বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত এবং ইসকন সংগঠন থেকে বহিঃস্কৃত ধর্ম প্রচারক বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তার মুক্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক শ্রেণীর জনগণ যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে মনে হচ্ছে তারা শুধু মূর্খতার পরিচয় নয় বরং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছেন। এটা অনধিকার চর্চা ছাড়া কিছুই নয়।
আজ দেখলাম ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা করেছে কিছু উগ্র সম্প্রদায়ের মানুষ। দেখলাম ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ঢাকা থেকে আগারতলা গামী শ্যামলী পরিবহনের একটা বাসের সাথে ছোট্ট একটা সড়ক দুর্ঘটনা কে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসাবে প্রচার করছে। কেননা বাসের যাত্রীর বেশিরভাগ ছিল ভারতীয়। এটাও অনধিকার চর্চা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রধান নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী এবং বিদেশ মন্ত্রী এস কে জয়শঙ্কর কে অনুরোধ করেছে যেন, জাতিসংঘে তারা অনুরোধ করেন বাংলাদেশে শান্তিরক্ষি পাঠাতে।
এখন বলতেই পারি মায়ের থেকে যখন মাসীর দরদ বেশি হয় তখন কিন্তু সন্দেহ বাড়তে থাকে।
অন্যদিকে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তো শুধু প্রেস মিট করে ক্ষান্ত হননি, উনি আন্দোলন করছেন, উনি দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি দিচ্ছেন, পেট্রোপোল ঘেরাও করছে। আমদানি - রপ্তানি বন্ধের ডাক দিচ্ছেন। হুমকি দিচ্ছেন বাংলাদেশীদের।
হয়তো ওনাদের ভাবা উচিত দেশটা তাদের না। দেশটা আমাদের।
এই দেশটার হাজার বছরের সম্প্রীতির ইতিহাস রয়েছে। রয়েছে ভ্রাতৃতের অটুট বন্ধন।
এ ক্ষেত্রে তাদের (ভারতীয় রাজনৈতিকদের) নাক গলানোর প্রয়োজন পড়ছে না। কেননা আমার দেশের সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা এটা নিয়ে মোটেয় বিচলিত নয়, বরং ভারতের মিডিয়ার মিথ্যাচারের জন্য লজ্জিত এবং ভীতসন্ত্রস্ত।
যেখানে প্রতিবেশি দেশ ভারতে প্রতিনিয়ত হিন্দু নিম্ন বর্ণের মানুষেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, নিত্যদিন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা অন্তত্য বাংলাদেশের দিকে নজর না দিয়ে নিজ দেশের মানুষের সেবার প্রতি মনোনিবেশ করুক।
আমারা যদি একটু ভারতের মনিপুর রাজ্যে চোখ রাখি তবে দেখতে পাবো...
১৯৫০ সাল থেকে বর্তমান ২০২৪ সাল সময় পর্যন্ত ভারতের মনিপুর রাজ্যে ক্রমাগত সংঘাতে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
মণিপুরে মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে রাজ্যটিতে গত ০৩ মে ২০২৩ থেকে ০৩ মে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলমান সহিংসতায় ২২১ জন নিহত হয়েছে এবং ৬০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সে হিসাবে বলতেই পারি শান্তি রক্ষী হিসাবে ভারতে বাংলাদেশি সেনা মোতায়ন প্রয়োজন। কেননা আমরা জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সেরা হিসাবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছি বহু বছর।
লেখকঃ সজল রহমান
নাট্যকর্মী ও সচেতন বাংলাদেশী নাগরিক
ঢাকা, বাংলাদেশ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৫৩