অত্যন্ত সকালে কানাঘুষা খবর পেয়েছিলাম আজ হয়তো আমাদের প্রিন্সিপাল(গায়ে মানে না আপনি মোড়ল) কে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।তাই সকাল থেকেই মনে অনেক শক্তি পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো সত্যিই বোধহয় আমরা কিছু করে ফেলছি।
১০ টার মধ্যে আমরা স্কুলে চলে যাই। যে টিচারস রুমে আমরা এক সময় উকি দিতে ভয় পেতাম, সেই রুমে আজকে আপাদের পাশে বশে কথা বলেছি। রোক্সানা আপা, শিলা আপা, আম্বিয়া আপা, ওয়াহিদা আপা, মঞ্জু আপা,আকবরি আপারা আমাদেরকে সাহস দিচ্ছিলেন। আপাদের সাথে আমরা বসে কথা বললাম। তারপর আমরা পুরাতন ও বর্তমান ছাত্রীরা মিলে আমাদের পোস্টার, ব্যানার করতে বসে পড়লাম। এর মদ্ধে শুনলাম গভেরনিং বডির মিটিং চলছে। খুব আশায় আমরা বশে ছিলাম যে কখন একটা ভালো খবর পাবো।১টা বাজে, ২টা বাজে, দেখতে দেখতে প্রায় ৩টা হতে চলল; কিন্তু ভেতর থেকে আর কোন খবর আসে না। ওইদিকে মেয়েরা অধৈর্য হয়ে পড়ছে কারন ৩টার মধ্যে তাদের টিএসসি থাকার কথা। যাই হোক, এক সময় আমরা সবাই বুঝতে পারি, মিটিং এর নামে শুধুই কালখেপন চলছে। না পারতে এক সময় আমরা ছাত্রিরা মিটিং এ ঢূকে পরি এবং বুঝতে পারি 'উপরের কিছু চাপ আমাদের উপরে স্পষ্ট। আমরা ছাত্রিরা আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়ে চলে যাই সোজা শহীদ মিনারে।
শহীদ মিনারে গিয়ে দেখলাম এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! আমাদের সব বোনেরা সেখানে মিছিল করে জড় হয়েছে। অনেকে প্লাকারড হাতে বেলি রোড থেকে পলাশী পর্যন্ত হেটে ও এসেছে । ততক্ষনে আপারাও চলে আসেন।স্পর্ধার আয়োজন সত্যি আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।আমাদের সাথে আজকে শুধু আমাদের মেয়েরা বা আপারাই নন, এনেসেউ, নটরডেম সহ আরও অনেকে যোগ দিয়েছিলেন। এসেছিলেন আনু মহাম্মদ, সারা জাকের, মাহ্মুদুজ্জামান বাবু, কৃষ্ণকলি, আব্দুন নুর তুষার আরও অনেকে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ আমাদের সাথে একাত্ততা পোষণ করার জন্য শিক্ষকরা হলেন, গীতী আরা নাস্রিন,রেহ্নুমা আহ্মেদ,জবায়দা নাস্রিন,ফাতেমা সুলতানা শোভা, কাবেরি গায়েন। একাত্মতা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিওন,ছাত্র ফেডারেশন ও কেন্দ্রীয় খেলাঘর।
কিন্তু একসময় কেন জানি মনে হোল, এখানে অনেকেই আমাদেরকে ব্যাবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেবার চেষ্টা করছে। মনে প্রানে আশা করছি করছি আমার ধারনা যেনও ভুল হয়। এখানে আমরা এশেছিলাম সত্যিই আমাদের বোনটার জন্য, আমাদের স্কুল্টাকে বাঁচানোর জন্য।
এবার আমাদের বর্তমান ছাত্রিদের কথা বলি। সত্যি বলতে কি আমরা ওদের প্রানশক্তি দেখে অবাক। এত্ত স্পর্শকাতর একটা বিষয়ে কথা বলতে এসেছে, কিন্তু তারা একটুও অপ্রস্তুত নয়। তারা কোন মেকি লোক লজ্জার ভয় পায়নি। তারা উন্নত শিরে এসে বসেছে, এবং প্রমান করেছে বাংলাদেশ কেবন পুরুষের দেশ নয়। এটা আমাদেরও দেশ। সারা সকাল বসে বসে তারা অজস্র পোস্টার লিখেছে।খুদ-পিপাসা সব ভুলে এতোটা সময় এক হয়ে থেকেছে।
সব শেষে বলবো, আজ আমরা এমন একটা দিন কাটালাম, ভিকারুন নিসার ইতিহাসে চিরকাল দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ আর একতার প্রতিক হিশাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




