাছেই একই সাম্রাজ্য হিসেবেই এ অঞ্চলটি শাসিত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনের সময় একই অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ শাসিত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিরোধ এসব বন্ধনকে অনেকটাই হালকা করে তুলে। বর্তমানে সার্কভুক্ত বেশির ভাগ দেশে অভ্যন্তরীন ও প্রতিবেশী দেশের সাথে বিরোধ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমানবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা এ অঞ্চলের মানুষকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তাই অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিত করতে বড় ধরণের ভূমিকা নেয়া উচিত এই দুই দেশেরই। সেইসাথে সার্কের সংগঠক দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও উচিত উপযুক্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে এ আঞ্চলিক জোটকে সামনে এগিয়ে নিযে যাওয়া।
পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক একতা একটি নতুন কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। এ পরিস্থিতিতে সার্কভুক্ত সকল দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত লাভ অর্জনে একটি বড় অবদান রাখতে পারে সার্ক। এ জন্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আস্থা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উত্থানের জন্যে একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। আঞ্চলিক জোট হিসেবে পেছনে পড়ে থেকে বিশ্ব বাণিজ্যে যে বড় ধরণের কোন অবদান রাখা যাবেনা তা সার্কভুক্ত দেশগুলোর কাছে এখন অনেকটা পরিষ্কার। তাই নিজেদের অর্থনীতির উন্নতির স্বার্থেই সার্ককে সফল করতে সদস্য দেশগুলোর সচেষ্ট হওয়া উচিত।

লেখক: প্রভাষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×