ভারতের ওই মুসলমান ভদ্রলোকের বাসায় গরুর মাংস আছে, এমন গুজবে বাড়ি এসে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল হিন্দু। তবে পুলিশ বলছে, নিহতের বাসার ফ্রিজে ছাগলের মাংস ছিল। গরুর না। কথা হচ্ছে, ভদ্রলোকের বাসায় গরুর মাংস পাওয়া গেলেও কি এ হত্যাকাণ্ড বৈধ হয়ে যেত?
সবচেয়ে মর্ম যতনার বিষয় হচ্ছে, ভারতের রাজধানী দিল্লীর নিকটবর্তী, উত্তর প্রদেশের এক গ্রামে এ ঘটনা ঘটল। যেখানে গরু খাওয়া আইনত নিষিদ্ধ নয়। সুতরাং এ হত্যাকাণ্ডের দায় প্রশাসনের এড়ানো উচিৎ হবে না। এড়াতে চাইলে তা জুলুম হবে ওই পরিবারটির প্রতি। ধর্মের নামে জুলুম আসলে হয়েছেও। এখন ভয়ের বিষয়টা হচ্ছে, এর প্রতিক্রিয়ায় কোন দেশে, কদ্দূর কী হয়। শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে কোনো হত্যাকাণ্ড থেকে দোষীকে দায়মুক্তি দেওয়ার যে পশ্চিমা প্রবণতা তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ভারতকে। এখানে আসলে একটি জঘন্য অপরাধের জন্য অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারাটাই হবে সবচেয়ে স্ব:স্তির খবর। বাংলাদেশে যেন কেউ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফায়দা লুটতে না পারে সে দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ভেবে দেখেন, এমন করে যদি হিন্দু প্রধান দেশ, মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাসের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠে। আর মুসলিম বা খৃষ্টান প্রধান দেশ হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠে তাহলে শেষ পরিণতি কিসে হবে! আর একটা ধর্মযুদ্ধে। তারপর ধ্বংশ, রক্ত, ইজ্জ্বত হরণ, লাশ, কান্না...এইতো?
এই মুসলমানটাকে হত্যা করে ধর্মের কী লাভ হলো তা ব্যাখা করার সামর্থ্য এসব হিন্দু মৌলবাদীদের নেই আমি নিশ্চিত। থাকলে ওরা এমন পৈশাচিকতায় মেতে উঠতে পারত না। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ওদের অধিকাংশেরই পারিবারিক কোনো বন্ধন নেই। থাকলে হয়তো মুহম্মদ আখলাখ (৫৮) নামক ওই ভদ্রলোককে পিটিয়ে হত্যা করার সময় নিজের বাবার মুখটা ভেসে উঠত।
আসলে ধর্মান্ধতা রুখতে শিক্ষা ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের উপমহাদেশের মানুষ শিক্ষিত নয় বলে অতিমাত্রায় ধর্মান্ধ। তাদের মধ্যে ধর্ম বিশ্বাসের চেয়ে, ধর্ম নিয়ে কুসংস্কার, গোড়ামিটাই বেশি। ফলে এসব দেশগুলো সাধু বা পীরেরা ধর্মের নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে। এর সবই কিন্তু হচ্ছে অশিক্ষার কারণে। সুতরাং এ অঞ্চলের সরকারগুলোকে তার নাগরিকেদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার দিকে মনোযোগী হতে হবে। নইলে ধর্মান্ধতা রুখা যাবে না। ধর্ম নিয়ে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধেও পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমাদের সকলেরই উচিৎ যে যার জায়গা থেকে এসব অমানবিকতার বিপক্ষে দাঁড়ানো। উগ্রপন্থাকে রুখে দেয়া। নইলে একদিন এ ধর্ম নামীয় অশিক্ষিত বাঘ আমাদের সবাইকে চাবিয়ে খাবে। এই যে হত্যা করার প্রবণতা তা রাজনৈতিক কারণে হোক, ধর্মীয় কারণে হোক এটা ভয়ঙ্কর এক রোগ। যা আমাদের সমাজে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। এসব রোধ করা না গেলে আমাদের একটা ধর্মযুদ্ধে দর্শক হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই ভাল।
বাংলাদেশ সরকারসহ, অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকে ওই পরিবারটির প্রতি সহানুভূতি জানানোর আবেদন জানাচ্ছি। ভারত সরকারের উচিৎ হবে পরিবারের জীবিত সদস্যদের জীবনের সুরক্ষা ও পরিবারটিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। আমরা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই পরিবারটির প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তাদের অসম ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে পারি। একই সাথে সচেতন হতে পারি, যেন ভবিষ্যতে আমাদের সমাজে ধর্মের নামে এমন অধর্ম কেউ করার সুযোগ না পায়।
আমি ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সমবেদনা ও পরিবারটির প্রতি ন্যায় বিচারের নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি। আশাকরি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের দাবিদার ভারতের আদালত হত্যাকারীদরে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি যে মন্দির থেকে এ হত্যাকাণ্ডের প্ররোচণা দেওয়া হয়েছে সেটিকেও বিচারের আওতায় আনবে।