somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেরো বছরে কত বড় হলো আমাদের স্বপ্ন (সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিলেট একটি অভিজাত জনপদ। প্রকৃতিগতভাবে সিলেটের লোক শরীফ মেজাজের। প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজাত শ্রেণীর লোকদের সাথে সিলেটবাসীর যোগসূত্র রয়েছে। অপরদিকে বৌদ্ধ, হিন্দু এবং মুসলিম সাধকদের পদচারণয় সিলেট অঞ্চল ধন্য হয়েছে। শাহ্‌ আব্দুল করিম, হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, আছিম শাহ্‌, কালু শাহ সহ অসংখ্য আউল-বাউল আর সাধু-সন্ন্যাসীর জন্মস্থান হল সিলেট।


তাঁদের রচিত প্রাণ-জুড়ানো, হৃদয়-নিংড়ানো বিখ্যাত দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ আর প্রেম-ভালোবাসার সুরে রচিত গানগুলো বিশ্বখ্যাত। পৃথিবীর ৩০০০ স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষার মধ্যে ফ্রান্সের বিখ্যাত ভাষা জাদুঘরে বাংলাদেশের দুটি ভাষা লিপিবদ্ধ, একটি বাংলা অপরটি সিলেটের আঞ্চলিক ছিলেটি ভাষা। ছিলেটি ভাষার আবার নাগরী নামে লেখ্য রূপও রয়েছে। আবার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সিলেট বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে।


সিলেটের চা, আনারস, গ্যাস, শুকনা মাছ, চুনা, সিমেন্ট প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেট অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছেন। ব্রিটেন, আমেরিকা, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের লোক অধিকাংশ দেখতে পাওয়া যায়। এই সমস্ত গৌরবগাঁথা সংবলিত ইতিহাস সিলেটবাসীকে আলাদা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে। তাদেরকে বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র সিলেটি হিসেবে জায়গা করে দেয় ইতিহাসের পাতায়।


এ এলাকার মাটিও স্বতন্ত্র। সিলেটের লালচে মাটির গুণগতমান দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতর। বৃহত্তর সিলেটে রয়েছে হাজার হাজার একর অনাবাদী উঁচু-নিচু পাহাড়ি অসমতল ভূমি। আছে হাওর নামের বিস্তীর্ণ জলাশয়। সুগন্ধি কমলা, গুণগতমানের চা উৎপাদনে সিলেটের বেশ খ্যাতি রয়েছে। জলডুপি আনারস আর সাতকড়া সবজি সিলেটের একেবারে নিজস্ব বিত্ত-বৈভবের খতিয়ান হিসেবে পরিচিত। সিলেটের সুরমা নদীবিধৌত ভ‚মি, বিপুল মৎস্যসম্পদে ভরপুর বিস্তৃত হাওর এলাকা যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করছে।


এতকিছুর পর সিলেটের কৃষি অনেকটা পশ্চাৎপদ। তবে এতদঞ্চলের স্থানীয় বিন্নিধান জাতের নানামুখী বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর মধ্যে একটা বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। এই সমস্ত ধানজাতে অসংখ্য ধরনের বংশগতির বৈশিষ্ট্য যেমন- সুগন্ধ, শর্করার পরিমাণ, আকার (চিকন, মোটা), রঙ, গাছের দৈর্ঘ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীলতা ইত্যাদি বিদ্যমান, যা অন্যান্য অঞ্চলের ধানজাতে অনুপস্থিত। নতুন নতুন ধানজাত উদ্ভাবনে এসমস্ত গুণাবলি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। ধান ব্যতীত অন্যান্য দানাদার শস্য, সবজি, তৈল ও ডাল, আলু ও অন্যান্য মূল ও চিনিজাতীয় ফসলের আবাদ সিলেট এলাকায় বেশ অপ্রতুল। প্রচুর সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলে ফসল, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য সম্পদ ইত্যাদি উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। সিলেটের জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ অনেকটা কৃষিবিমুখ। উৎপাদনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বছরের অধিকাংশ সময় জমি পতিত থাকে। দেশি জাতের গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি লালন-পালন, মৎস্যচাষে অযত্ন-অবহেলা গোটা সিলেট অঞ্চলের উৎপাদন অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে ব্যর্থ হচ্ছিলো। সেই চিন্তা-চেতনা থেকেই কৃষি বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি, আধুনিক জ্ঞানচর্চা এবং কৃষি বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষাদান, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও জাতির কল্যাণে হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে ১৩ বছর আগে একটি বড় স্বপ্ন তৈরি হয়। অপার সম্ভাবনার সে স্বপ্নটি ১৩ বছর পর তা সাফল্য হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর উত্তর পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলেট বিভাগীয় শহর কেন্দ্র হতে প্রায় ৭ কিলোমিটার পূর্বে এবং রাজধানী ঢাকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে টিলাগড় নামক স্থানে ২০.২৩ হেক্টর (৫০ একর) জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস। এছাড়াও মূল ক্যাম্পাস থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তামাবিল বাইপাস রাস্তার উত্তর পাশে বিকেএসপি-এর পূর্ব দিকে ৪.৯৭ হেক্টর (১২.২৯ একর) এলাকায় বহিঃ ক্যাম্পাস হিসেবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে।


ষোল কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে একটা মানুষও না খেয়ে নেই। দাম যেমন তেমন এখন আর দুর্ভিক্ষে মানুষ মরে না। দেশী মাছ হারিয়ে গেলেও হাইব্রিড মাছ পাওয়া যাচ্ছে দেদারসে। মেহমান এলে সাধের পালা মুরগী উঠোন থেকে ধরে এনে জবাই করতে হয় না। অল্পটাকায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পোল্ট্রি। যে ক্ষেতে আগে ১ টন ধান ফলন হতো, এখন সেখানে হচ্ছে এখন ফলছে ৫-৬টন। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের কারণে। আর প্রতি বছর এরকমবহু কৃষি বিজ্ঞানী তৈরি করে সারা বাংলাদেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।


এখন পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ৮টি করে ১৬টি ব্যাচ বের হয়েছে। এদিকে ভেটেরিনারি,এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স অনুষদ থেকে ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাচ বেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে বেরলও ৬টি ব্যাচ এবং কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ থেকে আরও ৪টি ব্যাচ। বিসিএস পরীক্ষাসহ দেশে বিদেশে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের ছড়াছড়ি।


ভাবতে ভালই লাগছে এরা সবাই এখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করে আছে এবং বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাদের একাডেমিক জ্ঞানটুকু এবার মাঠে কাজে লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধুর সম্পর্কের কারণেই তারা সফল হয়েছে।


সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় হাওরে জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে এখানকার গবেষকরা। হাওরে বছরে ৭/৮ মাস চারিদিকে থৈথৈ পানি দিয়ে ভরা। শুধুমাত্র বসতভিটার উঁচু জায়গাটুকুই দ্বীপের মত ভাসমান। সিকৃবির প্রচেষ্টায় সেখানে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। বোরো ফসল নির্ভর হাওরাঞ্চলে এক সময় শীতকালেও মাঠের পর মাঠ পতিত থাকত। ২০১৫ সাল থেকে সুনামগঞ্জের দেকার হাওর সহ বিভিন্ন হাওরের প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে সিকৃবি নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে।


সিকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহায়তায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পে খরিপ ও রবি মৌসুমে লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রান্তিক জনপদের প্রভৃতি উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম, প্রফেসর ড. মো. আবু বকর সিদ্দিক, প্রফেসর ড. মো. শহীদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ. পিএইচডি ফেলো সহযোগী প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ, গবেষণা সহযোগী মান্না সালওয়া সহ অন্যান্য গবেষকদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে লাগসই ধান চাষ, সবজি চাষ, মাছ চাষ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালন, কবুতর পালন সহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।


সিকৃবি আরেকটি গবেষণা একেবারে চোখে পড়ার মতো। টমেটো বা শিম এখন আর শুধুমাত্র শীতকালে চাষ হবে না। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ শহীদুল ইসলামের তত্ত্ব¡াবধানে শিমের গ্রীষ্মকালীন নতুন দুটি জাত অনুমোদন পেয়েছে। প্রোটিন সমৃদ্ধ এই জাতগুলোর তিনি নাম দিয়েছেন সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২।এই জাত সিলেট অঞ্চলে বছরব্যাপী ধরে প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সিলেট অঞ্চলের কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য প্রথমবারের মতো স্থাপন করা হয়েছে অটোমেটেড এগ্রোমেটিওরোলজিক্যাল স্টেশন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার ল্যাবের তত্ত্ব¡াবধানে এ অত্যাধুনিক এগ্রোমেটিওরোলজিক্যাল স্টেশনটি চালু করা হয়েছে। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা কর্তৃক এই বিভাগেরই শিক্ষক মো. সামিউল আহসান তালুকদার ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। গৃহপালিত গবাদি প্রাণিতে মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে প্রাণিদেহে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় যা পরবর্তীতে বাজারে বিদ্যমান প্রাণির মাংসের মাধ্যমে মানব শরীরে অনুপ্রবেশ করার মাধ্যমে মানবদেহে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বিনষ্ট করে যা মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ নিয়ে গবেষণা করছে সিকৃবির প্যাথলজি বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেল (আইকিউএসি)।

গবেষণায় এগিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরাও। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেছেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী সাকিব তাহমিদ রিশান ও ইফতেখার আহমেদ ফাগুন। গবেষণাপত্রটি ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াটিক স্টাডিজ’ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সিকৃবির ছেলে মেয়েরা সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। সিলেটের সবচে বড় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবটি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।


এত প্রাপ্তির মাঝেও কিছু না পাওয়ার কথা রয়ে গেছে যেমন, ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য অধিগ্রহণকৃত জায়গাটিতে এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেননি গবেষকবৃন্দ। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সিলেট শহরে যাতায়াতের জন্য বাস নিয়েও ভোগান্তির শেষ নেই। প্রায় তিনহাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৩টি বাস। বাদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়। ফলে যারা সিলেট শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসেন তারা পড়েন চরম বিপাকে। ডাইনিং এর খাবার নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। নেই ভালো খেলার মাঠ, অডিটোরিয়ামটাও ছোট। সবকিছু ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবী হয়ে উঠেছে- গবেষণার জন্য মাঠ। অবশ্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃ ক্যাম্পাস হিসেবে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ-তামাবিল বাইপাস সড়ক সংলগ্ন খাদিম নগর এলাকায় ১২.৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তিনবছর আগে সিলেট জেলা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জায়গাটি বুঝিয়ে দিয়েছিলো। মাত্র ৫০ একর জমি নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যাত্রা করেছিল যার বেশির ভাগ টিলা ও জঙ্গল বেষ্টিত। নতুন জায়গাটি প্রাপ্তির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করি।


ছোটবড় টিলা পরিবেষ্টিত ৫০ একর আয়তনের মনোরম সিকৃবি ক্যাম্পাস। সবুজে ঘেরা, ছোট ছোট টিলা ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরও মোহিনীয় করে তুলেছে। আয়তনে ছোট হলেও এর রূপ-সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়ে আলাদা একটা টান ও ভালবাসা জন্মায়। প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে দেখেছি কিভাবে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে আমার প্রিয় ক্যাম্পাসটি। সিকৃবির শিক্ষার্থীরা এখানকার বিভিন্ন সংগঠনে যোগ দিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মননশীল চিন্তা করতে সাহায্য করছে।


স্কুলে ভর্তি হবার পর বাবা-মা তাদের সন্তানদের মাথায় শুধু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ভূত চাপিয়ে দেন। কিন্তু কৃষিও একটি মহান পেশা। শুধুমাত্র কৃষিবিদদের গবেষণা ও পরিশ্রমের ফলে কৃষক আজ টনকে টন ধান, পুকুর ভরা মাছ ঘরে তুলছে, মাংস ও ডিমের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়েও বছরে ২-৩ লাখ টন চাল রপ্তানির সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে হুট করে কয়েক লাখ মানুষ আমাদের দেশে ঢুকে পরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখনো ভয় পাননি। বলেছিলেন, ১৬ কোটি মানুষকে যেভাবে খাওয়াতে পারি, ৭লাখ মানুষকেও খাওয়াতে পারবো। সামগ্রিক কৃষির উন্নয়নে সরকার খুবই আত্মপ্রত্যয়ী। কৃষির এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি বড় স্বপ্ন। সিকৃবির রেজিস্টার মোঃ বদরুল ইসলাম বলেন, “এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা ফার্স্ট ক্লাস। এবছরই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে পড়েছে এবং সাফল্য অর্জন করছে।” গত বছর প্রফেসর ড.মোঃ মতিয়ার রহমান হাওলাদার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী থেকে প্রথমবারের মতো ভিসি নির্বাচিত হলেন।

ভিসি যোগ দিয়েই তিনি ২০ বছরের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। যার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। ভিসি ড. মতিয়ার বলেন, “সকলের সহযোগিতা পেলে সিকৃবিকে সেন্টার অব এক্সসিলেন্স তৈরি করা সম্ভব হবে।”


প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তেরো বছরে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের মান নিয়ে সবাই গর্ব করছে। তবে আমার কাছে আবেগের আরেকটি নাম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। নবান্নকে সামনে রেখে ছায়া-সুনিবিড়, সবুজ টিলায় ঘেরা ছোট্ট সুন্দর ক্যাম্পাসের জন্মদিনে প্রতিটি ধূলিকণায় যেন রং লেগেছে। এর রং ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×