নগেন কাকা আব্বার বাল্যবন্ধু। উপজেলা সদরে তার মিষ্টির দোকান। পরিবারের কোনো আয়োজনে আব্বা বলেন, 'নগেনের কাছ থেকে মিষ্টি আনিস। নগেন আমার ক্লাসমেইট।' রাস্তায় নগেন কাকার সাথে দেখা হলে তিনি আমাদের পরিবারের হাল হকিকত জানতে চান। আব্বা দাদার একমাত্র সন্তান। তার কোনো ভাই নেই। আব্বা যেমন তাকে ভাই মনে করেন আমরাও তাকে কাকাই মান্য করি।
অনেক বছর আগের কথা। তখন আমার কলেজ জীবন। হইহুল্লোর আর মঞ্চনাটকে দিন কাটে। মাঝে মধ্যে কবিতার বুনো ভূত। একবার দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে মণ্ডপে যাত্রা হবে। আমিও তাদের দলে যোগ দিলাম। এলাকার মুরব্বিরা আব্বার কাছে বিচার নিয়ে গেল। আব্বা কঠিন পদক্ষেপ নিলেন। ঘর থেকে আমার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দিয়ে তার মুসলমানিত্বের প্রমাণ রাখলেন। সেবার অনেকদিন রিহার্সেল করেও শেষ পর্যন্ত আমার মঞ্চে ওঠা হয়নি।
পরের বছর আবার পূজা এলো। আবার যাত্রা দলে নাম লেখালাম। নগেন কাকা আব্বার বন্ধু এই সাহস নিয়ে রিহার্সেলে গেলাম। ঠিক করলাম যে করে হোক এবার যাত্রা করবোই। এবারও পারলাম না। সমাজ, সংস্কার ও পরিবারের কাছে পরাজিত হলাম।
আমি আব্বার কোনো দোষ দেই না। আব্বার কী এমন সাহস যে সমাজের বিরুদ্ধে যেতে পারে! আমি জানি—ছেলে মুসলমানিত্বের পরিচয় ভুলে গেলে আব্বার জন্য জামে মসজিদের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে!
নগেন কাকা—আমার আব্বার ভালো বন্ধু। রাস্তায় দেখা হলে আমরা তাকে সালাম দেই....
১৫ অক্টোবর ২০২১ খ্রি., ধানমন্ডি, ঢাকা।
#সানাউল্লাহ_সাগরের_কবিতা
#দুর্গাপূজা
#সাম্প্রদায়িক_সম্প্রীতি
#হিন্দু_মুসলিম_দাঙ্গা
[ ছবি ইন্টারনেট থেকে নেয়া...]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৪১