somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চমস্কি-র ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট এর অনুবাদ প্রসঙ্গে/ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট গ্রন্থের সাথে আমার বসবাস- আ-আল মামুন

১৮ ই মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ নু বা দ প্র স ঙ্গে
ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট গ্রন্থের সাথে আমার বসবাস

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানেই বিজ্ঞ-দায়বদ্ধ বুদ্ধিজীবী ভাবতাম, দুই-একটা ব্যতিক্রম বাদে। তাই, মাস্টারিতে বহাল হয়ে নিজেকেও 'মহাসম্মানিত' মহিমান্বিত ভাবতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাস্টারদের যাপিত জীবন, অধ্যয়নের পরিধি ও উপলব্ধির চরিত্র দেখে মোহ কাটতে বেশিদিন দেরি হয়নি। 'মানুষ' হিসেবে যদিও বেশিরভাগ শিক্ষকই সৎ, কিন্তু তবু মুক্তভাবে অনুসন্ধিৎসুভাবে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে অসীম শূন্যতা অধিকাংশ ‘মহান’ শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ টিকিয়ে রাখা দুরূহ করে তোলে। নিজ জ্ঞানভাণ্ডারের ফুটো অবস্থা বুঝতে পেরেও ভীষণ আত্মগ্লানির বোধ হয় আমার- এই অপরাধবোধ ষোলআনা জারি আছে এখনও। কারণ এই সমাজ, এর প্রতিষ্ঠানগুলো, প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক লেনাদেনা ও পরিবর্তন, এবং এর সাথে মানুষের সম্পর্ক ও উপলব্ধির রূপান্তরের স্বভাব সম্পর্কে কতো কম জানি, কতো ভুল ধারণা মগজে বাসা বেঁধে আছে! প্রতি মুহূর্তেই টের পাই, কোনো বোঝাপড়াই করে উঠতে পারিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য পরিসরে ‘জ্ঞান’ উৎপাদন পদ্ধতি, কোনো কোনো জ্ঞানকে সত্য ও ন্যায্য হিসেবে গ্রহণ করা, এবং অন্য জীবনের অন্যতর উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করা কিংবা নেতিবাচকতা আরোপ; যাপিত জীবনের বিভিন্ন পরিসরে এগুলোর প্রয়োগ, সমাজের ক্ষমতাকাঠামোর সাথে এসব জ্ঞানের আঁতাত- এগুলো নিয়ে আমরা এখনও প্রশ্নই করতে শিখিনি। এই ব্যর্থতার দায় আমার একার নয়, ব্যক্তিগতভাবে কোনো একজনেরও নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান ও চর্চার যে পরম্পরা সৃষ্টি করে চলেছে তা কোনোভাবেই প্রশ্ন করতে শেখায় না, এমনকি নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভাবতেও শেখায় না। তথাকথিত উত্তর-ঔপনিবেশিক দেশগুলোর শিক্ষা-কাঠামোয় তো বটেই, অন্য দেশগুলোতেও, এই বাস্তবতা অনিবার্য; সতর্ক না-হলে আনুগত্যবাদী মূল্যবোধ-ব্যবস্থার দৈত্যকে ঘাড় থেকে নামাতে পারা যায় না। যোগাযোগ ও মিডিয়া নিয়ে আমাদের পড়ালেখার কথাই ধরা যাক। ছাত্রাবস্থায় এদেশের ‘উচ্চতম বিদ্যাপীঠ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া অধ্যয়নের পদ্ধতি-প্রকরণ, এবং ‘যোগাযোগ’ ‘মিডিয়া’ ‘সংবাদ’ ‘সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা’ ও সেইসাথে ‘জাতির বিবেকস্বরুপ সাংবাদিকতা’ ‘সমাজের দর্পনস্বরুপ সংবাদপত্র’ ‘জাতীয় উন্নয়নের বাহনস্বরুপ মিডিয়া’ ইত্যাকার যেসব হাওয়াই-মিঠাই জ্ঞান আহরণ করেছিলাম, এবং এখন নিজেরা বিনা-ভাবনায় শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে চলেছি তার বেশিরভাগটাই গুরুতর বিভ্রান্তি ছড়ায়। মিডিয়াব্যবস্থা ও সাংবাদিকতা শিক্ষার জন্য যেসব ইংরেজী পুস্তক (বিশেষত এশিয়াটিক ফাউন্ডেশনের খয়রাতী পুস্তক) আমাদের লাইব্রেরিগুলোতে হামেশা পাওয়া যায়, এবং সেগুলো নকলনবিশি করে বাংলা ভাষায় যেসব ‘মৌলিক’ পুস্তক রচিত হয়েছে; বা এগুলো ব্যবহার করে বিপুল উদ্ধৃতিসমাহারে নিজস্ব ভাবনাশূন্য যেসব ‘মৌলিক’ প্রবন্ধ দেশী-বিদেশী জার্নালে ছেপে আমরা আত্মপ্রাসাদে ভুগছি কিংবা প্রমোশন বাগিয়ে নিচ্ছি তার নব্বইভাগই আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সমীচিন, অর্জিত জ্ঞানভাণ্ডার বিসর্জন দেওয়া জরুরি বলে আমার মনে হয়।
সবিনয়ে বলে রাখা দরকার, আমি শুধু আমার অনুভূতির কথা বলছি। অন্যদেরকেও আমার মতো করে ভাবতেই হবে, এরূপ কোনো মৌলবাদী অবস্থান থেকে আমি আলাপ তুলছি না, নিজের মতো করে ভাবার স্বাধীনতা সকলেরই থাকবে, সেটাই কাম্য। আমি আলাপ তুলছি এই অভিপ্রায় থেকে যেন আমাদের ক্রমাবনতিশীল ও বানিজ্যিকায়িত শিক্ষাকাঠামো এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কর্মতৎপরতা, এবং জনজীবনে জনপরিসরে এগুলোর তাৎপর্য নিয়ে একটা বাহাস শুরু করা যায়, নিজেদের কর্মপন্থা ঠিক করা যায়- তাই একটু উস্কানি দিলাম।
এইসব দোলাচলে, চিন্তার আন্দোলনে যখন দ্বিধান্বিত হয় তখন ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট: দ্য পোলিটিক্যাল ইকোনমি অব দ্য ম্যাস মিডিয়া বইয়ের একটা ফটোকপি হাতে এলো- নিজের দৈন্য হারে হারে বুঝিয়ে দিল, বুঝিয়ে দিল মিডিয়া-সমাজ-ক্ষমতার লেনাদেনা সম্পর্কে কতো কম জানি! সেটা ছিল ২০০১ সালের শেষদিকের ঘটনা। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তথাকথিত অ্যঅকাডেমিক জার্নালগুলোতে তথাকথিত ‘পাণ্ডিত্যপূর্ণ’ ‘মৌলিক’ প্রবন্ধ সৃজন করে পদোন্নতির সিড়িগুলো তরতর করে টপকে যাওয়ার বদলে এই বইটা অনুবাদ করা আমার প্রথম কাজ হতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে একটা খুপরি-কক্ষের বাসস্থলে বসে বইটা পড়তে শুরু করে যখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন থেকেই, বলা চলে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত, এই গ্রন্থটির সাথে বসবাস করেছি। মাঝে অবশ্য কর্পোরেট মিডিয়ার যুদ্ধ- ও -তথ্য বাণিজ্য নিয়ে একটা গ্রন্থ সম্পাদনা (২০০৪), নিয়মিত যোগাযোগ পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশনা, নোম চমস্কি এবং মিশেল ফুকোর একটা বিতর্ক অনুবাদ-গ্রন্থরূপে প্রকাশনায় (২০০৬) হাত দিয়েছিলাম; আর ছাত্রদের পাঠদান, গবেষণা-তত্ত্বাবধান ও নিজের পড়ালেখা, সেইসাথে যাপিত জীবনের উল্লাস-আনন্দ-বেদনা-সঙ্কটের ঝকমারি তো ছিলই। নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ না-করতে পারলেও, ২০০৫ সালের প্রথমদিকেই খসড়া অনুবাদের কাজ শেষ করেছিলাম। তারপর একবছর কেটে গেল কোনো ভুল করেছি কিনা তা মূল টেক্সটের সাথে মিলিয়ে দেখা এবং ঘষেমেজে আরও সংহত করার কাজে। তারপর আবার নানা জটিলতা দেখা দিল- বইটার প্রকাশনা অনিবার্যভাবে বিলম্বিত করে তুললো।
ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট বর্তমান বিশ্বে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে তুমুল-বোঝাপড়া-করা ও আলোড়ন তোলা এক মাইলফলক গ্রন্থ। মূলধারা মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে লেখা এযাবৎকালের গ্রন্থগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও কর্পোরেট মালিকদের পক্ষে মূলধারা মিডিয়া কী কায়দা-কৌশলে-প্রকারে-প্রকরণে প্রচারণা (প্রপাগান্ডা) অভিযানে সদাসর্বদা লিপ্ত থাকে তা নিয়ে এখানে একটা মডেল পেশ করেছেন হারম্যান এবং চমস্কি। তাদের নিজস্ব ভাষায়: ‘আমরা, এই গ্রন্থে, একটা প্রচারণা মডেলের নকশা এঁকেছি, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারা গণমাধ্যম-তৎপরতার ওপর প্রয়োগ ঘটিয়েছি। বহু বছর ধরে মিডিয়ার কর্ম-তৎপরতা নিয়ে গবেষণার সুবাদে আমাদের যে বিশ্বাস গড়ে উঠেছে এটা তারই প্রতিফলন; আর বিশ্বাসটা হলো, মিডিয়া সর্বদা রাষ্ট্রীয় ও প্রাইভেট কর্মকাণ্ডে আধিপত্যকারী “বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর পক্ষে সমর্থন আদায়ের তৎপরতা চালায়...।’ গণতান্ত্রিক সমাজে সাধারণত ভাবা হয় যে মিডিয়া স্বাধীন এবং সত্য উদ্ঘাটন ও রিপোর্ট করার প্রতি দায়িত্বশীল, এবং ক্ষমতাধর গোষ্ঠীগুলো যে-চোখে এই পৃথিবীকে দেখতে চায় কেবল সেই চোখেই জগতকে দেখে না। আর মিডিয়া-অধিপতিরা বলেন, পক্ষপাতহীন পেশাদারিত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতার মানদণ্ডে তারা সংবাদ নির্বাচন করে থাকেন, এবং বুদ্ধিজীবী মহলেও তাদের এই অবস্থানের পক্ষে সমর্থন আছে। কিন্তু সুস্পষ্ট দৃঢ়ভাবে এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে হারম্যান ও চমস্কি পশ্চিমা ‘গণতান্ত্রিক’ সমাজে মিডিয়া সম্পর্কিত এসব দাবির অসারতা তুলে ধরেছেন।
গ্রন্থটি ভূমিকা, প্রথম সংস্করণের মুখবন্ধ, সাতটা অধ্যায় ও তিনটা সংযোজনী নিয়ে পাঁচশতাধিক পৃষ্ঠা বিস্তৃত। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল র্যানডম হাউসের প্যানথিওন বুকস শাখার মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে। ২০০২ সালে নিউ ইয়র্ক থেকে তারা নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রচারণা মডেল হালনাগাদ করে নতুন একটা ভূমিকা যুক্ত করেছেন হারম্যান ও চমস্কি।
প্রথম অধ্যায়ে প্রচারণা মডেল তুলে ধরা হয়েছে- এই মডেলের মূল কাঠামোটি গড়েছিলেন বস্তুত এডওয়ার্ড এস. হারম্যান, নোম চমস্কি তার সাথে এই কর্মযজ্ঞে সামিল হন। তারা অন্য অধ্যায়গুলোতে আন্তর্জাতিক কয়েকটা ইস্যুতে মার্কিন মূলধারা-মিডিয়ার ভূমিকা যাচাই করে মডেলটি প্রমাণ করেছেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের মূল বক্তব্য হলো, প্রচারণা সিস্টেম সদাসর্বদাই শত্রুরাষ্ট্রে নিগৃহীত জনগণকে তুলে ধরে মূল্যবান বলি হিসেবে; অন্যদিকে, নিজস্ব সরকার দ্বারা বা বন্ধুরাষ্ট্রে সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি নিগৃহীতদেরকেও তুলে ধরে মূল্যহীন বলি হিসেবে। পোল্যান্ডের পুলিশ কর্তৃক ১৯৮৪ সালে নিহত পোলিশ ধর্মযাজক জার্জী পপিলাজকোর গণমাধ্যম-ট্রিটমেন্ট এবং মার্কিন প্রভাব-বলয়ে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে নিহত শত শত ধর্মযাজকের মিডিয়া-কাভারেজের তুলনার মাধ্যমে তারা এটা প্রমাণ করেছেন। তৃতীয় অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে তৃতীয় বিশ্বের নির্বাচনকে কীভাবে ‘হ্যান্ডেল’ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সেদেশের আধিপত্যশীল মিডিয়া। মার্কিন বন্ধুসূলভ মক্কেল-রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সে-দেশের শাসকগোষ্ঠী ও শাসনপ্রণালীর বৈধ্যতা প্রমাণ করা হয়; আর, অনুগ্রহ-বঞ্চিত বা শত্রু রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে ‘সাজানো নাটক’ ও অবৈধ্য প্রতিপন্ন করা হয়। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো এই রাষ্ট্রীক দৃষ্টিভঙ্গি ও এজেন্ডা সমর্থন করে। অর্থাৎ মার্কিন-অনুগৃহীত নির্বাচনগুলোকে তারা বৈধ হিসেবে গ্রহণ করে কোনোরকম বিচার-বিবেচনা ছাড়াই। একইভাবে অনুগ্রহ-বঞ্চিত রাষ্ট্রের নির্বাচনকে দেখে খাটো করে, প্রহসন হিসেবে, বৈধতাদানে ব্যর্থ হিসেবে- এক্ষেত্রেও বাস্তব পরিস্থিতি বিচারের কোনো তোয়াক্কা করা হয় না। ১৯৮৩ সালে পোপ হত্যা-প্রচেষ্টার সাথে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সোভিয়েত গোয়েন্দাসংস্থা কেজিবি ও বুলগেরিয়ার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের জন্য মার্কিনি মিডিয়ায় অসংখ্য বানোয়াট কাহিনী প্রচারের প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে ৪র্থ অধ্যায়ে। গ্রন্থটিতে একটা বড় অংশ (৫ম ও ৬ষ্ঠ অধ্যায়) ব্যয় করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও পরবর্তীকালে কম্বোডিয়ায় আগ্রাসী হামলা নিয়ে। সাধারণভাবে মনে করা হয়, মিডিয়ার বৈরী অবস্থান গ্রহণের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামে পরাজিত হয়। চমস্কি ও হারম্যান প্রমাণ করে দিয়েছেন, মিডিয়া প্রকৃতপক্ষে তখন কোনো বৈরী অবস্থান নেয়নি বরং রাষ্ট্রীয় প্রচারণা তৎপরতার সাথে সবসময়ই তাল মিলিয়ে চলেছিল- সচরাচর যেমন দেখা যায়। আর ৭ম অধ্যায়ে উপসংহার টানা হয়েছে।
দেশে দেশে চলমান মার্কিনি আগ্রাসনের চেহারা বুঝতে এই গ্রন্থটি যেমন সহায়ক তেমনই সাম্রাজ্যবাদীদের অপরাধ আড়ালকারী মিডিয়ার গণবিরোধী অবস্থান বুঝতেও। আন্তর্জাতিক কর্পোরেট মিডিয়ার হালচাল, প্রতারণা ও ভাঁওতাবাজী বোঝার জন্য; এবং সেই বুঝ আত্মস্থ করে আমাদের দেশের পশ্চিম-অনুকরণপ্রিয় মিডিয়াকে চিনতে এই গ্রন্থটি বিশেষ সহায়ক হবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর, বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের দুনিয়ায় শোষিতের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের চেতনায়, আমাদের সময়ের গায়ে লেপ্টে থাকা পণ্যায়িত-বাণিজ্যায়িত মিডিয়ার মদির-সম্মোহন থেকে মুক্ত হয়ে দুনিয়াকে দেখতে শেখা, ‘বিটুইন দ্য লাইন’ পড়তে শেখা এবং বিকল্প মিডিয়া-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো অত্যন্ত জরুরি বলেও আমি মনে করি- যদিও এই কাজগুলো মোটেই সোজা নয়। কারণ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-অফিস-আদালত মায় আপন পরিবারের আঙ্গিনাতেও পায়ে পায়ে ছড়ানো রয়েছে দীক্ষায়ণের নিপুন জাল।
অনুবাদকর্ম কিছুদুর এগিয়ে গেলে শ্রদ্ধাভাজনেষু বদরুদ্দীন উমর তার সম্পাদিত মাসিক সংস্কৃতি পত্রিকায় নিয়মিত কিস্তিতে এই গ্রন্থানুবাদ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০০২ সালের শেষের দিকে। কিন্তু প্রথম অধ্যায় প্রকাশের পরই তাদের আগ্রহ ফুরিয়ে যায়। ফলত এর পরে অন্য কোনো বিকল্প পত্রিকায় সম্পূর্ণ বইটি প্রকাশে আমার আগ্রহেও ভাটা পড়ে যায়। আর আমাদের এসব ‘সত্য প্রকাশে নির্ভিক’ দৈনিক পত্রিকা এই গ্রন্থটি প্রকাশের সাহস রাখে না, কারণ বইটি প্রকাশিত হলে তাদের অনেক জারিজুরি ফাঁস হতে একটুও বিলম্ব ঘটবে না। স্বভাবতই তারা এ-ধরনের গ্রন্থানুবাদ প্রকাশের ঝুঁকি নিতে চাইবেন না।

বাংলা ভাষায় বইটি অনুবাদের অনুমোদন চেয়ে প্রফেসর নোম চমস্কির সাথে যোগাযোগ করেছিলাম ২০০৩ সালে। তিনি সানন্দে সম্মতি দিয়ে উৎসাহিত করেছিলেন, জানিয়েছিলেন বড় একটা ভূমিকাযুক্ত নতুন সংস্করণটির কথা। সেইসাথে সহলেখক প্রফেসর হারম্যানের সাথে যোগাযোগ করতেও বলেছিলেন, কেননা গ্রন্থস্বত্বের দিকটি প্রফেসর হারম্যানই দেখাশোনা করেছিলেন। বইটি আর তাদের হাতে ছিল না, রানডম হাউস কিনে নিয়েছিল। প্রফেসর হারমানের দেওয়া সূত্র ধরে আমি র্যানডম হাউসের প্যানথিওন বুকস শাখায় যোগাযোগ করি। তাদেরকে জানাই যে ব্যক্তিগতভাবে আমি বইটি অনুবাদের উদ্যোগ নিয়েছি মিডিয়া বুঝতে এই বইটির তাৎপর্যের কথা ভেবে, কোনোরকম অর্থনৈতিক লাভের কথা ভাবিনি, আর বাংলাদেশের কোনো প্রকাশক যদিওবা প্রকাশ করতে আগ্রহী হন তাহলে কোনোরকম মুনাফার আশা ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে বড় রকমের অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিতে হবে। সুতরাং, তারা যেন আমাকে বাংলা ভাষ্য তৈরির অনুমোদন দেন। তারা আমাকে প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলেন। আমি তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করি যে কোনো প্রকাশনা সংস্থা আমাকে বইটি অনুবাদে নিয়োগ করেনি, আমি নিজে উদ্যোগী হয়েছি একধরনের কমিটমেন্টের জায়গা থেকে। তারা সাফ জানিয়ে দেন, কোনো ব্যক্তির সাথে তারা চুক্তিবদ্ধ হন না। এর পরে ঢাকার দুই-একজন প্রকাশককে অনুমোদন নিতে অনুরোধ করেছিলাম বটে, কিন্তু র্যানডম হাউসের মুনাফালোভী চকচকে চোখের কথা ভেবে আমি আর উৎসাহিত হইনি বাংলা স্বেত্বর জন্য তাদের লেজে লেজে ঘুরতে।
অনেক দিন পার হয়েছে, অনেক আলাপচারিতা, অনেক স্মৃতি জমা হয়েছে এই বইটি অনুবাদের সূত্রে। আমার ছাত্র বেনাউল হাসান কাজল তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মামার মাধ্যমে এই গ্রন্থটির নতুন সংস্করণ আনিয়ে আমার কাছে রেখেছিল। ছাত্রত্ব শেষ হলে সে বইটি আমাকে উপহার দিয়ে যায়, আমিও ওয়াদা করি অনুবাদ আকারে প্রকাশিত হলে একটা কপি তাকে উপহার দেব- কিন্তু বড় কথা হলো, বইটা সংগ্রহ করে নিঃসংশয়ে দান করে সে আমাকে চির ঋণী করে রেখে গেছে। আমার এই অনুবাদ-তৎপরতা নিয়ে সহকর্মী-বড়ভাই-বন্ধু সেলিম রেজা নিউটনের আগ্রহের সীমা-পরিসীমা ছিল না। নির্দ্বিধায় স্বীকার তার হাত ধরেই এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমরা কয়েকজন একসাথে জড়ো হয়েছিলাম এ্যকাডেমিক এ্যক্টিভিজমের একটা জায়গা তৈরি করতে, আমরা স্বপ্ন দেখতাম আর তা বাস্তবায়নেও সচেষ্ট হয়েছিলাম- আমরা এখনও স্বপ্ন দেখি। শ্রদ্ধাভাজনেষূ বন্ধুবৎসল গীতি আরা নাসরিন ও ওমর তারেক চৌধুরী অব্যাহতভাবে তাগাদা দিয়ে চলেন, আর ঢাকায় গেলে নিয়মিত তাদের বাসায় আড্ডা বসিয়ে আমাদের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা-তর্কবিতর্কে লিপ্ত হন। আর আছেন আমার অনেক কাজের সাথী ও বন্ধু, আমার সহোদর যেন, ফাহমিদুল হক- আমাকে সমালোচনা করতে ছাড়েন না, আবার প্রশংসা করতেও কুণ্ঠিত হন না। স্নেহভাজন মুরাদ মোর্শেদ আমার একটা বই প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, আর এই গ্রন্থের অনেকখানি কম্পোজ করে ও প্রুফ দেখে দিয়েছেন। কম্পোজ ও প্রুফ দেখার কাজ উদিসা ইসলামও অনেকখানি করে দিয়েছিল। দিনের পর দিন চোখের সামনে আমাকে এই একটামাত্র বই নিয়ে আলাপ করতে, পড়তে, অনুবাদ করতে দেখেও দীর্ঘকাল ধরে নিয়মিত উৎসাহ যুগিয়েছে, ধৈর্যশীল হতে প্রণোদিত করে গেছে। এরা সকলে মিলে প্রতিদিন আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, স্বপ্ন বানাতে শেখায়, আর ভীষণ প্রতিকূল পরিবেশেও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে।
আমার ছাত্রদের কাছে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, অনুবাদাকারে বইটা হাতে পাওয়ার জন্য গত দু’তিন বছর তাদেরকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছি, কথা রাখিনি, তবু এখনও তারা খোঁজ নেয় কবে বইটা হাতে পাওয়া যাবে। আর সংহতি প্রকাশন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে বেঁধেছেন। এই অনুবাদকর্মে অনেক ভুলভ্রান্তি ও ঘাটতি থেকে যাবে, যার দায়িত্ব মূল লেখকদের নয়, সবটুকুই আমার নিজের।


আ-আল মামুন



প্রকাশনা প্রসঙ্গে
মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা যে কোনো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য শর্ত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশে মাতৃভাষায় শিক্ষা এবং জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে উলেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি ঘটেনি। বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু চর্চার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করা হয়নি। মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার একটি জরুরি দিক হিসেবে জ্ঞানবিজ্ঞানের ধ্রুপদী গ্রন্থের অনুবাদ হাতেগোনা। আর বিশ্ব পরিসরে যে নতুন জ্ঞান বিকশিত হয়ে চলেছে, মাতৃভাষায় তার রূপান্তর নেই বললেই চলে। ফলে সাধারণ জ্ঞানচর্চায় এবং বিশেষভাবে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষার স্তরে সৃষ্টি হয়েছে এক সংকটময় পরিস্থিতির। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় ভিনদেশী ভাষা জানার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য হলেও এটা সুবিদিত যে মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা ব্যতীত জ্ঞানের গভীরতার প্রসার এবং জাতীয় পর্যায়ে তার প্রভাব বিস্তৃত হয় না। কাজেই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো এখনও এক জাতীয় কর্তব্যই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশে মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা বিকাশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সার্বিক স্থবিরতার প্রেক্ষাপটেই আমরা বাংলাদেশ অনুবাদ সংসদ গঠন করেছি। সংসদের পক্ষ থেকে আমরা জ্ঞানবিজ্ঞানের জরুরি গ্রন্থ এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার স্তরে সহায়ক নানা গ্রন্থের নির্ভরযোগ্য অনুবাদ প্রকাশের চেষ্টা করবো। আমাদের লক্ষ্য হবে সামাজিক উদ্যোগের উৎসাহ সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পুনরায় এর তাগিদ তৈরিতে ভূমিকা পালন। একটি নিবন্ধীকৃত ট্রাস্ট হিসেবে এই সংসদ তার কার্যক্রমকে একটি সামাজিক উদ্যোগ এবং বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালনায় আগ্রহী। সংসদের প্রথম উদ্যোগ হিসেবে আমরা এডওয়ার্ড এস. হারম্যান ও নোম চমস্কির বিখ্যাত গ্রন্থ ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট: দি পলিটিক্যাল ইকনোমি অব মাস মিডিয়া’র বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করছি। গণমাধ্যমের রাজনৈতিক ভূমিকাকে, বিশেষত আধিপত্যকারী শ্রেণীর পক্ষে চিন্তার গঠনে এর ভূমিকাকে এই গ্রন্থ অপূর্ব দক্ষতায় তুলে ধরেছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমের ভূমিকা বুঝতে এই গ্রন্থের পাঠ অপরিহার্য। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক বিভাগে গ্রন্থটি পাঠ্যও বটে। অনুবাদ বিষয়ে আমরা কেবল অনুবাদের প্রামাণিকতার দিকে খেয়াল রাখতে সচেষ্ট। অনুবাদের ভাষারীতি অনুবাদকের নিজস্ব।| গ্রন্থটির প্রকাশনা ও বিতরণে সংহতি প্রকাশন আমাদের সহযোগী।
বিদ্যায়তনে এবং সাধারণ বিদ্যোৎসাহী মহলের কৌতূহল মেটাতে গ্রন্থটি সহায়ক হলে আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে। গ্রন্থটিকে আরো নির্ভুল করে তুলতে পাঠকের পরামর্শ আকাঙ্ক্ষিত।

নির্বাহী পরিচালক
বাংলাদেশ অনুবাদ সংসদ


বাংলা অনুবাদটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ৫১২, মূল্য ৫০০ টাকা।
পাওয়া যাবে আজিজ সুপার মার্কেটের বইয়ের দোকানগুলোতে।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৮
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×