somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হামমামের পথে : পর্ব ১

১৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাহাড় আমাকে কখনও হতাশ করে নাই। তবে বান্দরবানে যতটা সুন্দর ঝর্ণা দেখা হয় নাই কিংবা সুন্দরবনে যতটা ঘনবনে হাঁটা হয় নাই, শ্রীমঙ্গলের অখ্যাত এক ঝর্ণার পথে সব হয়ে যাবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবি নাই।

ধন্যবাদ দিতেই হয় গালিব ভাই-সজীবদেরকে। ওরা আগে থেকেই প্ল্যান করছিল, শেষ মূহুর্তে কী ভেবে আমিও যোগ দিলাম। খালি জানলাম এটা একটা ঝর্ণা, আর পথে সাপ আছে। জানতাম না কী চমক অপেক্ষা করছে!

শ্রীমঙ্গল পৌছানোর পর দেখি এলাকার মানুষ হামমামের নাম কস্মিনকালেও শোনেও নাই! তাই সকাল বেলা ক্যাপ্টেন গালিব ভাইয়ের শরণাপন্ন হলাম আমরা। তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দিলেন যে ঝর্ণাটির অস্তিত্ব আছে, স্থানীয় নাম নাকি শীতপা! উপর্যুপরি তিনি ব্যাপক গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে একটি নাতিদীর্ঘ(!) লেকচার দিলেন (উনি পেশায় লেকচারার :প)। ভাইয়া জানালেন যে ঝিরি পথে পানি কোথাও কোথাও বুক সমান গভীর। এবং জোক, মশা তো আছেই....এখানে নাকি সত্যি সত্যি কিং কোবরা আছে, ইহা ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সত্যমিথ্যা জানি না, শুনে বেশ মজাই লাগছিল, তবে দেখি অভি বেচারা খুব ভয় পেয়ে গেছে (বেচারা তখনো জিআরই তে ১৪২০ পাওয়ার আফটার শক(!) সামলাতে পারে নাই, এরপর আবার এইটা?)। যাহোক, নাস্তা করে রওনা দিতে দিতে বেশ দেরী হয়ে গেল (ট্যুর গোল্লায় যাক, খাওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজী নেই)। সাড়ে দশটার দিকে ২টি সিএনজি সহযোগে রওনা দিলাম আমরা ৮জন, গন্তব্য কলাবনপাড়া। যেতে লাগে কমবেশী দেড়ঘন্টা, বলে রাখি এই পথটাও বেশ সুন্দর। পথের পাশে বিস্তীর্ণ চা-বাগান, পাহাড়, লাউয়াছড়া....বেশ ভালো লাগার কথা। শুধু শেষদিকে কলাবনের আগে মাটির রাস্তা, বাকীটুকু পিচঢালা। কলাবনপাড়া পৌছে একজন গাইড ঠিক করে নিতে হবে। এরপর শুরু পায়েচলা, আসল অ্যাডভেঞ্চার!



বগালেকের মতই হামমাম যাবার দুইটা পথ আছে, একটা প্রায় পুরোটাই ঝিরিপথ, আরেকটা প্রায় পুরোটাই পাহাড়ী। আমাদের গাইড শুরুতে ঝিরিপথ বেছে নিলেন। দুপুর বারোটায় হামমাম অভিমুখে যাত্রা শুরু হল। এবং যাত্রা শুরুতেই বিনা নোটিশে ঘনবন, সাথে গভীর কাদা। ডালপালা এতই ধারালো যে আমরা স্বেচ্ছায় পথের কাদায় পা ঢুকিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু ভুলেও গাছপালার কাছে যাচ্ছি না। আর ভাবছি কিং কোবরা কোথায়? বেশী ভাবতে হল না, সামনেই কাদাভরা ঝিরি পার হতে গিয়ে বুঝলাম - কিং কোবরার অনুপস্থিতিতেও সবাই সুস্থ সালামতে ফিরে আসতে পারলে সেটাই বেশ খুশীর ব্যাপার হবে। ঝিরিপথকে তো আগে কত ভালোবাসতাম, কিন্তু এত কাদা আর ঘোলা পানি দেখে শুরুতেই উচ্ছাস ঝিমিয়ে গেল।



তবে আস্তে ঝিরির রূপ বদলে গেল, কাদার বদলে পাথর শুরু হল, পানি পরিষ্কার হয়ে এল এবং আমরা......মাটি ছেড়ে পানি ঠেলে হাটা শুরু করলাম, বাকী প্রায় পুরোটাই। বুকপানি না হলেও কোথাও কোথাও মাজাপানি তো বটেই! ঝিরি রাস্তা বা পাহাড় কি তা জেনেশুনে রূপালি জুতা টাইপ কিছু না পরে কেডস পরে আসছি বলে নিজেকে গাল দিতেছি, জুতার ভেতরে পুরো অ্যাক্যুরিয়াম হয়ে আছে, খালি মাছ ছাড়া বাকী। অভি আর সজীব এর মধ্যে সাপ দেখে ফেলেছে। আর জোক জলেস্থলে সর্বত্র অদৃশ্যভাবে কিলবিল করছে, এ কথাটি যে জোক ছিল না তাও হাড়ে হাড়ে বুঝে ফেলেছি। যাহোক, এভাবে সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায় বেশ অনেকদূর চলে গেলাম, ঝিরিপথের কিছু বাঁক সত্যিই চমৎকার ছিল।



ঝর্ণা যখন পৌনে একঘন্টা দূরে, তখন দৃশ্যপটে পাহাড় এসে উদয় হলেন। তা এটাই বা বাকী থাকে কেন? প্রায় ৬০ডিগ্রি স্লপ বেয়ে উঠতে গিয়ে কারো কারো চিৎপটাং হবার দশা। পাহাড়টা ছোট, ২০০ ফিটের বেশী উচু না, কিন্তু সবসময় যা হয়, মনে হল কমসে-কম ১০০০ফিট উঠে গেছি! আর পাহাড়ি রাস্তায় জন্মে এত ঘনবন দেখি নাই, অডোমসের অভাব এই প্রথম অনুভব করলাম। উৎরাই বেশ খাড়া, গাছ ধরে নামতে হয়। এবং নামার পর প্রায় সবাই নিজ দেহে জোকের নীরব কিন্তু রক্তাক্ত অস্তিত্ব আবিষ্কার করল।



এরপর রাস্তা চমৎকার ও সহজ আধাঘন্টার ঝিরিপথ। ঝর্ণার কাছাকাছি এসে শব্দে টের পাওয়া যায় এসে গেছি, সারা গায়ে একটা শিহোরণ জাগে। তবে পানির তোড় কম দেখে একটু দমে গেছিলাম, ভেবেছিলাম এটা নাফাখুম থেকেও ছোট হবে। কিন্তু শেষ বাঁকটা ঘুরে...আহা!।...ঝুঁকি না নিলে কি কেষ্ট মেলে? মরি মরি!! হামমাম!




(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৩:১০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×