somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১২) - বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বাংলাদেশকে কিভাবে দেখে এবং আমার স্কুল জীবনে তার প্রভাব

০৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কানাডা এমন এক জায়গা যেখানে পৃথিবীর সব দেশ থেকে মানুষ আসে পড়াশোনা, ভ্রমন অথবা পার্মানেন্টলি থাকার জন্যে। এই কারনে কানাডায় থাকতে থাকতে আমার এই পৃথিবীর সব অংশের মানুষের সাথে মেশার, বন্ধুত্ব করার সৌভাগ্য হয়েছে। তাই শুধু কানাডিয়ানরা না বিশ্বের নানা দেশের মানুষ বাংলাদেশকে কেমন করে দেখে তা জানার সুযোগ হয়েছে। আজকের পর্বে থাকছে সেসব অভিজ্ঞতা।

আগের পর্বগুলো:
কানাডার স্কুলে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (২য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (৩য় পর্ব)
কানাডার স্কুলে প্রথম দিন (চতুর্থ পর্ব)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৫)
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৬) ১৮+
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৭) আমার ভারতীয়, পাকিস্তানী অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৮) কিছু ভারতীয় যে কারণে বাংলাদেশকে ছোট করে দেখে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ৯): কেন প্রবাসি বাংলাদেশি বাচ্চারা কানাডিয়ান/ভারতীয় হয়ে যাচ্ছে
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১০) সমকামিতা ১৮++
কানাডার স্কুলে এক দিন (পর্ব ১১) - কিশোরিবেলায় কানাডার প্রথম ভালোলাগা - এক গ্রিক দেবতারূপী সুদর্শন কানাডিয়ান ছেলে

গার্মেন্টস: তখন প্রায় দেড় বছর কেটে গেছে স্কুলে। আমি ওয়েল এডজাস্টেড। প্রথমবারের মতো T.A. হলাম একজন জার্মান বয়স্কা মহিলার আনডারে। তিনি E.S.L এর সাথে সাথে একজন সেলাই এবং রান্নার শিক্ষকও ছিলেন। তিনি সবসময় আমার পরে থাকা সালোয়ার কামিজের প্রশংসা করতেন। ডিসাইনগুলো খেয়াল করতেন। সেই ক্লাসে T.A. হিসেবে আমি সবাইকে ইংলিশসহ, অন্য সাবজেক্টেও এবং সর্বোপরি মানিয়ে নিতে হেল্প করতাম। আমি নিজেও নতুন থাকাকালে অনেক কষ্টে মানিয়ে নিয়েছিলাম, তাই ওরা কোন কোন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সহজেই বুঝে সলভ করে দিতাম। কয়েক মাসের মধ্যেই ওদের সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে গেলাম! টিচারও প্রচন্ড খুশি। আমি নিজেও খুব আনন্দ বোধ করতাম। মাথা উচু করে সারা ক্লাস ঘুরে ঘুরে সবার টেক কেয়ার করতাম। একবার আমার কাউন্সিলর কি একটা কাজে ক্লাসে এসেছিলেন এবং আমাকে দেখে বলেছিলেন, "তোমাকেইতো আসল টিচার মনে হচ্ছে!"

একদিন এক থাই মেয়েকে অংক দেখাচ্ছিলাম। এমন সময়ে টিচার আমাকে বললেন, "তোমার ড্রেসগুলো কি সুন্দর! তুমি স্কুলে আস কেন? এই ড্রেসগুলো পরে মডেলিং করলেই অনেক বড়লোক হয়ে যাবে, হাহা।" আমি নিজেও ওনার সাথে প্রচন্ডভাবে হাসতে লাগলাম। এমন সময়ে উনি বললেন, "এই ড্রেসগুলো কি তোমার মা বানায় না বাড়ি থেকে কিনে আনা? (কানাডায় হোম বলা হয় আপনার দেশকে, তো বাড়ি বলতে বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে)।" আমি বললাম দেশ থেকে কেনা, অনেকগুলো নিয়ে আসি। তিনি বললেন, "দামতো অনেক কম তাই না? ব্যাংলাদেশে শ্রমিকরাতো ন্যায্য দাম পায়না!" ওনার কথা ঠিক কিন্তু আমার ভাল লাগেনি। আমি বললাম ব্র্যান্ডের ওপরে নির্ভর করে। অনেক বেশি থেকে কম দামের মধ্যে হতে পারে।

কিন্তু উনি কমে ছাড়ার পাত্রী ছিলেন না। রানা প্লাজার ঘটনাটা খুব আলোচনায় এসেছিল। কানাডিয়ান নিউজ চ্যানেলগুলোতে গুরত্বের সাথে প্রচারিত হয়েছিল খবরটা। সেটা নিয়ে ক্লাসে ছোটখাট একটা লেকচার দিলেন। বললেন বাংলাদেশে নিয়মনীতি তেমন মানা হয়না, অপরাধীদের শাস্তি কারাপশনের কারনে হবে না। দারিদ্র চরমে থাকায় শ্রমিকেরা মুখ বুজে সব সহ্য করছে আরও কত কি। বললেন তো বললেন এমন এক ক্লাস মানুষের সামনে যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে, এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে এসব নলেজ নিয়ে নিজের দেশে ফিরে যাবে! আমার চোখে প্রায় পানি এসে গিয়েছিল, কোনভাবে সামলে মেয়েটাকে অংক দেখিয়ে দিলাম। আমি ভাবলেশহীনভাবে নিশ্চুপ হয়ে সব কথা শুনেছিলাম। প্রতিবাদ করিনি কেননা সত্য হৃদপিন্ড খামচে ধরলেও তার সাথে লড়াই করে পারা যায়না। এমন কিছু কঠিন দিন দেখেছি যা জীবন ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। সেদিনটাও তেমন একটা দিন ছিল। সেদিনের পরে ঐ ক্লাসে মাথাটা উচু করে আর চলতে পারতাম না। না কেউ কিছু বলত না, আমারও বাংলাদেশি হয়ে কোন লজ্জা নেই। কিন্তু ভয় পেতাম আবার কোন কথায় কি উঠে যায়, শুধু নিরবে নিজের কাজটুকু করে অন্য ক্লাসের অপেক্ষা করতাম!

এটা একটা সোসাল স্টাডিস ক্লাসের ঘটনা। টিচার ছিলেন ইতালিয়ান কানাডিয়ান। কানাডায় বেশিরভাগ সমাজবিজ্ঞান ক্লাসে টিচার এসে প্রথম পাচ মিনিট বিশ্বে এবং কানাডায় হওয়া আলোচিত ঘটনাগুলো বলতে থাকেন, এবং সবার ওপিনিওন চান। এসব পরীক্ষায় আসবে না, শুধু সবার আউট নলেজ বাড়ানোর জন্যে। তখন টার্গেট কানাডায় ভাল বিসনেস করতে না পেরে উঠে গেল। উনি সেটা নিয়ে কথা বললেন। আলোচনা বাড়তে বাড়তে অন্যান্য ফেমাস শপগুলো নিয়েও কথা উঠতে লাগল। এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে উনি একসময় বললেন বাজারে বেশিরভাগ প্রডাক্টইতো Made in China, or Made in Bangladesh. শুনে কি ভীষন ভাল লেগেছিল আমার! আমার দেশ রপ্তানিতে চায়নার পাশাপাশি! একদিন বাজারে গিয়ে খেয়াল করে দেখেছিলাম আসলেই যেকোন গার্মেন্ট মেড ইন বাংলাদেশ! বিশ্বাস করুন আমি শার্ট প্যান্ট পরিনা কিন্তু এখানে দোকানে গেলে শুধুমাত্র Made in Bangladesh ট্যাগ দেখার জন্যে বারবার মেন ক্লোদিং সেকশনে ঢু মেরে আসি, হাহা। বিদেশের মাটিতে Made in Bangladesh এর ছোট্ট ঐ ট্যাগটা বুকের ভেতরে যে কিরকম ঝাকি দেয় তা শুধু প্রবাসিরাই জানেন।

ভারতের অংশ? আমি তখন এক বছর পার করেছি, মোটামুটি এডজাস্টেড। E.S.L ক্লাসের স্টুডেন্টই ছিলাম তখনো। টিচার ছিলেন মি:এম। ইনি যে কি সুন্দর ছিলেন! হাইট এত যে মাথা উচু করে কথা বলতে হত, নীল চোখ, টোল পরা হাসি! হলিউডের কোন হিরোই ওনার কাছে কিছু না। ওনার নামের মানে জিগ্যেস করলে বলতেন "হ্যান্ডসাম!" কত সুদর্শন হলে এধরনের জোক করা যায় বুঝতেই পারছেন। E.S.L ক্লাসে অনেকেই নতুন দেশে, ইংরেজী না পারার কারনে মনমরা হয়ে বসে থাকে। টিচারেরা তাই আপ্রান চেষ্টা করেন সবাইকে ফ্রি করতে। স্টুডেন্টদের সাথে দুষ্টুমি করেন, মজা করে গল্প করেন যাতে ইংলিশটা বেটার হয়। এভাবেই কথা বলতে বলতে ওনার সাথে আমার সম্পর্কটা অনেক মজার হয়ে গেল। ইভেন একে অপরকে টিজ করতাম আমরা।

আসল গল্পে আসি এখন। টিপ আমি ভীষন পছন্দ করি। বাইরে গেলে ম্যাচিং টিপ পরবই। বাংলাদেশে স্কুলে ডিসিপ্লিনের কারনে পড়তে পারতাম না। তবে কানাডায় নিয়মিত টিপ পরে স্কুলে যেতাম। আমার এক ব্রাজিলিয়ান সহপাঠি বলল, "তোমার কপালের ট্যাটুটা খুব সুন্দর!" আমিতো হাসতে হাসতে শেষ। টিপকে বলে ট্যাটু! ওকে খুলে দেখালাম যে পার্মানেন্ট কিছু না, আর এটাকে টিপ বলে। কথায় কথায় ওর আগ্রহ দেখে বললাম তোমার জন্যে কালকে আনব। আপনারা বুঝতে পারছেন না যে আমি কত মহানুভতার পরিচয় দিয়েছিলাম সেদিন ;)। টিপ আমার জানের জান একটা জিনিস যা কানাডায় সব জায়গায় পাওয়া যায়না। দেশ থেকে অনেকগুলো কিনে নিয়ে সামলে খরচ করি! কিন্তু বন্ধুর জন্য বলিদান দিয়ে একপাতা টিপ নিয়ে গেলাম। ও পরল, একদম বাংগালি মেয়ের মতো লাগছিল। ওকে টিপ দিয়ে আমি রুমের আরেক কর্নারে গিয়েছি অন্য বন্ধুদের হাই বলতে। নিজের টেবিলে ফিরে এসে আমার মাথায় বাজ পড়ল।
একি! মি: এম টিপ পরে বসে আছেন আমার চেয়ারে, আর আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন! আমি কোমরে হাত দিয়ে বললাম এটা কি করেছেন, এটাতো মেয়েরা পরে! হাসতে হাসতে বললেন, "ক্যানাডায় এটা ছেলেরাও পরে।" আমি বললাম কবে থেকে, উনি বললেন, "এখন থেকে!" এখনো সেই ভীষন সুখের সময়গুলো লিখতে লিখতে হাসি পাচ্ছে!

ব্রাজিলিয়ান মেয়েটাও আমাদের খুনসুটি দেখে হাসছিল। এসময় বলল, "ইন্ডিয়ান কালচার আসলেই অনেক সুন্দর!" আমি মাথা ঘোরালাম, বললাম ইন্ডিয়া কোথা থেকে আসল এর মধ্যে? বলল, "তুমি ইন্ডিয়ান না?" আমি বললাম এটা আবার তোমাকে কে বলল? আমি তো বলেছিই বাংলাদেশের আমি। ও বলল "Yeah! Bangladesh is a place of India, right?" আমার রাগে টিপটা খুলে নিতে ইচ্ছে করছিল! এতদিন আমার সাথে মিশে এই শিখল! কঠোর কন্ঠে বললাম, "Bangladesh is not a part of India." মি: এম বললেন, "ওও ঠিক আছে ঠিক আছে, ও এখন জানে। বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার অংশ না এবং ইন্ডিয়ার চেয়ে অনেক বেটার! ঠিক আছে?" আমি বললাম হ্যা ঠিক আছে! আমার রেগে যাওয়াটা কি ভীষন চাইল্ডিশ ছিল এখন বুঝি। ছোট বয়সে অত সেল্ফ কন্ট্রোল ছিলনা। তবে এখনো কাছের বন্ধুরা যাদের কাছে বাংলাদেশের অনেক গল্প করি তারা বাংলাদেশ ভারত গুলিয়ে ফেললে রাগে মাথার তার ছিড়ে যায়!

এটা আরো বেশ কবার ফেস করতে হয়েছে। আমাকে কেউ আমার দেশটা কোথায় জিগ্যেস করলে ইন্ডিয়ার পাশে বলিনা, বলি সাউথ এশিয়ায়। আর যদি বলেই ফেলে ইন্ডিয়ার মধ্যে তবে বলি যে স্বাধীন দেশ। এর চেয়ে বেশি তো কিছু করার নেই!

পপুলেশন: এটা অনেকবার শুনেছি। বেশিরভাগ সময়েই বাংলাদেশকে অনেক ভীরের দেশ মনে করার হয়। সবাই বলে ও ব্যাংলাদেশ! অনেক ক্রাউডি না? "Small country, but large population?" বাংলাদেশ থেকে বললে সাধারনত এটাই প্রথমে শুনতে হয়। আমি বলি বড় শহরগুলো ক্রাউডি কিন্তু গ্রাম, ছোট শহরগুলো কম। ওরা মাথা ঝাকায় কিন্তু কোচকানো মুখ দেখে বুঝতাম কল্পনায় কত ভিড় দেখছে! তবে একটা ভাল এক্সপেরিয়েন্সও আছে!
একবার E.S.L. ক্লাসে আমরা চারকোনা টেবিলে তিনজন বসে আছি। আমি আর দুইজন ব্রাজিলিয়ান। এর মধ্যে ছেলেটা বলল, "তোমাদের দেশেতো অনেক মানুষ না?" আমি বললাম তুমি কি করে জানো? ও বলল, "ব্রাজিলে বইয়ে পড়েছি।" আমি বললাম হ্যা বাংলাদেশ বিশ্বের দশটি জনবহুল দেশের মধ্যে পরে। ও ইমপ্রেসড চেহারা নিয়ে বলল, "ওয়াও। তোমরা তো তাহলে অনেক পাওয়ারফুল।" ও কি ভেবে পাওয়ার আর জনসংখ্যাকে এক করল আমি জানিনা। তবে এত মানুষের শ্রম, মেধা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আসলেই বাংলাদেশ অনেক পাওয়ারফুল হবে!

নারী ক্ষমতায়ন: সাইন্স ক্লাসের ঘটনা এটা। কানাডায় টিচারের পাশাপাশি কিছু স্পেশাল নিডস এসিসট্যান্টও থাকেন। তারা যেসব শিক্ষার্থীর কোন শারিরীক/মানষিক সমস্যা বা লার্নিং ডিসওর্ডার থাকে তাদের হেল্প করেন। আমরা তিনজন বসতাম একসাথে। আমি, আমার বন্ধু "বি" এবং "বি" এর বন্ধু "ডি"। "বি", "ডি" দুজনেই কানাডিয়ান ছিল। "ডি" এর লার্নিং ডিসঅর্ডার ছিল বিধায় এসিসট্যান্ট মিসেস "জে" আমাদের কাছেই থাকতেন। আমার সাথেও কিভাবে যেন খুব ভাব জমে উঠল। বয়স্কা কানাডিয়ান মহিলা অনেক হাশিখুশি থাকতেন সবসময়। অনেক গল্প করতাম ওনার সাথে। ওনার ব্যবহারে বুঝতাম আমাকে বেশ পছন্দ করেন। একবার বলেছিলেন, "Your parents have raised you well!"

একদিন কথায় কথায় উনি বললেন, "উইকেন্ডে আমি এক ফেস্টিভ্যালে ভারতীয় মুভি দেখলাম যেখানে ভারতে নারীরা কেমন অসহায় তা দেখানো হয়েছে। মুভিটি কি দেখেছো?" আমি দেখিনি বললাম। উনি বললেন, "Women are so down in India. চলন্ত বাসে এক মেয়ে ধর্ষিত হল। কি ভীষন খারাপ!" আমি আর কি বলব? শুনছি শুধু। বাংলাদেশের অবস্থা জানতে চাইলেন।
আমি বললাম আমাদের দেশের প্রাইম মিনিস্টার একজন মহিলা। বাংলাদেশের ৫০% মহিলা যারা অনেক হার্ডওয়ার্কিং এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। উনি থামালেন, "ব্যাক আপ ফর এ সেকেন্ড। প্রাইম মিনিস্টার মহিলা?" আমি বাংলাদেশের কিছু বিষয়ে বিদেশীদের মুগ্ধ হতে দেখেছি। কিন্তু সেদিন প্রথমবার একদম চোখ কপালে তোলা মুগ্ধতা দেখলাম। আমি উৎসাহিত হয়ে আমাদের আরো সব গুরুত্বপূর্ন পলিটিকাল পদে মহিলাদের থাকার কথা বললাম। আশেপাশের সবাইও অবাক চোখে তাকাচ্ছে। না ওদের অবাক হবার কারন এটা না যে তৃতীয় বিশ্বের এক দেশে নারী ক্ষমতায়। ওরা অবাক হয়েছিল ভেবে পৃথিবীতে এমন দেশও আছে! অনেক উন্নত দেশে এখনও কোন মহিলা প্রাইম মিনিস্টার হননি। কানাডার ১৪৭ বছরের ইতিহাসে মাত্র একবারই মহিলা প্রাইম মিনিস্টার হয়েছেন! পুরো পৃথিবীতে এখন মাত্র ২২ টির মতো দেশে নারী ক্ষমতায়। এটা বিরাট গর্বের ব্যাপার। কেউ যদি কখনো বাংলাদেশকে ছোট করে কিছু বলে তবে এটা মোক্ষম অস্ত্র। চুপ হয়ে যাবে। কেননা আপনি যার সাথে কথা বলছেন চান্স খুব কম যে তার দেশের প্রধান একজন নারী!

ক্রিকেট: আবারো সেই E.S.L ক্লাস এবং মি: এম। ওনার টেবিলে বসে আছি এবং পা দোলাচ্ছি। আর উনি চেয়ারে বসে আমার সাথে গল্প করছেন। কি ভীষন ফ্রি ছিলাম বুঝতেই পারছেন!
উনি আমাকে বললেন, "তোমার দেশ হকি কেমন খেলে? আমার দেশ আবার হকিতে ১ নাম্বার।" বলেই দুষ্টু দুষ্টু চোখে তাকালেন। উনি ততদিনে বুঝে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ আমার উইক পয়েন্ট, এটা বলে চটানো/টিজ করা যাবে। আমিও বুঝে গিয়েছিলাম চটলে ক্ষতি, উনি জিতে যাবেন। A good humor deserves another! আমিও বললাম ক্রিকেটে তোমাদের দেশের যা শোচনীয় অবস্থা তাতে হকিতে নাম্বার ওয়ান না হয়ে উপায় আছে? আমার দেশ ক্রিকেটে তোমার দেশের চেয়ে অনেক বেটার। উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন, "আমি জানি, That's true." উনি কিভাবে জানেন জিগ্যেস করতে বললেন, "তোমাদের দেশের এক ক্রিকেটার তো ক্রিকেটে নাম্বার ওয়ান, কি যেন নাম স্যাকিব সামথিং!" আমি বললাম সাকিব আল হাসান। উনি তখন মনে পরায় পরিষ্কার কন্ঠে বলে উঠেছিলেন "Oh! yes shakib al hasan!" ভাল লেগেছিল সেদিন কেননা কানাডায় ক্রিকেট বিখ্যাত না তাও কিছু কিছু কানাডিয়ানের কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কারনে বিখ্যাত! তবে উনি E.S.L টিচার ছিলেন বলে এতটা জানতেন, এভারেজ কানাডিয়ান এতটা জানে বলে মনে হয় না। আমার হিউমার মি: এম এর সাথে থেকে থেকে বেটার হয়েছিল নিঃসন্দেহে। এমনি কি আমার রিপোর্ট কার্ডে কমেন্ট বক্সে লিখেছিলেন, "ও হার্ডওয়ার্কিং এবং আমি ওর সেন্স অফ হিউমার অনেক এনজয় করেছি!" হাহা রিপোর্ট কার্ডে এধরনের কমেন্ট কয়জন স্টুডেন্ট পায়?

এটা ক্রিকেট নিয়ে কানাডার আরেকটা এক্সপেরিয়েন্স একজন ভারতীয় বাস ড্রাইভারের সাথে। টিকিট দেখানোর সময় আমাকে জিগ্যেস করলেন আমি কোন দেশের? আমি বললাম বাংলাদেশের। উনি সাথে সাথে বললেন, "আমি সাকিব, মুশফিককে চিনি! হ্যা! কি দারুন ওরা।" আমি মুচকি হেসে সিটে এসে বসে পরলাম। আর প্রচন্ড ভাল লাগা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। একসময়ে যে দেশের কিছু মানুষ আমাদের ক্রিকেটারদের নিয়ে হাসাহাসি করত, তারাই আজ ডেকে এনে প্রশংসা করছে!

বিশ্লেষন: যে প্রশ্ন দিয়ে শুরু করেছিলাম তাতে ফিরে যাচ্ছি। বিদেশিরা বাংলাদেশকে অনেকভাবেই দেখে। অনেকে বাংলাদেশকে চেনে না, বাংলাদেশকে ভারতের অংশ, গরিব, আধুনিক দাসত্বে বন্দি শ্রমিকের, দূর্যোগের দেশ মনে করে। অনেক বিদেশী মুখের ওপরে বলেও ফেলে এসব। প্রবাসি/হবু প্রবাসিদের বলছি বিব্রত হবেন না।
আমাদের দেশটা নতুন; সেদিনই তো জন্মাল! আর অনেক ঝড় ঝাপটাও সামলেছে। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, দারিদ্র থেকে শুরু করে ক্রিকেটের মাঠেও আমাদের বিভিন্ন কূটচালের শিকার হতে হয়েছে। আমাদের অনেক কষ্ট করে একেকটা ইট গাথতে হয়েছে। লিটারেলি একেকটি ফুলের জন্যে যুদ্ধ করতে হয়েছে। অন্য দেশের মানুষ হয়ত বুঝবে না আমাদের বীরত্বগাথা। আমরা কোথা থেকে কোথায় এসে দাড়িয়েছি তাতো শুধু আমরাই জানি। একসময় বাংলাদেশ আমেরিকানদের দানকৃত সেকেন্ড হ্যান্ড ক্লথস পড়ত। আমাদেরকে বটমলেস বাসকেট বলা হত। আজকাল আমেরিকানরাই মেড ইন বাংলাদেশ পরিধান করে। আমাদের ইকোনমিক গ্রোথ প্রতিবছর সাফল্য মেইনটেইন করে চলেছে গার্মেন্টস এবং প্রবাসি রেমিট্যান্সে। আমাদের ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে হাসাহাসি হত। আজকাল কোটি টাকায় তারাই পিসল, আইপিএলে দাওয়াত দিয়ে খেলতে নিয়ে যায়।

পসিটিভলি অনেক বিদেশীর কাছে বাংলাদেশ এখন শক্তিশালী গার্মেন্টস, ক্রিকেট, সাউথ এশিয়ার রাইসিং পাওয়ার হিসেবেও পরিচিত। আর আজকাল এমন কমদিনই যায় যখন বাংলাদেশকে একদমই চিনতে পারেনা। সারাবিশ্বে বিভিন্ন বাংলাদেশি কমিউনিটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বাংলাদেশকে চেনানোর জন্যে। রেপুটেশন মেরামতের কাজ মনেপ্রানে করে যাচ্ছেন। ২০/৩০ বছর আগের চেয়ে বেটার পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে but still a long long way to go! And we are gonna make it for sure! স্বপ্ন দেখি সারাবিশ্ব একদিন বলবে জয় বাংলা! জয় লাল সবুজ!
আসলে সব প্রবাসীই একেকটা ব্র্যান্ড এম্বাসেডর অফ বাংলাদেশ বিদেশের বুকে। আমাদের এজন্যে ভদ্র হয়ে চলাটা অনেক বড় দায়িত্বের মধ্যে পরে। আমার মায়ের সেই কথাটা দিয়ে শেষ করছি, "যদি দেশে খারাপ কিছু কর ফ্যামিলির বদনাম, আর যদি এখানে খারাপ কিছু কর দেশের বদনাম।"

ব্লগের অন্য প্রবাসিরা কমেন্ট বক্সে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে আমিসহ অন্যান্য পাঠকেরাও অনেক খুশি হবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১
২৮টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×