somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘গুহা’ উপন্যাসের রিভিউ...

২২ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রারম্ভে লিখে যাই পথরেখাঃ পথে নামতে গেলে ঠিকানা জানা থাকা ভালো। খেই হারানোর সম্ভাবনা কমে যায়। যদিও অজানার মধ্যে আবিষ্কারের আনন্দ আছে, রোমান্টিকতা আছে, এ্যাডভেঞ্চার আছে! যদি অচেনার কুয়াশায় জড়াতে জড়াতে হঠাৎ আলোর জ্বলকানী দেখে আনন্দে মনের পেখম খুলে মানতে চান তবে অহেতুক প্যাচালে কান দিয়ে লাভ নাই। আপনি গুহায় প্রবেশ করুন... এইসব পথরেখা শুধু তাদের জন্য যারা পড়ার আগে পরম্পরায় খোঁজ চান, শিকারীর চোখে পদচিহ্নের ছাপ দেখে দেখে পৌছে যেতে চান শিকারের কাছে! গুহায় প্রবেশের আগে পথচিত্র আঁকতে আপনি 'মেমসাহেব'এর সঙ্গী হতে পারেন, আপনার জন্য 'সবিনয় নিবেদন'। আবারো বলে রাখি এই পথ রেখা শুধু তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা পরম্পরা খুঁজতে চান, ঐতিহ্যের নিরিখে বোধ নির্মাণ করেন, অগ্রজের পথ নির্দেশনাকে মনে করেন মানদন্ড। গুহার সাথে পত্র উপন্যাসের যে মিল তা শুধুমাত্র আঙ্গিকগত। উপস্থাপনার ঢঙ, ভাষার দক্ষতা, বর্ণনার ধারাবাহিকতা, চারিত্রের প্রকাশ ভঙ্গি একান্ত সানাউল্লাহ সাগরের। গুহার স্বাতন্ত্র্যতা হচ্ছে পরম্পরা সূত্র না জেনেও গুহায় প্রবেশ করতে, আবিষ্কার করতে, গুহাবাসী হতে আপনার অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নাই, গুহার টান আপনাকে জ্ঞানের দিকে নিয়ে যাবে!

ঘটনার ঘনঘটায় হারিয়েছি খেইঃ 'গুহা'র অবয়ব চিঠির আড়ালে চতুষ্কোণ প্রেমের জাল। যেই জাল শুভ্রর আশ্রয়ে লেখক নিজেই ছড়িয়েছেন। ঋতু,সেতু,রূপা,পরী, স্বাতীর পিছনে ছুটতে ছুটতে শেষ আশ্রয়ে শুভ্র কার কাছে ফিরবে? যদিও শুভ্রকে সবচেয়ে বেশি শান্ত করতে পেরেছে স্বাতী! কিন্তু শেষ চাওয়া তো মায়ের কাছে! যে মা তাকে মা ডাক শেখার আগেই ফেলে চলে গেছে। বাবাকে ঘিরে তার আবর্তন কিন্তু একটা সময়ে এসে আমরা ঠিক বুঝতে পারিনা কিভাবে কেন্দ্রহীন হয়ে পড়ছে চরিত্রগুলো। উপলব্ধি করতে পারি শেষ পর্যন্ত মানুষ কোথাও ফিরতে পারেনা, নিজের ভেতরে পাক খেতে খেতে, স্মৃতির ভেতরে ডুবতে ডুবতে বর্তমানের আয়নায় ভেসে উঠে চমকে যাই। আমার আমিকে না চিনতে পারার বেদনায় কেটে যায় একটা জীবন! 'গুহা'র নায়ক কে? শুভ্র নাকী শুভ! নায়িকা কে?সেতু,ঋতু, রূপা, পরি না স্বাতী! আমরা একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টে যাই, খেই হারিয়ে ফেলি। শেষ পর্যন্ত কাউকেই প্রধান চরিত্রে বসাতে পারিনা! চরিত্রের আধিক্য, নাম ও একাধিক সম্বোধন ঘটনাকে জটিল করে তোলে। পদ, পদবী মনে রেখে চরিত্র মনে রাখা কঠিনতর! কিন্তু ভাষার প্রাঞ্জলতা ঘটনাকে আটকে দেয় না। সামনে চলতে চলতে খুলে যায় জট। জট খুলতে খুলতে আমরা গুহার ভেতরে আটকে পরি। পরিশেষে আবিষ্কার করি 'গুহা'র নায়ক হচ্ছে নিয়তি আর নায়িকা মায়া। মায়া মোহে নিয়তি গাট বাঁধতে চেয়েছে, নোঙর ফেলতে চেয়েছে যে কোন হৃদ বন্দরে কিন্তু শুধুই ছুটে চলা। যদিও ঘটনার বর্ননায় স্বাতীতে কিছুটা থিতু হতে দেখা যায়। সংসার, অর্থনৈতিক ভিত ঘরে ওঠে কিন্তু অন্তঃসার শূন্যতা টের পাই! স্বাতী চরিত্রটাকে বড্ড বেশি কল্পনা মনে হয়, নিজেকে আড়াল করার উপলক্ষ্য মনে হয়। ঋতু,সেতু,রূপার কাছ থেকে আড়াল। এমনকি নিজের শান্তনার আড়াল মনে হয় স্বাতীকে। স্বাতী চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক জীবনের নির্বাণলাভ করতে চেয়েছিলো। কল্পনা বাস্তবতার কাছে হারিয়ে যায় বলেই আশ্রয় খুঁজতে ফিরে আসতে হয় পুরনো প্রেমিকার নামে। শেষ ভরসায় শুধুই মা!

অপ্রাপ্তির বায়োডাটা লিখে যাই মহাকালঃ পাঠ উপলব্ধিতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বায়োডাটা লিখে রাখতে পারি। লিখতে পারি আত্মতৃপ্তির ঢেকুর! মহাকাল লিখে রাখা যায়না। সমালোচক মহাকালের লিজ দিয়ে দেন কাউকে কখনো, তবে তার বাস্তব সত্যও আমাদের জানা আছে! ইদানিং দেখা যাচ্ছে মোটা অংকের টাকায় এইসব বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে! আখেরে কি হয় জানা যায়নি তবে কালে এইসব সার্টিফিকেটে মুড়িমুড়কি বিক্রি হচ্ছে! রেডিও-টেলিভিশন-খবরের কাগজে কনডমের বিপরীতে লেখকের হাসিমুখ। এই সব বিজ্ঞাপনের বাইরে 'গুহা' আবিষ্কার করতে হয়! প্রথম পাঠে চমকে যেতে হয়! ভাঙনের ঘোরে শেষ পৃষ্ঠায় এসে আবার উল্টে নিতে হয় পাতা, মনের পাতায় লিখে রাখতে হয় ঝড়! এইসব ঝড় কতদূরে পৌঁছে যাবে...অঙ্কে কাঁচা! ভালো লাগা, ভালোবাসা লিখে যাই মহাকাল...

লেখা ঃ Anindo Dip
সূত্র ঃ রকমারি ডটকম
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:০৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×