সেই দের হাজার বছর আগে, যখন মেয়েরা ছিল সম্পত্তি
লেখাপড়া দূরে থাকুক, অন্য কিছু করার সুযোগ ছিল না।
সেই সময়ে হাইপেশিয়া শুধু যে একজন তুখোড় গণিতবিদ,সফল পর্দাথবিজ্ঞানী,প্রতিভাময় জ্যোতির্বিদ আর নিউপ্লেটোনিক দর্শন ধারার প্রধান ছিলেন তা নয়, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির শেষ গবেষক।
আমরা পৃথিবীতে এখন যে সভ্যতাটুকু দেখছি সেটার পিছনে যেটা সবচেয়ে বেশী কাজ করছেসেটা হচ্ছে বিজ্ঞান ।পৃথিবীতে আরো একবার সেই বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতা গড়ে ওঠার সম্ভবনা দেখা দিয়েছিল এবং সেটা ঘটেছিল আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে ঘিরে ।
আলেকজান্দ্রিয়া শহরটি ছিল সত্যিকার অর্থে একটি কসমোপলিটান শহর যা গড়ে উঠেছিল লাইব্রেরিকে ঘিরে।
আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর গ্রিক সম্রাটরা মিসর শাসন করত,সত্যিকার অর্থে জ্ঞানের সাধনা করত। দুই হাজার বছর আগে তারা গবেষনার পরিবেশ তৈরি করেছিল। যেখানে গবেষকেরা গনিত, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান,জ্যোতির্বিজ্ঞান ,চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে শুরু করে ভুগোল বা সাহিত্যে গবেষনা করতেন।
গবেষনা করার জন্য দরকার বই, তাই ধীরে ধীরে লাইব্রেরি গড়ে উঠে। প্রিন্টিং প্রেস ছিল না তাই বইগুলো ছিল হাতের লেখা। লেখক নিজে লিখতেন অন্যরা কপি করে অন্য জাগায় রাখতেন। তাই বই গুলো ছিল মুল্যবান। সম্রাটরা কস্ট করে সারা পৃথিবী থেকে বই সংগ্রহ করতেন।
এই বিশাল লাইব্রেরিকে ঘিরে গবেষকরা যে সব কাজ করতেন তা ছিল যুগান্তকারী।
যেমন ইরাতোস্থিনিস নিখুতভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করে,হিপার্কাস নক্ষত্রের প্রকৃতির সঠিক ব্যাখ্যা দেন,ইউক্লিড তার বিখ্যাত জ্যামিতির বই লিখেছিলেন,আর চিকিৎসা ও শরীরবিদ্যার বই ।
এরকম একটি-দুইটি নয়,আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিভিত্তিক গবেষণার অজস্র উদাহরন দেয়া যায়।
সেই লাইব্রেরি একজন গবেষক ছিলেন হাইপেশিয়া। তার জন্ম ৩৭০ সালে। তার বাবাও ছিলেন একজন বড় দার্শনিক, নাম থিওন।
সেই সময় যখন মেয়েরা ঘরের ভিতর আটকা পরে থাকত তখন হাইপেশিয়া সদর্পে পুরুষদের জগতে ঘুরে বেড়াতেন। হাইপেশিয়া নিয়মিতভাবে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে বক্ত্বতা দিতেন। তার বক্ত্বতা শোনার জন্য অনেক দূর থেকেও জ্ঞানী-গুণী মানুষেরা আসত,রীতিমত টিকেট কিনে তার বক্তিতা শুনত।
তখন খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছে,খ্রিস্টান আর্চ বিশপের নাম সিরিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চাকে ধর্মান্ধ খ্রিস্টানরা ধর্মবিরোধী মনে করত। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারক হাইপেশিয়া ছিল তাদের চক্ষুশূল। নগরপাল অরিস্টিসের সাথে তার বন্ধুত্তকে সিরিল খুব খারাপ চোখে দেখত। হাইপেশিয়ার ধারনা ছিল ধর্ম হবে যুক্তিনির্ভর আর জ্ঞানভিত্তিক,তার বক্তিতায়ও তাই প্রচার করতেন। ধর্মান্ধরা খুব অপছন্দ করত। একজন মেয়ে হয়ে এ রকম সাহসী কথাবার্তায় তারা খুব বিরক্ত হত। তারা চেস্টা করত যেন তার বক্তিতা কেও না শোনে। কিন্তু তারা কনোভাবেই থামাতে পারল না। অবশেষে তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল।
৪১৭ সালে হাইপেশিয়া একদিন ঘোড়ার গাড়িতে বের হয়েছিল কাজে যাবার জন্য,পথে তাকে ধর্মান্ধ মানুষেরা ঘিরে ধরল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে আগুনে ছুরে দেয়।
হাইপেশিয়া মরে যাওয়ার একহাজার বছর পৃথিবী অন্ধকারে ডুবে গেল,কোপারর্নিকাস, গ্যালেলিও,নিউটনরা এসে সেই অন্ধকার দূর করার চেস্টা করল।
কথিত আছে লাইব্রেরির বইগুলো পুড়িয়ে গোসলখানার পানি গরম করা হয়েছে।---দশ লক্ষের উপর বই পুড়িয়ে শেষ করতে ছয় মাস থেকেও বেশি সময় লেগেছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এর চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আছে বলে জানা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





