somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রাত অথবা প্রতিটি রাতের গল্প

২১ শে জুন, ২০১১ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মেয়েটির কথা

মেয়েটি বসে আছে।জানালার নিচে ছোট্ট একটা বালিশ বুকে চেপে।কারো দীর্ঘশ্বাসের মত উদাস হাওয়া এসে মাঝে মাঝে তার কপালের চুলগুলো ছুয়ে যাচ্ছে। একমনে কাঠগোলাপ গাছটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির নাম তন্বী। এখনও ভোর হয়নি, আলো ফুটবে ফুটবে একটা ভাব, এই আলোআঁধারির মাঝে গাছটির ফুলগুলোকে একগুচ্ছ তারা বললে ভুল হবে না। কিন্তু তন্বী ফুল দেখছে না। সে অপেক্ষা করছে। দীর্ঘ তিন বছর ধরেই তার এই অপেক্ষা চলছে।তিন বছরের প্রতিটি রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে সে।অপেক্ষায় থেকেছে, কি কারনে তার সপ্নগুল নষ্ট হয়ে গেল, কি তার দোষ ছিল, মনের বাধনের ঠিক কোন জায়গাটায় সুতো নড়ে গিয়েছিলো তার জানতে হবে। কেউ একজন বলছিল, এক ভোরে সে তার অসম্পূর্ণ কথাগুলো শেষ করবে;তাকে সব বলবে। এই তিন বছরের প্রতিটি রাতেই তন্বী সেই অব্যক্ত কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছে।প্রতিটি রাত জানালার এই একি জায়গায় বসে, কাঠগোলাপ গাছটির দিকে তাকিয়ে সে ভেবে গেছে। একটি বছরের প্রতিটি দিন এর কথা ভেবেছে। শুধু কোন দিন ভাবতে পারিনি স্মৃতিগুলোকে ঝেড়ে ফেলে জীবনে সামনে আগানোর কথা। ১০৯৫ টি রজনীর মত আজকের নির্ঘুম রজনীটিও এমনি এমনি কেটে গেল।ভারি কন্ঠে কেউ ফোনের অপাশ থেকে বলল না- তন্বী.... আমি...... অর্ক!


ছেলেটার পাগলামি
বালিশে উপুড় হয়ে ফোনটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ক।এতটা বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও প্রতিটী ভোরে ফোনে কত সহস্রবার যে একটা নাম্বা্রের দিকে তাকিয়ে ভেবেছে ফোন করবে! কত কিছু বলার ছিল। কিন্তু এখনও মনে হয় হয়ত সঠিক সময় এখন হয়নি। কিংবা কে জানে, তার ফোনের অপেক্ষায় কেউ থাকে কিনা! হয়ত এখন যদি ফোনটা করে বসে তাহলে হয়ত সেদিনের মতো তন্বীর জীবনে আবার ঝড় উঠতে পারে।কত ভাবনা কত চিন্তা! এই ভাবনাগুলোই তাকে আটকে রেখেছে। কিনবা কে জানে সে নিজেই হয়ত ভয় পায় সেই নরম স্নিগ্ধ চেহারার কঠোরতার সামনা সামনি হতে। প্রতিটি রাত, প্রতিটি ভোর তার পার হয় নিজেকে চেপে রাখার কষ্ট নিয়ে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই কষ্টটা বুঝি তার প্রাপ্পই ছিল।


শুরুটা যেভাবে হয়েছিলো


২০০৬ সালের দিকের কথা, অর্ক তখন ঢাকায় চলে এসেছে। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর জীবনে যেন অন্য একটা রঙ যোগ হয়েছে।হঠাত্ত কি একটা কাজে ফার্মগেট গিয়েছিলো। হঠাত রাস্তায় তন্বীর সাথে দেখা। তন্বীকে আগে থেকেই চিনত সে। গ্রামে তাদের প্রতিবেশি ছিল।খুব একটা কথা বার্তা না হলেও কেউ কাউকে কখনও এড়িয়ে চলে নি। এতদিন পর চেনা একজনকে দেখে এগিয়ে গেল অর্ক। তন্বীর চোখমুখ লাল হয় আছে। দিশেহারা একটা ভাব। অর্ক এগিয়ে গেল-
'তন্বী- ভাল আছ'!
অর্ককে দেখে যেন কি একটা ভরসা পেল। কিন্তু বলি বলি করেও কিছু বলছে না দেখে অর্কই বলল; 'কিছু হয়েছে!'
'না মানে। আজকে কলেজে ভর্তির শেষ দিন, মারকশিটের ফটকপি করা হয়নি, কোথা থেকে কি করবো............. মানে......'
ঠোটের কোনে একটু হাসি ঝুলিয়ে অর্ক বলল ' আরে বেপার নাহ! হয়ে যাবে আমাকে দাও, করে দিচ্ছি।'
'আরে না না, তোমার করতে হবে না, আমি করে নিব'
' আরে এগুলো কি আমি নিজের হাতে করবো নাকি, করে দেই।'

নাহ, কোনো গল্পের নায়িকার মতো নায়কের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেয়নি সে। নিজেই নিজের কাজটুকু করে নিয়েছিল। যদিও অর্ক তার পাশে ছিল।তারপর জে যার মত নিজের পথে পা বাড়িয়েছিল। তারপর অনেক দিন কেটে যায়।


একদিন বাসে দেখা, রাস্তার দুরত্তের সাথে সাথে আলাপও জমে উথেছিল।তারপর নাম্বারের আদল বদল।ধীরে ধীরে না বলা সুরে মনের কথাও একজন আরেকজন বুঝেনিচ্ছিল। অর্ক খুব একটা কথা বলত না। সারাদিন তন্বীই কথা বলত। ছট বাচ্চাকে মানুষ যেভাবে প্রশ্রয় দেয়, অর্ক যেন তন্বীকে সেভাবেই দেখত। রাতের পর রাত জেগে তাদের কোথা হত না। তাদের কথা হতো ভোর বেলায়। রাত জাগার খুব বাজে অভ্যাস ছিল অর্কর। সারা রাত জেগে মুভি দেখা আর বই পড়ায় কেটে যেত অর্কর রাত। আর ভোরে ঘুমুতে যাবার আগে তন্বীর সাথে একটু কথা তার বলতেই হতো। কিন্তু কোন দিন ফোন দিয়ে তার মনে হয়নি তন্বী ঘুমে ছিল। মনে হতো ওরই অপেক্ষায় হয়ত বসে আছে। যত রাত ই হোক বা ভোর কোনদিন তন্বী গলায় অপেক্ষা আর ভালবাসা ছাড়া কিছু ছিল না। অর্কর সব ছেলেমানুষি যেন তন্বীর কাছে বড় বেশি ভালো লাগার ছিল।

এরপরে যা হয়..................
চলবে..............
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ২:৪৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×