“ আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা যুদ্ধ করছ না আল্লাহ’র পথে এবং সেসব অসহায়-দূর্বল নর-নারী ও শিশুদের জন্য যারা বলে : হে আমাদের প্রতিপালক ! এ জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিন , এখানকার অধিবাসীরা ভয়ানক অত্যাচারী ? আর আপনার তরফ থেকে কাউকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী করে দিন ” ( পবিত্র কুরআন; সুরা নিসা ; ৪: ৭৫ )।
এই পৃথিবীতে বেশীরভাগ মানুষই নির্যাতিত। এরা অত্যাচারিত , নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার এবং সীমাহীন অভাবের মধ্যে গৃহহীন অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। অসুখে তাঁরা চিকিৎসা পায় না । অনেকে এত গরীব যে এক টুকরো রুটি কেনারও পয়সা নেই তাঁদের।
অনেক বৃদ্ধ আছেন যারা অনাদরে, পরিত্যক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এবং চিকিৎসার কোন সুযোগই নেই তাঁদের। অনেকে আছে বৈষম্যের শিকার। নিজেদের ঘর-বাড়ি ও দেশের মাটি থেকে তাঁরা বহিষ্কৃত শুধুমাত্র জাতিগত , ভাষাগত পার্থক্য বা বর্ণ-বৈষম্যের কারণে। কখনো তাঁদের উপর গণহত্যা চালানো হয় । সহায়-সম্বলহীন অপুষ্টির শিকার , অসহায় শিশুরা টাকা রোজগারের জন্য শ্রম দিতে বা ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়।
অসংখ্য মানুষ বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা নিয়ে ভয়-ভীতির মধ্যে জীবন কাটায়। এই পৃথিবীতে রয়েছে অপরিসীম ভোগ , সুযোগ-সুবিধা এবং সম্পদের প্রাচুর্য। যারা এই ধরণের সুখী জীবন যাপনের সৌভাগ্যে সৌভাগ্যবান , তারা গৃহহীনদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। গরীবদের ছবি এবং এইসব হতভাগ্যদের দূর্দশা তারা টিভিতে দেখে। মাঝে মাঝে তারা কিছু সময়ের জন্য এদের প্রতি করুণা অনূভব করে কিন্তু এরপরই তারা টিভির চ্যানেল বদলে ফেলে এবং বিবেকের তাড়া থেকে খুব তাড়াতাড়িই সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায়।
এই সমাজে যারা নানা সুবিধা , আরাম -আয়েশ ভোগ করছে এবং নানাভাবে সৌভাগ্যবান , তারা কখনো চিন্তা করে না কিভাবে অসহায় , কম-সৌভাগ্যবান মানুষদের দূর্দশা থেকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে ? তাঁরা বিশ্বাস করে এটা তাঁদের দায়িত্ব নয় ---যদিও তারা অনেক ধনী , অনেক ক্ষমতাবান এবং যথেষ্ট সুবিধজনক অবস্থানে রয়েছে এইসব হতভাগ্যদের সাহায্য করার জন্য।
অবশ্য স্বাচ্ছন্দ্য ও ক্ষমতাই এসব হতভাগ্যদের রক্ষার জন্য এবং এই পৃথিবীকে সুন্দর , বাসযোগ্য করে তোলার জন্য যথেষ্ট নয় ---যাতে রয়েছে শান্তি , ন্যায়-বিচার , আতœবিশ্বাস এবং কল্যাণ ।
এই পৃথিবীতে যদিও অনেক উন্নত দেশ রয়েছে , তবুও অনেক দরিদ্র দেশও রয়েছে যেমন ইথিওপিয়া যেখানে ক্ষুধায় রোজই মানুষ মারা যায়। এতে এটাই মনে হয় যে , কিছু জাতির সম্পদ ও ক্ষমতা পৃথিবীর সব মানুষদের ক্ষরা, অভাব এবং গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করতে যথেষ্ট নয়। বিবেকসম্পন্ন ধর্মভীরুর পক্ষেই সম্ভব সম্পদের প্রবাহ অভাবী ও হতভাগ্যদের দিকে প্রবাহিত করা। বিবেকসম্পন্ন হওয়ার একটাই উপায় ---ধর্মে বিশ্বাস । একমাত্র ধর্মবিশ্বাসীরাই বিবেকসম্পন্নভাবে জীবন কাটায়।
চূড়ান্তভাবে সব অবিচার , অত্যাচার , সন্ত্রাস , গণহত্যা , ক্ষুধা , অভাব এবং নির্যাতনের সমাধান একটাই ---পবিত্র কুরআনের মূল্যবোধের বাস্তবায়ন।
প্রথমত: এই ধরণের প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হয় ঘৃণা , বিদ্বেষ , স্বার্থপরতা , নির্বিকার মনোভাব ও নিষ্ঠুরতা থেকে। তাই এসব দূর করতে প্রয়োজন ভালবাসা , সহানুভূতি , ক্ষমা , ভদ্রতা , স্বার্থহীনতা , সংবেদনশীলতা , সহনশীলতা , বিচার-বিবেচনা এবং জ্ঞান । এসব সহানুভূতিসম্পন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি কেবলমাত্র তাঁদের মধ্যেই পাওয়া যায় , যারা জীবন কাটান পবিত্র কুরআনের আলোকে ---যার নির্দেশ সরাসরি এসেছে আমাদের স্রষ্টার কাছ থেকে --“ .........তোমাদের কাছে এসেছে আল্লাহ’র তরফ থেকে এক জ্যোতি ও একটি স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহ’র সন্তুষ্টি কামনা করে , এ কিতাব দিয়ে তিনি তাঁদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তাঁদের তিনি নিজ ইচ্ছায় বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে , আর তিনি তাঁদের পরিচালিত করেন সরল-সঠিক পথে ” ( সুরা মায়িদা ; ৫: ১৫-১৬) ।
অন্য আরেকটি আয়াতে আল্লাহ আমাদের জানান যে , মানুষের ইচছা /অনিচছা অনুযায়ী সত্যকে নির্ধারিত করতে দিলে অবশ্যই দোষ-ত্র“টি , সন্দেহের সৃষ্টি হবে --“ আর সত্য যদি তাদের কামনা- বাসনার অনুসারী হত, তবে অবশ্যই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত আসমান , জমিন ও এদের মধ্যবর্তী সব কিছুই। আমি তাদেরকে দান করেছি উপদেশ , কিন্তু তারা উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ” (সুরা মুমিনুন ; ২৩: ৭১ ) ।
আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন , তখন পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ শীতে ও ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে অথবা জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হচ্ছে । এ কারণে , বিবেকসম্পন্ন মানুষদের এ সব বিষয়ে চিন্তা করা দরকার এবং সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করা উচিৎ । তাঁদের এমনটিই মনে করা উচিৎ যেন এই কষ্টগুলি তাঁরা নিজেরাই অথবা তাঁদের একান্ত প্রিয়জনেরা পাচ্ছে। এসব কষ্ট ও অত্যচার দূর করতে আমাদেরকে আধ্যাতিœক ও জাগতিক উপায় ---এই দুইভাবেই কাজ করতে হবে।
আল্লাহ বিবেকবান ও বিশ্বাসী মানুষদের উপর এই দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন , “ আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা যুদ্ধ করছ না আল্লাহ’র পথে এবং সেসব অসহায়-দূর্বল নর-নারী ও শিশুদের জন্য যারা বলে : হে আমাদের প্রতিপালক ! এ জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিন , এখানকার অধিবাসীরা ভয়ানক অত্যাচারী ? আর আপনার তরফ থেকে কাউকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী করে দিন ( সুরা নিসা ; ৪: ৭৫ )।
কুরআনের আদেশের কথা বিবেচনায় আনলে আমরা নিজেদের দায়িত্ব বুঝতে পারি। মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ ব্যপার হলো , প্রথমে বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে যাতে নাস্তিকতার বিরুদ্ধে কুরআন ও হাদীসের মূল্যবোধ জয়ী হয়। দূর্বল , অসহায় , গৃহহীন এবং বিপন্ন মানুষদের রক্ষার একমাত্র উপায় হলো কুরআনের আদর্শ অনুসরণ করা --- যে নীতি সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য । সেজন্য কুরআনের বাণী প্রচার করা ও মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেয়া মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সামিল।
যারা নিজেদের বিবেকের কথা শোনে না , যারা অন্যের দু:খে নির্বিকার , যারা অর্থ- সম্পদ তুচ্ছ কাজে অর্থহীনভাবে খরচ করে ; যারা এতীমদের জন্য সহানুভূতি দেখায় না ; যারা নির্যাতিত নারী , শিশু , বৃদ্ধদের প্রতি উদাসীন ; যারা শুধু অনৈতিক ও অসুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট ও তাতেই খুশী ---- তাদেরকে অবশ্যই পরকালে এসবের জন্য দায়ী হতে হবে ।
সুরা মাউন
১। “ তুমি কি দেখেছ তাকে , যে ধর্মকে অস্বীকার করে ?
২। সে তো ঐ ব্যক্তি , যে ইয়াতীমকে রুঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়,
৩। এবং মিসকীনকে খাদ্য দানে উৎসাহিত করে না।
৪। অতএব , দারুণ দুর্ভোগ ঐ সব সালাত আদায়কারীদের ,
৫। যারা নিজেদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন।
৬। যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে ,
৭। এবং গৃহস্থালীর দরকারী ছোট-খাট সাহায্য দানে বিরত থাকে ( ১০৭ : ১-৭ )।
না¯িতকদের জীবন বড়ই উদ্দেশ্যহীন:
আমাদের এই সময়ে মানুষের জীবন বড়ই উদ্দেশ্যহীন। সবাই গতানুগতিক একটি জীবনধারাকে আদর্শ হিসাবে বেছে নিয়েছে । ভাল খাবে , ভাল চাকরী করবে , সুন্দর বাসায় থাকবে , বিয়ে করবে ইত্যাদি। এ ধরনের জীবন আদর্শের সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো আরো ভালভাবে বেঁচে থাকা ও সন্তানদের বড় করে তোলা। আমাদের সমাজের এই ধরনের লক্ষ্য ও আদর্শহীন জীবনকে আরো ভালভাবে বুঝতে হলে চারপাশে তাকান। বেশীরভাগ মানুষই বড়ই সীমিত দৃষ্টিভঙ্গীর ।
এমনো হয় , প্রিয় টিভি সিরিয়াল নিয়মিত দেখতে পারা বা জনপ্রিয় কোন সিনেমা উপভোগ করতে পারলেই অনেকের কাছে জীবনকে অর্থবহ মনে হয়। এ সব মানুষের কাছে জীবনের লক্ষ্য বলে যদি কিছু থাকে তা হলো কোন নামকরা ক্লাবের সদস্য হওয়া ও সমাজের গৎ বাঁধা স্রোতে ভেসে চলা।
অন্য এক দল রয়েছে যাদের মন-প্রাণ পড়ে রয়েছে ব্যবসা বা অর্থ রোজগারে। সারাটা জীবন ধরে তারা শুধু বাসা আর অফিস , অফিস আর বাসা ---এভাবেই দিনের পর দিন পার করে দিচেছ। একজন তাঁর যুবক বয়সে চাকরীতে ঢুকে হয়তো একই অফিসে পরের দীর্ঘ ৪০ বছর পার করে দিল। মাঝেমধ্যে সে শুক্রবার আসার অপেক্ষা করে। তবে তাঁর প্রধান লক্ষ্যগুলি হলো কোন ঝামেলা ছাড়াই নানা ধরনের করের হিসাব থেকে মুক্তি পাওয়া , সব রকমের ভাড়া দিতে সক্ষম হওয়া এবং সন্তানের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করা। দেশের বা পৃথিবীর কোন খবর খুব কমই তাকে উত্তেজিত করে। শুধুমাত্র যে ঘটনা তার ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলে ,সেটাই তার কাছে কোন অর্থ বহন করে। এছাড়া , অন্য কোন ঘটনা বা বিষয় নিয়ে সে চিন্তা করে না।
সে একই বৃত্তে আবদ্ধ জীবনকেই গ্রহণ করেছে। শুধুমাত্র তার বাণিজ্যের স্বার্থে আঘাত হানতে পারে ---- এমন বিষয় নিয়েই সে চিন্তিত। তার উদ্বেগ প্রকাশের জন্য সে টিভির কোন আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেয় অথবা রাতভর ব্যবসার সমস্যা নিয়ে কোথাও আলোচনা করে কোন সমাধান ছাড়াই। পরের দিন , নতুন দিনটি সে শুরু করে ঠিক সেভাবেই যেভাবে আগের দিনটি করেছিল।
কম বয়সী ছেলেমেয়েরাও এই একই ধরনের উদ্দেশ্যহীনতায় ভুগছে ; জীবনকে অর্থবহ করতে যা যা প্রয়োজন , সে সবের তাদের প্রচন্ড অভাব। এসব ছেলেমেয়েদের একটা বড় অংশ জানেই না তাদের জাতীয় নেতারা কারা। তারা কী ধরণের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে , তাদের সিদ্ধান্তের কী প্রভাব দেশের নিরাপত্তা , অর্থনীতি , শিক্ষা ও বিচার-ব্যবস্থার উপর পড়বে। বিশ্বের গূরুত্বপূর্ণ প্রধান প্রধান ঘটনা ও উন্নয়নের খবরে মনোযোগ না দিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে তুচছ , মূল্যহীন হৈ-হুল্লোড়ে। এর ফলে বিশ্বের প্রধান প্রধান ঘটনাগুলির গূরুত্ব বুঝতে পারার যোগ্যতা তারা অর্জন করতে পারে না।
তাদের কথাবার্তা প্রায়ই সীমিত থাকে কম্পিউটার গেমস , ইন্টারনেটে আড্ডা , ডেটিং , স্কুলের ছোট-খাট কোন বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে অহেতুক ঠাট্ট্র-তামাশা , পরীক্ষায় নকল করা , সামনে ছুটির দিনে কী মজা করা যেতে পারে তার পরিকল্পনা করা , নতুন ফ্যাশন বা ফুটবল খেলা নিয়ে আলোচনা ইত্যাদিতে।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা , ম্যাগাজিনের বিভিন্ন জরিপের বিষয় থাকে কিশোর-তরুণদের কাছে ভোট চাওয়া যে , জীবনের দেখা সেরা গোল কোনটি ? কে তার প্রিয় তারকা বা জনপ্রিয় মডেলের মত দেখতে ? কে জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকার মত গাইতে বা গিটার বাজাতে পারে ইত্যাদি। তথাকথিত আধুনিকতার স্রোতে তারা ভেসে চলে। নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানোর চিন্তা তারা করে না। একটি উদাহরণ : সুন্দর করে কথা বলার কৌশল শেখার চিন্তাও তরুণরা করে না বা এর গূরুত্বও তারা বোঝে না । কারণ তারা জানেই না মানুষের সাথে কী নিয়ে বা কিভাবে কথা বলতে হবে বা অন্যকে প্রভাবিত করার গূরুত্ব কতটুকু ।
এছাড়া , আজ তরূণ প্রজন্ম বই পড়তে চায় না। যে মানুষের জীবনে একটি উদ্দেশ্যে আছে সে জ্ঞানের আলোয় নিজেকে সমৃদ্ধ করে ; অন্যের দৃষ্টিভঙ্গীও জানার চেষ্টা করে। যাতে করে বিভিন্ন মতবাদের অস্তিত্ব ও মতবাদগুলির ভাল-মন্দ দিক সম্পর্ক তাঁর পরিষ্কার ধারণা থাকে। ভাল-মন্দ স¤পর্কে তাঁর মতামত পরিষ্কার । যে ব্যক্তি জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তেমন সচেতন নয় , এসব মতবাদগুলির অস্তিত্ব তার কাছে কোন অর্থ বহন করে না। সবচেয়ে বড় কথা , সে জানেই না যে এসব মতবাদের কোন অস্তিত্ব আছে এবং অন্য মানুষরা এসব নিয়ে কী চিন্তা-ভাবনা করছে।
আজকাল অনেক সমাজেই মানুষের মধ্যে বই ও পত্রিকা পড়ার ব্যপারে তীব্র অনীহা রয়েছে ; যদিও ট্যাবলয়েড পত্রিকা বা কাগজের বিনোদনমুলক কলাম যেখানে সাধারণত গুজব ও রগরগে খবরই বেশী ছাপা হয় এবং টিভির হালকা আনন্দের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানগুলির প্রতি পাঠক ও দর্শকদের মধ্যে প্রচন্ড চাহিদা রয়েছে।
অধিকাংশ মানুষেরই হাতে যদিও প্রচুর সময় রয়েছে -- টিভির সামনে বসে নাটক , সিনেমা দেখেই সেই সময়টা তারা খুশীমনে কাটিয়ে দেয় ---যদিও তাদের মনের ইতিবাচক বিকাশ ঘটাতে এটা কোন সাহায্য করে না। এটাই প্রমাণ যে , মানুষ কোন আদর্শ থেকে নিজেকে কিভাবে বঞ্চিত করছে এবং অধ:পতিত হচ্ছে।
জীবনে কোন উদ্দেশ্য না থাকা এবং বিশ্বের গূরুত্বপূর্ণ বিষয় ও ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অসচেতন থাকা মানবতার প্রতি হুমকিস্বরুপ। জীবনের প্রতি সুনির্দিষ্ট গভীর কোন লক্ষ্য আছে , এমন মানুষের চেয়ে লক্ষ্যহীন , আদর্শহীন , অর্থহীন জীবনের প্রতি অধিকাংশ মানুষের ঝোঁক বা কোন গভীর মূল্যবোধ না থাকাটা মানবতার প্রতি সত্যিকারের হুমকি। কেননা , যে সব নেতৃবৃন্দ বিপদ্জনক ও ক্ষতিকর মত ও আদর্শের বাস্তবায়ন করতে চায় , বাস্তবতা সম্পর্কে যারা সচেতন নয় , সেই ধরণের জনগণ কোন প্রশ্ন ছাড়াই বা কোন খোঁজ-খবর না নিয়েই সেই সব ক্ষতিকর নীতি মেনে নেয়। এ ধরণের অসচেতন মানুষদের বশীভুত রাখা , ইচ্ছামত পরিচালিত করা নেতৃত্বের জন্য অত্যন্ত সহজ কাজ।
অরাজকতার সমর্থক , দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে মানুষের মধ্যে ও নিজ দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ঘৃণা ও শত্র“তার জন্ম দেয়ার সময় এই নেতারা কোন প্রতিরোধের মুখোমুখি হয় না। একটি উদাহরণ দেয়া যাক্: একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনে বসে প্রচার চালিয়ে নৈরাজ্যবাদীরা ধীরে ধীরে তাদের নাশকতামুলক মতবাদগুলি ছাত্র-ছাত্রীদের মনে ঢুকিয়ে দিতে চেষ্টা করে। যারা এর কূফল সম্পর্কে সচেতন নয় , তারা নির্বিকারভাবে তাকিয়ে দেখবে যে তার ঠিক পাশের ছাত্রটিই এই সব বিশেষ মতবাদে দীক্ষা পাচ্ছে।
সে কিন্তু বুঝতেই পারছে না যে , তার এই পাশের জনই ধীরে ধীরে নৈরাজ্যবাদী ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দয়া-মায়াহীন এক অপরাধীতে পরিণত হচ্ছে। কিছুদিন পর সহজ-সরল , বিভ্রান্ত এই তরুণরাই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে নিজেদের পুলিশ , প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে সেই অস্ত্র ব্যবহার করবে। আবার কখনো যদিও বা সে এই সব বিপদ সম্পর্কে আাঁচ করতে পারে , তবুও সে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে নির্বিকার থাকে । কেননা , নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সে মোটেও সচেতন নয়। তাছাড়া , এ ধরণের সমস্যাকে দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করার যোগ্যতা ও মন-মানসিকতাও তার নেই।
আল্লাহ বিভ্রান্ত , আদর্শহীন মানুষ সম্পর্কে কুরআনে বলেছেন , “ তুমি তাদের ছেড়ে দাও, তারা খেয়ে নিক্, ভোগ করে নিক্ এবং অলীক আশা তাদেরকে ভুলিয়ে রাখুক , খুব তাড়াতাড়ি তারা ( প্রকৃত অবস্থা ) জানতে পারবে ” ( সুরা হিজর ; ১৫ : ৩ ) । একজন সচেতন মানুষ লক্ষ্য করেন যে , বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নতুন নীতির বিরুদ্ধে কোন একটি দল যেভাবে প্রতিবাদ করছে , তাতে ভাল ’র চেয়ে মন্দই হচ্ছে বেশী; এটা হচ্ছে ঐ বিশেষ দলটির দৃষ্টিভঙ্গীর পরিণাম ---এরা ভাল কাজের সমর্থনে এগিয়ে আসে না। অন্য একটি দল এসব নীতির ব্যপারে নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করে। এরা মানুষকে ভাল কাজের সমর্থনে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত না করে বরং বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলে এবং মানুষকে এটাই বলে যে নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে বিরোধীদের থেকে দূরে থাকতে।
অন্য কোন দল আবির্ভূত হয় ঘৃণা ও শত্র“তার প্রকাশ ঘটিয়ে । শ্লোগান দিয়ে , মিছিল করে , লাঠি ও পাথর হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা অন্য এক ধরণের ভয়-ভীতি ও আতংকের জন্ম দেয়। তাদের এসব প্রচেষ্টার কোন মুল্য নেই । তারা আল্লাহ’র নির্দেশ প্রচারে উৎসাহী নয় ও এমন সব কাজ করে যার সাথে কুরআনের আদর্শের কোন মিল নেই । আল্লাহ কুরআনে বলেছেন , দুনিয়ায় অবিশ্বাসীদের এসব কাজের কোন মূল্য নেই --- “ যারা তাদের রবকে অমান্য করে তাদের উপমা : তাদের কাজ ছাই -ভস্মের মত যার উপর দিয়ে ঝড়ের দিনে প্রবল বাতাস বয়ে যায়। যা তারা উপার্জন করেছিল তার কিছুই তারা কাজে লাগাতে পারবে না। এটাই হল ঘোরতর বিভ্রান্তি ” ( সুরা ইবরাহীম; ১৪: ১৮ )
এই ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় অবশ্যই মানুষের আছে। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে , তারা নিজেকে এমন মানুষে পরিণত করবে না যারা শুধু নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মানুষকে উৎসাহ দিতে হবে এমন মানুষে পরিণত হতে যে বা যারা অন্যের উপকারে আসে ; যারা শুধু নিজের স্বার্থ বা নিজের দেশের সমস্যা নিয়েই ভাবে না ; বরং পুরো বিশ্বের সমস্যা নিয়ে তারা চিন্তা করে।
আল্লাহ পুরো মানবজাতির জন্য যে ধর্মকে নির্বাচিত করেছেন এবং পাক -কুরআনে যা প্রকাশ করেছেন তাতে এই চুড়ান্ত উদ্দেশ্যের প্রকাশ ঘটে--- “ অতএব তুমি একাগ্র চিত্তে নিজেকে ধর্মে কায়েম রাখ; আল্লাহ’র প্রকৃতির অনুসরণ কর , যে প্রকৃতিতে তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন ; আল্লাহ’র প্রকৃতির কোন পরিবর্তন নেই ; এটিই সরল ধর্ম ; কিন্তু বেশীরভাগ মানুষ তা জানে না ” ( সুরা রুম ; ৩০: ৩০)।
আল্লাহ যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন , তিনি ধর্মকেও সৃষ্টি করেছেন -এমন ধর্ম যা মানুষকে পরম শান্তি ও পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। সেজন্য সত্য ধর্ম ছাড়া অন্য কোন মত বা দর্শন মানুষ যা চায় সেই নিখুঁত শান্তি দিতে পারে না। এ কারণে , নানা ধরণের ভুল ও বিভ্রান্তিমুলক মতবাদের যারা সমর্থক ও প্রচারক , তাঁদেরকে অবশ্যই জানানো দরকার যে , কেন তারা ভূল ? এই সম্পর্কে তাদেরকে তথ্য ও প্রমাণ দিতে হবে এবং ভুল মতের বদলে সত্য ধর্মের সন্ধান জানাতে হবে । যারা লক্ষ্যহীন , আদর্শহীন মানুষ এবং যারা বিভ্রান্তিমূলক মতের অন্ধ সমর্থক ও অনুসারী , তাদেরকে পবিত্র কুরআন সম্পর্কে জানানোটা অপরিহার্য । কেননা , কুরআনের দিক-নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে পারলে তখনই কেবল তারা বুঝবে যে এই পৃথিবী , এই জীবন ---এসব সৃষ্টি হয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে ।
কুরআনে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে বলেছেন, “ আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে , যেন তারা আমারই ইবাদত করে ” ( সুরা যারিয়াত; ৫১ : ৫৬)।
আমরা সবাই একদিন মারা যাব । মারা যাওয়ার পরেই আমাদের সত্যিকারের জীবন যা অনন্তকাল স্থায়ী , তা শুরু হয়। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের লক্ষ্য হবে এমন মানুষ হওয়ার জন্য সংগ্রাম করা যেমন মানুষ আল্লাহ’র পছন্দের এবং যাকে আল্লাহ তাঁর মেহমান হিসাবে বেহেশতের বাগানে ঢুকতে অনুমতি দেবেন।
আমাদের কাজ ও বিশ্বাস ঠিক করে দিবে আমরা কি চিরকাল আগুনের মধ্যে থাকবো না চির-সুন্দর বাগানে থাকবো। এ কারণে , যে সব মানুষ উদ্দেশ্যহীনভাবে সময় নষ্ট করে এবং পরকালের জীবনে কোন উপকারে আসবে না এমন মূল্যহীন পেশায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে ; যারা মনে করে এই পৃথিবীতে কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই তারা খামোকা বেঁচে আছে , এমন মানুষদেরকে জরূরীভাবে সতর্ক করে দিতে হবে ও তাদেরকে অসচেতনতা থেকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
বেহেশত লাভের জন্য আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনই এ দুনিয়ায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য । এটা জানার পর আমরা আমাদের চারপাশে যা ঘটছে , সে ব্যপারে আর নির্বিকার থাকতে পারি না। আমরা এখন জানি , যে কোন ঘটনাই আমাদেরকে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ এনে দেয় যদি আমরা সঠিক আচরণ করি।
চারপাশে বা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে কোন অন্যায় , অবিচার দেখলে ধর্ম বিশ্বাসীদের মনে তীব্র কষ্ট হয়। যেমন, যে শিশুর থাকার জায়গা নেই , রাস্তায় রাস্তায় শীতে -গরমে যে অনেক কষ্টে জীবন কাটায় , তার প্রতি আমরা একটা দায়িত্ব অনূভব করি। কেননা, আল্লাহ কুরআনে আদেশ করেছেন , “ তুমি ইয়াতীমের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করবে না ; আর ভিক্ষুককে ধমক দেবে না ”
( সুরা দোহা ; ৯৩ : ৯-১০)।
আমরা দরিদ্র , এতিমদের সাথে ভাল ব্যবহার করবো। আমরা চেষ্টা করবো এমন একটা উপায় বের করতে যাতে এই অসহায়দেরকে দুর্বিসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়া যায়। অবশ্য আমরা জানি যে , এসব অসহায় শিশুদের রক্ষার জন্য কুরআনের আদর্শে বিশ্বাসী শুধুমাত্র অল্প কয়েকজন বিশ্বাসীদের চেষ্টাই যথেষ্ট নয় । তাই , আমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ( দ: ) এর আদর্শ বিশ্বের সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
স্বার্থপরতার জন্ম আদর্শহীনতা থেকে :
লক্ষ্য ও মহৎ কোন আদর্শ না থাকলে মানুষ ও সমাজ হয়ে পড়ে একই ধরনের---স্বার্থপর ও নির্বিকার। সবাই তখন শুধু নিজ নিজ স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকে ; আর চারপাশে কী ঘটছে , না ঘটছে , সে ব্যপারে তাদের কোন মাথা ব্যাথা থাকে না এবং সেজন্য তারা কোন প্রতিক্রিয়াও দেখায় না।
যে মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে কেবল নিজের খুশীতে বেঁচে থাকা , সে তার চারপাশের ঘটনাগুলির মধ্যে কেবলমাত্র নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির দিকেই মনোযোগ দেয় , অন্য ব্যপারে থাকে একেবারে নির্বিকার। যেমন, যে দেশের সাথে তার ব্যাবসায়িক লেন-দেন আছে , সেই দেশে যুদ্ধ লাগলে সে মহাচিন্তায় পড়বে নিজের ব্যাবসায়িক ক্ষতির কথা ভেবে । সে মোটেও ভাববে না সেই অসহায় মানুষদের কথা যারা যুদ্ধে নৃশংসভাবে গণহত্যার শিকার হচ্ছে ;সে সব অসহায় শিশুদের নিয়ে সে চিন্তা করবে না , যারা যুদ্ধের নির্মম বলি হলো এবং সামগ্রিকভাবে যুদ্ধের কারনে সে দেশের যে দূর্বিসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে , সেটা নিয়েও তার কোন চিন্তা নেই । তার মনে এসব কষ্টের চিত্রের কোন প্রতিফলন ঘটে না।
টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে সে একবারো ভাবে না , কিভাবে এইসব অসহায় মানুষদের সাহায্য করা যায়। এটি অসংখ্য উদাহরণের মধ্যে মাত্র একটি যা বেশীরভাগ মানুষই খুব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে। রোজই টিভি আর পত্রিকা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অসহায় মানুষদের দু:খ -দূর্দশার কাহিনী প্রচার ও প্রকাশ করে যারা অসহনীয় কষ্ট ও সন্ত্রাসের মুখোমুখি । এসব অত্যাচার , বিশৃঙ্খলার মূলে রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ’র আদর্শের সমর্থক না হওয়া এবং স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসহীনতা ।
এটা প্যালেষ্টাইন হোক্ বা ইন্দোনেশিয়া , কসোভো , চেচনিয়া বা বিশ্বের যে কোন প্রান্তেই আমরা দেখি শিশু সন্তানের সামনে মা-বাবাকে নির্যাতন করা হচ্ছে অথবা সামান্য এক টুকরো জমি দখলের জন্য মানুষকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। একইভাবে আমরা এটা দেখে অভ্যস্ত যে , ছোট ছোট বাচ্চারা নিজেদেরকে বাঁচাতে বেপরোয়াভাবে পাথর ছুড়ে মারছে।
এসব ভয়ংকর দৃশ্য দেখেও অবশ্য ঘুমাতে যেতে মানুষের কোন অসুবিধা হয় না ও রোজকার অভ্যস্ত জীবনে ফিরে যেতে তাদের কোন কষ্ট হয় না --কেননা -- তারা তো ব্যক্তিগতভাবে এসব ঘটনায় কোন ক্ষতির শিকার হচ্ছে না। যেহেতু , এসব মানুষ বড় ধরণের কোন চিন্তা-ভাবনায় অভ্যস্ত না এবং মহৎ কোন আদর্শ ও বিচার-বিবেচনা বোধ এদের মধ্যে নেই , তাই এসব নিষ্ঠুরতায় এরা বিচলিত হয় না।
নির্মমভাবে যারা অত্যাচারিত হচ্ছে , তাদের জায়গায় নিজেকে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি এসব ঘটনার প্রতি যারা নিস্পৃহ থাকে , সেসব মানুষ কতটা বিবেকহীন। এসব মানুষরা যদি এমন পরিবেশে থাকতো যেখানে নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলা হয় , তাঁদের স্ত্রী , পুত্র , ভাই-বোন , মা-বাবা না খেয়ে থাকে এবং নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার ----যদি এমন হতো সে নিজে চরম দারিদ্রের মুখোমুখি ? -----যদি এমন হয় যে তার কাছে কোন টাকা-পয়সা নেই এবং অসুস্থ শিশু সন্তানের চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা সে করতে পারছে না ? এমন যদি হয় সে নিজের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হলো কোন অপরাধ না করেই ?---------------তখন যদি সে এমন কারো দেখা পায় যে এ ধরনের কোন অত্যচারের মুখোমুখি হয় নি এবং যে শুধু টাকা-পয়সার চিন্তায় বিভোর এবং যার ধারণা “ আমি কেন এসব মানুষকে বাঁচাতে যাবো ? ’’ ...........তখন কি তার মনে হবে না , এই লোকটি একদম বিবেকহীন , পাষাণ , অমানুষ ?
সহানুভুতিশীল ও বিবেকসম্পন্ন হওয়ার জন্য এটা জরুরী নয় যে একজনকে অত্যচার বা দু:খ ভোগ করতেই হবে। মানুষের দু:খ দেখলে এবং কুরআনের আলোকে তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করাই এজন্য যথেষ্ট। কিন্তু, বেশীরভাগ মানুষ কুরআন থেকে নিজেদের দূরে রাখে এবং সেজন্য বিবেকের তাড়নাও তাদের মধ্যে খুব একটা নেই।
আল্লাহ এ ধরনের স্বার্থপর , বিবেকহীন , নিষ্ঠুর স্বভাবের মানুষ যারা ধর্মে বিশ্বাসী নয় , তাদের কথা কুরআনে বলেছেন , “ নিশ্চয়ই মানুষ সৃজিত হয়েছে দুর্বলমনা-অস্থির চিত্ত, যখন তাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে , তখন সে হা-হুতাশ করে , আর যখন কোন কল্যাণ তাকে স্পর্শ করে , তখন সে কার্পণ্য করে ” ( সুরা মা’আরিজ ; ৭০: ১৯-২১) । যে সব মানুষ আল্লাহকে ভয় করে , তারা অসহায় মানুষদের প্রতি দায়িত্ব অনূভব করে । আল্লাহ বলেন , এই পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে ; এক দল সঠিক আর অন্য দল ভুল পথে আছে।
কুরআনে আল্লাহ বলেন , “ আর আমি তো তাকে দেখিয়ে দিয়েছি দু’টি পথ , তারপর সে দুর্গম পথ পার হয় নি ; তুমি কি জানো সে দুর্গম খাঁটি পথ কী? তা হল , কোন দাস মুক্ত করা , অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্য দান করা , ইয়াতীম আতœীয়কে অথবা মিসকীনকে ; তারপর সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হয় যারা ঈমান আনে , এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য্য ধারণের এবং দয়া-মায়ার। এরাই ডান দিকের সৌভাগ্যশালী। আর যারা আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখান করে , তারাই বাম দিকের , হতভাগা। তারা হবে আগুনের মধ্যে বন্দী।” ( সুরা বালাদ ; ৯০ : ১০-২০ ) ।
সঠিক পথের কথা পরিষ্কার বর্ণনা করা হয়েছে কুরআনে ; তাই যে সব বিবেকসম্পন্ন , সচেতন মানুষ আল্লাহ’র দয়া ও করুণার প্রত্যাশী এবং বেহেশতের বাগানে যারা যেতে চায় ; তারা অন্যায় -অত্যচারের প্রতি নির্বিকার থাকবে বা অসহায় মানুষদের ভবিষ্যতের কথা ভাববে না ---এটা হতে পারে না। সব সচেতন মানুষকে মনে রাখতে হবে , আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যে অত্যচার , অন্যায় , কূ-শাসন চলছে তাতে কোটি কোটি মানুষ কষ্ট ও সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে ।
কেউ কেউ বলে , কিছু নির্দিষ্ট মানুষ এসব অত্যচারের জন্য দায়ী ; আমি কেন এর দায় বহন করবো ? বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারে না । কেননা , পরকালে আল্লাহ’র কাছে অসহায় মানুষদের দু:খ-কষ্টের জন্য আমাদেরকে দায়বদ্ধ হতে হবে। যারা এমন সব মতাদর্শ প্রচার করে যাতে সন্ত্রাস , মানুষের প্রতি নিষ্ঠুরতার প্রসার ঘটে , তারা নিজেরা সরাসরি অত্যচার না করলেও অত্যচারীদের সাথে একই কাতারে তাদের স্থান। যারা এসব মত ও আদর্শের প্রচারের বিরোধীতা করে না , তারাও এসব দূর্দশার জন্য দায়ী। ধর্মবিশ্বাসীদের প্রতি অবিচল না থাকলে দায়িত্ব জ্ঞানহীন মানুষেরা এমন এক সমাজ তৈরী করে , যেখানে মানুষ ভাবে , আমার কোন দায়িত্ব নেই ; কোন কিছুর জন্য আমি কারো কাছে দায়বদ্ধ নই। এরা এমন ধরণের মানুষ , যারা নিজেদের স্বার্থ চিন্তাই আগে করে ; এবং নিজেরা কেমন করে সুন্দর করে বাঁচবে , সেই চিন্তাই তার কাছে প্রাধান্যই পায়।
বির্বতনবাদের তত্ত্ব যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বলে দাবী করা হয় ,সেটা ব¯ত্তবাদীতা , ভোগবাদীতা , ধর্মহীনতার জন্ম দিয়েছে । এই মতাদর্শ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও আদর্শহীন মানুষ তৈরী করছে। মানুষ মনে করছে তার কারো কাছেই কোন কৈফিয়ত দেয়ার নেই। বিবর্তনবাদ এটাই বলে যে , মানুষ বানরজাতীয় প্রাণীর উন্নততর প্রজাতি এবং মানুষ এ পৃথিবীতে ঘটনাচক্্ের এসেছে । মানব সৃষ্টি সম্পর্কে এ ধরণের ধারণা অন্য মানুষের জন্য কষ্ট স্বীকরা করা , অন্য মানুষকে কষ্ট থেকে বাঁচানো বা দু:খী মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ---এসব আদর্শ শিক্ষা দেয় না।
সবচেয়ে বড় কথা , বিবর্তনবাদ এটাই শেখায় যে , জীবন হলো সংগ্রাম , সেখানে যার শক্তি আছে সেই টিঁকে থাকবে । গরীব , দূর্বল এরা ধ্বংস হয়ে যাবে ; পুরো পৃথিবীতে মানুষ স্কুল , কলেজ , টিভি , পত্রিকা এবং চারপাশের মানুষ থেকে এই মতাদর্শ শিখছে।
এই মত দূর করতে এবং ক্ষমা , সহানুভূতি , সমমর্মিতা প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজন কুরআন ও সুন্নাহ’র আদর্শ মানুষকে জানানো । স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসহীনতা এই পৃথিবীতে ও অনন্তকালের জীবনের জন্য কী প্রচন্ড ক্ষতিকর ,তা সবাইকে বোঝাতে হবে। সব বিশ্বাসীর জন্য এটা একটা অবশ্য কর্তব্য।
যারা এই গূরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক দায়িত্ব পালন করে , আল্লাহ তাদের কল্যাণের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন...“ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও নেক কাজ করে , আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে , অবশ্যই তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে আধিপত্য দান করবেন , যেমন তিনি আধিপত্য দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্র্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের জন্য দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন ; এবং অবশ্যই তিনি তাদের ভয় -ভীতির পরে তা পরিবর্তিত করে দেবেন নিরাপত্তায়। তারা আমারই ইবাদত করবে , আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না । আর যারা অকৃতজ্ঞ , তারাই তো সত্যত্যাগী” ( সুরা নূর; ২৪: ৫৫ ) ।
আল্লাহ’র ভয় মানুষের মধ্যে না থাকলে কী হবে ?
দু’জন মানুষের কথা ভাবুন । একজন জানে যে , আল্লাহ’র সামনে তাকে একদিন হাজির হতে হবে এবং ভাল -মন্দ কাজের যথাযথ প্রতিফল তাকে পেতে হবে। আরেকজন মনে করে কারো কাছেই তার কোন জবাবদিহিতা নেই। এই দুইজনের আচার-আচরণের মধ্যে অবশ্যই অনেক তফাৎ থাকবে। আল্লাহকে যে ভয় করে, সে যে কোন অন্যায় থেকে নিজেকে দূরে রাখে এবং নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সব ধরণের অনৈতিক আচরণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবে। যার মনে আল্লাহ’র ভয় নেই, সে অকারণে বা তুচ্ছ ব্যক্তিস্বার্থে মানুষকে খুন করতেও দ্বিধা করবে না। আল্লাহ ও পরকালের ভয় থাকলে এমন কোন কাজ করার সাহস তার হতো না , যার কৈফিয়ত দেয়া পরকালে তার পক্ষে সম্ভব নয়।
পবিত্র কুরআনে হযরত আদম ( আ: ) এর দুই ছেলের কথা বলা হয়েছে। এই কাহিনী আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমন দুই ব্যক্তির প্রতি যাদের একজন আল্লাহ ভীরু , আর অন্যজনের মনে আল্লাহর সম্পর্কে ভয় নেই --“ তুমি তাদের শুনাও আদমের দুই ছেলের কাহিনী। যখন তারা কুরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কুরবানী কবুল হয়েছিল ও অন্যজনেরটা কবুল করা হয় নি। সে বললো : অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করবো। অন্যজন বললো : আল্লাহ কেবলমাত্র বিশ্বাসীদের কুরবানী কবুল করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার দিকে তোমার হাত প্রসারিত করো , তবুও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে আমার হাত প্রসারিত করবো না। কেননা , আমি তো ভয় করি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ” ( সুরা মায়িদা : ৫: ২৭-২৮ )।
যার মনে আল্লাহর ভয় নেই , সে চোখের পলক না ফেলে আপন ভাইকে মেরে ফেলে যদিও তার ভাইয়ের কোনই দোষ ছিল না। অন্যদিকে , এই হত্যাকান্ডের শিকার যে হলো সে হত্যার হুমকির মুখেও জানিয়ে দিয়েছিল যে সে নিজের ভাইকে খুন করার চেষ্টাও করবে না। আল্লাহ ভীরুদের সার্বিক চিত্র এরকমই।
যে সমাজে মানুষের মনে আল্লাহ’র ভয় কাজ করবে , সে সমাজে আল্লাহ যা পছন্দ করেন না যেমন , খুন , অত্যচার , অবিচার , বৈষম্য ইত্যাদি থাকবে না। ভয় ও লোভ ?? মানুষের নিষ্ঠুরতা ও অনৈতিক আচরণের জন্য অনেকাংশে দায়ী। অনেক মানুষই ভয় পায় যে তারা গরীব হয়ে যাবে বা তাদের ভবিষ্যতের কোন নিশ্চয়তা নেই । এসব ভয় থেকে ঘুষ খাওয়া , দূর্নীতি , চুরি , মিথ্যা সাক্ষ্য , পতিতাবৃত্তি ইত্যাদিতে অনেক মানুষ নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলে।
যে ব্যক্তির মনে আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে , সে সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা করে ; সব কিছুর উপরে আল্লাহকে স্থান দেয়। আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হবে , এমন যে কোন কাজকে সে তাই এড়িয়ে চলে। তার মনের গভীরে সে আল্লাহর ভয়কে বাড়িয়ে চলে । ক্ষুধা , দারিদ্র , মৃত্যু বা কোন দু:খ -কষ্টই তাকে আ
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:২৯