অনেকদিন পর আসলাম সামুতে। অনেকদিনটাও কম নয় নেহায়েত, ৪ বছর ২৯ দিন পর!!! নানান কাজের ব্যস্ততায় আর আসা হয় না এদিকটায়, আর চারিপাশের ভার্চুয়ালের জয়জয়কারে আসল মানুষের বড্ড অভাব এখন। ইদানীংকালে মানুষজন খুব ভালো বুঝে গিয়েছে, কেউ সামনাসামনি আর সত্যি কথা বলে না, তাই খুব গোপনে পরিচিত মানুষদের বলে অপরিচিত থেকে সত্যটা জিজ্ঞেস করতে!!! আর মানুষও সুযোগ পেয়ে অ্যানোনিমাসলি যত কথা আছে বলে দেয়।
আমি তো আরিফ আর হোসাইন ভাইয়ের মতো এতো ভালো লেখক নই, যে যখন যেমন ইচ্ছা লিখবো। মাঝেমাঝে যদিও ইচ্ছে জাগে কিছু লিখি নাহয়, হয়তো মনের আবেগে ৫-৭ লাইন লিখেও ফেলিঃ
" আমি কিন্তু লাইফে একদমই রিস্ক নেই না,
মাঝে সাঝে হাতের ঝাল মেটাই পকেটমার
আর রাস্তাঘাটের ঘনধোলাইয়ে হাত লাগিয়ে,
আমি কিন্তু কোন রিস্কই নেই না,
কেবল চুপচাপ ঝিমুনির ভানে রাস্তায়
বাসের সিটে পাশের মহিলার গায়ে হাত ছোঁয়াই"
তারপর লেখাগুলো ব্যাকস্পেসে চাপ পরে মুছে যায়, কিন্তু লেখাগুলো আর আলোর মুখ দেখে না। চারপাশের গরম হাওয়াতে কখনো সখনো ভাবি গলার স্বর গাড় করে কিছু সত্যি কথা বলবো। কিন্তু কি ভেবে যেনো সেসবও বলা হয় না। বিশ্ব রাজনীতি আর দেশের রাজনীতি যে একনয়, তা অনেকেই ভাবে না। আর গরিব মানুষগুলো এর ওর মুখের কথা শুনে সেসবই সত্যি ভাবে, বাবু মতো লোকটা তো নিশ্চই না জেনে কিছু বলবে না।
সেদিন গ্রামে যাওয়ার পরে ভ্যানওয়ালা মামা বলতেসে, মামা জিনিসপত্ররের এত্তো দাম! কিভাবে যে কি চালামু বুঝি না। ওদিকে আমেরিকা ব্যাটা যুদ্ধ লাগাইয়া সব জিনিসপত্রের দাম বাড়াইয়া দিসে, আমাগো সরকার আর কি করবো কন! তার জ্ঞানের কথা শুনে হাল্কা শীতের বিকালের আকাশের দিক তাকাইয়া বাতাস উপভোগ করতে লাগলাম। তার জ্ঞানটুকুতে সে যে শান্ত্বনা পাচ্ছে, তা নিয়েই সে খুশি থাকুক না, আমার কি দরকার তার খুশির মাঝে বাগড়া হওয়ার?
এখনকার ডিজিটাল যুগের পোলাপান মায়ের পেট থেকে বের হয়েই ডিজাটাল হয়ে যায়, কথায় কথায় এই কথাটাই বলে তাদের বাবা-মায়েরা। কিন্তু তারা কখনো এটা বলে না যে, ছোট থেকেই বাচ্চাকে ভুলাইতে তারা মোবাইলে ভিডিও, কার্টুনসহ দুনিয়ার সকল জিনিস দেখায়। আর প্রেগনেনসি টাইমে মা নিজেও মোবাইলেই মুখ গুঁজে থাকে। তেতো হলেও কথা কিন্তু সত্য। কিছুদিন আগে কোন এক কোম্পানি এরকমই একটা এড বানিয়েছিলো, বাবা-মা তার সন্তানকে কোর্টে হাজির করে সারাদিন মোবাইল নিয়ে থাকায়, তখন সন্তান বলে তোমরাই তো খাওয়ানোর জন্য আমার হাতে মোবাইল তুলে দিসো, আমাকে ভুলিয়ে রাখতে মোবাইল আর টিভি ব্যবহার করসো, আর এখন এসব নিয়েই কমপ্লেইন করতেসো!!! আসলেই আমরা কমপ্লেইন করা জাতি, কিন্তু কখনো চিন্তা করি না, কমপ্লেইন করে সময় নষ্ট না করে বরং তার সমাধান খুঁজলে হয়তো সমস্যাটা নিয়ে আর বসে থাকা লাগতো না।
মোবাইলের কথা বলতে বলতেই মাথায় আসলো, আমরা যে পরিমাণে ডিজিটাল ডিভাইস ইউজ করি বিভিন্ন এন্টারটেইনমেন্টের জন্য, আমাদের ব্রেণে এতে ডোপামিন নিস্বঃরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ আসে না, যতক্ষণ ওইসব এন্টারটেইনমেন্টে থাকি ততোক্ষণেই ভালো থাকা হয়, এর বাহিরে লাইফ হয়ে যায় একঘেয়েমি, আর তখনি তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ বলে বলে সোশ্যাল মিডিয়া ভরে ফেলে মানুষ, আর তা হচ্ছে "ডিপ্রেশন"। তবে তারা কখনো ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা আর স্যাডনেস বা ভীষণ রকম মন খারাপ একই জিনিস নয়। কেউ যদি ডিপ্রেশনে থাকে, তবে তার পক্ষে দৈনন্দিন কাজকর্ম করাটা কখনোই সম্ভব হয় না। আসলে ডিপ্রেশন বলা তরুণদের বেশিরভাগই মূলত এই ডোপামিনের স্বীকার। তবে সবাই যে সেইম তা না।
চলতে চলতে চারপাশ থেকে প্রতিনিয়তই নানান রঙের মানুষ দেখি, খুব দ্রুতই চারপাশ বদলে যাচ্ছে। আমরা বলি সময় বদলায়, আসলে কথাটা ভুল, হবে মানুষ বদলায়। মুনীর চৌধুরী তার রক্তাক্ত প্রান্তর নাটিকায় ঠিকই বলেছেন
"মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়"
আর সাথে আমি যুক্ত করি সময়ে সময়ে বদলায়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২২