পড়তে হলে বই লিখতে হয়। সে বই প্রকাশ করে বাজারে ছাড়তে হয়। বই যারা বের করেন তারা চলেনই মিথ্যার উপরে। বই ছাপা হয়, বিক্রি হয়, প্রকাশক মহাশয় দিনদিন নাদুশ নুদুশ হন, মহিলা হলে সুন্দরী, শরীরি। তার শরীর থেকে আতরের খুশবু আসে কিন্তু ব্যবসা কোনোদিনও ভালো হয় না। লেখক বেচারা সামনে পড়লেতো আরও খারাপ হয়ে যায়। চা খাওয়ানোর পয়সাও থাকে না। গলায় খুকখুক কাশও শুরু হয়। লেখকদের হাজারজন গাটের পয়সা খরচ করে, বই বের করেও স্বাদের বইয়ের দেখা পায় না। আজকালকার বউরাও নাকি জামাইরে খুব একটা গুনে না। বই-বউ দুইটাই জগতের মহামূল্যবান জিনিস। পাওয়া যায় না প্রকাশকের মুখের কথার ঠিকঠিকানা। আর পাঠক, তারাতো নোট বই পড়ে বড় হওয়া। অধিকাংশই তাই-এসব পড়াপড়ির ঝামেলার মধ্যে যায় না।
সেই দেশের খাবার? সেই দেশে মানুষ মরে কিন্তু ফলমূল ম্যারম্যারা হয় না (পচে না)। এবার বুঝেন খাবারের মান। লোহার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। সেই দেশের মানুষও আবার করোনার চেয়ে শক্তিশালী। তারা খায় লোহার চেয়ে শক্তিশালী খাবার। সুতরাং খাবার নিয়ে আর কিছু না বললেও হয়। তবু আরেকটা কথা না বললে নয়, এই দেশে মানুষ হাগতে গেলেও লোহা বের হয়। মানে কসা হাগা, যেটা হুগার মাথায় আটকা থেকে খসখসায় আর কি।
যাইহোক, এই দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম? কখনো বাড়ে না। কেবল রমজান মাস মানে মুসলমানদের পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস আসলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুন হয়। এটাকে অবশ্য খারাপ চোখে দেখার সুযোগ নেই। চোখ বাকাইয়েন না, শুনেন। রমজান হলো সংযমের মাস। সে মাসে মানুষ যেন বেশি খেয়ে সংযমে ব্যাঘাত না ঘটায় সে জন্য দ্রব্যমূল্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এটাও কিন্তু ধর্ম সেবা, যেহেতু দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান সুতরাং মানব সেবাও বলতে পারেন।
বই ব্যবসায়ী, খানা ব্যবসায়ীর কথা বললাম। এবার আসেন অন্য কারো কথা বলে আলোচনা বাড়াই। এই দেশে করোনা আসবে না আসবে না করছিল অনেকে। জোর গলায়ও বলছিল। কারণ রকমারী। এরমধ্যে কিছু বলা যাবে। তবে সব বললে চাকরি থাকবে না। স্বপ্নের বরাতে বললেও গন্তব্য শেষ পর্যন্ত শ্রীঘর বৈ অন্য কিছু বলে মনে হয় না। কথা হলো, এরপরও কেমনে কেমনে যেন মহাশয় এসে গেছে। করোনা এসে গেছে। মানুষ মরে গেছে (যাচ্ছে)। তবে লজিক্যালি বললে, করোনা আর কয়জন মারল। এর বাইরে এ দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মরে। কারণে মরে, অকারণেও মরে। তাদের সিংহভাগকেই নানা গোরস্থানে দাফন করা হয়। কিছু যায় শ্মশানে। এতো মানুষ মরে এরপরও যারা গোর দেওয়ার কাজ করে তাদের মাথায় হাত, তারা আপনাকে হতাশ গলায় বলবে-কামকাজ নাই, মানুষ এখন আর আগের মতো মরে না। মানুষই মরে না কাজ আইবে কুত্তে! হে!! তারা অবশ্য গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের মতো সরকারের কাছে সাহায্য চাইয়া বসে না। চাইলেও লাভ নাই। চাষাভূষা, গরীব মানুষের কথা কেউ শুনে না। আসলে ব্যবসায়ী না বলে ঐভাবে বাটপারিটাও বুঝে না। কিভাবে হুগার ভেতর থেকে টেনে পয়সা বের করে তা টাইয়ের চিপায় লুকাই ফেলতে হয়, ইহা বুঝতে হলে বড় ব্যবসায়ী হতে হয়।
এভাবে কথা বলে কারে কখন ক্ষেপাই ফেলি জানি না। বাদ দিয়ে বিদায় নেই। আসেন একটা জোকস শুনি। জোকস মানে কৌতুক। আজ পহেলা জুলাই না যে জোকস দিবসে জোকস শোনাচ্ছি। তবু শুনেন, শুনাইয়া আজকের মতো বিদায় নেই। একদিন এক বাবা তার শিশু ছেলেকে পড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু ছেলে কিছুতেই পড়বে না। অগত্যা হাল ছেড়ে দিয়ে বাবা বলল-ঠিক আছে, তাহলে চলো আমরা আজ খেলি। ছেলে খুশি হলো। কিন্তু বাবাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারল না। জানতে চাইল কি খেলা? চলো একটা বল নিয়ে খেলি। তুমি বলটা আমার দিকে ছুড়ে মার, আমি তোমার দিকে ছুড়ে মারব। এভাবে দেখি কে কতো দ্রুত বল ধরে, পাল্টা ছুড়ে মারতে পারি। যে বেশি পারবে সে জিতবে। এবার বাবা বলল, এই যে আমি একবার তোমার দিকে বল ছুড়ে মারলাম। এবার তুমি মার। ছেলে মারল। বাবা আবার মারল। তারপর ছেলেও মারল। অত:পর বাবা বলল, আমি দুইবার তোমার দিকে বল ছুড়ে মারলাম, তুমিও দুইবার মারলা। তাহলে মোট কয়বার মারা হলো? ছেলে এবার কেঁদে দিয়ে বলল, আব্বা তুমি আমারে আবার পড়াইতেছ…
টিকা-১: সেই ছেলের পড়ালেখা একদিন শেষ হয় কিন্তু ঢাকাবাসীর উন্নয়ন দেখা আর কখনো শেষ হয় না। এ পৃথিবীর একমাত্র শহর যে শহরে বছরজুড়ে উন্নয়ন চলতেই থাকে। শুধু সেই শিশু ছেলের মতো অভিমানে, রাগে বা ক্ষোভে কাউকে কিছু বলার কিছু থাকে না। আজকের মতো এখানেই গল্পটি শেষ হলো।
ভালো থাকবেন, মাফ করবেন। (আনিসুল হকের গদ্য কার্টুনে কোনো কার্টুন (পড়ুন মজা) নাই, মাঝখান দিয়ে যথেচ্ছ তেলাচারে সে নিজেই কার্টুন বনে গেছে। রিপ: লেখক আনিসুল হক।
টিকা-২: এই দেশে ‘লেখা’ পড়ার মানুষ মানে রিডার নাই। নিজেকে দিয়ে বুঝি লেখাপড়া করার মানুষও। এই লেখাটি যারা সত্যি সত্যিই পড়তে পড়তে নিচে আসলেন এই কথাটা তাদের জন্য প্রযোজ্য না। যারা এক টানে নিচে আসছিলেন লেখাটা কতবড় চেক করার জন্য তাদের টিকা নং-২ চোখে পড়ার কথা না, বা পড়লেও পড়ার মতো ধৈর্য্য হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:০৩