১. আলভী আহমেদের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ব্লাইন্ড স্পট’ পড়লাম (বৈভব থেকে প্রকাশিত)। খুব একটা ভালো লাগেনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করতে যাওয়া এক ভাগিনাও পড়ল। দশ থেকে সাড়ে ছয় দেবে সে। কেন দেবে? কারণ তার পড়ে মনে হয়েছে।
বেশকিছু গল্পের ধারা বর্ণনা ভালো লাগেনি। কয়েকটার ‘শেষ’ মনো:পুত হয়নি। কয়েকটা গল্প পড়ে মনে হয়েছে-লেখার জন্য লেখা, দায়সারা গোছের। ‘অদৃশ্য মানব ও মাটিবর্তী’ গল্প দুটি অন্য গল্পের তুলনায় বেশ লেগেছে। এই দুটি গল্প ভেতরে নাড়া দিয়েছে।
আলভী আহমেদ সময়ের আলোচিত লেখক। এই সময়ের জনপ্রিয় কোনো লেখকের লেখার সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। এটা একই সাথে আমার ‘দুর্বলতা ও ক্ষতি’ জেনেও আমি পারি না। পড়ার জন্য যতটুকু সময় পাই এখনো ক্ল্যাসিক সাহিত্য পড়ার চেষ্টা করি। নানা দেশের মুভি দেখি। আলভী আহমেদকে দিয়ে সে আর্গল ভাংলাম। কিছুটা জানার সুযোগ হলো-এখনকার আলোচিত লেখদের একজন কিভাবে লেখেন। এরপর নিশ্চয়ই আরও পড়ব। অন্য আলোচিত লেখকদের লেখা পড়ার ইচ্ছা আছে।
২. এর আগে মাশরুর আরেফিন এর ‘কাফকা অনুবাদ’ পড়ার চেষ্টা করেছি। প্রথম আলোয় প্রশংসা দেখে পড়তে গিয়ে বেশি দূর এগুতে পারিনি। ভাষা দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। এই লেখক নাকি নিজেকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম উপন্যাসিক/তার লেখা উপন্যাসকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করে থাকেন। এসব কথা শুনে মাশরুর আরিফিনের উপন্যাসের প্রতি কৌতূহল তৈরি হয়েছে। আশা করি পড়তে গিয়ে পিছলে পড়ে যাব না। বাংলা পত্রিকার কোনো রিভিউ বা ফেসবুকের গদগদ লেখা আজকাল আর রুচে না। মনে হয় সবই তেল মারার জন্য তৈলাক্ত ঠেলাঠেলি।
শেষ.
নিজেও লিখি বলে লেখকদের প্রতি, লেখার প্রতি টান অনুভব করি। তবে নিজের লেখা নিয়ে কোনো দাবি নেই। কেউ পড়লে খুশি, না পড়লেও খুশি। খুব ভালো লেখার প্রতিভা নিয়ে জন্মেছি বল কখনো মনে হয় না। বাংলা ভাষাটাও ভালো করে জানি তা না। তবে নিজে যা বুঝি, যা অনুভব করি, যা দেখি তা নিজের মতো করে বলার জন্য হলেও লেখতে চাই-এই হলো কথা। কেন লিখতে চাই? কারণ আমি যে জীবন যাপন করেছি তা করার সুযোগ রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের হয়নি। তারা আমার মতো একবিংশ শতাব্দীতে জন্মাননি। আমার মতো সাদাসিদে এক মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠেননি।
সুতরাং আমি বলতে না পারলেও আমার কথাগুলো তাদের থেকে ভিন্ন এ নিয়ে কোনা সন্দেহ নেই। এ ভিন্ন কথামালা একজনও শুনতে চাইবে না কি করে নিশ্চিত হই? আমি বিশ্বাস করি-আমার গল্প বলার নিজস্ব একটা ভঙ্গী আছে। আমার গল্পে আমার বেড়ে উঠার, পারিবারিক ইতিহাসের, সেই জনপদের মানুষের, তাদের বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। আমি যেভাবে বলতে চাই এভাবে বলার ‘সাহস দেখায়’ সমসাময়িক লেখকদের খুব কমজনই।
আরেকটা কথা, সমসাময়িক লেখক-কবিদের মধ্যে আমি আমার বন্ধু কবি হুসাইন আজাদের সব লেখার ব্যতিক্রম পাঠক। তার খুব কম লেখাই বোধহয় আছে আমি ২/১ বার করে পড়িনি। বড় কবি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ওর মধ্যে। ছন্দে ছন্দে কবিতাটা লেখতে জানে ও। কিন্তু সে কবি না হয়ে, হয়ে যাচ্ছে পুরোদুস্তুর সাংবাদিক, পেটের জন্য মারাত্মক পেশাদার। একজন কবির যে জীবন সে জীবনের কাছে ফিরে আস বন্ধু।
এক লাইন মশি (মশিউল আলম) ভাইয়ের জন্য। অন্যরা তাকে ববি বলে ডাকে। (আমি পরিচয়ের পর থেকে মশি ভাই বলি। হয়তো ওভাবে কাছে যেতে পারিনি বলে সে আমার কাছে ‘ববি ভাই’ হয়ে উঠেনি।) আমার কাছে মনে হয়, মশি ভাই এই সময়ের সবচেয়ে আন্ডার রেটেড লেখক। তবে আশার কথা হচ্ছে, এই ভালো মানুষ লেখক আলোচনার আলোয় আসছেন। পাঠক তাকে বুঝতে শুরু করেছে।
কল্পনার চোখে দেখে আনন্দ হয়, পাঠক প্রিয়তার চাপে মশি ভাই লেখতে গিয়ে হাসফাসিয়ে হাসছেন। লেখকদের জন্য শুভকামনা।
(বইয়ের প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং বেশ ভালো লেগেছে। কাগজের মান ভালো। বৈভবের গুছানো কাজ।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:০৯