তোমরা কেউ কি কখন ও মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছ? এই যে আমি কিছুক্ষন আগে বাথরুম আটকে পরেছিলাম, প্রায় ৩৫-৪০ মিনিট এর মত ছিলাম। ক্লাস শেষকরে রুম এ ফিরে একটা ঘুম দিয়ে গোসল করতে গিয়েছিলাম। গোসল শেষে বের হওয়ার সময় দেখি দরজা খুলছেনা। অনেক চেষ্টা করলাম কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এমনিতে রোজা রেখে শেষ বিকালএ খুবই ক্লান্ত বোধ করছি তারপর এই অবস্থা। নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হয়েছিল। বারবার মনে হচ্ছিলো আজকে যদি আর বের হতে না পারি। আবার খুব বিরক্তিও লাগছিল। রোজাদার আকজন লোকের সাথে আল্লাহ কেন এমন করবে।
রুমম্যাট (কক্ষ সঙ্গী) কোরিয়ান, ও কখন আসবে তার ও ঠিক নেই। ওর আসার গড় সময় রাত ৯-১০ টা। কখনও বা রাত ১২-১.০০ টা। আর যদি ড্রিংস করে আসে তবে রাত ২-৪ টা। আবার নাও আসতে পারে। অনেক ভেবেচিন্তে দরজা ভাঙ্গার মনস্থির কড়লাম। প্রায় মিনিট ১০ চেষ্টা করেও পারলাম তো নাই বরং হাত ছূলে গেলো। মনে হতে লাগলো আজবুজি মারাই যাব। অবশেষে আরও কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এমনিতে টয়লেট ও বাথরুম আলাদা হওয়ায় বাথরুম এর সাইজ খুবই ছোট, তাছারা অক্সিজেন আসার মত বিন্দুমাত্র ফাক ও নেই। মনে হচ্ছিল আস্তে আস্তে মরে যাওয়ার চেয়ে গুলি (শুট) করে মরে যাওয়া ওনেক ভাল। এতে কষ্টও কম। এরপর সিদ্দান্ত টা আসলেই সময় উপযোগী ছিল।
আমার ডরম টা (Dorm/Hall/Hostel) নূতন হওয়ায়, অনেকটা আধুনিক ও বটে। এনেক টা শব্দ নিরোধক। সব দরজা জানালা বন্ধ করে দিলে মোটামুটি বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা মনে হয়। শীতের দিনে এমনিতেই সবকিছু বন্ধ থাকে, কিন্তু গরম এর সিজন বলে খুলে রেখেছিলাম সতেজ বাতাস আসা-যাওয়ার জন্য।
হঠাত মনের অগোচরে হেল্প, হেল্প বলে চিতকার করলাম। এটা যদি ভেবেচিন্তে বলি তবে বাহির থেকে শোনার সম্ভবনা সর্বচ্চো ১০%। দরজা ধাক্কাচ্ছি আর হেল্প, হেল্প বলে চিতকার করলাম। ভাগ্য ভাল পাশের রুমএর কোরিয়ান রুমম্যাট ঘুমাচ্ছিল, সে শুনতে পেল। সে জানত যে এই রুম এ একজন বিদেশি থাকে, এবং আগে পরে দেখা হলে হাই-হ্যালো হয়েছে এর বেশি কিছু না। তো সে আমার গলার শব্দ শুনে বুজতে পারল যে আমি সাহায্য চাচ্ছি। সে আমার রুম এর সামনে এসে জিগ্যেস করল কি হয়েছে। ভাগ্য আরো ভাল যে সে কিছুটা ইংরেজী বলতে পারে। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পৃথিবীর অন্যতম প্রথম ৫০ টা ইউনিভার্সিটি’র মধ্যে একটা, তাই অপেক্ষাকৃত মেধাবী ছাত্রছাত্রিরা এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। এমনিতে যেখানে কোরিয়ান রা নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় তেমন একটা জোর দেয়না। তবুও এখানকার স্টুডেন্টরা ইংলিশ ভাষা টা আকটু ভালই জানে। যা হোক তাকে বোজালাম যে আমি বাথরুম এ আটকা পড়েছি। সে সাথেসাথে অফিস এ ফোন দিয়ে লোক নিয়ে আসল। লোকজন এসে তাদের মাস্টার চাবি দিয়ে রুম খুলে আরো ৫ মিনিট ধস্তাধস্তি করে অবশেষে বাথরুমের দরজা খুলে আমাকে বেরকরে নিয়ে আসল।
আজ যদি আমি বাথরুম এর মধ্যে অক্সিজেন অথবা খাবারের (রোজা ছিলাম) অভাবে মারা যেতাম তাহলে রিপোর্ট/ প্রতিবেদন আসত আমি হয়ত আত্মহত্যা করেছি। কারন এ দেশে স্টুডেন্ট দের মধ্যে আত্মহত্যা’র প্রবনতা একটু বেশি। এর মধ্যে ৯৫% ই পড়াশুনা’র চাপের কারন এ। যদিও ১৫ দিন হোল আমার পরীক্ষা শেষ হলো, রেজাল্ট মোটামুটি ভাল হয়েছে কিন্তু যে লোকগুলো এসে আমাকে ঊদ্ধার করলো তাদেরও হয়ত জানার উপায় ছিল না যে আমি আটকা পরেছিলাম। তারাও হয়ত ধরে নিত আমি অন্য সব স্টুডেন্টদের মত আত্মহত্যা করেছি। সবাই হয়ত এই কথাটাই বিশ্বাস করত। আমার পরিচিত জনরা আমাকে নিয়ে কি ভাবত????? আমার এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে আমি এরকম একটা বিধংসী উপায় বেছে নিব।
মা কে বলিনি তিনি অযথা এগুলো নিয়ে টেনশন করবে বলে। এমনিতে দূরে থাকি বলে এনেক টেনশন করে, আর এগুলো বলে আরও টেনশন দিতে চাইনি।
পরিশেষে আল্লাহর কাছে অনেক শুকুরিয়া আদায় করছি যে সে হয়ত আমাকে রোজা রাখার বধৈলতে আমাকে এরকম একটা পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




