somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ/ আনু মুহাম্মদ

১৯ শে মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ' গ্রন্থটির মুখবন্ধ
বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোতে বাংলাদেশের যাত্রাপথ ও তার পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনুসন্ধানের লক্ষ্য নিয়েই এই গ্রন্থ পরিকল্পিত হয়েছিল। এর পুরো বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও অনেকখানি সেভাবেই লিখিত হয়েছে। যেহেতু এই গ্রন্থের রচনাকাল তিন বছর, সেহেতু এই সময়কালে সংঘটিত নানা ঘটনাবলি মূল তাত্ত্বিক কাঠামোর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে বিভিন্ন পর্বের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের অংশ হিসেবে। এই গ্রন্থ লেখার কাজ শুরু হল এমন সময়ে যখন একদিকে সরবে ইসলামপন্থী কিছু গোষ্ঠীর সহিংস তৎপরতা চলছে অন্যদিকে বাংলাদেশকে দাসত্বের নতুন নতুন শৃঙ্খলে আবদ্ধ করবার জন্য, সম্পদ দখল ও লুণ্ঠনের জন্য নানা চুক্তি সম্পাদন হচ্ছে নীরবে।

দৃশ্যপটের এই দুটি দিক গ্রন্থের বিভিন্ন পর্বে ঘুরে ঘুরে এসেছে। সে কারণে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার প্রান্তস্থ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের কথিত সার্বভৌমত্ব নিয়েও এই গ্রন্থে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এই সার্বভৌমত্বের ক্ষয় ও সেই ধারার অন্যপিঠে এই দেশের মানুষ ও সম্পদের উপর আন্তর্জাতিক একচেটিয়া পুঁজি ও তার প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন বিশ্বসংস্থা ও কতিপয় রাষ্ট্রের আধিপত্য বৃদ্ধি ও তার প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে এই গ্রন্থের বিভিন্ন পর্বে। বৈশ্বিক রাজনীতি, আঞ্চলিক আধিপত্য, সাম্রাজ্যবাদী সম্পর্ক অতি অপরিহার্যভাবে বারবার এসেছে।

বাংলাদেশে সমাজ ও অর্থনীতি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। বিনিয়োগ ও উৎপাদন ক্ষেত্র, প্রযুক্তি, সম্পর্ক, অগ্রাধিকার, শ্রেণী বিন্যাস, লিঙ্গীয় সম্পর্ক এগুলোর মধ্যে বিস্তর পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তন জৌলুস এনেছে, নারকীয়তাও এনেছে; আবার একই যাত্রায় উন্মোচিত হয়েছে মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠার নতুন নতুন সম্ভাবনাও। নতুন উন্নয়ন দর্শনের চিন্তা ধামাচাপা পড়ে তথাকথিত 'দারিদ্র বিমোচন' নামাবলী গায়ে দেয়া অধিপতি উন্নয়ন চিন্তার দাপটে, যা কার্যত দারিদ্র ও বঞ্চনা সৃজন ও পুনরুৎপাদনের ব্যবস্থাকেই পাকাপোক্ত করে; লিঙ্গীয়, জাতিগত এবং শ্রেণীগত বৈষম্য ও নিপীড়নকে স্থায়ী করতে ব্রতী হয়। এই গ্রন্থ এই বিষয়টি স্পষ্ট করতে উদ্যোগী হয় যে, দারিদ্র নয়, আমাদের প্রধান সমস্যা নিজেদের জীবন, প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের উপর এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কর্তৃত্বের অভাব।

বাংলাদেশের জনচেতনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মৌলিকভাবে ভিন্ন দুই ধারার রাজনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং এই দুই ধারার আপাত বিরোধ অনেক বেশি মাত্রায় জনগণের বিভিন্ন পর্যায়ে সংক্রামিত। ‘সুশীল সমাজ’ নামে পরিচিত সুবিধাভোগী সমাজ এই বিরোধ নিরসনকে জাতীয় সমস্যা সমাধানের অন্যতম পথ বলে মানুষের সামনে উপস্থিত করে। এই গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায়ে এই আপাত সত্য প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে সমাজ ও রাজনীতির ভেতরে তাদের নীতিগত ও শ্রেণীগত ঐক্যের উন্মোচনের মধ্য দিয়ে। বিশ্লেষণে এসেছে এই দুই ধারার রাজনীতির তফাৎ আছে ঠিকই, কিন্তু জনগণের জীবন ও সম্পদ হরণ, নিপীড়ন বৈষম্য ও আধিপত্যের ব্যবস্থাবলি রক্ষা ও পুনরুৎপাদনে তাদের ঐক্যটাই মৌলিক। সামরিক বাহিনীর সমর্থনে যে সরকার বর্তমানে জরুরি অবস্থার আড়ালে দেশ শাসন করছে সেটি এই দলগুলোর বিরোধিতা করলেও যে নীতি এই পুরনো ঐক্যের ভিত্তি, সেই নীতি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা জোরদার করেছে।

এই বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে? গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায়ের বিশ্লেষণ থেকে এটি স্পষ্ট হবে যে, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, যদি সব কিছু অপরিবর্তিত থাকে তাহলে এই দেশ পরিণত হবে বিশ্ব ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার এক নাটবল্টুতে; তার আড়ালে জনগণের জীবন ও সম্পদের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে বহুজাতিক পুঁজি আর নানা চেহারার অধিপতি শক্তিসমূহ। তবে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ ইতিমধ্যে বার্তা দিয়েছেন যে তাঁরা জীবিত আছেন। সেই বার্তাই আমাদের নতুন যাত্রাপথ সৃষ্টির ভরসা দেয়।

একটি বাদে এই গ্রন্থের সবগুলো অধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা নতুন দিগন্ত-তে। নারীর জগত লেখাটি প্রকাশিত হয় সুস্মিতা চক্রবর্তী সম্পাদিত চন্দ্রাবতীতে। আমি তাঁদের এবং এই গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ায় সংহতি প্রকাশনকে ধন্যবাদ জানাই।

আনু মুহাম্মদ
অর্থনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৫:০৮
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×