প্রাক-কথন
বর্তমান প্রবন্ধটি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ সমাজ-রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্রের আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দেয়া আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্মারক বক্তৃতার প্রথমাংশের আদ্যন্ত মার্জিত ও পরিবর্ধিত রূপ। সুশীলকুমার দে, কালিকারঞ্জন কানুনগো, নলিনীকান্ত ভট্টশালী, আহমদ শরীফ, আবু মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মমতাজুর রহমান তরফদার প্রমুখ অধ্যাপকদের পীঠভূমিতে আমন্ত্রণ পাবার সৌভাগ্যের জন্য বন্ধু আহমেদ কামাল, শ্রদ্ধাভাজন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মহাশয়, অধ্যাপক নেহাল করিম ও সাহিত্যবিশারদের পরিবারের অন্যান্য মান্যবর সদস্য এবং উপর্যুক্ত সংস্থার অন্যান্য উদ্যোক্তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বাংলা একাডেমি, ঢাকা; বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ম, রাজশাহী; বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও জাতীয় গ্রন্থাগার, কলকাতা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে আমি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে সাহায্য পেয়েছি। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ ও সিভিলাইজেশন বিভাগে এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্টা বারবারাতেও আমন্ত্রিত শ্রোতৃমণ্ডলীর কাছে আমি প্রবন্ধের অংশবিশেষ পেশ করি। আমার কর্মকেন্দ্র সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেজ, কলকাতার আলোচনা চক্রেও প্রবন্ধটি পড়া হয়। আলোচনায় উপস্থিত শ্রোতাদের মন্তব্যে আমি উপকৃত হয়েছি। রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ ও চিন্তার প্রাখর্যকে মামুলি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছোট করার ইচ্ছা আমার নেই। মূল্যবান মন্তব্যের জন্য দীপেশ চক্রবর্তী ও বিশ্বজিৎ রায়ের কাছে আমি ঋণী। এই গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের কাজে ইন্দিরা বিশ্বাস সহযোগী ছিলেন। প্রবন্ধটির প্রথমাংশ ঢাকার ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত-এ, পরে পরিবর্ধিত রূপের প্রথমটি সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকাতে এবং সর্বশেষ অনুষ্টুপ-এ পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশিত হয়। অনুষ্টুপ-এ এই প্রবন্ধের সাথে সাহিত্যবিশারদের ‘বাংলার মুসলমানগণের মাতৃভাষা’ প্রবন্ধটিও ছাপা হয়েছিল। প্রবন্ধটি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের রচনা সংকলনে এতাবৎকাল জায়গা পায় নি।
ঢাকার সংহতি প্রকাশন আমার প্রবন্ধটিকে আগ্রহভরে গ্রন্থাকারে বের করতে উদ্যোগী হয়েছে। ওদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। সাহিত্যবিশারদের অগ্রন্থিত প্রবন্ধটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা মনে রেখে এই পুস্তকেও তা সংযোজন করা হলো।
গৌতম ভদ্র
কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
...........
প্রকাশকের তরফ থেকে-
আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ পুথির কঙ্কালের ভেতর যুগযুগান্তরের রক্তধমনী ও নিঃশ্বাসের প্রবাহধ্বনি শুনেছিলেন। সারা জীবন তিনি বিশ্বাস করে এসেছেন সেই এক হারানো যুগের ‘শিল্পস্রষ্টাদের পক্ষে যাহা সত্য ছিল’, আজ এই যন্ত্রের যুগেও ‘তাহার বিশেষ ব্যতিক্রম ঘটে নাই।... তাহার আস্বাদ যুগযুগান্তর অতিক্রম করিয়া আজও অবিকৃত অম্লান রহিয়াছে।’
বর্তমান গ্রন্থটি অবশ্য ‘মুনশি আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের দান ও সাধনা নিয়ে নিছক বিবরণী’ নয়, বরং ভারতীয় ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য নিয়ে ঔপনিবেশিক বিজয়সূত্রে পশ্চিমের পণ্ডিতদের নৃতাত্ত্বিক ‘ভারতবিদ্যাগত’ আগ্রহ কিভাবে সংস্কৃতাশ্রয়ী পুথিসন্ধান ছাপিয়ে নানা আঞ্চলিক ভাষা পর্যন্ত অগ্রসর হল, যদিও সেই প্রকল্পে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায় এর ভাষায় ‘সাম্যের অভাব আছে’ .. সেই সন্ধানই কিভাবে অনতিবিলম্বে সাহেব ও দেশী পণ্ডিতদের মাঝে চাপান-উতোরের ক্ষেত্র হয়ে উঠল, লোকজ ঐতিহ্য লালিত দেশীয় গবেষকদের সাথে বিদগ্ধ বিজ্ঞানসম্মত গবেষকদের বৈপরিত্যও স্পষ্টতর হতে থাকল;- সাহিত্য বিশারদ ও তাঁর সাধনাকে সেই প্রেক্ষিতেই পুনরাবিষ্কার করেছেন গৌতম ভদ্র।
গৌতম ভদ্র জ্ঞানায়তনের সেই ক্ষেত্রের মানুষ, কর্তার নিজস্ব চৈতন্যের মূল্য যেখানে সবিশেষ। দীনেশচন্দ্র সেন ও মুনশী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, যারা পুথি পাঠকারী সমাজের অনুভূতি ও অভ্যাসের সাথে পরিচিত শুধু নন, মননের দিক থেকেও সেই সমাজের অঙ্গীভূত; তাদের সাথে নগেন্দ্রনাশ বসু ও আহমদ শরীফ এর নির্মোহ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসম্মত গবেষণার পাঠের ফারাক তাই গৌতম ভদ্রের কাছে তাই ভিন্ন এক অর্থ ধারন করে।
৮৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটিরমূল্য ১০০ টাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




