somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১১) - মায়ের বিদেশী ক্লাসমেট্স, কালচার শক এবং বাবার জেলাসি!

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের সারসংক্ষেপ: অনেক বুঝিয়ে মা কে ক্লাসে নেওয়া হলো। প্রথম দিন বেশ কঠিনই গিয়েছে মায়ের জন্যে কেননা সে ভাষা বুঝতে পারেনি। তবে বাবার কোন অসুবিধা হয়নি। মা আর যেতে চায় না ওখানে, বাড়ির কেউও জোর করবে না সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পূর্বের পর্বগুলোর লিংক:
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১) - প্রথমবার প্রবাসে প্রবেশের অনুভূতি!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (২) - জীবনের গল্প শুরু হলো এইতো!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৩) - সুখে থাকতে কিলায় ভূতে! (কুইজ বিজেতা ঘোষিত)!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৪) - বাংলাদেশ ভার্সেস কানাডার দোকানপাট, এবং বেচাকেনার কালচার! (কুইজ সলভড)!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৫) - কেমন ছিল কানাডিয়ান স্কুলে ভর্তি হবার প্রস্তুতি পর্ব?!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৬) - কানাডিয়ান স্কুলে ভর্তির ইন্টারভিউ অভিজ্ঞতা!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৭) - কানাডার স্কুল ভ্রমণ এবং দেশীয় মফস্বলের স্কুলের টুকরো স্মৃতি!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৮) - কানাডার প্রথম খারাপ অভিজ্ঞতা!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৯) - আবারো দুটিতে একসাথে, প্রেমের পথে... :`> (কুইজ সলভড)
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১০) - লাভ বার্ডসের প্রথম কানাডিয়ান ক্লাসের অভিজ্ঞতা....
পূর্বের সিরিজের লিংক: কানাডার স্কুলে একদিন এবং কানাডার স্কুলে একেকটি দিন

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ক্লাস থেকে আসার পরে মায়ের কথা শুনে কেউই আশা করেনি যে মা আর ক্লাসে যাবে। মা যেহেতু একদমই এনজয় করেনি, আমি আর বাবাও মাকে অস্বস্তিকর পরিবেশে ফেলতে চাইনি। তাই মেনে নিলাম খুশি মনেই।

সকালবেলায় সেদিন উঠতে একটু দেরী হয়ে গেল কিভাবে যেন। উঠে দেখি মা বাইরে যাবার পোশাক পরে আছে। বেশ অবাক হলাম! কি ব্যাপার? কোথাও যাবে নাকি? বাবা তো ক্লাসে যাবে, সে একা কোথায় যাচ্ছে?

অবাক হতে হতে হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখি, মা ক্লাসে যাবার ব্যাগটিতে দুপুরের খাবার, খাতা কলম ভরছে! আমি অবাক! মা যাচ্ছে ক্লাসে! কেমতে? বাবা জোর টোর করেনি তো?
আমি জলদিই বাবার কাছে গেলাম, বললাম, বাবা, মা ক্লাসে যাচ্ছে, রাতে তো বলল যাবে না আর।
বাবা: কি জানি, আমি তো কিছু বলিনি, তোর মা নিজে থেকেই যাচ্ছে! এতদিন সংসার করেও তার মন মেজাজ আর বুঝলাম কোথায়?

মা বেশ স্মার্টলি বাবার সাথে ক্লাসে বের হয়ে গেল, আমার আর বাবার অবাক চেহারাকে পাত্তাই দিল না। আমরাও তাকে ঘাটালাম না।

সেদিন মা কে নিয়ে ভীষন চিন্তা হচ্ছিল। গত ক্লাসের ওয়ার্কশিটটা ঠিকমতো পূরণ করতে পারেনি জার্মান টিচারের একসেন্ট না বোঝার কারণে। আজকে নিশ্চই সেটা নিয়ে টিচার ফিডব্যাক দেবে! ইশ! মাকে কি যে বলবে!

এই চিন্তায় পায়চারি করতে করতে তাদের অপেক্ষা করতে শুরু করলাম! নিয়ম মতো ঘড়ির কাঁটা থেমে গেল, কেননা অপেক্ষা যখন তীব্র হয়, পৃথিবীর সকল ঘড়ি একসাথে নষ্ট হয়ে যায়! তবুও, আস্তে আস্তে তাদের আসার সময় হয়েই এলো।
বাবা মা এলো, আগের দিনের মতোই বেশ ক্লান্ত লাগছিল দুজনকে। আমি সাথে সাথেই জিজ্ঞেস করে ফেললাম, মা ক্লাস কেমন হলো?

মাও জলদি জলদি বলতে লাগল, "এই, জানিসস, উনি সবাইকে ওয়ার্কশিট ফেরত দিলেন। কোন মার্ক নেই, কমেন্ট নেই। কাউকে কিছু বলেনওনি! ওটা একটা প্র্যাকটিস ছিল, উনি সবার লেখা পড়ে সবার ইংলিশ লেভেল এবং কানাডিয়ান জব এনভায়রনমেন্ট সম্পর্ক জ্ঞান দেখতে চেয়েছিলেন। এতে ওনার সুবিধা হয়, উনি বুঝে যান পুরো ক্লাস কোন পর্যায়ে আছে, কিভাবে শেখাতে হবে! কাকে বেশি সাহায্য করতে হবে, কে অন্যদেরকে সাহায্য করতে পারবে! আমারটা পড়ে মনে মনে নিশ্চই ভেবেছে আমি কিছু পারিনা! কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম সবার সামনেই অপমানিত হব, তা হতে হয়নি। উনি যখন এসব কথা বলে নতুন লেকচার শুরু করলেন, মনে হলো প্রাণে বাঁচলাম।"

আমি বললাম, আজও কি ওয়ার্কশিট দিয়েছে?
বলল, "না, আজ শুধু নোট তুলতে বলল! আজ সবদিক দিয়ে বেঁচে গেছিরে!"
আমি বললাম, যাক, আলহামদুলিল্লাহ! যাও যাও, তোমরা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও!
মা বলল, "যাচ্ছি মা!"
মা এমনি আদর করে মা বলে, কিন্তু তখন আমি যে টোনে মা বলি, সে টোনে বলল! আমার সাথে ফাজলামি! ভেংচি কেটে নিজের ঘরে চলে এলাম!

সারাদিনের চিন্তা শেষে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। জীবনও অদ্ভুত! যেসব জিনিস নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি চিন্তা করি সেখানে সব ঠিক থাকে, আর ভাবনার বাইরের কোন জায়গা থেকে বিপদ এসে থমকে দাড়ায়! লাইফ ইজ এ জার্নি হোয়েআর উই শুড এক্সপেক্ট দ্যা আনএক্সপেক্টেড!

এভাবে আরো কয়েক ক্লাস গেল।

প্রতিদিন মা ক্লাস করে এসে বাড়িতে গল্পের ঝুলি নিয়ে বসত।

একদিন বলল, "আল্লাহ জানিসসস! সেই বয়স্ক মহিলা টিচারের কথা বলেছিলাম না? কোন লজ্জা শরম নেই! এক ক্লাস মানুষের সামনে বলল, "ওয়ান্স আই ডেটেড এ গাই হু ওয়াজ আ লয়ার! হি ওয়াজ আর্নিং টনস অফ মানি, বাট ডিডন্ট লাভ হিজ জব! তাই আমার কাছে তাকে রিচ মনে হয়নি, জীবনে সবসময় এমন ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া উচিৎ যা তোমার মনকে খুশিতে পূর্ণ করবে!"
মা চোখ মুখ কুঁচকে বলল, "ভাবতে পারিস? বুড়ি মহিলা কবে কোন বয়ফ্রেন্ড ছিল সে গল্প করছে মানুষের সামনে! এখানে ইয়াংদের নাহয় লজ্জা শরম নেই, অর্ধেক পোশাক পড়ে, বড়রাও এমন হবে?"
এরপরে সেই মহিলা যতবার তার কোন না কোন বয়ফ্রেন্ডের কথা বলেছে গল্পে গল্পে, মা বাড়িতে এসে ততই বিরক্তি ঝেড়েছে। মা শুধু হিসেবে করত ওনার কতগুলো বয়ফ্রেন্ড ছিল!

আমি মায়ের কথাবার্তায় হেসে কুটিপাটি হতাম!

তবে মা টিচারকে ভীষন পছন্দও করত। উনি মাকে খুব আদর করতেন। মা ওনার কথা মোটামুটি ভালোই বুঝত, উনি নাকি সবার সুবিধার্থে ধীরে ধীরে বলতেন। কিছু কিছু শব্দ না বুঝলে বাবা তো ছিলই ট্রান্সলেটরের কাজ করার জন্যে।

এতো গেলো টিচারের কথা! এরপরে ক্লাসমেটদের কথা বলি তারই মুখে।
একদিন বলল, "আমাদের ক্লাসের কানাডিয়ান ছেলে হিউয়ের কথা বললাম না? বাচ্চা একটা ছেলে! ক্লাসে সবাইকে জিজ্ঞেস করা হলো কে কেমন জব চায়, সে বলে সুপারস্টোরের ম্যানেজার হওয়াই তার আলটিমেট গোল! তুই ভাববব! এইটুক ছেলে, কোথায় পড়াশোনা করবে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে, না তার জীবনের এইম হচ্ছে স্টোর ম্যানেজার হওয়া!
শ্রমের মর্যাদা দেওয়া ভালো, তাই বলে এ আবার কেমন ভাবনা? শোন, তোর স্কুল শুরু হলে, এসব ছেলেদের সাথে মিশবি না! যারা পড়ুয়া হবে, জীবনে ভালো কোন গোল থাকবে শুধু তাদের সাথে মিশবি। পড়ুয়া ছেলেরা সব দেশেই ভালো হয়!"

আমিও মাথা নাড়লাম মায়ের কথায়। এটা ভেবে চিন্তাতেও পড়ে গেলাম যে গার্লস স্কুল থেকে কোএডে কিভাবে সামলাব? তাও আবার ভিনদেশী ছেলে! স্কুলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসতে আসতে নানা ধরণের দুঃচিন্তা ও ভয়ে আমার প্রানের পানি শেষ হয়ে আসতে লাগল!

মা বলে যেতে লাগল, "এই জানিসস, ক্লাসে একটা থ্যাবড়া চেহারার মেয়ে আছে, কোরিয়ার, তার শ্বাশুড়ি কোরিয়ায় থাকে, ওদেশ থেকেই ফোনে ফোনে সংসার কন্ট্রোল করে! সবসময় ওকে এটা সেটা এডভাইস দিয়ে কাজে খুঁত ধরে! বদ মহিলা!"
আমি ভাবছি, একতো আমার মায়ের ভাঙ্গাচূড়া ইংলিশ, তারপরে সেই এশিয়ান মহিলার ইংলিশও নিশ্চই সুবিধার না, কিন্তু দুজনে মিলে এসব মেয়েলি বিষয় নিয়ে ঠিকই কথা বলে ফেলল! আর ভাবার বিষয়, সব দেশেই কি শ্বাশুড়ি বউ সম্পর্কে কেউ একজন ভিলেন হয়ই?

দু একটি বান্ধবী জুটিয়ে ফেললেও, পড়াশোনা মায়ের জন্যে স্ট্র্যাগল ছিল। বিশেষ করে জার্মান টিচারের ক্লাসে মা কিছুই বুঝতে পারতনা, আর তিনিও নাকি মায়ের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতেন। যদিও আমার মনে হয়, এটা মায়ের ভুল ধারণা। সে যাই হোক, মা ক্লাসটিকে যমের মতো ভয় পেতো।

কিন্তু কোনভাবে দিনগুলোকে ম্যানেজ করে নিচ্ছিল। এবারে বাবার কথা বলি। পড়ুয়া মানুষ, ক্লাস পড়াশোনা কোনটাই সমস্যা না। তার সমস্যা অন্যখানে!

একদিন বাবা মা বাড়িতে এল, বাবাকে দেখলাম বেশ রাগ রাগ চেহারা করে আছে, আর মা হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
আমি মায়ের দিকে ইশারা করলাম কি ব্যাপার?
মা বলল, "আর বলিস না, টিচার আজ চার জন তিন জন করে গ্রুপ করে দিল। আলোচনা করতে হবে কোন একটা টপিক নিয়ে। তোর বাবা আর আমি আলাদা গ্রুপে পড়লাম। আমার গ্রুপে কানাডিয়ান ছেলেটা, আর একটা জাপানিজ ভদ্রলোক ছিল। তার ইংলিশ কিন্তু বেশ ভালো। সে আমার পোশাকের খুব প্রশংসা করল। খুব ভালো ব্যবহার। আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি ম্যারিড কিনা, আমি তোর বাবাকে দেখিয়ে বললাম আমার হাসব্যান্ড। উনি বলল, ও! গ্রেইট কাপল! আমি ওনার কথার প্রতিউত্তরে হেসে দিলাম। ব্যাস তোর বাবা রাগ করে বসল!"

বাবা বলল, "আরেহ! আমি কি বুঝিনা তোর মাকে কেন ম্যারিড কিনা জিজ্ঞেস করল? তোর মা কি কচি খুকি? তার বয়সী নারী তো ম্যারিডই হবে। শয়তান ব্যাটা, অন্যের বউয়ের দিকে নজর দেয়! আর তোর মাও তো ভালোই হাসে সবার কথায়, আর আমার কথায় মেজাজ দেখায়!"

মা এসব কথা শুনে বাবার সাথে কিছুক্ষন ঝগড়া করল, আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "এ বয়সে এসব ছেলেমানুষি ভালো লাগে বল?"(মায়ের হাসি দেখে বুঝলাম, খুববব ভালো লাগে!)

অন্য পোশাক ও সাজগোজে থাকা স্ট্রং ব্যক্তিত্বের অধিকারী আমার মা ক্লাসে সবার কাছে বেশ কদর পেত। আর বাবা সেটাতে টিনেজসুলভ জেলাসি ফিল করত!

কয়েকদিন বেশ ভালোই গেল বাড়িতে স্বাধীন আমার। কিন্তু একটা পর্যায়ে বোরড হয়ে গেলাম। ঘরের মধ্যে কতক্ষন একা একা ভালো লাগে? ইউটিউবে যত গান, অনুষ্ঠান আছে সব বোধহয় শোনা ও দেখা হয়ে গিয়েছে। একদিন অপেক্ষা করছি বাবা মা আসার। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল, তাদের আসার নাম নেই! খুব একা লাগতে লাগল, সাথে সাথে চিন্তাও হচ্ছিল। ফোন করতেও ভয় হচ্ছিল, যদি ক্লাসে থাকে? এক্সট্রা কোন ক্লাস শুরু হলো নাকি! ভেবে ভেবে ফোনও করতে পারলাম না।
চারিদিকে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে ব্যাস, সেসময়ে বাবা মা এলো। দেরীর কারণ তাদের হাত ভর্তি বাজারের ব্যাগ থেকেই বুঝে গেলাম! ক্লাস থেকে সোজা সুপারস্টোরে চলে গিয়েছিল।
মা এসে বলল, "সরি মা, কিছু বাজার না করলেই চলত না, তাই দেরী হয়ে গেল!"
আমি বললাম, আরেহ মা ব্যাপার না। যাও ফ্রেশ হও তোমরা, রেস্ট নাও।

সেদিন রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবলাম কালকের দিনটিও আজকেরই রিপিটেশন হবে! সারাদিন ঘরের মধ্যে পায়চারি, আর গান শোনা! এভাবে ভালো লাগে? ইশ! যদি এক্সাইটিং কিছু করা যেত! ভাবতে ভাবতে বিদ্যুৎ এর ঝলকের মতো মাথায় একটা মারাত্মক দুষ্টু আইডিয়া খেলে গেল! বেশ রিস্কি, কিন্তু একঘেয়েমি কাটানোর জন্যে মরিয়া আমি যেকোন কিছুই করতে পারি! উত্তেজিত মনে ছক কাটতে শুরু করে দিলাম.....

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শেষকথা: আমার বাবা মায়ের একঘেয়েমি সংসার জীবন কানাডায় গিয়ে হুট করে অন্যরকম প্রেমে ভরে ওঠে। জাফর ইকবাল স্যার বলেছিলেন, যে উনি ওনার ওয়াইফের কাছে কৃতজ্ঞ, কেননা তিনি স্যারের দেশে আসার সিদ্ধান্তে সাপোর্ট করেছিলেন যেটা সাধারণত প্রবাসী নারীরা করেন না।
স্যারের কথা ঠিক, প্রবাসে অনেক পুরুষ আছেন, যারা দেশের টানে মাঝেমাঝে বলে ওঠেন যে চলো দেশে ফিরে যাই, কিন্তু নারীরা সেটা চান না! না চাইবার অনেক কারণ থাকে। একটা বড় কারণ, দেশে স্বামী নামক মানুষটি বিদেশে এসে বন্ধু হয়ে ওঠে। অন্য দেশের আধুনিক চিন্তার কলিগ ও বন্ধুদের দেখাদেখি, দেশীয় ছেলেদের মধ্যেও পরিবর্তন আসে। এখানে তো সবাই সব কাজ করে ভেবে রান্নাঘরে সাহায্য করে। এখানে তো মেয়েরা ঘরে বসে থাকে না ভেবে বউকে কাজে উৎসাহ দেয়। মানে পরিপূর্ণ জীবনসঙ্গী বলতে যা বোঝায় তা হয়ে যায়। আমাদের দেশের পারিপার্শ্বিকতায় বউয়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা মানে তার গোলাম হয়ে যাওয়া এবং সেটা ভীষনই লজ্জার ব্যাপার! এমনও হয় যে স্বামীর কোন সমস্যা নেই বউ চাকরি করলে, কিন্তু পরিবারের চাপে কিছু বলতে চাচ্ছেনা। কিন্তু বিদেশে এসে দেশী ছেলেরা খোলামনে নিজের ভালোবাসা, সম্মান ও সাপোর্ট দিয়ে যায় বউকে। এই পরম সুখ কোন মেয়ে হারাতে চায়না। দেশে থাকলে বাপের বাড়ি, শ্বশুড় বাড়ির নানা তৃতীয় হাত জেনে না জেনে অনেক সমস্যা তৈরী করে। পরিবারের সবার মন জুগিয়ে চলতে গিয়ে মেয়েটি নিজের অস্তিত্ব ভুলতে বসে। আর পুরুষ বাড়ির কাজ করবে না, নারী বাইরের কাজ করবে না এমন স্টেরিওটাইপেও দুজনের দৈনন্দিন জীবনে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। পথচলার সাথী, অন্য পথে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। এসব ছোট ছোট কারণ ছাড়াও রাস্তাঘাটে বাসে শরীরে পুরুষের হাত, অফিসে ভালো করলে, "নিশ্চই বসকে অন্যভাবে খুশি করে সাকসেস পেয়েছে" এমন অত্যাচার ও অপমানে অনেকে মেয়েরই দেশীয় জীবনের ওপর থেকে ভক্তি শ্রদ্ধা উঠে যায়। এন্ড ইউ ক্যান্ট ব্লেম দেম! ইউ জাস্ট ক্যান্ট!

না, আমি বলছিনা যে আমাদের দেশে ভালো শ্বশুড়বাড়ি, ভালো স্বামী কোন মেয়ের ভাগ্যে জোটে না। জোটে, অনেক মেয়ে ভীষন সুখে আছে। আবার অনেক মেয়ে সব পেয়েও কদর করেনা, নিজেই নিজের সংসারে ঝামেলা তৈরি করে। এসব মানলাম, তবে ওভারঅল কিছু ব্যাপারে আমরা পিছিয়ে আছি। সেজন্যেই নানা বাংলাদেশী নারী ভিনদেশী মাটিতে বেশি স্বস্তি অনুভব করছে। সমস্যা আছে কি নেই সেটা নিয়ে মিছে তর্ক না করে, মেনে নিয়ে পুরুষ নারী সকলে দেশীয় মূল্যবোধ, চিন্তা ও চেতনার জায়গাটি এত মজবুত করুক যেন প্রবাসে থাকার পরে দেশের টানে দেশে ফিরতে মনে ভয় জেগে না ওঠে! অথবা প্রবাসে যাওয়ার প্রয়োজনই না পরে!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

পাঠকের জন্যে কুইজ: আপনাদের কি মনে হয়? দুষ্টু বুদ্ধিটা কি ছিল?
এর উত্তর কমেন্টে নয়, পরের পর্বে আসবে!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৫
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×