somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহারাজার মহাভ্রমণ

২৬ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহারাজা একাকী হাঁটবেন বলে হাঁটতেই থাকেন। হাঁটতে হাঁটতে, হাঁটতে হাঁটতে হেট হয়ে বসে পড়লেন। কোথায় এসেছেন? ধূর ছাতা, সাইনবোর্ডে কিসব হিজিবিজি লেখা বোঝা যায় না।



তিনি আরও জোড়ে হাঁটা দেন। রাজার জুতাতো আগেই গেছে, এবার পাজামা। তবু হাঁটা থামানোর নাম নেই। হাঁটার একটা নেশা যেন পেয়ে বসেছে রাজাকে। তিনি যেন একটা গন্ধের পেছনে ছুটছেন। কারো সাক্ষাৎ পাবেন বলে হাজার বছর ধরে হাঁটার মতো। কিন্তু এ জায়গায়েতো কিছু নাই, কিচ্ছু দেখা যায় না।

আরেকটু সামনে এসে দেখেন একটা ভার্সিটি। ভার্সিটির ভেতরে ‘সেই জনা’র থাকার কথা না। যেই জনার গন্ধে গন্ধে রাজা ছুটছেন। রাজা সাইনবোর্ডের দিকে তাকান। বড় বড় অক্ষরে লেখা চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে তারও কোন কাজ নেই। সেখানে কোন শিক্ষা নাই। আর যদি বঙ্গদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হয়,
শিক্ষার কোন মান নাই /ব্যবসা ছাড়া কথা নাই
মহৎ কোন উদ্দেশ্য নাই/ভাষা ও সংস্কৃতির বালাই নাই।

রাজার মন খারাপ হয়। চোখের সামনে নিজের রাজ্যের এমন অধপতন কার ভালো লাগে! রাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ ঘেষে যাওয়া সরু রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করেন এবার। চারপাশে সুনসান নিরবতা। যেদিকে চোখ যায় শুধু শষ্যের ক্ষেত। এই সন্ধ্যায় এ রাস্তাকে মনে হচ্ছে ভূত পরী। নিরব ও নির্জন। রাজাও যেন অজানার উদ্দেশ্যে ডানে বায়ে দুলতে দুলতে হাঁটছেন। মায়াবী সন্ধ্যায় গ্রামের আলোহীন কালো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে রাজা যেন স্মৃতিকাতর হয়ে যান।

হঠাৎই ভূত দেখার মতো চমকে যান রাজা সাহেব। তিনি হাত নেড়ে কাছে এগিয়ে যান। আমাদের দেশটা চিনেন মহাশয়! অপরপ্রান্ত থেকে জবাব আসে, ছাগল হয়ে ছাগলের দেশ চিনব না! রাজা হাসেন। আবার সুধান, প্রথম আলো নিউজ করেছে, দেশে এখন গরুর চেয়ে ছাগলের সংখ্যা বেশি। আরও নির্জীব, গম্ভীর কণ্ঠ- সেতো তোমাকে দেখেই বুঝি।
রাজা হাসতে হাসতে ভাবে মহাশয় এতো চেতা কেন। তারপর ফিসফিস করে- মহাশয় কাছে আসেন। আপনারে পাতা খাওয়াই। পাতা খান, দমকা হাওয়ায় ঠাণ্ডা হন। গপসপ করি।

এবার মহাশয় তাকান রাজার দিকে- মিয়া মাহাকাশে কোথাকার কোন চাইনিজ ড্রোন ঘুড়ে বেরায় তোমরা সবায় মিল্লা নাচো। অথচ তোমাদের স্যারের বানানো ড্রোন সিলেটের চিপা গলিতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। আবাল জাতি কোন খবর রাখ না। রাজা জিভে কামর দেয়। আচ্ছা মহাশয়- স্যারের ড্রোনটা নাকি মাঝেসাজে কান্দেও। কি এত দুঃখ তার মনে। আপনি জানেন নাকি।
মহাশয় চেততে গিয়েও চেতে না। কিড়মিড়ায়-আবাল জাতির বড় আবাল।

রাজা সুধায়, মহাশয় জানি না কিভাবে নেবেন বিষয়টা। আমি চিন্তা করেছি ড্রোন বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য স্যারকে যেন নোবেল দেয়া হয় সে জন্য একটা ক্যাম্পেইন শুরু করব। আইডিয়াটা কেমন বলেনতো।

মহাশয়ের মুখ দিয়ে এবার কোন কথা বের হয় না। শুধু উত্তেজনায় ম্যা ম্যা শুরু করে। রাজা কাছে যায়, আরেক ঢালি পাতা টেনে ধরে বলে খান মহাশয়। দেশ ও জাতির কল্যাণে আপনার খাওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাশয় এবার বোধহয় আবেগে ম্যা ম্যা করে।
রাজা সুধায়, বহু সাধনার ফল, আপনার সাথে দেখা। আপনাকে গোসল করিয়ে, সে গোসলের পানি বোতলে ভরে তবে নিজ দেশে ফিরব মহাশয়। আপনার পানি পড়া সাথে থাকলে ওরা আর আমাকে ন্যাংটা বলার সাহস করবে না। আজকালকার বাচ্চা পুলাপান বড্ড দুষ্ট মহাশয়। আমারে দেখলেই লুঙ্গি ধরে টানাটানি করে।

রাজার কথা থামে না: বহুদিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে/বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে আপনারে দেখেতি পেয়েছি মহাশয়। রাজা আরও আরও পাতা মেলে ধরেন। মহাশয় চিবুতে চিবুতে নরম ও নিথর হয়ে যান। যেন বিছানায় শুয়ে থাকা সেই নারী। তোমরা সব কুঞ্জ সাজাও গো আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে…

এদিকে সন্ধ্যা যেন রাতের পেটে হারিয়ে যেতে বসেছে। চারপাশে অন্ধকার, নিরবতা। এমন পরিবেশ বলেই কি না, রাজার মনে রোমান্স উছলে উঠে। ছলছলিয়ে তা বাড়তে শুরু করে। মহাশয় এর ওলান দেখার সাধটা আর লুকাতে পারেন না রাজা। পাতা ছেড়ে কাছে যান। প্রথমে মাথায় হাত বুলান। তারপর গতরে। গতর থেকে ওলানে যাবেন বলে হাত চালান। কিন্তু একি রাজার কপালে আবারও লাত্থি। কে দিল মহাশয় না তার মালিক আমাদের রাজা বুঝতে পারেন না। দৌড়ানতো দূরে থাকা, হাঁটার শক্তিটাও তার আর থাকে না। কিছুক্ষণ খুড়িয়ে এক শষ্যক্ষেতে তিনি ধপাস করে লুটিয়ে পড়েন। চোখ বুঝে কাতরান, নাকের ডগায় যেন শিশির বিন্দু না যেন হাজার হাজার ড্রোন ভেনভেন করছে। এ যেন কোরাস ধরে বিলাপ। আর সহ্য করা যায় না। রাজা সাহেব এবার কুবের মাঝিকে ছেড়ে শালার মশা বলে কিড়মিড় কিড়মিড় করেন… পারেনতো দুইচারটা মশা মুখে ঢুকিয়ে পেয়াজুর মতো চিবান…

(সিরিজ: মহারাজার মহা ভ্রমণ। পর্ব-২০)

ছবিটি তোলা হয়েছে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের চণ্ডিগড়ে।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২১ রাত ৯:৩৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×